মোঃ আলমগীর হোসেন, নড়াইল প্রতিনিধি।।সোনালী আঁশ খ্যাত পাটের সুদিন ফিরতে শুরু করেছে। এ বছর নড়াইলের লোহাগড়া উপজেলার মিঠাপুর হাটে সর্বোচ্চ দামে পাট বেচা-কেনা হচ্ছে। নড়াইলের সর্ববৃহৎ পাটের পাইকারি মোকাম লোহাগড়ার মিঠাপুর হাট। শনিবার (৩০ আগস্ট) সরেজমিনে বাজারে গিয়ে দেখা যায়, মান ভেদে প্রতি মণ পাট ৩ হাজার ২০০ টাকা থেকে ৩ হাজার ৬০০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। তবে ভালো মানের পাট ৩ হাজার ৮’শ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। সামনে পাটের দাম আরো বাড়তে পারে বলে ধারণা করছেন ব্যবসায়ীরা।
এবার পাট চাষের শুরুতে অতিবর্ষণে নড়াইলে পাটের আবাদ ব্যাহত হলে কৃষকরা ক্ষতির মুখে পড়েন। তবে পাটের আশানুরূপ দামে সে ক্ষতি পুষিয়ে নিতে পেরে কৃষকের মুখে হাসি ফুটেছে।জেলা কৃষি বিভাগ সুত্রে জানা গেছে, এ বছর জেলায় মোট ২৩ হাজার ৪৯৮ হেক্টর জমিতে পাটের আবাদ হয়েছে। যার বিপরীতে ৫৮ হাজার ৫৯০ টন পাট উৎপাদানের লক্ষমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে। জেলার মধ্যে লোহাগড়ায় এবছর সবচেয়ে বেশি পাটের চাষাবাদ করা হয়েছে। লোহাগড়ায় ১২ হাজার ১৬৫ হেক্টর জমিতে পাটের আবাদ করা হয়, লক্ষমাত্রাও অর্জিত হয়েছে বলে উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা ফারজানা আক্তার জানিয়েছেন। এরইমধ্যে ৯৮ শতাংশ পাট কেটে ফেলা হয়েছে। এখন জেলা ও উপজেলার প্রসিদ্ধ হাটগুলোতে পাটের জমজমাট কেনাবেচা চলছে।
মিঠাপুর পাইকারি পাটের হাটে তাই নতুন পাটে ভরপুর। সকাল থেকেই কৃষকরা তাদের উৎপাদিত পাট হাটে নিয়ে আসতে থাকেন। বেলা বাড়তে না বাড়তেই ক্রেতা-বিক্রেতার ব্যাপক সমাগমে হাট কানায় কানায় পরিপূর্ণ হয়ে ওঠে। বিভিন্ন বাহনে বোঝাই করা কৃষকদের পাট হাটে উঠতে না উঠতেই ফড়িয়া ব্যাপারীরা ঘিরে ধরছেন। পাটের মান ভেদে দাম বলছেন। দর দামে ঠিক হলে দেখতে দেখতে মণ মণ পাট হাত বদল হয়ে হাটের বড় বড় পাট ব্যবসায়ীর গুদামে উঠে যাচ্ছে। গত বছর একই মানের পাটের দাম ছিল দুই থেকে থেকে আড়াই হাজার টাকা।
কৃষক সাহেব আলী জানান, বাজারে ভালো মানের পাটের বরাবরই চাহিদা থাকে। অন্যান্য বছর অনাবৃষ্টির ফলে পানি শূন্য খাল-বিল-ডোবা-নালায় পাট পঁচানো নিয়ে চরম বিপাকে পড়তে হয়। পানি সংকটে বাধ্য হয়ে নোংরা পানিতে পাট পঁচানোয় পাটের আঁশ কালো হয়ে বাজার হারায়। এবার ব্যাপক বৃষ্টিপাতের ফলে স্বচ্ছ পানিতে পাট পঁচাতে পেরে পাটের মান আশানুরূপ হয়েছে। মান ভালো হওয়ায় ব্যাপক চাহিদার পাশাপাশি বেড়েছে দামও।কৃষক আনিস বলেন, ‘এ বছর আবহাওয়া পাট চাষের অনুকূল ছিল না। মে-জুনের তীব্র খরা দাবদহের পর জুলাই মাসে আবিরাম বর্ষণে পাটের ফলন ব্যাপক ক্ষতির মুখে পড়ে এবং উৎপাদন কম হয়। তবে পাটের দাম বাজারে বেশি হওয়ায় সে ক্ষতি পুষিয়ে যাচ্ছে কৃষকের। এভাবে পাটের বর্তমান বাজার দাম অব্যাহত রাখার দাবি করছেন কৃষকরা।
লোহাগড়া উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা কৃষিবিদ ফারজানা আক্তার জানান, ‘পাটের ঐতিহ্য ফিরিয়ে আনতে চাষ উপযোগী জমিতে পাট চাষে উদ্বুদ্ধ করাসহ কৃষি বিভাগের পক্ষ থেকে পাট চাষিদের সাথে যোগাযোগ অব্যাহত ছিল।
পাটের আবাদ বাড়াতে এখানকার ক্ষুদ্র ও প্রান্তিক চাষিকে প্রণোদনা হিসেবে বিনামূল্যে এক কেজি করে বীজ, পাঁচ কেজি করে ডিএপি এবং পাঁচ কেজি করে এমওপি সার প্রদান করা হয়েছে। পাটের দাম বাড়ায় কৃষকরা যারপরনাই খুশি।
Copyright © 2022 KhulnarKhobor.com মেইল:khulnarkhobor24@gmail.com।জাতীয় অনলাইন গণমাধ্যম নীতিমালা আইনে তথ্য মন্ত্রণালয় কর্তৃক নিবন্ধন আবেদিত।স্মারক নম্বর:- ০৫.৪৪.৪৭০০.০২২.১৮.২৪২.২২-১২১।এই নিউজ পোর্টালের কোন লেখা, ছবি, অডিও, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।