খুলনার খবর।।খুলনার নতুন জেলা কারাগার নির্মাণ প্রকল্প হাতে নেয়া হয় ২০১১ সালে। গত ১৩ বছরে পাঁচবার মেয়াদ বাড়িয়ে কাগজে-কলমে প্রকল্পের কাজ শেষ দেখানো হয়েছে গত বছরের জুনে।
তবে বাস্তবে কাজ চলছে এখনও। এটি এখন নিরাপত্তার প্রতীক নয়, আলোচনায় দুর্নীতির কেন্দ্রবিন্দু হিসেবে। অনুসন্ধানে বেরিয়ে এসেছে অজানা এক অধ্যায়, যেখানে উন্নয়নের আড়ালে লুকিয়ে আছে ক্ষমতার বাণিজ্য, কমিশনের ভাগবাটোয়ারা, রাজনৈতিক প্রভাবের ছায়া আর সরকারি অর্থ লুটের চিত্র।
কারাগার নির্মাণে বেছে নেয়া হয় খুলনা সিটি বাইপাস সড়কের আসানখালী এলাকার ৩০ একর জমি। যখন প্রকল্পটি অনুমোদন হয় তখন বরাদ্দ ধরা হয়েছিল ১৪৪ কোটি টাকা। তবে ১৪ বছর ধরে চলা এই প্রকল্পটির সর্বশেষ ব্যয় দাঁড়ায় ২৮৮ কোটি টাকায়।
অনুসন্ধানে জানা গেছে, ভূমি উন্নয়ন ও অবকাঠামো নির্মাণ খাতে ৩৯টি টেন্ডার আহ্বান করেছিল খুলনা গণপূর্ত বিভাগ-২। প্রতিটি টেন্ডারই শতভাগ নিয়ন্ত্রণ করেছে খুলনার ‘শেখ পরিবার’ খ্যাত সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার চার চাচাতো ভাই শেখ হেলাল উদ্দিন, সেখ সালাহউদ্দিন জুয়েল, শেখ সোহেল ও শেখ রুবেল। ইজিপির মাধ্যমে টেন্ডার হলেও কে কাজ পাবে তা নির্ধারিত থাকতো আগেই। অভিযোগ, কাজ শুরুর আগেই ১০ শতাংশ হারে অগ্রিম টাকা দিতে হয়েছে তাদের। সেই হিসাবে প্রকল্প থেকে ২৬ কোটি টাকারও বেশি নিয়ে গেছে শেখ পরিবার।
এছাড়াও অভিযোগ আছে, কমিশনের টাকা গিয়েছে গণপূর্তের প্রকৌশলীদের পকেটে। শুধু তাই নয়, অন্যের ঠিকাদারি লাইসেন্স ব্যবহার করে অধিকাংশ কাজ করেছেন আওয়ামী লীগের প্রভাবশালী নেতারা।
প্রকল্পের মোট ৩৯টি টেন্ডারের মধ্যে ১৩টির কাজ পেয়েছে খুলনা মহানগর আওয়ামী লীগের নির্বাহী সদস্য ও শেখ পরিবারের আস্থাভাজন দাউদ হায়দারের মালিকানাধীন এসএন বিল্ডার্স লিমিটেড। প্রকল্পের সাথে সরাসরি যুক্ত এমন অন্তত পাঁচজন ঠিকাদারের সাথে কথা বলে এসব তথ্য জানা গেছে।
গণপূর্তের কাছে এটি একটি ‘মেগা’ প্রকল্প। তবে সেই প্রকল্প অনুমোদনের আগে কোনো সমীক্ষা করা হয়নি। প্রকল্পে কোনো কিছু ঠিক না করেই অনুমোদন দেয়া হয়। কেন সমীক্ষা করা হয়নি, এমন প্রশ্ন করলে সর্বশেষ প্রকল্প পরিচালক মোকতার আহমদ চৌধুরী বলেন, এসব ব্যাপারে আমি কিছু জানি না। গণপূর্তের কাছে খোঁজ নেন।’
প্রকল্প এলাকায় মাটি ভরাটের কাজটি পেয়েছিল নড়াইলের মেসার্স ইডেন প্রাইজ নামের একটি ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান। কিন্তু কাজ করেছেন কেন্দ্রীয় যুবলীগ নেতা ও খুলনার প্রথম শ্রেণির ঠিকাদার এস এম মেজবাহ হোসেন বুরুজ। কাজ চলাকালেই ২০১৬ সালে তিনি মারা যান। মৃত্যুর আগেই তিনি তার কাজের চেয়ে ১০ শতাংশ বেশি টাকা তুলে নেন, ফলে কাজ বন্ধ থাকে দীর্ঘদিন। পরে মূল ঠিকাদারকে দিয়ে ভরাটের কাজ করানো হয়। অভিযোগ রয়েছে, লোকসান হওয়ায় তিনি যথাযথভাবে বালু ভরাট করেননি। এ কারণে প্রকল্প এলাকা মূল সড়ক থেকে প্রায় এক ফুট নিচু। পুরো চত্বরজুড়ে বালুর ওপর নয় ইঞ্চি পুরু মাটি দেয়ার কথা থাকলেও তা এখনও দেয়া হয়নি। ডিজাইনে বৃষ্টির পানি নিষ্কাশনের কোনো ব্যবস্থা রাখা হয়নি। এ কারণে ভারী বৃষ্টি হলেই তলিয়ে যাওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে প্রকল্প এলাকা।
অনুসন্ধানে জানা গেছে, প্রকল্প এলাকায় বালু ফেলা হয়েছে দুই কোটি ৭৮ লাখ ৬০৯ দশমিক ২৪ ঘন মিটার। এর মধ্যে বুরুজ বালু ফেলেছেন দুই কোটি ৬৬ লাখ ১৯২ দশমিক শূন্য আট ঘন মিটার। বুরুজ মারা যাওয়ার পর অবশিষ্ট অংশের কাজ করে এস এন বিল্ডার্স। বুরুজকে প্রতি ঘনফুট বালুর দাম দেয়া হয় সাড়ে ৮ টাকারও বেশি। আর দাউদকে দেয়া হয় ১১ টাকারও বেশি।
Copyright © 2022 KhulnarKhobor.com মেইল:khulnarkhobor24@gmail.com।জাতীয় অনলাইন গণমাধ্যম নীতিমালা আইনে তথ্য মন্ত্রণালয় কর্তৃক নিবন্ধন আবেদিত।স্মারক নম্বর:- ০৫.৪৪.৪৭০০.০২২.১৮.২৪২.২২-১২১।এই নিউজ পোর্টালের কোন লেখা, ছবি, অডিও, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।