এস.এম.শামীম খুলনা ।।খুলনা জেলার ডুমুরিয়া উপজেলার থুকড়া ইউনিয়ন ভূমি অফিসের তহসিলদার (নায়েব) নিলুফা ইয়াসমিনের বিরুদ্ধে ঘুষ, দুর্নীতি, অনিয়ম ও দালাল সিন্ডিকেট গঠনের গুরুতর অভিযোগ উঠেছে। স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, তিনি দায়িত্ব পালনের নামে সাধারণ মানুষের কাছ থেকে মোটা অংকের ঘুষ আদায়সহ নানা অনৈতিক কর্মকাণ্ডের মাধ্যমে বিপুল সম্পদের মালিক হয়েছেন।
তথ্য অনুযায়ী, নিলুফা ইয়াসমিন ২০০৩ সালের ৯ জানুয়ারি চাকরিতে যোগদান করেন। চাকরিতে যোগদানের পর থেকেই তিনি অবৈধভাবে সম্পদ অর্জন শুরু করেন বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে।
চকআসানখালী মৌজার এস.এ ১৬৪ নং খতিয়ানের স্থলে আর.এস ৫১৫ ও ৫১৬ নং খতিয়ানের রেকর্ডীয় মালিক বেগম আশরাফুন্নেছা-এর জমির খাজনা আদায় ও কার্যক্রম আদালতের নিষেধাজ্ঞা থাকা সত্ত্বেও তিনি ঘুষের বিনিময়ে অবৈধভাবে ২৭ ডিসেম্বর ২০১১ তারিখে ৮৫৬৫৬৮ নং দাখিলায় খাজনা গ্রহণ করেন।
ওই সময় তিনি ১৩,৭৬২ টাকা খাজনা আদায় করেন, যা নিষেধাজ্ঞা অমান্য করে অবৈধভাবে উত্তোলন করা হয় বলে অভিযোগ রয়েছে। ওই অর্থের অংশ ব্যবহার করে তিনি খুলনার মুজগুন্নী মৌজায় (আরএস ৪৪৩ খতিয়ান, দাগ নং ১৫২৯) নিজের স্বামী মো. সেলিম করিম ওরফে বাচ্চু মিয়ার নামে জমি ক্রয় করেন।
২০১৫ সালে দামোদা তহসিল অফিসে দায়িত্ব পালনকালে নিলুফা ইয়াসমিন ১৪টি দাখিলা রশিদ (এফ-২৫৩১৯৪-২৫৩২০০, ২৫৩৯৪-২৫৩৩০) চুরি করে গোপনে খাজনা কর্তন করেন এবং অবৈধভাবে অর্থ আত্মসাৎ করেন বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। সেই অর্থে তিনি ও তার স্বামী বিভিন্ন খতিয়ানে আরও জমি ক্রয় করেন।
দুর্নীতি ও অনিয়মের কারণে জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ হেলাল হোসেন ২০১৯ সালের ২৪ জানুয়ারি তাকে সাময়িক বরখাস্ত করেন।
বরখাস্ত থাকার পরও রাজনৈতিক প্রভাবের কারণে ২০২৪ সালের ১৯ নভেম্বর তিনি উপ-সহকারী থেকে সহকারী পদে পদোন্নতি লাভ করেন বলে অভিযোগ। জানা যায়, সাবেক মন্ত্রী বেগম মন্নুজান সুফিয়ান এর ভাই শাহাবুদ্দিন ও দৌলতপুর তহসিল অফিসের নায়েব আব্দুল্লাহ আল মাহমুদ এর সুপারিশেই এই পদোন্নতি সম্ভব হয়।
এদিকে, তার স্বামী সেলিম করিমও একই রাজনৈতিক প্রভাববলয়ের সদস্য ছিলেন এবং বর্তমানে রাজনৈতিকভাবে ভিন্ন দলের সঙ্গে সম্পৃক্ত বলে জানা গেছে।স্থানীয়দের অভিযোগ, নিলুফা ইয়াসমিন ও তার সহযোগী পিয়ন হেলাল এবং সার্ভেয়ার মিজানুর রহমান মিলে একটি দালাল সিন্ডিকেট পরিচালনা করছেন।
তারা অধিক উৎকোচের বিনিময়েনিষেধাজ্ঞাকৃত জমির নামজারি রিপোর্ট দিচ্ছেন,কৃষিজমিতে অবৈধভাবে বালু ভরাটের অনুমতি দিচ্ছেন,
এবং বিভিন্ন দোকান ও ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের মালিকদের ভয়ভীতি দেখিয়ে চাঁদা আদায় করছেন।
সম্প্রতি, থুকড়া রোডের একটি দোকানঘর বন্ধ করে দেওয়ার হুমকি দেন নায়েব নিলুফা ইয়াসমিনদোকান ছেড়ে দিতে হবে, না হলে ৫ লাখ টাকা দিতে হবে — তাহলেই সমস্যা মিটে যাবে।”
এ ঘটনায় ভুক্তভোগীরা জেলা প্রশাসক বরাবর লিখিত অভিযোগ ও ক্ষতিপূরণ দাবিতে আবেদন করেছেন।
প্রশাসনিক নীরবতা ও ভুক্তভোগীর দাবি দোকানদার জানিয়েছেন, তিনি এসি (ল্যান্ড) অফিসে সমস্ত বৈধ কাগজপত্র দাখিল করলেও সহকারী কমিশনার (ভূমি) অপ্রতিম কুমার চক্রবর্তী (বিসিএস ৩৮ ব্যাচ) তা না দেখে দোকানঘরটি সিলগালা করেন।
বর্তমানে বিষয়টি ডুমুরিয়া সিনিয়র সহকারী জজ আদালতে মামলা নং ১৪০/২৫ হিসেবে বিচারাধীন রয়েছে।
ভুক্তভোগী দোকানদার অভিযোগ করেছেন,
“আমার দোকান অন্যায়ভাবে বন্ধ করা হয়েছে। আমি ক্ষতিপূরণ ও ঘটনার সুষ্ঠু তদন্ত চানস্থানীয় জনগণ প্রশাসনের কাছে দাবি জানিয়েছেন—দুর্নীতিগ্রস্ত নায়েব নিলুফা ইয়াসমিন ও তার সহযোগী চক্রের বিরুদ্ধে দ্রুত তদন্ত করে উপযুক্ত ব্যবস্থা নিতে হবে, যাতে সাধারণ মানুষ হয়রানির শিকার না হয়।
Copyright © 2022 KhulnarKhobor.com মেইল:khulnarkhobor24@gmail.com।জাতীয় অনলাইন গণমাধ্যম নীতিমালা আইনে তথ্য মন্ত্রণালয় কর্তৃক নিবন্ধন আবেদিত।স্মারক নম্বর:- ০৫.৪৪.৪৭০০.০২২.১৮.২৪২.২২-১২১।এই নিউজ পোর্টালের কোন লেখা, ছবি, অডিও, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।