মোঃ ফয়সাল হোসেন কয়রা উপজেলা প্রতিনিধি।।খুলনার কয়রা উপজেলার উত্তরবেদকাশির প্রায় শত বছরের প্রাচীনতম কাশির হাট এখন দখল আর ভাড়া বাণিজ্যের অভয়ারণ্যে পরিণত হয়েছে। এক সময়কার ঐতিহ্যবাহী হাটটি এখন ভোগ দখলে থাকা স্থায়ী বসতি ও দোকান ঘরের সারি। এখনও কিছু কিছু ফাঁকা জায়গায় দখল করে দোকানঘর নির্মাণ করছেন স্থানীয় ব্যবসায়ীরা। এরপরও স্থানীয় প্রশাসন কিছু করছে না বলে অভিযোগ উঠেছে।
উপজেলা ভূমি কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, ওই কাশিরহাটের নামে ১৩৫৯ ও ১৩৯২ দাগে ৩২ বিঘা সরকারি জায়গা রয়েছে।গত বুধবার সরেজমিন দেখা যায়, হাটের জায়গায় মন্দির,বহু পুরাতন একটি পাঠশালা( সুকুমার মাস্টারের পাঠশালা), মসজিদ ও সরকারি ভাবে বেঁড়িবাধের ভাঙনে ঘর বাড়ি হারানো ২০ পরিবারকে বসবাসের জায়গা দেওয়া বাদে বাকি জায়গা ইতোমধ্যে দখল করে বিভিন্ন বসতবাড়ি ও দোকানপাট গড়ে উঠেছে।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, পাকিস্তান আমলে উত্তর বেদকাশিতে কপোতাক্ষ নদীর পাশে সরকারি ভাবে ৩২ বিঘা জমি বরাদ্দ দেওয়া হয় হাটের নামে।সপ্তাহের মঙ্গলবার হাট বসত, জমায়েত হতো হাজার হাজার মানুষ। পালের নৌকা নিয়ে বণিক আসতো পণ্য নিয়ে বহু দূর দুরন্ত থেকে ।প্রচুর বেচা-কেনা হতো। কাক ডাকা ভোর থেকে রাত অবধি হাজার হাজার মানুষের সমাগমে গমগম করতো গোটা এলাকা। শীতের রাতে যাত্রাপালা হতো। বার বার প্রাকৃতিক দুর্যোগে হাটের কিছু অংশ নদী গর্ভে যাওয়া,চুরি ডাকাতি, হাটের জায়গা দখল করে ঘর ও দোকান নির্মাণ হওয়ায় আস্তে আস্তে হাট বসা বন্ধ হয়ে যায়। দীর্ঘ ২০ বছর হাট বসা বন্ধ হয়েছে। হাটের জায়গা দখল করে এখন দোকানঘর করে ব্যাবসা করছেন স্থানীয়রা।উত্তর বেদকাশির কাশির হাটের সরকারি জমি দখল করে ১৭ টি বসতবাড়ি, ৩১ টি দোকানঘর নির্মাণ করে ভোগ দখল করে ব্যাবসা বাণিজ্য করছে স্থানীয়রা।
স্থানীয়রা বলছেন, কাশির হাট কেবল ব্যবসার জায়গা নয়, বরং দক্ষিণ অঞ্চলের স্থানীয় অর্থনীতির প্রাণ ছিল।দখল এবং প্রাকৃতিক বিপর্যয়ে ও বার বার নদী ভাঙনে বিধ্বস্ত হওয়া এই অঞ্চলে প্রাচীনতম এই হাটটি বন্ধ হয়ে যায়। এই সুযোগে প্রশাসনের কার্যকর কোন ভূমিকা না থাকায় কতিপয় অসাধু ব্যক্তি, এই সরকারি সম্পত্তি দেদারসে দখল করে নিচ্ছে। এলাকার সাধারণ জনগণ বাঁধা দিতে গেলে দখলকারিরা একতাবদ্ধ হয়ে তাদের বিরুদ্ধে প্রতিরোধ তৈরি করে।পাকিস্থান আমলে গড়ে ওঠা জমজমাট এই হাট এখন কেবল স্মৃতি। এলাকাবাসীর দাবি যেহেতু হাটের জায়গাটি কপোতাক্ষ নদের তীরে অবস্থিত এবং জেলা সদর থেকে উত্তর বেদকাশী খেয়াঘাট(হাটের জায়গা) পর্যন্ত প্রশস্ত দৃষ্টি নন্দন রাস্তা রয়েছে সেহেতু প্রাচীন এই হাটের বেদখলীয় সম্পত্তি দখলকারীদের কাছ থেকে পুনঃ উদ্ধার করে ।
সৌন্দর্য বর্ধন করে বৃক্ষরোপণসহ বিনোদন স্পষ্ট তৈরি করে দিলে জায়গাটি পরিবেশ বান্ধব হবে এবং বেদকাশীর ঐতিহ্য ফিরে পাবে।সরকারও রাজস্ব পাবে। স্থানীয় স্কুল শিক্ষক সুকুমার বাউলিয়া বলেন, শতবর্ষী এই হাট কয়রার ইতিহাস ঐতিহ্যের অংশ, তাই এই সম্পত্তি এমন জনকল্যাণমুখী কাজে লাগানো হোক যাতে স্মরণীয় হয়ে থাকে।
স্থানীয় বাসিন্দা নুরুজ্জামান বলেন, কাশির হাটখোলা একটি গুরুত্বপূর্ণ মোহনা, কয়রা উপজেলার সর্বশেষ ইউনিয়ন দক্ষিণ বেদকাশী ও শ্যামনগর উপজেলার গাবুরা ইউনিয়নের জনগণ এই পথে কয়রা সদর ও খুলনা জেলা শহরে যাতায়াত করে। যেহেতু নানা কারণে দীর্ঘদিন হাট বসে না সেকারণে হাটের বেদখল জায়গা অতিদ্রুত উচ্ছেদ করে কাশির হাটখোলায় হাটের কিছু অংশে একটি স্থায়ী বাসস্ট্যান্ডের দাবি জানান তিনি৷
স্থানীয় বাসিন্দা ও প্রবাসী সাংবাদিক ফরহাদ হুসাইন জানান, এই সম্পত্তি অবিলম্বে দখলমুক্ত করে মসজিদ, মন্দির ও স্কুলের অনুকুলে বরাদ্দ দিয়ে বাকি জমিতে স্থায়ীভাবে বাসস্ট্যান্ড ও শিশুপার্ক গড়ে তোলা দরকার। এবং গৃহহীন পরিবার যারা বসে আছে তাদের নামে জমি বরাদ্দ দিতে হবে
এ ব্যাপারে দখলকারী কয়েকজনের সাথে কথা বললে তারা ভূমি অফিস কথা বলে অনুমতি নিয়ে দোকান করে ব্যবসা করছেন বলে জানান।
এ ব্যাপারে উত্তর বেদকাশি ইউনিয়ন ভূমি কর্মকর্তা চারু সরকার বলেন, আমরা কোন অনুমতি দেয়নি। কিছুদিন আগে অভিযোগ পেয়ে আমি নোটিশ পাঠিয়েছি ঘর অপসারণের জন্য। নিজেদের ইচ্ছায় দোকান অপসারণ না করলর অচিরেই সেখানে অভিযান চালানো হবে।
এ ব্যাপারে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা আব্দুল্লাহ আল বাকি বলেন, বিষয়টি আমি অবগত নাই । খোঁজ খবর নিয়ে দেখবো৷ যারা অবৈধভাবে সরকারি জমি দখল করে দোকানঘর নির্মাণ করেছেন, তাঁদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
Copyright © 2022 KhulnarKhobor.com মেইল:khulnarkhobor24@gmail.com।জাতীয় অনলাইন গণমাধ্যম নীতিমালা আইনে তথ্য মন্ত্রণালয় কর্তৃক নিবন্ধন আবেদিত।স্মারক নম্বর:- ০৫.৪৪.৪৭০০.০২২.১৮.২৪২.২২-১২১।এই নিউজ পোর্টালের কোন লেখা, ছবি, অডিও, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।