খুলনার খবর।।দীর্ঘ ১৪ বছরের অপেক্ষার অবসান ঘটিয়ে খুলনায় চালু হলো দেশের অন্যতম আধুনিক জেলা কারাগার। শনিবার (১ নভেম্বর) সকালে পুরোনো জেলা কারাগার থেকে প্রথম ধাপে ১০০ জন সাজাপ্রাপ্ত বন্দীকে তিনটি প্রিজন ভ্যানে করে নতুন স্থাপনায় স্থানান্তর করা হয়।
নতুন কারাগারে বন্দীদের হাতে রজনীগন্ধা ও গোলাপ ফুল দিয়ে বরণ করেন কারা উপমহাপরিদর্শক মনির আহমেদ। এ সময় খুলনা জেলা কারাগারের জেল সুপার নাসির উদ্দিন প্রধান, জেলার মুনীর হোসাইনসহ কারা বিভাগের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।
কারা সূত্র জানায়, প্রথমে গত ২৫ অক্টোবর বন্দী স্থানান্তরের পরিকল্পনা ছিল। তবে নতুন কারাগারের কিছু নির্মাণকাজ শেষ না হওয়ায় তা এক সপ্তাহ পিছিয়ে যায়। অবশেষে শনিবার সকালেই বন্দীদের নতুন স্থাপনায় নেওয়া হয়।
জেলার মুনীর হোসাইন বলেন, “আজ ১০০ জন সাজাপ্রাপ্ত বন্দীকে নতুন কারাগারে স্থানান্তর করা হয়েছে। ধাপে ধাপে আরও বন্দী আনা হবে। যশোর থেকেও কিছু বন্দী এখানে স্থানান্তর করা হবে, এতে খুলনা ও যশোরের কারাগারের চাপ কমবে।”
তিনি জানান, এই আধুনিক কারাগারটি সংশোধনাগার হিসেবে কাজ করবে। বন্দীদের বিভিন্ন প্রশিক্ষণ ও মানসিক সহায়তা দেওয়া হবে, যাতে তারা সাজা শেষে স্বাভাবিক জীবনে ফিরে যেতে পারেন।কারা সূত্রের তথ্য অনুযায়ী, নতুন জেলা কারাগারের পাশাপাশি খুলনার পুরোনো কারাগারও চালু থাকবে। পুরোনো কারাগারটিকে ভবিষ্যতে ‘মেট্রোপলিটন কারাগার’ হিসেবে পরিচালনা করা হবে, যেখানে খুলনা সিটি করপোরেশন এলাকার বন্দীদের রাখা হবে। অন্যদিকে নতুন কারাগারে জেলার অন্যান্য উপজেলার বন্দীরা থাকবেন।
ভৈরব নদের তীরে অবস্থিত ১১৩ বছরের পুরোনো খুলনা কারাগারে বর্তমানে ধারণক্ষমতার দ্বিগুণের বেশি বন্দী রয়েছেন। সেখানে জরাজীর্ণ ভবনে বন্দীদের ঝুঁকিপূর্ণ অবস্থায় থাকতে হয়। এই কারণেই নতুন কারাগার নির্মাণের উদ্যোগ নেয় সরকার।রূপসা সেতু বাইপাস সড়কের জয়বাংলা মোড়ের পাশে প্রায় ৩০ একর জমির ওপর নতুন কারাগারটির নির্মাণ কাজ পরিচালনা করে গণপূর্ত বিভাগ। প্রকল্পটি অনুমোদন পায় ২০১১ সালে একনেক সভায়। প্রাথমিকভাবে ব্যয় ধরা হয় ১৪৪ কোটি টাকা। পরে তিন দফা সংশোধনের মাধ্যমে ব্যয় বেড়ে দাঁড়ায় ২৮৮ কোটি টাকা এবং সময়সীমা বাড়ানো হয় আটবার।
প্রকল্প কর্মকর্তারা জানান, কারাগারটি আধুনিক সংশোধনাগার হিসেবে নির্মিত হয়েছে। এখানে বিচারাধীন ও সাজাপ্রাপ্ত বন্দীদের আলাদা ব্যারাকে রাখা হবে। নারী ও কিশোর বন্দীদের জন্য রয়েছে পৃথক ওয়ার্ড, হাসপাতাল ও মোটিভেশন সেন্টার।
নতুন কারাগারে রয়েছে ৫০ শয্যার হাসপাতাল, গ্রন্থাগার, স্কুল, ডে-কেয়ার সেন্টার, খাবার কক্ষ, আধুনিক সেলুন ও লন্ড্রি। শিশু-সন্তানসহ নারী বন্দীদের জন্য পৃথক ওয়ার্ডে লেখাপড়া, খেলাধুলা ও বিনোদনের ব্যবস্থা রাখা হয়েছে। এছাড়া নারী ও পুরুষ বন্দীদের জন্য আলাদা ওয়ার্কশেড, নামাজের ঘর ও বিনোদনকেন্দ্রও রয়েছে।
কারা সূত্র জানায়, কারাগারের ভেতরে প্রায় ৫ কিলোমিটার দীর্ঘ সীমানাপ্রাচীর নির্মাণ করা হয়েছে। ড্রেন, ফুটপাত, পয়ঃবর্জ্য শোধনকেন্দ্র, সৌরবিদ্যুৎ ব্যবস্থা, ওয়াকওয়ে, দুটি পুকুর ও বৃষ্টির পানি সংরক্ষণের ব্যবস্থা রাখা হয়েছে। বর্তমানে ২ হাজার বন্দীর আবাসনের ব্যবস্থা তৈরি হয়েছে, যা পর্যায়ক্রমে ৪ হাজারে উন্নীত করা হবে। জেলার মুনীর হোসাইন বলেন, “নতুন এই সংশোধনাগার পুরোপুরি চালু হলে এটি শুধু খুলনা নয়, দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের জন্যও একটি মডেল কারাগার হয়ে উঠবে।
Copyright © 2022 KhulnarKhobor.com মেইল:khulnarkhobor24@gmail.com।জাতীয় অনলাইন গণমাধ্যম নীতিমালা আইনে তথ্য মন্ত্রণালয় কর্তৃক নিবন্ধন আবেদিত।স্মারক নম্বর:- ০৫.৪৪.৪৭০০.০২২.১৮.২৪২.২২-১২১।এই নিউজ পোর্টালের কোন লেখা, ছবি, অডিও, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।