মোহাম্মদ জসিম উদ্দিন তুহিন,যশোর জেলা প্রতিনিধি// যশোর সদর উপজেলার চুড়ামনকাটি ইউনিয়নের আব্দুলপুর গ্রামে এক তরুণী ও তার বন্ধুকে আটকে রেখে বেধড়ক মারপিটের একটি ভিডিও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ভাইরাল হওয়া ঘটনায় মামলা হওয়ার পর পুলিশ চুড়ামনকাটি ইউনিয়নের ৭ নম্বর ওয়ার্ডের সদস্য (মেম্বার) আনিচুর রহমান ও তার তিন সহযোগীকে গ্রেফতার করেছে।
জানা গেছে, ১৫,০৩,২০২২ ইং তারিখ রাত অনুমান ১৯:০০ ঘটিকার সময় যশোর কোতয়ালী মডেল থানাধীন আব্দুলপুর গ্রামস্থ জনৈক রশিদের মুদি দোকানের সামনে আব্দুলপুর গ্রামের সাহেব আলীর মেয়ে ইতি (২০) সঙ্গীয় সাঈদ হাসান মটরসাইকেল যোগে পৌঁছালে স্থানীয় ইউপি মেম্বার মোঃ আনিচুর সঙ্গীয় ৫/৭ জন বে-আইনিভাবে আটক করে অকথ্য ভাষায় গালমন্দ ও কিল ঘুষি মেরে শ্লীলতাহানি ঘটনায়।
ঘটনাটি ভিডিও ধারণ করে সোশ্যাল মিডিয়ায় প্রকাশ করলে ইং ১৮/০৩/২০২২ তারিখে বিষয়টি ভাইরাল হয়ে পড়ে। নির্যাতিত নারী ইতি খাতুনের পিতা মোঃ সাহেব আলী বাদী হয়ে কোতয়ালী মডেল থানায় লিখিত এজাহার দায়ের করলে কোতয়ালী মডেল থানার মামলা নং-৬২, তাং- ১৮/০৩/২০২২ ইং, ধারা-১৪৩/৩৪১/৩২৩/৩৫৪/৩৭৯/৫০৬ পেনাল কোড রুজু হয়। সোশ্যাল মিডিয়ায় প্রকাশিত প্রকাশ্য নারী নির্যাতনের ঘটনার ভিডিওটি জেলা পুলিশ সুপার জনাব প্রলয় কুমার জোয়ারদার, বিপিএম (বার), পিপিএম এর দৃষ্টিগোচর হলে দ্রুত সময়ে জড়িতদের গ্রেফতার ও আইনগত ব্যবস্থা গ্রহনের জন্য কোতয়ালী থানা পুলিশসহ ডিবি পুলিশকে কঠোর নির্দেশনা প্রদান করেন।পুলিশ সুপার নির্দেশক্রমে ‘ক’ সার্কেলের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার এর দিক-নির্দেশনায় ওসি কোতয়ালী থানা তাজুল ইসলাম ও ওসি ডিবি রুপন কুমার সরকার, পিপিএম দের সার্বিক তত্ত্বাবধানে কোতয়ালী থানা পুলিশ ও ডিবি পুলিশের একটি টিম যৌথভাবে কোতয়ালী থানাধীন চুড়ামনকাটি, আব্দুলপুর সাকিনে অভিযান পরিচালনা করে ঘটনায় জড়িত আনিচুর মেম্বারসহ ০৪ জনকে গ্রেফতার করতে সক্ষম হয়।
নির্যাতনের শিকার তরুণী বলেন,গত ১৫ মার্চ সন্ধ্যার পর পাশের গ্রাম এনায়েতপুরে ওয়াজ মাহফিল শুনতে যাই। সেখানে দেরি হওয়ায় এক বন্ধু সাঈদের সাইকেলে করে বাড়ি ফিরছিলাম। পথে কয়েকজন আমাদের গতি রোধ করে একটি দোকানের মধ্যে নিয়ে দুশ্চরিত্রা বলে মারপিট শুরু করে। এতো মেরেছে যে ঠিকমতো হাঁটতে পারছি না। সারা শরীরে কালচে দাগ পড়ে গেছে। তরুণী বলেন, আনিচুর মেম্বার, আইয়ুব আলী, খোকন, ভুট্টোসহ কয়েকজন মারপিট করে। তারা তার কাছে থাকা কিছু টাকা,মোবাইল ফোন ও গলা থেকে সোনার চেইন কেড়ে নেয়। পরে খবর পেয়ে বাড়ির লোকজন তাকে উদ্ধার করে হাসপাতালে ভর্তি করে।সরদারপাড়া গ্রামের বাসিন্দা তরুণীর ওই বন্ধু বলেন, রাত হয়ে যাওয়ায় তরুণীকে বাড়ি পৌঁছে দিতে তিনি তাকে নিয়ে আব্দুল্লাপুর গ্রামে যান। এসময় পথে থাকা কয়েকজন তাদের পরিচয় জানতে চাইলে তিনি পরিচয় দেন। এরপর তারা ইউপি মেম্বারকে ডেকে এনে একটি দোকানে ঢুকিয়ে মারপিট শুরু করে। তরুণীর মা বলেন,বন্ধুর সাথে বাড়ি ফেরা কি অপরাধ ওরা তো আমাদের ডেকে জিজ্ঞেস করতে পারতো।না দেখলে কেউ বুঝতে পারবে না কতটা বর্বর নির্যাতন করেছে ওরা। ফেসবুকে ছড়িয়ে গেছে ভিডিও।আমার মেয়ের সম্মান আর থাকলো না।
চুড়ামনকাটি ইউনিয়নের চেয়ারম্যান দাউদ হোসেন বলেন, মেয়েটির বাবা-মাসহ কয়েকজন বিচার চাইতে এসেছিল।কোন সভ্য মানুষ এভাবে মারতে পারে না। যে কারণে আমি তাদের আইনের আশ্রয় নিতে বলেছি’।তরুণীর বাবা এ ব্যাপারে চারজনের নাম উল্লেখ করে যশোর কোতোয়ালি থানায় একটি মামলা করেন।
যশোর ডিবি পুলিশের ওসি রুপন কুমার সরকার বলেন, মামলা হওয়ার পর শুক্রবার রাতে অভিযান চালিয়ে ০৪ জনকে আটক করা হয়েছে। প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে ঘটনার সত্যতা পাওয়া যায়। আরো ব্যাপক জিজ্ঞাসাবাদের জন্য পুলিশ রিমান্ডের আবেদনসহ গ্রেফতারকৃত আসামীদের বিজ্ঞ আদালতে সোপর্দ করা হয়েছে।
Copyright © 2022 KhulnarKhobor.com মেইল:khulnarkhobor24@gmail.com।জাতীয় অনলাইন গণমাধ্যম নীতিমালা আইনে তথ্য মন্ত্রণালয় কর্তৃক নিবন্ধন আবেদিত।স্মারক নম্বর:- ০৫.৪৪.৪৭০০.০২২.১৮.২৪২.২২-১২১।এই নিউজ পোর্টালের কোন লেখা, ছবি, অডিও, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।