সোহেল হোসেন,লক্ষীপুর // জেলাতে বৃষ্টি ও জোয়ারের পানি জমে ক্ষেতেই পচন ধরছে সয়াবিনে।এই বছর সয়াবিনের ভালো ফলন হয়েছে। বাজারে ভালো দাম পেয়েও খুশি চাষিরা। আরো ১৫ দিন আবহাওয়া অনুকূলে থাকলে চাষিরা কষ্টের ফসল পুরোপুরি ঘরে তুলতে পারবেন। তবে তাতে বাধ সাধছে অসময়ের বৃষ্টি।
দেশের মোট উৎপাদনের প্রায় ৬৫ ভাগ সয়াবিন এই জেলায় উৎপাদন হয়। এই ফসলকে ঘিরে চরাঞ্চল ও গ্রামীণ অর্থনীতি বেশ চাঙ্গা থাকে। তবে এবার মেঘনা উপকূলের চরাঞ্চল ও বিভিন্ন স্থানের নিম্মাঞ্চলের ক্ষেতগুলোতে জলাবদ্ধতা সৃষ্টি হয়েছে। গত কয়েকদিনের থেমে থেমে বৃষ্টির পানিতে ওইসব এলাকার অধিকাংশ ক্ষেতে আধাপাকা সয়াবিনে পচন ধরেছে। এছাড়া গাছ নুইয়ে পড়া, বিবর্ণ ও কাদামাটি লেগেও ফসলের কিছু ক্ষতি হয়েছে। এনিয়ে শঙ্কায় রয়েছেন চাষিরা।
তবে কী পরিমাণ জমির ফসলের ক্ষতি হয়েছে তা শনিবার রাত পর্যন্ত জানাতে পারেনি জেলা কৃষি বিভাগ। তারা বলছেন, মাঠ পর্যায়ের কর্মকর্তাদের নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। তালিকা করা হচ্ছে। পরবর্তীতে ক্ষতিগ্রস্তদের সরকারি প্রণোদনা দেওয়া হবে।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, ঈদের দিন (৩ মে) থেকে থেমে থেমে গত শুক্রবার পর্যন্ত বৃষ্টি হয়েছে। এতে কমলনগর উপজেলার উত্তর চরমার্টিন, চরলরেঞ্চ, সদরের ভবানীগঞ্জ, চর উভূতি, চর আলী হাসান, চর রমনীমোজহন ও রায়পুরের নদী ঘেঁষা চরকাচিয়া, টুনুরচর, চরইন্দুরিয়া, চরঘাষিয়াসহ বিভিন্ন স্থানে ক্ষেতে পানি জমেছে। এরসঙ্গে কিছু জোয়ারের পানিও আছে। এতে অনেক চাষি তড়িঘড়ি করে অপরিপক্ক ফসল তুলছেন। তা পাশের রাস্তা ও উঁচুস্থানে জড়ো করে রাখছেন।
গত শনিবার অন্তত ১১ জন কৃষকের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, উপকূলের চরাঞ্চল ও বিভিন্ন স্থানের নিম্মাঞ্চলের সয়াবিন ক্ষেতের গাছ ও ফলনে পচন ধরেছে। এ বছর প্রথমে কৃষকরা ক্ষেতে বীজ বপন করেছিলেন। তখন অসময়ে অতিবৃষ্টি হয়। ফলে অনেক ক্ষেতে চারা গজায়নি। পরে কৃষকরা নতুন স্বপ্নে আবার বীজ লাগান। শনিবার পর্যন্ত কৃষকরা প্রায় ৪০ শতাংশ ফসল ঘরে তুলেছেন।
জেলা কৃষি বিভাগ জানিয়েছে, চলতি মৌসুমে জেলা সদর, রায়পুর, কমলনগর ও রামগতিতে ৩৮ হাজার হেক্টর জমিতে সয়াবিনের আবাদ হয়েছে। প্রতি হেক্টরে ১.৯ মেট্রিক টন সয়াবিনের উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে। এ হিসাবে ৭২ হাজার ২০০ মেট্রিক টন উৎপাদন হওয়ার কথা। এতে প্রায় সাড়ে ১৯ লাখ মণ সয়াবিন হবে। প্রতি মণ সয়াবিন ২ হাজার টাকা হিসাবে প্রায় ৪০০ কোটি টাকার লেনদেন হবে।
চরমার্টিন গ্রামের কৃষক কাশেম মাতাব্বর জানান, এবার বীজ বপনের কয়েকদিনের মধ্যে ভারি বৃষ্টি হয়েছে। এতে কিছু চারা গজায়নি। পরে আবার বীজ বপন করতে হয়েছে। এখন আবার বৃষ্টির পানিতে আধাপাকা ফসল নষ্ট হচ্ছে।
চরউভূতি গ্রামের কৃষক আলী হোসেন দেড় একর জমিতে সয়াবিন চাষ করেছেন। তিনি জানান, সয়াবিন পরিপক্ক না হতেই বৃষ্টিতে ক্ষেতে পানি জমে গেছে। এ কারণে গাছ মরে সয়াবিনগুলো নষ্ট হয়ে যাচ্ছে। কৃষি কর্মকর্তাদেরও দেখা পান না বলে অভিযোগ এ চাষির।
চরকাচিয়ার মোহন মিয়া বলেন, ১২০ শতাংশ জমিতে উচ্চ ফলনশীন সয়াবিন চাষ করেছি। ক্ষেতের পানি না নামার কারণে ফসল পচে যাচ্ছে। কাঁচা সয়াবিন পানি পেলে বিবর্ণ হয়ে যায়। বাজারে ভালো দাম পাওয়া যায় না।
রায়পুর উপজেলা হায়দরগঞ্জ বাজারের সয়াবিন ব্যবসায়ী সাইজ উদ্দিন মোল্লা বলেন, বিগত কয়েক বছরের থেকে এবার ভালো ফলন হয়েছে। এখন শুকনো সয়াবিনের মণ ২ হাজার ৩০০ থেকে ৪০০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। আধাপাকা সয়াবিন ১ হাজার ৮০০ থেকে বিক্রি হচ্ছে।
রায়পুর উপজেলার উত্তর চরবংশী ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান (ইউপি) আবু সালেহ মো. মিন্টু ফরায়েজী বলেন, বৃষ্টি ও জোয়ারের পানিতে কিছু ক্ষেতের সয়াবিনে পচন হচ্ছে। এছাড়া গাছ নুইয়ে পড়া, কাদামাটি লেগেও ফসলের কিছু ক্ষতি হয়েছে। এই বছর ফলন ও দাম ভালো।
কমলনগর উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা আতিক আহমেদ বলেন, কিছু এলাকায় জলাবদ্ধতা সৃষ্টি হয়েছে। এতে ক্ষেতে পানি জমে সয়াবিন নষ্ট হচ্ছে। আবহাওয়া ভালো থাকলে আগামী ১৫ দিনের মধ্যে কৃষকরা ফসল পুরোপুরি ঘরে তুলতে পারবেন।
লক্ষ্মীপুর কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক ড. মো. জাকির হোসেন বলেন, এবার সয়াবিনের ফলন ভালো হয়েছে। প্রাকৃতিক দুর্যোগের কারণে বৃষ্টি হওয়ায় কিছু এলাকায় ক্ষেতে থাকা সয়াবিন নষ্ট হচ্ছে। দ্রুত ফসল কেটে তোলার জন্য আমরা কৃষকদের পরামর্শ দিচ্ছি। এ গাছের পাতা হলুদ বর্ণ ধারণ করলে কাটার উপযোগী হয়। তিনি আরো বলেন, ক্ষতিগ্রস্ত কৃষকদের তালিকা তৈরি করার জন্য মাঠ পর্যায়ের কর্মকর্তাদের বলা হয়েছে। সরকারি প্রণোদনা এলে তাদেরকে এর আওতায় আনা হবে।
Copyright © 2022 KhulnarKhobor.com মেইল:khulnarkhobor24@gmail.com।জাতীয় অনলাইন গণমাধ্যম নীতিমালা আইনে তথ্য মন্ত্রণালয় কর্তৃক নিবন্ধন আবেদিত।স্মারক নম্বর:- ০৫.৪৪.৪৭০০.০২২.১৮.২৪২.২২-১২১।এই নিউজ পোর্টালের কোন লেখা, ছবি, অডিও, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।