পরেশ দেবনাথ,কেশবপুর,যশোর // যশোরের কেশবপুরে উৎসবমূখর ও শান্তিপূর্ন পরিবেশে শ্রী শ্রী জগন্নাথ দেবের রথযাত্রা অনুষ্ঠিত হয়েছে।শুক্রবার (১ জুলাই) শুরু হয়েছে হিন্দু সম্প্রদায়ের অন্যতম ধর্মীয় উৎসব রথযাত্রা। করোনা মহামারির কারণে গত দুই বছর রথযাত্রা উৎসব সীমিত পরিসরে উদযাপিত হয়েছিল। উৎসবটি, যদিও সম্প্রতি করোনা ভারইরাসের সংক্রমণ ঊধ্বমুখী হয়ে উঠেছে।তবুও পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে থাকায় শোভাযাত্রাসহ নানা ধর্মীয় অনুষ্ঠানমালার মধ্য দিয়ে আনন্দমুখর পরিবেশে উদযাপিত হয়েছে। ১ জুলাই রথে চড়ে মাসির বাড়ির উদ্দেশ্যে যাত্রা করলেন জগন্নাথ, বলরাম ও সুভদ্রা। এরপর আষাঢ় মাসের শুক্লপক্ষের দশমী তিথিতে তিন দেবদেবী ফিরে যাবেন মাসির বাড়ি থেকে। এই বছর জগন্নাথ দেব, বলভদ্র, শুভদ্রা দেবীর ফিরে যাওয়ার বহুদা তিথি পড়েছে ৯ জুলাই। নয় দিনের মাথায় অনুষ্ঠিত হয় উল্টো রথযাত্রা। যাওয়ার দিনকে বলে সোজা রথ এবং একই পথে নিজ মন্দিরে ফিরে আসাকে বলে উল্ট রথ।
রথযাত্রা উৎসবকে ঘিরে ভোরে, বালিয়াডাঙ্গা সর্বজনীন দেবালয়, নিমতলা মহাশ্মশান জগন্নাথ মন্দির, সন্যাসগাছা ঠাকুরবাড়ি মন্দির, ভালুকঘর ১১ গ্রাম সমন্বিত রথখলা মাঠ, কাটাখালী ইসকন মন্দির, কেশবপুর কালীতলা মন্দিরসহ বিভিন্ন মন্দিরে উষা কুর্দন ও সনাতনী ধ্বজ্জা উত্তোলন, বিশ্ব কল্যাণরাগ সমবেত প্রার্থনা, ঠাকুরের রাজভোগ নিবেদন, ভোগারতি ও মহাপ্রসাদ বিতরন অনুষ্ঠিত হয়, বিকাল ৫ টায় আরম্ভ হয়-বিশাল মহাশোভাযাত্রা। উক্ত শোভাযাত্রায় অংশ নেয় হাজারো সনাতন ধর্মাবলম্বী।
বালিয়াডাঙ্গা সর্বজনীন দেবালয় কেশবপুর যশোর হাজার হাজার ভক্তবৃন্দের উপস্থিতে শ্রী শ্রী জগন্নাথদেবের রথযাত্রায় অংশ গ্রহনে প্রধান পৃষ্টপোষক ছিলেন, শ্রী শ্যামল সরকার সম্মানিত ট্রাষ্টি হিন্দু ধর্মীয় কল্যাণ ট্রাষ্ট, ধর্ম বিষয়ক মন্ত্রনালয়। বালিয়াডাঙ্গা সর্বজনীন দেবালয় হতে রথযাত্রা শুরু হয়ে মাগুরাডাঙ্গা ত্রিপল্লি সর্বজনীন মন্দির প্রাঙ্গণ ঠাকুরের মাসীর বাড়ি এসে শেষ হয়। রথযাত্রায় নেতৃত্ব দেন, উপজেলা পূজা উদযাপন পরিষদের যুগ্ন সাধারণ সম্পাদক ও কেশবপুর উপজেলা আওয়ামীলীগের সাংগঠনিক সম্পাদক গৌতম রায়।
মাসির বাড়ি
কাটাখালী কেশবপুর যশোর ইসকন মন্দিরে শ্রী শ্রী জগন্নাথদেবের রথযাত্রার শুভ উদ্বোধক ও প্রধান আলোচক ছিলেন, শ্রী শ্যামল সরকার, সম্মানিত ট্রাষ্টি হিন্দু ধর্মীয় কল্যাণ ট্রাষ্ট।
অলোক চক্রবর্ত্তী জানান, এবার প্রথম সন্ন্যাসগাছা ঠাকুর বাড়ির পক্ষ থেকে রথ যাত্রা অনুষ্ঠিত হয়। বাড়ি হতে রথযাত্রা শুরু হয়ে অলোক চক্রবর্ত্তীর বাড়িতে (ঠাকুরের মাসীর বাড়ি) এসে শেষ হয়। রথযাত্রায় নেতৃত্ব দেন ভবানন্দ চক্রবর্ত্তী। এসময় সন্ন্যাসগাছা সহ এলাকার শত শত নারী পুরুষ ওই রথযাত্রায় অংশগ্রহণ করেন।
ভালুকঘর ১১ গ্রাম সমন্বিত রথখোলা মাঠ হতে রথযাত্রা শুরু হয়ে রবীন্দ্র নাথ ভট্টাচার্যের বাড়িতে (ঠাকুরের মাসীর বাড়ি) এসে শেষ হয়।
কথিত রয়েছে রথযাত্রার দিন যদি রথের রশি ছোঁয়া যায়, তাহলে তাতে ১০০ যজ্ঞের সমান পূণ্য লাভ হয়। রথযাত্রায় যাঁরা অংশ নেন তাঁদের মোক্ষ লাভ হয় বলেও বর্ণিত রয়েছে। আষাঢ়ের শুক্লপক্ষের দ্বিতীয়ার সময়কালেই রথযাত্রার পুজো বিভিন্ন গৃহস্থে আয়োজিত হয়ে থাকে। এই দিনে জগন্নাথদেব, বলভদ্র দেব ও শুভদ্রাদেবীকে ফুল, মিষ্টি দিয়ে পুজো করা হয়।
জগন্নাথ শব্দটির ব্যুৎপত্তিগত অর্থ “জগৎ” বা বিশ্বব্রহ্মাণ্ডের প্রভু”। “জগন্নাথ” কথাটি তৎপুরুষ সমাস। এটি “জগৎ” ও “নাথ” শব্দের সংমিশ্রণ গঠিত। যেমন “জগৎ” (যার মূল ধাতু “গম্”, অর্থাৎ “যা কিছু চলে”) এবং (“নাথ” অর্থাৎ, প্রভু বা আশ্রয়) শব্দটির সংমিশ্রণে গঠিত। সুতরাং “জগন্নাথ” অর্থ “যিনি এই বিশ্বব্রহ্মান্ডের আশ্রয় চলমান জগতের আশ্রয়দাতা অর্থাৎ প্রভু”। প্রতি বছর আষাঢ় মাসের শুক্ল পক্ষের ২য়া তিথিতে জগন্নাথদেবকে বিষ্ণুর অবতার রূপে পূজা করা হয়। তাঁকে এককবাবে পূজা করার সময় দধিবামনও বলা হয়। তবে জগন্নাথদেবকে নির্দিষ্ট কোন সম্প্রদায়ের বা মতানুসারীদের সঙ্গে যুক্ত করা যায় না। বৈষ্ণব, শৈব, শাক্ত, গানপত্য এবং সৌর- সকল শাখার অনুসারীরাই জগন্নাথদেবকে পূজা করেন। ষোড়শ শতাব্দীতে শ্রী তুলসীদাস পুরীতে এসে জগন্নাথদেবকে রঘুথান (রাম) রূপে পূজা করেছিলেন শ্রীচৈতন্যদেব মহাপ্রভুর সময় তাঁকে (জগন্নাথদেবকে) শ্রীকৃষ্ণের সঙ্গে যুক্ত করে পূজা করা হয়। এছাড়াও জগন্নাথকে তান্ত্রিক ক্রিয়ার সার মনে করা হয়। শৈব ও শাক্তরা জগন্নাথদেবকে দেবী বিমলার ভৈরব অর্থাৎ শিব মনে করেন। ভক্তরা বিশ্বাস করে, তাদের ইচ্ছা পূরণ হেতু জগন্নাথদেব যেকোনো দেবতার রূপ ধারণ করেন। এমনকি জগন্নাথ মন্দিরের পূজারিরাও শাক্ত সম্প্রদায়ভুক্ত। যদিও এই মন্দিরে বৈষ্ণব সম্প্রদায়ের প্রভাবই সবচেয়ে বেশি। ভাগবত পুরাণে আছে, ঋষি মার্কণ্ডেয় পুরুষোত্তম জগন্নাথ ও শিবের একত্ব প্রমাণ করেন। মহারাষ্ট্রের গণপতি ভট্ট হাতিবেশের সময় জগন্নাথকে গণেশ রূপে পূজা করেছিলেন। ওড়িয়া ভাষায় “জগন্নাথ” নাম থেকে উৎপন্ন “জগা” বা “জগবন্ধু” শব্দদুটিরও প্রচলন লক্ষ্য করা হয়। এছাড়া জগন্নাথের মূর্তির গড়ন অনুসারে তাঁর “কাল্য” (অর্থাৎ, “কালো দেবতা” বা “কালের দেবতা”), “দারুব্রহ্ম” (অর্থাৎ, কাষ্ঠরূপী ব্রহ্ম), “দারুদেবতা” (অর্থাৎ, কাঠের দেবতা), “চকাক্ষী”, “চকাদোলা বা “চকানয়ন” (অর্থাৎ, যে দেবতার চোখ গোলাকার) নামও প্রচলিত। জগন্নাথের সবচেয়ে বিখ্যাত উৎসব রথযাত্রা। এই উৎসবের সময় বলভদ্র, জগন্নাথদেব ও সুভদ্রার বিগ্রহ মূল মন্দিরের গর্ভগৃহ থেকে বের করে এনে কাঠে নির্মিত রথে চড়ান হয়। এই বিগ্রহের চোখ দুটো বড় বড় ও গোলাকার। হাত অসম্পূর্ণ এবং বিগ্রহের কোন পা দেখা যায় না। জগন্নাথদেবের পূজা পদ্ধতিও অন্যান্য দেবদেবীর পূজা পদ্ধতি থেকে আলাদা।
Copyright © 2022 KhulnarKhobor.com মেইল:khulnarkhobor24@gmail.com।জাতীয় অনলাইন গণমাধ্যম নীতিমালা আইনে তথ্য মন্ত্রণালয় কর্তৃক নিবন্ধন আবেদিত।স্মারক নম্বর:- ০৫.৪৪.৪৭০০.০২২.১৮.২৪২.২২-১২১।এই নিউজ পোর্টালের কোন লেখা, ছবি, অডিও, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।