শেখ খায়রুল ইসলাম,পাইকগাছা খুলনা প্রতিনিধি // পাইকগাছার রাড়ুলী জেলে পল্লী কপোতাক্ষ নদের পূর্ণিমার জোয়ারের পানিতে রাতে ও দিনে দুইবার ডুবছে।ডুবা-জাগা ও ভাঙ্গনের খেলায় ঝুঁকি নিয়ে নির্ঘুম রাত কাটাচ্ছে জেলে পল্লীর ১শ ৫০ পরিবার। তাদের বাড়ি ঘর রক্ষায় নেই কোন টেকসই বেঁড়িবাঁধ। বর্ষা মৌসুমের শুরুতেই আবার নতুন করে ভাঙ্গন দেখা দিয়েছে। নদী ভাঙ্গন রোধে দীর্ঘমেয়াদী টেকসই বেঁড়িবাধ প্রকল্প বাস্তবায়ন, পরিকল্পিত নদী শাসনের দাবী জানিয়েছেন স্থানীয় জনপ্রতিনিধিসহ ইউনিয়নবাসী।
কপোতাক্ষ নদের তীরে রাড়ুলী ইউনিয়ন। এ ইউনিয়নে জেলে পল্লী প্রায় শত বছর ধরে ভাঙ্গন রয়েছে বলে এলাকাবাসী জানিয়েছেন। জেলে পল্লীর মনোরঞ্জন বিশ্বাস জানান, আমাদের পূর্বপুরুষ মিলে এখানে প্রায় ২শ বছর ধরে বসবাস করে আসছি। কপোতাক্ষ পাড়ে জেলে পল্লীতে আমরা প্রায় ৫শ পরিবার বসবাস করতাম। কিন্তু ভাঙ্গনে ঘরবাড়ি হারিয়ে ৩শ ৫০ পরিবার অন্যতরে চলে গেছে। কেউ রাস্তার পাশে সরকারী জমিতে আবার কেউ সরকারের আবাসনে ঠাঁই মিলেছে। আমার ঘর ভেঙ্গে গেছে। আমি পার্শ্বে একটি সরকারী রাস্তার পাশর একটি টোঙ ঘরে বসবাস করছি। বর্তমানে ভাঙ্গন কুলে ১৫০ পরিবার বসবাস করছে। একই এলাকার বাবুরাম বিশ্বাস (৫৫) বলেন, কপোতাক্ষ নদ ভাঙ্গনে আমি তিনবার ঘর ভেঙ্গে ঘর তৈরী করেছি। বর্তমান ঘরটি ভেঙ্গে যাওয়ার পথে। নদে রান্না ঘর চলে গেছে থাকার ঘরটি টিকে থাকলেও ঘরটি নদের কিনারায় ঝুলছে। জোয়ারের পানিতে রাত দিন দুইবার ডুবছে আমাদের ঘরবাড়ি। জোয়ারের সময় ছেলে-মেয়েদের নিয়ে ভয়ে রাত জেগে বসে থাকি। কখন নদীতে ঘরখানী নদীতে নিয়ে যায়। বর্তমানে পূর্ণিমার অতিরিক্ত পানি বাড়ায় আমাদের ঘরবাড়ির উঠানে থইথই পানি। দুপুরে রান্না হয়নি। ভাটায় পানি সরে গেলে রান্না হবে। অনেক সময় আমরা রান্না করতে না পারায় শুকনা খাবার খেয়ে জীবন ধারণ করি। নদের পাশে বাড়িঘর রক্ষার বাঁধ থাকলে জোয়ারের পানি উঠতো না। মান্দার বিশ্বাস (৬৭) বলেন, কপোতাক্ষের পাড়ে আমাদের পূর্বপুরুষরা বসবাস করে আসছে। প্রায় ১ কিলোমিটার জায়গা কপোতাক্ষ নদের ভাঙ্গনে চলে গেছে। বিপরীত পারে চর জেগেছে। সেখানে যদি আমাদের জায়গা দিতো তাহলে আমরা বসবাস করতে পারতাম। ভাঙ্গন দেখতে শুধু জনপ্রতিনিধিরা আসে কিন্তু কোন কাজ হয়না। এ ব্যাপারে রাড়ুলী ইউনিয়নের সংশ্লিষ্ট ওয়ার্ডের ইউপি সদস্য ইলিয়াস হোসেন জানান, ভাঙ্গন রোধে সরকারের তরফ থেকে কিছু জিও ব্যাগ ফেলা হয় কিন্তু তাতে কোন কাজ হয়নি। রাড়ুলী ইউনিয়ন চেয়ারম্যান আবুল কালাম আজাদ বলেন, বিষয়টি নিয়ে পাইকগাছা কয়রা সংসদ সদস্য মোঃ আক্তারুজ্জামান বাবুর সাথে কথা হয়েছে। তিনি ভাঙ্গনের বিষয় নিয়ে উর্দ্ধতন কর্তৃপক্ষের সাথে কথা বলেছেন। পাইকগাছা পানি উন্নয়ন বোর্ডের উপ-সহকারী প্রকৌশলী রাজু হাওলাদার বলেন, রাড়ুলীর কপোতাক্ষ নদের ভাঙ্গন এলাকা পরিদর্শন করে চলতি বছরের চাহিদা পাঠিয়েছি। এখন বরাদ্দ হয়নি, বরাদ্দ হলে কাজ শুরু করা হবে।
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মমতাজ বেগম বলেন, ভাঙ্গন এলাকায় গিয়েছি কিন্তু ভাঙ্গনের কারণে জেলে পল্লী রক্ষা বাঁধ দেয়া সম্ভব হচ্ছে না। এ বিষয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করার জন্য পানি উন্নয়ন বোর্ডকে জানিয়েছি।
Copyright © 2022 KhulnarKhobor.com মেইল:khulnarkhobor24@gmail.com।জাতীয় অনলাইন গণমাধ্যম নীতিমালা আইনে তথ্য মন্ত্রণালয় কর্তৃক নিবন্ধন আবেদিত।স্মারক নম্বর:- ০৫.৪৪.৪৭০০.০২২.১৮.২৪২.২২-১২১।এই নিউজ পোর্টালের কোন লেখা, ছবি, অডিও, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।