পরেশ দেবনাথ,কেশবপুর,যশোর // যশোরের কেশবপুর উপজেলায় এবার ৯৩ টি মণ্ডপে সিসি ক্যামেরার আওতায় শারদীয় দুর্গোৎসব পালিত হচ্ছে। শুক্রবার পর্যন্ত ভাস্কররা তাদের প্রতিমা আকর্ষণীয় করতে তুলির আঁচড় দিতে ব্যস্ত ছিলেন।
আজ মহা সপ্তমী পূজা। উপজেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে কঠোর নিরাপত্তা থাকবে বলে আশ্বাস দেওয়া হয়েছে।
উপজেলার কেশবপুর পৌরসভা ও ১১ টি ইউনিয়নে শারদীয় দুর্গোৎসব পালিত হচ্ছে। কেশবপুর পৌরসভা এলাকায় ৮টি, এক নম্বর ত্রিমোহিনী ইউনিয়নে ১টি, দুই নম্বর সাগরদাঁড়ি ইউনিয়নে ১২টি, তিন নম্বর মজিদপুর ইউনিয়নের ৬টি, চার নম্বর বিদ্যানন্দকাটি ইউনিয়নে ৪টি, পাঁচ নম্বর মঙ্গলকোট ইউনিয়নে ৪টি, ছয় নম্বর কেশবপুর সদর ইউনিয়নে ৭টি, সাত নম্বর পাঁজিয়া ইউনিয়নে ৯টি, আট নম্বর সুফলাকাটি ইউনিয়নে ১১টি, নয় নম্বর গৌরীঘোনা ইউনিয়নে ১১টি, দশ নম্বর সাতবাড়িয়া ইউনিয়নে ১০টি ও এগার নম্বর হাসানপুর ইউনিয়নে ১০টি মিলে মোট ৯৩ টি মন্দিরে যাক জমক পূর্ণভাবে দুর্গা পূজা অনুষ্ঠিত হচ্ছে।
বাংলাদেশ পূজা উদযাপন পরিষদ কেশবপুর উপজেলা শাখার সাধারণ সম্পাদক মাস্টার সুকুমার সাহা বলেন, এবার শারদীয় দুর্গোৎসবে সরকারি নির্দেশনা মেনে পালন করা হচ্ছে। যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক গৌতম রায় বলেন, সরকারি নির্দেশ মতে অপ্রীতিকর ঘটনা রোধে এই সিসি ক্যামেরার ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে, বিদ্যুৎ সাশ্রয়ের জন্য এবার পূজা মন্দির গুলোতে অতিরিক্ত আলোকসজ্জা না করার তাগিদ দেয়া হয়েছ। সমস্ত মন্দিরে ইতিমধ্যে সিসি ক্যামেরা লাগানো কার্যক্রম সমাপ্ত। পূজা মন্দিরের সংখ্যা বেড়ে ৯৩ টি হয়েছে। সুষ্ঠু সুন্দরভাবে দুর্গাপূজা সম্পন্ন করার লক্ষ্যে প্রশাসনের পক্ষ থেকে সার্বিক সহযোগিতার আশ্বাস প্রদান করা হয়েছে বলে বাংলাদেশ পূজা উদযাপন পরিষদ কেশবপুর উপজেলা শাখার সহ-সভাপতি নন্দ দুলাল বসু বলেন।
কেশবপুর থানার অফিসার ইনচার্জ মোহাম্মদ বোরহান উদ্দিন জানান, শারদীয় দুর্গোৎসবে আইন-শৃঙ্খলা মোকাবেলায় পুলিশ বাহিনীর পাশাপাশি অন্যান্য আইন প্রয়োগকারী সংস্থার সদস্যরা তৎপর রয়েছেন। কেশবপুর উপজেলা নির্বাহি কর্মকর্তা এমএম আরাফাত হোসেন বলেন, শারদীয় দুর্গোৎসব সুষ্টুভাবে পালনে সর্বোচ্চ নিরাপত্তা ব্যবস্থা রাখা হয়েছে।
শারদীয় উৎসবে এবার দেবী দুর্গার আগমন ঘটেছে গজে বা হাতির পিঠে চেপে। হাতির পিঠে চেপে আসলে শস্য ভালো হয়। আর দেবী ফিরে যাবেন নৌকায়। এ সময় প্লাবন বা অতিবৃষ্টির আশঙ্কা থাকে বলে জানিয়েছেন পুরোহিত স্বপন চক্রবর্তী।
শুক্রবার ও শণিবার সকালে কেশবপুরের মঙ্গলকোট চৌধূরী বাড়ী ও বিদ্যানন্দকাটি পূজা মন্দিরে যেয়ে দেখা গেল ভাষ্কর কার্তিক পাল তার দুই সহকর্মী জয়দেব পাল ও তমাল পালকে নিয়ে দ্রুত কাজ চালিয়ে যাচ্ছেন। তিনি উপজেলার ৫ টি মন্দিরে প্রতিমা গড়ার কাজ ধরেছেন।
মঙ্গলকোট ইউনিয়ন আনছার ভিডিপি কমান্ডার আলতাফ হোসেন মঙ্গলকোট চৌধূরী বাড়ি পূজা মন্দির প্রাঙ্গন থেকে জানান, এখানে সুষ্ঠু ও সুন্দরভাবে দুর্গাপূজা সম্পন্ন করার লক্ষ্যে সার্বিক প্রস্তুতি গ্রহন করা হয়েছে।
প্রচলনের ইতিহাস শারদীয়া দুর্গাপূজাকে‘অকালবোধন’বলা হয়। কালিকা পুরাণ ও বৃহদ্ধর্ম পুরাণ অনুসারে, রাম ও রাবণের যুদ্ধের সময় শরৎকালে দুর্গাকে পূজা করা হয়েছিল। হিন্দুশাস্ত্র অনুসারে, শরৎকালে দেবতারা ঘুমিয়ে থাকেন। তাই এই সময়টি তাঁদের পূজা যথাযথ সময় নয়। অকালের পূজা বলে তাই এই পূজার নাম হয় ‘অকালবোধন’। এই দুই পুরাণ অনুসারে, রামকে সাহায্য করার জন্য ব্রহ্মা দুর্গার বোধন ও পূজা করেছিলেন। কৃত্তিবাস ওঝা তাঁর রামায়ণে লিখেছেন, রাম স্বয়ং দুর্গার বোধন ও পূজা করেছিলেন। তবে রামায়ণের প্রকৃত রচয়িতা বাল্মিকী মুনি রামায়ণে রামচন্দ্রকৃত দুর্গাপূজার কোনো কিছু উল্লেখ করেননি। উপরন্তু রামায়ণের অন্যান্য অনুবাদেও এর কোনো উল্লেখ পাওয়া যায় না। তবে এই প্রচলিত তথ্য অনুসারে স্মৃতিশাস্ত্রসমূহে শরৎকালে দুর্গাপূজার বিধান দেওয়া হয়েছে। হংস নারায়ণ ভট্টাচার্যের মতে, ‘অকালবোধন শরতে বৈদিক যজ্ঞের আধুনিক রূপায়ণ ছাড়া আর কিছুই না।
সনাতম ধর্মের যেকোনো পূজার ক্ষেত্রে সব থেকে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে সংস্কৃত মন্ত্রগুলো। দুর্গাপূজার মন্ত্রগুলো সাধারণত শ্রী শ্রী চণ্ডি থেকে পাঠ করা হয়। ঢাক-ঢোল, খোল করতাল, সুগন্ধি আগরবাতি আর এগুলোর সাথে সংস্কৃতমন্ত্র পবিত্র এক পরিবেশের জন্ম দেয়।বাঙালি হিন্দু সম্প্রদায়ের কাছে দেবী দুর্গা পরম ভক্তিময়। তাঁর এক রূপ অসুরবিনাশী, আরেক রূপ মমতাময়ী মাতার। তিনি অশুভর প্রতীক অসুরদের দলপতি মহিষাসুরকে বধ করে দেবকুলকে রক্ষা করেছিলেন। আমাদের বিশ্বাস, এর মধ্য দিয়ে অন্যায়-অশুভর বিপরীতে ন্যায় ও শুভশক্তির জয় হয়েছিল। তিনি কেবল সৌন্দর্য-মমতা-সৃজনের আধারই নন, অসহায় ও নিপীড়িতের আশ্রয় দানকারী বলেও গণ্য হন।
তাই, দূর্গা পূজা কেবল মাত্র পুস্পবিল্বপত্রের এবং ঢাক-ঢোলের পূজা নয়। এ পূজা মানবতার এক বিরাট মিলন উৎসব। ভগবতী দূর্গা। ভগ মানে ঐশ্বর্য্য। তাই, ভগবতী মানে ঐশ্বর্য্যশালিনী। ঐশ্বর্য্য, বীর্য্য, যশ, শ্রী, জ্ঞান ও বৈরাগ্য এই ছয়টি ঐশ্বর্য্যরে নাম ‘ভগ’।
এই ছয়টিই মা-দূর্গার মধ্যে পূর্ণ মহিমায় বিরাজিত। আবার তিনি ‘মহামায়া’। মায়া কথাটি এসেছে মা-ধাতু থেকে, অর্থ পরিমাপ করা। মহামায়া মানে মহাপরিমাপনকর্ত্রী।
Copyright © 2022 KhulnarKhobor.com মেইল:khulnarkhobor24@gmail.com।জাতীয় অনলাইন গণমাধ্যম নীতিমালা আইনে তথ্য মন্ত্রণালয় কর্তৃক নিবন্ধন আবেদিত।স্মারক নম্বর:- ০৫.৪৪.৪৭০০.০২২.১৮.২৪২.২২-১২১।এই নিউজ পোর্টালের কোন লেখা, ছবি, অডিও, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।