পরেশ দেবনাথ,কেশবপুর,যশোর // কেশবপুরের মঙ্গলকোটে জমে উঠেছে পান, সুপারি ও সনের বাজার। হাটের উন্নয়নকল্পে গত ২০২০ সাল থেকে বেশ জাকজমকপূর্ণভাবে চলে আসছে বাজারটি। রবিবার ও বৃহস্পতিবার এই দুই দিন বসে হাট। আর ভোর থেকে সকাল ৯ টার মধ্যে শেষ হয়ে যায় পান, সুপারি ও সনের বাজার। এ বাজারে বহু দূর-দূরান্ত থেকে পানের ব্যাপারিরা আসেন পান-সুপারি কিনতে। কেশবপুর, চুকনগর, কাঁঠাতলা, ডুমুরিয়া, কালিয়ারই, পরচক্রা, বাউশলা, হাড়িয়াঘোপ, ভান্ডারখোলা, মঙ্গলকোট বাজারের খুচরা পান বিক্রেতারাসহ বিভিন্ন এলাকা থেকে আসেন এ বাজারে। মঙ্গলকোট, আলতাপোল, পাঁচারই, বড়েঙ্গা, মাগুরখালী, বসুন্তিয়াসহ বিভিন্ন গ্রামে রয়েছে যথেষ্ট পানের বরজ। পানের বরজওয়ালা সুশান্ত সেন বলেন, এখানে পানহাট হওয়ায় এ অঞ্চলের পান চাষীদের অত্যন্ত সুবিধা হয়েছে।
ডুমুরিয়া থেকে পান কিনতে আসেন, সাধন অধিকারী, শিশির কুণ্ড, বিষ্ণু পদ কুণ্ডু, বিমল কৃষ্ণ কুণ্ডু, পিন্টু অধিকারী, আব্দুস সাত্তার। তারা বলেন, এখানে পানের বাজার হওয়া অব্দি প্রতি বৃহস্পতিবার ও রবিবার খুব ভোরে এসে গাজি ধরে পান কিনি। পান চাষি প্রত্যেকে যে পান নিয়ে আসেন সেটি হলো এক গাজি। তারা জানান, আমাদের এই মহেন্দ্র গাড়িতে ৭০/৮০ গাজি পান আছে। এক এক গাজিতে ৩০, ৩৫, থেকে ৬০ পোন করে পান আছে। প্রতি পোন পানের দাম ৩০ টাকা থেকে ১৩০ টাকা পর্যন্ত দরে কিনেছি।
মঙ্গলকোট, বসুন্তিয়া, বিদ্যানন্দকাটি, আলতাপোল, মাগুরখালি, পাঁজিয়া, কাটাখালিসহ বিভিন্ন এলাকা থেকে আসে সুপারি। সুপারি হাটে আসার বিভিন্ন রাস্তায় বসেছে অনেক ফড়িয়া ব্যবসায়ী। তাঁরা অপেক্ষাকৃত কম দামে সুপারি কেনেন। বাগান মালিক সাজ্জাত মালী বলেন, চলতি ভাদ্রের শেষে ও আশ্বিন প্রথম থেকেই সুপারির মৌসুম শুরুতে বিভিন্ন হাটে জমে উঠেছে সুপারি বেচাকেনা। গত বছরের তুলনায় এবার মৌসুমের প্রথম দিকে সুপারির দাম অনেক কম থাকলেও বর্তমান সুপারির দাম কম নয়। মঙ্গলকোট গ্রামের মফিজুর রহমান বলেন, এখানে সুপারি বিক্রয় হয় কুড়ি হিসেবে। ৫৫ গুন্ডা সুপারিতে এক কুড়ি এবং ৪ টা সুপারিতে এক গুন্ডা। ইব্রাহিম রেজা বলেন, এবার সুপারি কম হয়েছে। দামে কম নয়। পাঁচ কুড়ি সুপারি এনেছিলাম, ২২০ টাকা করে বিক্রি করেছি।
সুপারি ব্যবসায়ী খতিয়াখালী গ্রামের দীপক দাস ও মদন দাস এ বাজার থেকে সুপারি পাইকারি দরে কেনেন এবং খুচরা বিক্রি করেন। দীপক দাস বলেন, বড়েঙ্গা, কন্দর্পপুর পাঁজিয়া খতিয়াখালী, মাগুরখালী, গড়ভাঙ্গা এই অঞ্চলে সুপারি বেশি হয়। এবার সুপারির জন্মায়েছে কম কিন্তু দাম খারাপ না। এক কুড়ি সুপারির সর্বনিম্ন দাম ১৫০ টাকা এবং সর্বোচ্চ ৪৫০ টাকা বেচাকেনা হচ্ছে।
পানের লতা বাঁধার জন্য উলু/কাশে/সন বিক্রেতা মহিন উদ্দীনের সাথে কথা হয়। তিনি বলেন, আমার মত সামাদ, ঝড়ু, রফিকসহ আরও কয়েকজন এগুলো বিক্রি করি। এগুলো আমরা কুষ্টিয়া থেকে কিনে পাটকেলঘাটা নিয়ে যায়, সেখান থেকে বিভিন্ন বাজারে বিক্রি করি। সনের দৈর্ঘ্যতা অনুযায়ী এক কেজি সন ৭০, ৮০, ৯০ টাকায় বিক্র করি। স্থানীয় পাইকারী ব্যবসায়ী শংকর কুমার সেন বলেন, আমি ৩ বছর ধরে কুষ্টিয়া থেকে কিনে এনে এই ব্যবসায়ীদের কাছে পাইকারী দরে বেঁচে দিয়ে থাকি।
বাজারের স্থানীয় বিশিষ্ট ব্যবসায়ী ও হাট মালিক নওয়াব আলী মোল্যা বলেন, বাজার উন্নয়নের জন্য প্রথমে গরু-ছাগলের হাট বসাই। এর পর এলাকার পানব্যবসায়ীদের ও বাজার উন্নয়ন কমিটির সহযোগিতায় এবং বিভিন্ন এলাকার পান ক্রেতাদের সাথে কথা বলে পানের হাট বসাই। এখন দেখছি সবচেয়ে পানের বাজার ভাল চলে। সেই সাথে সুপারি ও সনের ব্যবসায়ী আসতে শুরু করায় এ হাটের একটা ঐতিহ্য ফিরে এসেছে।
Copyright © 2022 KhulnarKhobor.com মেইল:khulnarkhobor24@gmail.com।জাতীয় অনলাইন গণমাধ্যম নীতিমালা আইনে তথ্য মন্ত্রণালয় কর্তৃক নিবন্ধন আবেদিত।স্মারক নম্বর:- ০৫.৪৪.৪৭০০.০২২.১৮.২৪২.২২-১২১।এই নিউজ পোর্টালের কোন লেখা, ছবি, অডিও, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।