পরেশ দেবনাথ,কেশবপুর,যশোর // আকারে ছোট হলেও স্বাদে অতুলনীয় এক ফলের নাম কদবেল। কদবেল বা কৎবেল বা কয়েথবেল(বৈজ্ঞানিক নাম: Limonia acidissima ইংরেজি:Wood Apple, Elephant Apple, Curd Fruit, Monkey Fruit) হচ্ছে রুটেসি পরিবারের লিমোনিয়া গণের বৃক্ষ। ফল হিসেবে প্রায় সকলের কাছে প্রিয় হলেও লোভী মানুষেরা এদের পাকতে দিল না। সুস্বাদু ফল কদবেল। কাচা কদবেল থেকে পাকা কদবেলের স্বাদ অধিক কিন্তু লোভী মানুষেরা তাদেরকে পাকতে দিল না। সাধারনত ফেব্রুয়ারি-মার্চ মাসে ফুল ফোটে এবং অক্টোবর থেকে ডিসেম্বর মাসে ফল পাকে।কদবেলের সময়কাল শেষ হলেও বাজারে আজও পর্যন্ত পাকা কদবেল পাওয়া অনিশ্চিত। কদবেল লোভী অধিকাংশরাই পাকা কদবেল মিলাতে পারেননি। মঙ্গলকোট বাজারের কদবেল ব্যবসায়ী কওছার আলী জানান, ছোট সময়কাল থেকে কদবেল বিক্রি শুরু করেছি কিন্তু সময়কাল শেষ হলেও একটা পাকা কদবেলও পেলাম না। স্কুল কলেজের শিক্ষার্থী ছাড়াও কদবেল লোভী মানুষের অভাব নেই। অনেকে পাকা বেল খেতে চেলেও আমি দিতে পারিনি, তার জন্য দুঃখিত। পাইকারী বাজার থেকে কিনে এনে মুখ কেটে মসল্লা মিশিয়ে বিক্রি করে থাকি। মঙ্গলকোট গ্রামের রেহেনা, ফিরোজ, পাঁচারই গ্রামের শিউলি, রামকৃষ্ণপুর গ্রামের ফিরোজা, আলতাপোল গ্রামের শ্যামলী, সাংবাদিক পরেশ দেবনাথসহ অনেক কদবেল লোভী মানুষকে পাকা কদবেল খাওয়াতে পারি নাই। কারণ কি জানতে চেলে কদবেল ব্যবসায়ী রমজান আলী জানান, যাদের কদবেল গাছ আছে তারা ছোট অবস্থায় উচ্চমূল্যে ব্যাপারীদের কাছে বিক্রী করে দেন। আর ফলগুলো অপক্ত অবস্থায় বাজারে নিয়ে এসে তারাও উচ্চমূল্যে বিক্রি করে দেন। যে কারণে কদবেল লোভীরা পাকা কদবেল থেকে বঞ্চিত। অপক্ত ফলগুলো রৌদ্রে শুকিয়ে নেওয়া হয়, ফলে এর মান অনেকটা কমে যায়।
কাঁচা কদবেল একটি এস্ট্রিনজেন্ট হিসেবে কাজ করে এবং ডায়রিয়া ও আমাশয় রোগের চিকিৎসায় ব্যবহৃত হয়। পাকা কদবেল খেলে হেঁচকী ওঠা, গলা ব্যাথা ও মাড়ির রোগের উপশম হয়।
টক আর মিষ্টি স্বাদের এ ফলটি আশ্বিন মাসের শুরু থেকে বাজারে পাওয়া যায়। ওপরে শক্ত আবরণ আর ভেতরে নরম তুলতলে ছোট ছোট বিচি ভর্তি নরম অংশে ভরা। কাঁচা অবস্থায় এ ফল ভাল না খাওয়া গেলেও পাকা অবস্থায় এ ফলটি বেশ মুখরোচক। অনেকেই তাই লবণ আর মরিচ গুঁড়ার মিশ্রণ দিয়েও খেতে পছন্দ করেন। তবে বেশিরভাগ ক্ষেত্রে চিনি, লবণ, বিট লবণ, কদবেলের ভেতরের অংশ আর মরিচ মাখিয়ে খেতেই পছন্দ করেন।
প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন সি-এর ভান্ডার এ ফলটি। তাই যাদের মাড়ি ফোলা, কিংবা ভিটামিন সি-এর অপূর্ণতা আছে তারা এ ঋতুতে কদবেল রাখতে পারেন দুপুরের পরে খাবার তালিকায়। এ ছাড়া যাদের মুখের স্বাদের তারতম্য থাকে সব সময় তারাও এ মৌসুমি ফলটি খেতে পারেন। অন্যদিকে উচ্চরক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে বা রক্তশূন্যতা কমাতে কদবেল খুব উপকারী একটি ফল। পাশাপাশি যাদের ব্রণের সমস্যা আছে তারা কাঁচা কদবেলের রস মুখে মাখতে পারেন। এতে ব্রণ কিংবা মেছতার দাগ দূর হবে এবং ত্বক তার আগের রূপ ফিরে পাবে। পাকা কদবেলের ভর্তা, কদবেলের আচারের পাশাপাশি অনেকেই কদবেলের শরবতও বানিয়ে থাকেন। এ ছাড়া বিচিসহ এ ফলটি খাওয়া যায় বিধায় অনেকেই কোনো কিছু ছাড়াও কদবেল খেয়ে থাকেন। কিছু ক্ষেত্রে কাসুন্দি মাখিয়েও অনেকে কদবেলের ভর্তা তৈরি করে থাকেন। যাদের কিডনিতে সমস্যা তারাও ডাক্তারের পরামর্শে এ ফলটি খেতে পারেন। এ ছাড়া মৌসুমি ফলে থাকে হাজারো রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা। তাই মৌসুমি ফল আবশ্যক শরীর সুস্থ রাখতে যে কোনো ঋতুতে।
কদবেলের ৮ গুণ
ডায়াবেটিস প্রতিরোধ করে, গরম কম লাগে, কিডনির জন্য ভালো, পেপটিক আলসার ভালো হয়, রূপচর্চায় কদবেল, শ্বাসযন্ত্রের রোগে কদবেল, রক্ত পরিষ্কার করে, পেট ভালো রাখে কদবেল।
প্রতি ১০০ গ্রাম কদবেলে রয়েছেঃ প্রতি ১০০ গ্রাম কদবেলের পুষ্টিমান পানীয় অংশ ৮৫ দশমিক ৬ গ্রাম, খনিজপদার্থ ২ দশমিক ২ গ্রাম, খাদ্যশক্তি ৪৯ কিলো ক্যালরি, আমিষ ৩ দশমিক ৫ গ্রাম, চর্বি শূন্য দশমিক ১ গ্রাম, শর্করা ৮ দশমিক ৬ গ্রাম, ক্যালসিয়াম ৫ দশমিক ৯ মিলিগ্রাম, লৌহ শূন্য দশমিক ৬ মিলিগ্রাম, ভিটামিন-বি শূন্য দশমিক ৮০ মিলিগ্রাম ভিটামিন সি ১৩ মিলিগ্রাম এবং প্রতি ১০০ গ্রামের শক্তি উত্পাদন ক্ষমতা ৪৯ কিলো ক্যালরি। (সূত্র: ফুড ব্লগ)
দেশীয় কদবেলের পাশাপাশি উচ্চ ফলনশীল কদবেলের জাত রয়েছে যা বারি কদবেল-১, বারি কদবেল-২ ও বাউ কদবেল-১ নামে পরিচিত। এ জাতগুলি সর্বত্র চাষ উপযোগী, কম সময়ে ফলন পাওয়া যায়, নিয়মিত ফল ধরে, খরা সহনশীল এবং ফলের আকার তুলনামূলক বড়। উল্লেখ্য যে, বারি কদবেল-২ জাতটি অমৌসুমে উত্পাদিত বারোমাসি কদবেলের জাত। এছাড়া থাই কদবেলের জাতও সম্প্রসারিত হচ্ছে। সাম্প্রতিক সময়ে শুরু হয়েছে কদবেলের বাণিজ্যিক চাষাবাদ।
কাঁচা কদবেল একটি এস্ট্রিনজেন্ট হিসেবে কাজ করে এবং ডায়রিয়া ও আমাশয় রোগের চিকিৎসায় ব্যবহৃত হয়। পাকা কদবেল খেলে হেঁচকী ওঠা, গলা ব্যাথা ও মাড়ির রোগের উপশম হয়। কচি থেকে বিক্রি শুরু হওয়ায় পাকা কদবেল ভোগিদের আপসোসের সীমা থাকে না। আর পাকা কদবেলও পাওয়া যায় না। হায়রে লোভী মানুষ, কদবেলকে পাকতে দিলি না।
Copyright © 2022 KhulnarKhobor.com মেইল:khulnarkhobor24@gmail.com।জাতীয় অনলাইন গণমাধ্যম নীতিমালা আইনে তথ্য মন্ত্রণালয় কর্তৃক নিবন্ধন আবেদিত।স্মারক নম্বর:- ০৫.৪৪.৪৭০০.০২২.১৮.২৪২.২২-১২১।এই নিউজ পোর্টালের কোন লেখা, ছবি, অডিও, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।