পরেশ দেবনাথ,কেশবপুর,যশোর || কেশবপুরে বাড়ির তিনতলায় গরুর খামার করে তাক লাগিয়ে দিয়েছে এক খামারি। যশোরের কেশবপুর পৌর সভায় নজরুল ইসলাম নামে এক গরু প্রতিপালন খামারি গরু চুরি করাসহ বিভিন্ন কারণে নিজ বাড়ির তিনতলা ছাদের উপর গরুর খামার করে এলাকায় ব্যাপক সাড়া জাগিয়েছেন।গরু এবং গরুর খাবার ছাদে তুলতে দেশীয় পদ্ধতিতে লিফটের ব্যবস্থা করেছেন তিনি। গরু মোটা তাজাকরণই হলো তার উদ্দেশ্য। ২০২২ সালের জানুয়ারী মাসের শেষ দিক থেকে মে জুন পর্যন্ত পাঁচ মাস ১২টি গরু মোটা তাজা করার জন্য প্রথম কিস্তিতে তার সব খরচ-খরচা বাদে চার লাখ টাকা লাভ হয়েছে বলে তিনি জানান।
কেশবপুর পৌর সদরের ভোগতি নরেন্দ্রপুর মাঠ পাড়ার ইছাহাক আলীর ছেলে নজরুল ইসলাম ২০২২ সালে গরুর খামার করার জন্য উদ্যোগ গ্রহণ করেন। তিনি জমি ভাড়া নিয়ে করতে চেয়েছিলেন কিন্তু সেটা তার কাছে ছিল ব্যয়বহুল। তখন তার মাথায় আসে এলাকায় প্রায়ই খামার থেকে চোরেরা রাতের আধারে গরু চুরি করে নিয়ে যায়। এরপর তিনি সিদ্ধান্ত নেন চোরের হাত থেকে রক্ষা পেতে একমাত্র নিরাপদ স্থান হলো বাড়ির ছাদ।তাছাড়া রোগবালায়ের হাত থেকে বহুলাংশে রক্ষা পাওয়া যাবে। তাই তিনি নিজ বাড়িতে খামার করে লাভবানের সাথে সাথে এলাকায় এই বিকল্প ধর্মী খামার করায় তাক লাগিয়ে দিয়েছেন। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, এই খামারটি সবচেয়ে স্বাস্থ্য সম্মত। এই খামারে কাঁদা,বৃষ্টির পানি,মশার উপদ্রবসহ কোনরকম দূষিত পরিবেশ ছাড়া গরু লালন পালন করা হয়। নজরুল ইসলামের দেখাদেখি অনেকেই বাড়ির ছাদের উপর গরু লালন পালন করতে আগ্রহ প্রকাশ করেছেন।
সরেজমিন দেখা যায়,তার বাড়ির ছাদের তিনতলায় গরুর খামার করার জন্য বারটি পিলার তুলে এর চারপাশে চার ফুট দেয়াল গাথার পর আরো ৫ ফুট নেট টানিয়ে দেন।চালের উপরে দিয়েছেন এসবেস্টর টিন। সারি সারি ১২টি নান্দা বসান হয়েছে।তিনতলায় গরু উঠানামা,খাদ্য উত্তোলনের জন্য তিনি ও তার ছেলে জাহিদুল ইসলামের পরামর্শ অনুযায়ী লোহার রড,অ্যাঙ্গেল,পাঁচ হর্সপাওয়ার মটর ও লোহার শিকল জোগাড় করে দেশীয় পদ্ধতিতে একটি লিফট তৈরি করেছেন।ওই লিফট তৈরি করতে তার প্রায় দুই লাখ টাকা খরচ হয়েছে। এরপর ওই বছরের জানুয়ারি মাসের শেষের দিকে তিনি ১২টি দেশি গরু কিনে লিফটের মাধ্যমে খামারে উঠান। ১২টি গরুর খাওয়া,বিদ্যুৎ খরচসহ প্রতিদিন তার মোট ২৫শ থেকে ২৬শ টাকা খরচ হয়।
গরুগুলোর খাদ্য তালিকায় কি কি আছে জানতে চাইলে নজরুল ইসলাম জানান,তার খামারে গরুর খাদ্যের তালিকায় রয়েছে,কালোজিরা,গমের ভূষি,বিচালী,চাল ও চালের ভূষি এক সাথে পরিমানমত মিশিয়ে মাড়াই করে গরুর খেতে দেয়া হয়। আর সকাল বিকাল ও সন্ধায় তিন বেলা কাঁচা ঘাস দেয়া হয়।
গরুর রোগবালায়ের জন্য কোন ঔষধ ব্যবার করেন কিনা জানত চাইলে বলেন,গরু মোটাতাজা করার জন্য কোন রকম ওষুধ বা ইনজেকশন ব্যবহার করা হয় না বা এখনও কোন রোগবালায় দেখা যায়নি। এছাড়া প্রতি ৫ মাস পর পর বিক্রি করে আবার নতুন গরু কেনা হয়। এতে তার প্রতি সিটে ৪ লাখ টাকা করে লাভ হয় বলে তিনি জানান। খামারে গরু লালন-পালনের জন্য একজন কর্মচারী সারাক্ষণ দেখভাল করে। এর পাশাপাশি খামার মালিক তার ছেলেসহ এই পরিবারের প্রায় সকলেই এ খামারের পরিচর্যা করে আনন্দ পায়। নজরুল ইসলাম খামারের পরিধি বাড়িয়ে ১০০টি গরু মোটা-তাজা করার জন্য বড় পরিসরে খামার করার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন।
কেশবপুর উপজেলা প্রাণিসম্পদ উপ-সহকারী কর্মকর্তা কার্তিক চন্দ্র বলেন,কেশবপুরে মোট ৩৮০টি গরুর খামার রয়েছে। এসব খামারে ৯৪ হাজার গরু লালন-পালন করা হয়। আমরা খামারগুলি সব সময় দেখভাল করি।এরমধ্যে মাত্র ১টি খামার তিনতলা ছাদের ওপরে।এই খামারটি সব থেকে স্বাস্থ্যসম্মত। এ খামারে কোন রকম নোংরা স্যাতসেতে পরিবেশ ছাড়াই গরু মোটাতাজা হচ্ছে।আমরা তারসহ অন্য গরু খামারিদের এইভাবে খামার করার জন্য পরামর্শ দিচ্ছি।
Copyright © 2022 KhulnarKhobor.com মেইল:khulnarkhobor24@gmail.com।জাতীয় অনলাইন গণমাধ্যম নীতিমালা আইনে তথ্য মন্ত্রণালয় কর্তৃক নিবন্ধন আবেদিত।স্মারক নম্বর:- ০৫.৪৪.৪৭০০.০২২.১৮.২৪২.২২-১২১।এই নিউজ পোর্টালের কোন লেখা, ছবি, অডিও, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।