আল-হুদা মালী,শ্যামনগর প্রতিনিধি || সাতক্ষীরা জেলার বিভিন্ন অনলাইন নিউজ পোর্টালে মন্টু গাজীকে বাঘে ধরার সংবাদ প্রকাশ হয়েছে গত ২২শে এপ্রিল ২০২৩ তারিখে। এ ঘটনার প্রায় দুই মাস পর শ্যামনগর থানায় অপহরণের পর গুমের অভিযোগে মামলা করেছেন। নিখোঁজ মন্টু গাজির সৎ মায়ের ছেলে মো. আবুল হাসান সে দীর্ঘ ১৮-২০ বছর ধরে সাতক্ষীরা শহরে বসবাস করে আসছেন। সেখানে অপরহরণের কথিত ঘটনার তারিখ উল্লেখ করা হয়েছে ২৪ এপ্রিল ২০২৩ বেলা ১১টার সময়।এ মামলায় দৈনিক পত্রদূত পত্রিকার গাবুরা সংবাদ কর্মী মিজানুর রহমানসহ দু’জনকে পুলিশ গ্রেপ্তার করেছে।
এদিকে মন্টু গাজীর স্ত্রী সফিরন নেছা বলেন, স্বামীর ভাইয়েরা তাকে দিয়ে মামলা করাতে না পেরে নিজেরা করেছেন। অন্য মৌয়ালদের পুলিশ জিজ্ঞাসাবাদ করলে সত্য ঘটনা বেরিয়ে আসবে। স্বামীর ভাগ্যে কী ঘটেছে, তিনিও জানতে চান।
২২ এপ্রিল বিভিন্ন অনলাইনে প্রকাশিত খবরে বলা হয়, গত ১ এপ্রিল ২০২৩ তারিখে সহযোগীদের সঙ্গে সুন্দরবনে মধু সংগ্রহে গিয়েছিলেন সাতক্ষীরার শ্যামনগর উপজেলার গাবুরা চকবারা গ্রামের মৌয়াল নেছার আলী ওরফে মন্টু গাজী। পরে তাঁর অন্য সঙ্গীরা ফিরে এসে জানান, তাঁকে বাঘে ধরে নিয়ে গেছে। মন্টু গাজীর সহযোগী মৌয়াল রুহুল আমিনের উদ্ধৃতি দিয়ে পত্রিকায় প্রকাশিত খবরে আরো বলা হয়, মধু সংগ্রহ করতে সুন্দরবনের ভারতীয় অংশে গিয়ে গত ১৬ এপ্রিল তাদের নৌকাটি খোয়া যায়। এরপর ১৯ এপ্রিল তারা ভেলায় চেপে নদীতে ভাসতে ভাসতে তালপট্টি এলাকায় পৌঁছান। সেখান থেকেই মন্টু গাজীকে বাঘে ধরে নিয়ে গেছে। চেষ্টা করেও তাকে তারা বাঁচাতে পারেননি। পরে অন্য মৌয়ালদের সহযোগিতায় তারা লোকালয়ে ফিরে আসেন।
উক্ত খবরে বুড়িগোয়ালিনী ফরেস্ট স্টেশনের কর্মকর্তা নূর আলমের উদ্ধৃতি দিয়ে ২২ এপ্রিল আরও বলা হয়, মন্টু গাজীসহ মোট ১১জন ১ এপ্রিল পাস নিয়ে বনে গিয়েছিলেন। ফিরে আসা অন্য মৌয়ালদের কাছ থেকে তারা জানতে পেরেছেন মন্টু গাজীকে বাঘে ধরে নিয়ে গেছে। এদিকে ঘটনার দীর্ঘ দুই মাস পর মন্টুর সৎ মায়ের ছেলে মো. আবুল হাসান অভিযোগ করছে। স্থানীয় মহাজন আবিয়ারের লোকজন তাকে অপহরণের পর গুম করেছে। নিখোঁজ মৌয়াল নেছার আলী ওরফে মন্টু গাজী সাতক্ষীরার শ্যামনগরের চকবারা গ্রামের মো. সাহাবুদ্দীন গাজী ওরফে সাবুদ আলীর ছেলে।এরআগে এ ঘটনায় শ্যামনগর থানায় একটি সাধারণ ডায়েরি করেছিল মন্টু গাজীর পরিবার।
আদালতের আদেশে বুধবার (২১ জুন) রাতে উক্ত মামলার এজাহারনামীয় আসামী হিসেবে সংবাদ কর্মী মিজানুর রহমান ও রুহুল আমিনকে গ্রেপ্তার করে শ্যামনগর থানার পুলিশ।
মামলার অন্য আসামীরা হলেন,গাবুরা ইউপির ৭ নম্বর ওয়ার্ডের ইউপি সদস্য আবিয়ার রহমান, মালেক মোল্লা, মোক্তার মাসুম মন্টু, কুমারেশ রায় মন্ডল,আব্দুল মান্নান গাজী,ওবায়দুল্লাহ,জিএম আলম হোসেন, আশিকুজ্জামান আশিক ও মো. সোহেল। আসামীরা সাতক্ষীরার আশাশুনির লাঙলদাড়িয়া,কালিমাখালী ও শ্যামনগরের বংশীপুর ও হায়বাদপুর এলাকার বাসিন্দা।
গ্রেপ্তার মিজানুর সাতক্ষীরার দৈনিক পত্রদূত পত্রিকার স্থানীয় সংবাদদাতা। মহাজন আবিয়ারের সঙ্গে ঘনিষ্ঠতা থাকায় তাকে মামলার আসামী করা হয়েছে বলে অভিযোগ তাঁর পরিবারের।
মামলার তদন্ত কর্মকর্তা শ্যামনগর থানার উপপরিদর্শক আরিফ হোসেন বলেন, মন্টুর ভাই আদালতে মামলা করেন। পরে থানায় মামলা রেকর্ড হলে দু’জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। ঘটনাটি রহস্যজনক। আবিয়ারকে গ্রেপ্তার করা গেলে মূল রহস্য জানা যাবে।
আবুল হাসান মামলায় উল্লেখ করেছে, আসামীরা সুন্দরবনের ভিতর দিয়ে মাদক দ্রব্য ও অবৈধ অস্ত্র চোরাচালন করে। উক্ত বিষয় মন্টু গাজী জানতে পারে। এনিয়ে তার সাথে আসামীদের সাথে বাদী ও তার ভাইয়ের দ্বন্দ্ব হয়। ঘটনার তারিখ ২৪ এপ্রিল ২০২৩ বেলা ১১টায় মন্টু গাজীকে রুহুল আমিনের বাড়ির সামনে সকল আসামীরা পূর্বপরিকল্পিতভাবে অবৈধ অস্ত্রের মুখে জোরপূর্বক জিম্মি ও অপহরণ করে। আবুল হাসান স্বাক্ষীদের কাছ থেকে বিষয়টি জেনে ভাইকে ফেরৎ পাওয়ার জন্য দেনদরবার করতে থাকে।
আসামীরা মন্টু গাজীকে ফেরৎ দেওয়ার কথা বলে টালবাহানা করতে থাকে। একপর্যায়ে ৯জুন বিকাল ৪টার সময় আসামী আবিয়ারের বাড়িতে যেয়ে বাদীর ভাই ভিকটিম মন্টু গাজীকে ফেরত দেয়ার কথা বললে,‘আসামী বলে যে, তোর ভাই মন্টু গাজীকে আর ফেরত দেয়া সম্ভব হবে না। আমরা সুন্দরবনের ভিতরে ফরেষ্ট অফিসের সামনে রেখে আসিয়াছি। তাকে আর খুঁজে পাচ্ছি না, তুই যা পারি-করে নে। এই নিয়ে বাড়াবাড়ি করলে তোকেসহ তোর পরিবারের প্রত্যেককে জানে মেরে ফেলব, হত্যা করবো, মিথ্যা মামলা দিব এই বলে হাকিয়ে দেয়। বাদী পরের দিন স্বাক্ষীদের নিয়ে সুন্দরবনের বুড়িগোয়ালিনী ফরেস্ট অফিসারের সহযোগিতায় খোজাখুজি করে ভাইকে না পেয়ে নিরুপায় হয়ে স্থানীয় থানায় মামলা করতে গেলে মামলা না নেওয়ায় বিজ্ঞ আদালতে মামলা করেছে।
তবে গ্রেপ্তার রুহুলের ছেলে গফুর দাবি করে বলেন,ভারতীয় বনরক্ষীদের হাতে সব হারানোর পর চার দিন পায়ে হেঁটে মৌয়ালরা তালপট্টি এলাকায় গিয়ে ক্লান্ত হয়ে পড়েন। পর বাড়ি ফেরার পথে অসুস্থ মন্টু বিশ্রাম নেওয়ার সময় বাঘে ধরে নিয়ে যায়। খোঁজাখুঁজি করে ক্লান্ত মৌয়ালরা বাড়ি ফিরে আসায় শরীরের অংশ নিতে পারেননি। অর্থ আদায়সহ হয়রানি করতে তার বাবাকে এতে জড়িয়েছে তারা।
এ বিষয়ে চেষ্টা করেও আবিয়ার রহমানের বক্তব্য জানা সম্ভব হয়নি। বাড়িতে পুলিশ আসার পর তার সঙ্গে যোগাযোগ নেই দাবি করে আবিয়ারের স্ত্রী হাজেরা খাতুন মিলি বলেন, নৌকার মাঝিকে চালানের টাকা বুঝিয়ে দিলেও কারা বনে ঢুকছে সেটি আবিয়ার জানতেন না। তার স্বামীর সঙ্গে কারও বাদানুবাদও হয়নি। মন্টুর সৎ ভাই আবুল হাসান ভিন্ন উদ্দেশ্যে মামলা করেছেন। বনজীবীরা বাঘে ধরার প্রত্যক্ষদর্শী হলেও পূর্ববিরোধের জেরে তার স্বামীকে মামলার আসামী করা হয়েছে।
এদিকে মন্টু গাজীর স্ত্রী সফিরণ বেগম বলেন, স্বামীর ভাইয়েরা তাকে দিয়ে মামলা করাতে না পেরে নিজেরা করেছেন। অন্য মৌয়ালদের পুলিশ জিজ্ঞাসাবাদ করলে সত্য বেরিয়ে আসবে। স্বামীর ভাগ্যে কী ঘটেছে, তিনিও জানতে চান।
বন বিভাগের সাতক্ষীরা রেঞ্জের সহকারী বন সংরক্ষক ইকবাল হোসাইন চৌধুরী বলেন, নিখোঁজ ব্যক্তির নাম ইস্যুকৃত পাসে ছিল না। অভয়ারণ্য বা ভারতীয় সুন্দরবনে যাওয়ায় হয়তো বন বিভাগকে পাস কাটিয়ে যাচ্ছে পরিবারটি।
বিষয়টি স্পর্শকাতর হওয়া সতর্কতার সঙ্গে তদন্ত করছেন বলে জানিয়েছেন কালিগঞ্জ সার্কেলের সহকারী পুলিশ সুপার মো. আমিনুর রহমান। তিনি বলেন, ঘটনার বিষয়ে বিভিন্ন ধরনের তথ্য আসছে। অহেতুক কেউ যেন হয়রানি না হয় বা কোন অপরাধী পার না পায়, সে বিষয়ে গুরুত্ব দেওয়া হচ্ছে।
Copyright © 2022 KhulnarKhobor.com মেইল:khulnarkhobor24@gmail.com।জাতীয় অনলাইন গণমাধ্যম নীতিমালা আইনে তথ্য মন্ত্রণালয় কর্তৃক নিবন্ধন আবেদিত।স্মারক নম্বর:- ০৫.৪৪.৪৭০০.০২২.১৮.২৪২.২২-১২১।এই নিউজ পোর্টালের কোন লেখা, ছবি, অডিও, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।