আল-হুদা মালী শ্যামনগর প্রতিনিধি || সুন্দরবনে মধু আহরণ করতে গিয়ে মৌয়াল আবু নেছার মন্টুর নিখোঁজ হওয়ার ঘটনায় দায়েরকৃত মামলায় গ্রেফতার সাংবাদিক মিজানুর রহমানের মুক্তিসহ হয়রানিমূলক এই মামলা প্রত্যাহারের দাবিতে মানববন্ধন অনুষ্ঠিত হয়েছে।
রোববার (২৫ জুন) সাতক্ষীরার শ্যামনগর উপজেলার দ্বীপ ইউনিয়ন গাবুরার ডুমুরিয়া খেয়াঘাটে এই মানববন্ধন অনুষ্ঠিত হয়।
এলাকাবাসী আয়োজিত এই মানববন্ধনে স্থানীয় বনজীবী, জনপ্রতিনিধি, সাংবাদিকসহ নানা শ্রেণী ও পেশার মানুষ অংশ নেন।
মিজানুর রহমান সাতক্ষীরার দৈনিক পত্রদূতের স্থানীয় প্রতিনিধি। মানববন্ধনে বক্তারা বলেন, সুন্দরবনে প্রবেশের প্রায় দুই সপ্তাহ পর তালপট্টি এলাকা থেকে আবু নেছার মন্টুকে বাঘে ধরে নিয়ে যায়। সেসময় বিভিন্ন সংবাদ মাধ্যমে ঘটনাটি বেশ গুরুত্ব সহকারে প্রচার করা হয়। দুর্গম এলাকা হওয়ার পাশাপাশি চার-পাঁচ দিন ধরে অভুক্ত সহযোগী মৌয়ালরা অসুস্থ হয়ে পড়ায় তারা আক্রমণকারী বাঘের পিছু নিতে না পেরে লোকালয়ে ফিরে আসে। এজন্য মন্টুর মরদেহ উদ্ধার করা সম্ভব হয়নি। বিষয়টি বনবিভাগসহ আইন প্রয়োগকারী সংস্থার সদস্যরা অবহিত হওয়া সত্ত্বেও প্রায় ৮ সপ্তাহ পর উদ্দেশ্যমূলকভাবে মিথ্যা মামলা করা হয়েছে।
বক্তারা অভিযোগ করে বলেন, পূর্ব শত্রুতার জের ধরে প্রতিপক্ষকে ফাঁসাতে মন্টুকে বাঘে আক্রমণের সুযোগকে কাজে লাগাতে তৎপর হয়ে উঠেছে স্থানীয় একটি মহল। ষড়যন্ত্রের অংশ হিসেবে নিখোঁজ মৌয়ালের স্ত্রী সন্তানদের পাশ কাটিয়ে এক দশক ধরে এলাকার বাইরে বসবাসরত মন্টুর বিমাতা ভাইকে মামলার বাদি করা হয়েছে। এছাড়া স্থানীয় গাবুরা ইউপি সদস্য আবিয়ার রহমানের ঘনিষ্ঠজন হওয়ার পাশাপাশি নানা সময়ে সংবাদ প্রকাশের ঘটনায় আগে থেকে ক্ষুব্ধ থাকার জেরে সাংবাদিক মিজানুর রহমানকে ঐ মামলায় আসামি করা হয়। কিন্তু মিজানুর রহমানের সুন্দরবনকেন্দ্রিক কোনো ব্যবসা-বাণিজ্য নেই, তিনি দাদন দিয়ে কাউকে সুন্দরবনেও পাঠান না।
টানা বৃষ্টি ও কাঁদা উপেক্ষা করে মানববন্ধনে
অংশগ্রহণকারীরা হয়রানিমূলক এই মামলায় গ্রেফতার সাংবাদিক মিজানুর রহমানকে দ্রুত মুক্তির দাবি জানান।
এছাড়া নিখোঁজ মৌয়ালের সহকর্মী ও স্ত্রী-সন্তানদের সাথে কথা বলে মামলার সত্যতা নিশ্চিতে অধিকতর তদন্ত দাবি জানান।মানববন্ধনে অংশ নিয়ে নিখোঁজ মৌয়ালের স্ত্রী সফিরণ বেগম ও ছেলে বাবু হোসেন জানান, সম্প্রতি রেকর্ড হওয়া মামলাটি মিথ্যা ও হয়রানিমূলক। আমাদের কোনো অভিযোগ নেই। মামলা তো আমাদের করার কথা। যিনি মামলা করেছেন, তিনি এখন আমাদের হুমকি ধামকি দিচ্ছেন। মিথ্যা সাক্ষ্য দিতে বলছেন। আমাদের বাড়িছাড়া করার হুমকি দিচ্ছেন।
মানববন্ধনে আরও বক্তব্য রাখেন, গ্রেফতার হওয়া সাংবাদিক মিজানুর রহমানের মেয়ে ৫ম শ্রেণীর ছাত্রী মাহিমা সুলতানা মিম, স্ত্রী আনোয়ারা আক্তার, উপকূলীয় প্রেসক্লাবের সভাপতি আব্দুল হালিম, নিখোঁজ মন্টুর সহকর্মী মৌয়াল আবু মুছা, আবুল কাশেম, আব্দুল মজিদ গাজী, মিন্নাত হোসেন, মাকসুদুল মোল্যা প্রমুখ।
প্রসঙ্গত, গত ১ এপ্রিল নয় সহকর্মীর সাথে সুন্দরবনে মধু কাটতে যায় শ্যামনগর উপজেলার গাবুরা ইউনিয়নের চকবারা গ্রামের মোঃ সাহাবুদ্দীন গাজী ওরফে সাবুদ আলীর ছেলে আবু নেছার মন্টু। এক পর্যায়ে তারা সুন্দরবনের ভারতীয় অংশে প্রবেশের পর ১৬ এপ্রিল বিএসএফসহ সেখানকার বনরক্ষীদের ধাওয়ার মুখে মধু ও নৌকাসহ যাবতীয় সরঞ্জাম ফেলে পালিয়ে আসে। অভুক্ত অবস্থায় চার-পাঁচ দিন ধরে নদী সাঁতরে ও পায়ে হেঁটে সুন্দরবনের তালপট্টি পৌঁছে বিশ্রামের সময় আবু নেছার মন্টুকে বাঘে নিয়ে যায়। পরবর্তীতে আরও দু’দিন পথে কাটিয়ে ১৯ এপ্রিল বাকি মৌয়ালরা লোকালয়ে ফিরলে তাদের সহযোগী মৌয়াল আবু নেছার মন্টুকে বাঘে ধরে নিয়ে যাওয়ার বিষয়টি প্রকাশ্যে আসে।
সেসময় সহকর্মী মৌয়ালদের বরাত দিয়ে মন্টুকে বাঘে ধরে নিয়ে যাওয়ার বিষয়টি বিভিন্ন গণমাধ্যমে প্রকাশিত হয়।
Copyright © 2022 KhulnarKhobor.com মেইল:khulnarkhobor24@gmail.com।জাতীয় অনলাইন গণমাধ্যম নীতিমালা আইনে তথ্য মন্ত্রণালয় কর্তৃক নিবন্ধন আবেদিত।স্মারক নম্বর:- ০৫.৪৪.৪৭০০.০২২.১৮.২৪২.২২-১২১।এই নিউজ পোর্টালের কোন লেখা, ছবি, অডিও, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।