শরিফুল ইসলাম,খুলনা || আজ ১৫ আগস্ট। জাতীয় শোক দিবস। ইতিহাসের জঘন্যতম, নৃশংস হত্যাকাণ্ড ঘটে ১৯৭৫ সালের এই কালরাতে। এ দিন গোটা বাঙালি জাতিকে কলঙ্কিত করেছিল সেনাবাহিনীর উচ্ছৃঙ্খল কিছু বিপথগামী সদস্য। সেদিন রাতে ধানমণ্ডির ৩২ নম্বর সড়কের ঐতিহাসিক ভবনে ঘাতকের নির্মম বুলেট বিদ্ধ করে জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবর রহমানের বুক।
সেদিন ঘাতকের হাতে প্রাণ হারান বঙ্গবন্ধুর সহধর্মিনী বঙ্গমাতা বেগম ফজিলাতুন নেছা মুজিব, বঙ্গবন্ধুর বড় ছেলে শেখ কামাল, শেখ জামাল, শেখ রাসেল, পুত্রবধূ সুলতানা কামাল, রোজী জামাল, ভাই শেখ নাসের, কর্নেল জামিল, ভাগ্নে শেখ ফজলুল হক মণি, তার অন্তঃসত্ত্বা স্ত্রী আরজু মণি, ভগ্নিপতি আবদুর রব সেরনিয়াবাত, শিশু বাবু, আরিফ রিন্টু খানসহ অনেকে। ওই সময় দেশে না থাকায় প্রাণে বেঁচে যান বঙ্গবন্ধুর জ্যেষ্ঠ কন্যা ও বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এবং তার ছোট বোন শেখ রেহানা।
দিবসটি উপলক্ষে পৃথক পৃথক বাণী দিয়েছেন রাষ্ট্রপতি মো. শাহাদ্দিন চুপ্পু ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
বঙ্গবন্ধুকে হত্যার পর ১৯৭৫ সালের ২৬ সেপ্টেম্বর স্বঘোষিত প্রেসিডেন্ট খন্দকার মোশতাক আহমদ বিচারের হাত থেকে খুনিদের রক্ষা করতে কুখ্যাত ইনডেমনিটি অর্ডিন্যান্স জারি করেন। পরে জিয়াউর রহমান ১৯৭৯ সালে ইনডেমনিটিকে আইন হিসেবে অনুমোদন দেন।
আজ সরকারি ছুটি।দিনটি সরকারিভাবে শোক দিবস হিসেবে পালিত হবে। আজ জাতীয় পতাকা অর্ধনমিত থাকবে। সরকারি ও বেসরকারি ভবনে উড়বে কালো পতাকা।
আওয়ামী লীগ ১৯৯৬ সালের নির্বাচনে ক্ষমতাসীন হওয়ার পর রাষ্ট্রীয়ভাবে প্রথম শোক দিবস পালনের সিদ্ধান্ত হয়। কিন্তু ২০০১ সালে বিএনপির নেতৃত্বাধীন চারদলীয় জোট ক্ষমতায় এসে সে সিদ্ধান্ত বাতিল করে। তবে ফখরুদ্দীন আহমদের নেতৃত্বাধীন তত্ত্বাবধায়ক সরকার ক্ষমতায় এসে আবার রাষ্ট্রীয়ভাবে ১৫ আগস্ট জাতীয় শোক দিবস পালনের সিদ্ধান্ত নেয়।
দিবসটি উপলক্ষে নানা কর্মসূচি গ্রহণ করেছে আওয়ামী লীগ ও তার সহযোগী, ভ্রাতৃপ্রতীম বিভিন্ন সামাজিক-সাংস্কৃতিক-রাজনৈতিক সংগঠন। যথাযোগ্য মর্যাদা, শ্রদ্ধা, ভালোবাসা ও ভাবগম্ভীর পরিবেশে বিভিন্ন কর্মসূচির মধ্য দিয়ে জাতীয় শোক দিবস পালন করা হবে।
খুলনায় জাতীয় শোক দিবসের নানা কর্মসূচি;
স্বাধীনতার মহান স্থপতি জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ৪৮তম শাহাদত বার্ষিকী ও জাতীয় শোক দিবস পালন উপলক্ষ্যে খুলনা জেলায় বিভিন্ন কর্মসূচি গ্রহণ করা হয়েছে।
১৫ আগস্ট জাতীয় শোক দিবসে সূর্যোদয়ের সাথে সাথে সকল সরকারি, আধাসরকারি, স্বায়ত্তশাসিত প্রতিষ্ঠান, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ও বেসরকারি ভবনসমূহে জাতীয় পতাকা অর্ধনমিত রাখতে হবে এবং সূর্যাস্তের পূর্বে নামাতে হবে। পতাকা নির্ধারিত মাপ ও রঙের হতে হবে এবং পতাকা উত্তোলনের জন্য উপযুক্ত দন্ড ব্যবহার করতে হবে। ছেঁড়া বা বিবর্ণ পতাকা ব্যবহার করা যাবে না।
সকাল আটটায় খুলনা জেলা প্রশাসকের কার্যালয় প্রাঙ্গণে স্থাপিত জাতির পিতার ম্যুরালে পুষ্পমাল্য অর্পণ করা হবে। পুষ্পমাল্য অর্পণ শেষে সকাল ১০টায় খুলনা জেলা প্রশাসনের উদ্যোগে জেলা শিল্পকলা একাডেমিতে দিবসের তাৎপর্য তুলে ধরে আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত হবে। অনুষ্ঠান শেষে দিবসটি উপলক্ষ্যে আয়োজিত বিভিন্ন প্রতিযোগিতায় বিজয়ীদের মাঝে পুরষ্কার বিতরণ করা হবে। ‘আমার চোখে বঙ্গবন্ধু’ শীর্ষক ভিডিও নির্মাণ প্রতিযোগিতায় শীর্ষস্থান অজর্নকারীদের ভিডিও অনুষ্ঠানের পূর্বে প্রদর্শন করা হবে। ১৫ আগস্টের পূর্বে বঙ্গবন্ধুর জীবনীভিত্তিক চিত্রাংকন ও রচনা প্রতিযোগিতা এবং স্কুল ও কলেজের শিক্ষার্থীদের নিয়ে বঙ্গবন্ধুর জীবনীভিত্তিক বক্তৃতার আয়োজন করা হবে।
সকল মসজিদে দোয়া মাহফিলসহ বিশেষ মোনাজাত এবং সুবিধাজনক সময়ে মন্দির, গীর্জা, প্যাগোডা ও অন্যান্য ধর্মীয় প্রতিষ্ঠানে বিশেষ প্রার্থনা করা হবে। ইসলামিক ফাউন্ডেশনের উদ্যোগে পবিত্র কোরআন খতম, কোরআন তেলাওয়াত, হামদ-নাত, আলোচনা সভা ও দোয়া মাহফিলের আয়োজন করা হবে। সকল সরকারি, বেসরকারি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান জাতীয় শোক দিবসের সঙ্গে সংগতিপূর্ণ আলোচনা সভা, আবৃত্তি, রচনা, চিত্রাংকন প্রতিযোগিতা, চিত্র প্রদর্শনী, হামদ ও নাত প্রতিযোগিতা এবং দোয়া মাহফিলের আয়োজন করবে। জাতীয় শোক দিবস উপলক্ষ্যে খুলনা আঞ্চলিক তথ্য অফিস জেলা শিল্পকলা একাডেমি প্রাঙ্গণে বঙ্গবন্ধুর জীবন ও কর্ম বিষয়ক আলোকচিত্র প্রদর্শনীর আয়োজন করবে।
জাতীয় শোক দিবসে স্থানীয় সংবাদপত্রগুলো বিশেষ সংখ্যা বা ক্রোড়পত্র প্রকাশ করবে এবং বাংলাদেশ বেতারের খুলনা কেন্দ্র বিশেষ অনুষ্ঠানমালা প্রচার করবে।
Copyright © 2022 KhulnarKhobor.com মেইল:khulnarkhobor24@gmail.com।জাতীয় অনলাইন গণমাধ্যম নীতিমালা আইনে তথ্য মন্ত্রণালয় কর্তৃক নিবন্ধন আবেদিত।স্মারক নম্বর:- ০৫.৪৪.৪৭০০.০২২.১৮.২৪২.২২-১২১।এই নিউজ পোর্টালের কোন লেখা, ছবি, অডিও, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।