খুলনার খবর ডেস্ক || খুলনা র্যাব-৬’র অভিযানে নিষিদ্ধ ঘোষিত জঙ্গি সংগঠনের আনসার আল ইসলামের ৫ সদস্যকে বাগেরহাট থেকে গ্রেফতার করেছে র্যাব-৬। বৃহস্পতিবার (৩১ আগস্ট) র্যাব-৬ এর একটি অভিযানিক দল গোপন সংবাদের ভিত্তিতে অভিযান চালিয়ে আসামিদের আটক করে।
প্রেস ব্যিফিং এ র্যাব এর কর্মকর্তা বলেন, গত রাতে রাষ্ট্রীয় গোয়েন্দা সংস্থা ডিজিএফআই এর তথ্যের ভিত্তিতে র্যাব সদর দপ্তর গোয়েন্দা শাখা ও র্যাব-৬ এর অভিযানে বাংলাদেশ হতে নিষিদ্ধ ঘোষিত জঙ্গি সংগঠন ‘আনসার আল ইসলাম’ এর খুলনা, বাগেরহাট ও গোপালগঞ্জ অঞ্চলের দাওয়াতী শাখার দায়িত্বপ্রাপ্ত পিরোজপুরের মৃত: কামাল গাজীর ছেলে মোঃ তরিকুল ইসলাম (২৩), গোপালগঞ্জের গাউছ মোল্লার ছেলে মোঃ আকাশ আব্দুল্লাহ (২৩) ও মোহাম্মদ জাকির ফকিরের ছেলে তাজিমুদ্দিন জসীমউদ্দীন (২১), মাদারীপুরের মতিউর রহমানের ছেলে ইসমাইল হাসান অনিক (২০) এবং গোপালগঞ্জের সৈয়দ আহাদুজ্জামানের ছেলে মোঃ রিপন (২০)’কে বাগেরহাট থেকে গ্রেফতার করা হয়। উদ্ধার করা হয় উগ্রবাদী পুস্তিকা ও সাংগঠনিক কার্যক্রম সংক্রান্ত নোট বই।
গ্রেফতারকৃতদের প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে জানা যায় যে, গ্রেফতারকৃতরা নিষিদ্ধ ঘোষিত জঙ্গি সংগঠন ‘আনসার আল ইসলাম’ এর সদস্য। তারা আফগানিস্তানে তালেবানের উত্থানে উদ্বুদ্ধ হয়ে আল কায়েদা মতাদর্শের জঙ্গি সংগঠন ‘আনসার আল ইসলাম’ এর আদর্শে উদ্বুদ্ধ হয়ে কার্যক্রম পরিচালনা করছিল। তারা বিভিন্ন সময় অনলাইনে তামিম আল আদনানী, হারুন ইজহার, গুনবীসহ বিভিন্ন আধ্যাত্মিক নেতার বক্তব্য দেখে উগ্রবাদে উদ্বুদ্ধ হয়ে সংগঠনের সদস্যদের মাধ্যমে উক্ত সংগঠনে যোগদান করে।
পরবর্তীতে তারা সংগঠনের সদস্য সংগ্রহে দাওয়াতি কার্যক্রম পরিচালনা করছিল। পার্শ্ববর্তী বিভিন্ন দেশে মুসলমানদের উপর নির্যাতনসহ বিভিন্ন ধর্মীয় অপব্যাখ্যার মাধ্যমে ভুল বুঝিয়ে সংগঠনের সদস্যদের তথাকথিত জিহাদের মাধ্যমে ইসলামী রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠায় আগ্রহী করে তোলে। এ উদ্দেশ্যে সংগঠনের সদস্যদেরকে তারা বিভিন্ন উগ্রবাদী পুস্তিকা, মুসলমানদের উপর নির্যাতন ও উগ্রবাদী নেতাদের বক্তব্যের ভিডিও সরবরাহ করতো।
এছাড়াও তারা সংগঠনের কার্যক্রম পরিচালনার জন্য ভুল তথ্য প্রদান করে তাদের আত্মীয়-স্বজন, বিভিন্ন মাদ্রাসা ও সদস্যদের নিকট থেকে নিয়মিত অর্থ সংগ্রহ করতো। এছাড়াও বিভিন্ন সময়ে তারা মসজিদ, বাসা বা বিভিন্ন স্থানে সদস্যদের নিয়ে গোপন সভা পরিচালনা করতো বলে জানা যায়। তারা বিভিন্ন অপব্যাখ্যা ও মিথ্যা তথ্যের মাধ্যমে দেশের বিচার ও শাসন ব্যবস্থা সম্পর্কে বিতৃষ্ণা তৈরি করে ইসলামী রাষ্ট্র কায়েম করার জন্য সদস্যদেরকে উগ্রবাদী করে তুলতো।
গ্রেফতারকৃত তরিকুল গোপালগঞ্জের একটি মসজিদে ইমামতি করতো। সে ২০২১ সালে দিঘলীয়াতে একটি মাদ্রাসায় অধ্যয়ণকালীন ‘আনসার আল ইসলাম’ এর ওমর নামের একজন উচ্চপদস্থ সদস্যের মাধ্যমে উদ্বুদ্ধ হয়ে ‘আনসার আল ইসলাম’ এ যোগদান করে। সে ওমর নামের ঐ ব্যক্তির তত্তাবধানে আল কায়েদার বিভিন্ন পেইজ, সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমের বিভিন্ন সাইট ও বিভিন্ন ফেসবুক গ্রুপে প্রবেশ করে পর্যালোচনা করে আরো বেশি জঙ্গিবাদে উদ্বুদ্ধ হয় এবং নিজে দাওয়াতী কার্যক্রমে যুক্ত হয় এবং সদস্য সংগ্রহ করেন।
পরবর্তীতে সে দিঘলীয়াতে মাদ্রাসায় অধ্যয়ণকালীন আবদুল্লাহসহ বেশ কয়েকজন সহপাঠীকে দাওয়াতী কার্যক্রমের মাধ্যমে সংগঠনে যুক্ত করে।
সে গোপালগঞ্জে মসজিদে ইমামতির পাশাপাশি দাওয়াতী কার্যক্রম পরিচালনা করে এবং খুলনা, বাগেরহাট ও গোপালগঞ্জ এলাকায় দাওয়াতী শাখার দায়িত্বপ্রাপ্ত হন। এছাড়াও সে পার্শ্ববর্তী বিভিন্ন দেশের সমমনা ব্যক্তিদের সাথে নিয়মিত সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে যোগাযোগ বজায় রাখতো। সে সদস্যদের নিকট থেকে নিয়মিত অর্থ সংগ্রহ, মুসলমানদের উপর নির্যাতন ও উগ্রবাদী নেতাদের বক্তব্যের ভিডিও এবং বিভিন্ন উগ্রবাদী পুস্তিকা সরবরাহ করতো বলে জানা যায়। সংগৃহীত অর্থ ওমর নামক ব্যক্তির কাছ থেকে সংগ্রহ করে সংগঠনের কাজে ব্যাবহার করত বলে জানায়।
গ্রেফতারকৃত আব্দুল্লাহ’কে জিজ্ঞাসাবাদে জানা যায়, সে বাগেরহাটের একটি মাদ্রাসায় অধ্যয়নরত ছিল। ২০২১ সালে খুলনার দিঘলীয়াতে একটি মাদ্রাসায় অধ্যয়ণকালীন গ্রেফতারকৃত তরিকুলের মাধ্যমে ‘আনসার আল ইসলাম’ এ যোগ দেয়। সে দিঘলীয়াতে মাদ্রাসায় অধ্যয়ণকালীন তরিকুলের সাথে অন্যান্য সহপাঠীদের মধ্যে দাওয়াতী কার্যক্রম পরিচালনা করে। পরবর্তীতে বাগেরহাটে মাদ্রাসায় অধ্যয়ণকালীনও দাওয়াতী কার্যক্রম পরিচালনা করতে থাকে। দাওয়াতী কার্যক্রমে তার পারদর্শিতার জন্য খুলনা ও বাগেরহাট অঞ্চলের দাওয়াতী শাখার দায়িত্ব দেওয়া হয়। এছাড়াও সে সদস্যদের নিকট থেকে নিয়মিত অর্থ সংগ্রহের পাশাপাশি মুসলমানদের উপর নির্যাতন ও উগ্রবাদী নেতাদের বক্তব্যের ভিডিও এবং বিভিন্ন উগ্রবাদী পুস্তিকা সরবরাহ করতো বলে জানা যায়।
গ্রেফতারকৃত তাজিমুদ্দিন গোপালগঞ্জের স্থানীয় একটি মাদ্রাসায় ইমামতি করতো। সে দিঘলিয়াতে একটি মাদ্রাসায় অধ্যয়নকালীন গ্রেফতারকৃত আবদুল্লাহর সহপাঠী ছিল। সে ২০২১ সালে আব্দুল্লাহ’র মাধ্যমে আনসার আল ইসলাম এর মতাদর্শে উদ্বুদ্ধ হয়। সে বিভিন্ন সময় তরিকুল ও আব্দুল্লাহ’র সাথে তার মাদ্রাসা,বাসায় মিটিং করতো। সে তরিকুল এর কাছ থেকে বিভিন্ন উগ্রবাদী পুস্তিকা, মুসলমানদের উপর নির্যাতন ও উগ্রবাদী নেতাদের বক্তব্যের ভিডিও সংগ্রহ করতো। সে তার নিজ এলাকায় দাওয়াতি কার্যক্রম পরিচালনা করছিল বলে জানা যায়।
গ্রেফতারকৃত ইসমাইল গোপালগঞ্জের একটি মাদ্রাসায় অধ্যয়ণরত ছিল। সে তরিকুলের মাধ্যমে উদ্বুদ্ধ হয়ে ‘আনসার আল ইসলাম’ এ যোগদান করে। সে তরিকুল এর কাছ থেকে বিভিন্ন উগ্রবাদী পুস্তিকা, মুসলমানদের উপর নির্যাতন ও উগ্রবাদী নেতাদের বক্তব্যের ভিডিও সংগ্রহ করতো। সে তার নিজ এলাকা মাদারীপুরে দাওয়াতি কার্যক্রম পরিচালনা করছিল এবং বিভিন্ন লোকদের কাছ থেকে অর্থ সংগ্রহ করতো বলে জানা যায়।
গ্রেফতারকৃত রিপন ২০২২ সালে আব্দুল্লাহ’র মাধ্যমে আনসার আল ইসলাম এর আদর্শে উদ্বুদ্ধ হয়ে সংগঠনে যোগদান করে। গ্রেফতারকৃত রিপন বিভিন্ন সময়ে আব্দুল্লাহ’র সাথে দেখা করে বিভিন্ন উগ্রবাদী পুস্তিকা সংগ্রহ করে সংগঠনের দাওয়াতী কার্যক্রম পরিচালনা করতো। সে তরিকুল এবং আব্দুল্লাহ’র মাধ্যমে পার্শ্ববতী বিভিন্ন দেশের সমমনা ব্যক্তিদের সাথে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে পরিচিত হয়ে তাদের সাথে সামাজিক যোগাযোগের মাধ্যমে যোগাযোগ করে তথাকথিত জিহাদের নামে হিজরত করে পার্শ্ববর্তী দেশে গমনের পরিকল্পনা ও চেষ্টা করেছিল বলে জানা যায়।
Copyright © 2022 KhulnarKhobor.com মেইল:khulnarkhobor24@gmail.com।জাতীয় অনলাইন গণমাধ্যম নীতিমালা আইনে তথ্য মন্ত্রণালয় কর্তৃক নিবন্ধন আবেদিত।স্মারক নম্বর:- ০৫.৪৪.৪৭০০.০২২.১৮.২৪২.২২-১২১।এই নিউজ পোর্টালের কোন লেখা, ছবি, অডিও, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।