শরিফুল ইসলাম || দেশজুড়ে তারুণ্যের সমাবেশের পর আবারও মাঠে নেমেছে বিএনপির তিন অঙ্গ-সহযোগী সংগঠন জাতীয়তাবাদী যুবদল, স্বেচ্ছাসেবক দল ও ছাত্রদল। ভোটের অধিকার প্রতিষ্ঠার দাবিতে এবার ঢাকার বাইরে পাঁচ বিভাগে যৌথভাবে ‘তারুণ্যের রোডমার্চ’ করছে বিএনপির এই তিন সংগঠন।সরকারের পদত্যাগ ও নির্দলীয় তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে নির্বাচনের একদফা দাবিতে চলমান আন্দোলনে তরুণদের ব্যাপক হারে সম্পৃক্ত করতে এই উদ্যোগ নিয়েছে বিএনপি। গতকাল রোডমার্চ শেষে খুলনায় বিএনপির সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়। মঙ্গলবার (২৬ সেপ্টেম্বর) রাত সাড়ে ৭টায় নগরীর শিববাড়ি মোড়ে সমাবেশ শুরু হয়।
এই রোডমার্চটি ঝিনাইদহ থেকে শুরু হয়ে ১৬০ কিলোমিটার রোডমার্চ করে খুলনার জিয়া হল চত্বরে হাজির হয়।
এদিন সকাল ১০টা থেকেই সমাবেশ স্থলে নেতা কর্মীরা আসতে থাকে।দুপুর গড়াতেই প্রচন্ড গরম উপেক্ষা করে নগরীর শিববাড়ি মোড়ে জমায়েত হতে থাকে লাখো নেতা কর্মী।বেলা ৩টায় শুরু হয় জাসাসের সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান।এরপর মঞ্চে একে একে অতিথিরা তাদের বক্তব্য দিতে থাকেন।
সমাবেশে সভাপতিত্বে করেন খুলনা মহানগর বিএনপির আহবায়ক এড. শািফকুল আলম মনা। সমাবেশ পরিচালনা করেন মহানগর বিএনপির সদস্য সচিব শফিকুল আলম তুহিন ও জেলা সদস্য সচিব মনিরুল হাসান বাপ্পি।
খুলনায় সমাবেশে প্রধান অতিথি ছিলেন বিএনপি স্থায়ী কমিটির সদস্য ও সাবেক মন্ত্রী মীর্জা আব্বাস। বিশেষ অতিথি হিসাবে ছিলেন, দলের স্থায়ী কমিটির সদস্য গয়েশ্বর চন্দ্র রায়, ভাইস চেয়ারম্যান বরকত উল্লাহ বুলু, ভাইস চেয়ারম্যান শামসুজ্জামান দুদু, ভাইস চেয়ারম্যান নিতাই রায় চৌধুরী, ভারপ্রাপ্ত সাংগঠনিক সম্পাদক (খুলনা বিভাগ) অনিন্দ্য ইসলাম অমিত, তথ্য বিষয়ক সম্পাদক আজিজুল বারী হেলাল, ছাত্র বিষয়ক সম্পাদক রকিবুল ইসলাম বকুল, সহ সাংগঠনিক সম্পাদক জয়ন্ত কুমার কুণ্ডু, সহ প্রচার সম্পাদক কৃষিবিদ শামীমুর রহমান শামীম।
খুলনার সমাবেশে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য মির্জা আব্বাস বলেন, ‘আজকের রোডমার্চে মানুষের উচ্ছ্বাস দেখা গেছে। মানুষের মুক্তির আশা দেখা গেছে। খালেদা জিয়ার সঙ্গে সাক্ষাতে তাকে উদগ্রীব দেখা গেছে। চোখে আকুতি দেখা গেছে। তাকে বলেছি, “আমরা আপনাকে মুক্ত করবো।” রোডমার্চে জনতার মাঝেও সেই আকুতি দেখা গেছে। দিনের রোদে, এত রাতেও গরম উপেক্ষা করে আপনাদের উপস্থিতি প্রমাণ করে খালেদার মুক্তির জন্য আপনারাও কঠোর আন্দোলন চান। এ দেশের মানুষ নিজের অধিকার ফিরে পেতে চায়, ভোটের অধিকার ফিরে পেতে চায়। সাংবাদিকদের ভিডিও করা, ছবি তোলার অধিকার থাকলেও সবকিছু লেখার স্বাধীনতা নেই। সারা দেশের মানুষ জেগে উঠেছে। এ সরকারের পতন হলো বলে। ক্ষমতা ধরে রাখতে পারবে না। কিছু মানুষ মারতে পারবে। আজকেও মারধর ও গ্রেফতার করা হয়েছে। কিন্তু আপনাদের আটকাতে পারেনি।
এ সময় মির্জা আব্বাস প্রশাসনের উদ্দেশ্যে বলেন, ‘জনগণের গায়ে হাত দেওয়ার আগে ভাববেন, জনগণের টাকাতেই আপনার বেতন হয়। কোনও সরকার কিন্তু তার বাপের টাকা এনে আপনার বেতন দেয় না।’
সমাবেশে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য গয়েশ্বর চন্দ্র রায় বলেন, ‘এত রাতেও আপনাদের সরব উপস্থিতি প্রমাণ করে, এক দফার দাবি কতটা যৌক্তিক। এটা প্রমাণ করে, আমাদের পিছু ফেরার কোনও পথ নেই। শুধু বাংলাদেশেই নয়, বিশ্বের ৮০টি দেশের শীর্ষ নেতারাও শেখ হাসিনাকে ভোট চোর বলছেন। সরকার গঠন হয় জনগণের সেবা করার জন্য, জনগণকে শাসন করার জন্য নয়। কারণ জনগণের অর্থেই তাদের বেতন হয়। আমেরিকার ভিসা স্যাংশনই প্রমাণ করে এ দেশে ভোট চোর আছে। বাংলাদেশের ওপর এই ভিসা স্যাংশন খুবই লজ্জার।
শামসুজ্জামান দুদু বলেন, ‘আপনাদের উপস্থিতি প্রমাণ করে এ মাসটা কোনও রকমে কাটাবে, আগামী মাসে এ সরকার পালাবে। খালেদা জিয়াকে মুক্তি দিন দ্রুত, যত তাড়াতাড়ি তাকে মুক্তি দেবেন, তারেক রহমানকে দেশে আসতে দেবেন, তত তাড়াতাড়ি আপনাদের মঙ্গল। নতুন কর্মসূচি দিয়ে খালেদা জিয়াকে মুক্ত ও তারেক রহমানকে দেশে এনে নতুন জাতীয় সরকার গঠন হবে।’
বরকতউল্লাহ বুলু বলেন, ‘অবৈধ এ হাসিনা সরকারের বিরুদ্ধে আজ সারাবিশ্ব এক। সরকারের নানা অপরাধের কারণেই আমেরিকা ভিসা বাতিল করেছে। ঘরবাড়ি ও সম্পদও বাজেয়াপ্ত হবে। বাংলাদেশের নির্বাচনে আজ বিশ্ব হস্তক্ষেপ করছে, এ পথ শেখ হাসিনাই করে দিয়েছেন। এটি বাংলাদেশের জন্য লজ্জার। বিএনপি এ ধরনের পদক্ষেপকে স্বাগত জানায় না।
খুলনা বিভাগীয় ভারপ্রাপ্ত সাংগঠনিক সম্পাদক অনিন্দ্য ইসলাম অমিত বলেন, ‘দেড়শ কিলোমিটার পথে পথে মুক্তিকামী মানুষের মুখে মুখে ছিল “শেখ হাসিনা ভোট চোর”। আন্দোলন আরও বেগবান হবে, খালেদা জিয়া মুক্তি পাবেন।’
বিভাগীয় এই ১৬০ কিলোমিটার রোড মার্চ কর্মসুচি সফল করতে খুলনা বিএনপি ও অঙ্গ সহযোগী সংগঠনের নেতৃবৃন্দরা নিরলস পরিশ্রম করেছে।তারা প্রস্তুতি সভা, লিফলেট বিতরণ, প্রচার মিছিল সহ বিভিন্ন কর্মসুচি করেছিলো খুলনা মহানগর ও জেলা জুড়ে।
এরই ধারাবাহিকতায় খুলনা বিভাগীয় রোডমার্চ সফল করার লক্ষ্যে গত শুক্রবার বিকাল ৫ টায় বিএনপির দলিয় কার্যালয়ে খুলনা জেলা স্বেচ্ছাসেবক দলের সভাপতি মোঃ তৈয়েবুর রহমানের সভাপতিত্বে এবং সাধারণ সম্পাদক মোঃ আতাউর রহমান রনুর সঞ্চালনায় প্রস্তুতি সভা অনুষ্ঠিত হয়।এছাড়াও নগরীর বিভিন্ন ওর্য়াডে প্রস্তুতি সভা করা হয়।
বিএনপির খুলনা বিভাগীয় এ সমাবেশের অনুমতি দিয়েছিল খুলনা সিটি কর্পোরেশন। সেখানেও তাদের ১০টি শর্ত দেওয়া হয়েছিলো
এর আগে এই রোডমার্চের এ খসড়া তালিকা করা হয়।সেই অনুযায়ী, ১৬ সেপ্টেম্বর থেকে ৩০ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত তারুণ্যের এই রোডমার্চ অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা।আর ১৬ সেপ্টেম্বর রংপুর থেকে সৈয়দপুর দশ মাইল হয়ে দিনাজপুর পর্যন্ত তাদের তারুন্যে রোডমার্চ শুরু হয়।এরপর ১৭ সেপ্টেম্বর বগুড়া থেকে সান্তাহার-নওগাঁ হয়ে রাজশাহী আসে রোড মার্চটি।তারপর ২১ সেপ্টেম্বর ভৈরব থেকে ব্রাহ্মণবাড়িয়া- হবিগঞ্জ- মৌলভীবাজার হয়ে সিলেট ও গতকাল ২৬ সেপ্টেম্বর ঝিনাইদহ থেকে যশোর-মাগুরা- নোয়াপাড়া হয়ে খুলনায় আসে। এবং আগামী ৩০ সেপ্টেম্বর কুমিল্লা থেকে ফেনী-মিরসরাই হয়ে চট্টগ্রাম পর্যন্ত এই রোডমার্চ হবে।
Copyright © 2022 KhulnarKhobor.com মেইল:khulnarkhobor24@gmail.com।জাতীয় অনলাইন গণমাধ্যম নীতিমালা আইনে তথ্য মন্ত্রণালয় কর্তৃক নিবন্ধন আবেদিত।স্মারক নম্বর:- ০৫.৪৪.৪৭০০.০২২.১৮.২৪২.২২-১২১।এই নিউজ পোর্টালের কোন লেখা, ছবি, অডিও, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।