জহিরুল ইসলাম রাতুল || ইউসেপ খুলনা অঞ্চলের উদ্যোগে ইউসেপ বাংলাদেশ এর ৫০ বছর পূর্তি উপলক্ষে আজ ০৯ মে এক সুবর্ণজয়ন্তী অনুষ্ঠান এর আয়োজন করা হয়। অনুষ্ঠানের উল্লেখযোগ্য কর্মসূচীর মধ্যে ছিল বর্ণাঢ্য র্যালি, আলোচনা সভা, বিজ্ঞান মেলা, ব্লাড গ্রুপিং কর্মসূচী ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান। খুলনা সরকারি মহিলা কলেজের অডিটরিয়ামে আয়োজিত এ অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন খুলনা-৩ আসনের মাননীয় সংসদ সদস্য এস এম কামাল হোসেন। দিনের শুরুতেই ইউসেপ খুলনার বৈকালিস্থ ক্যাম্পাস থেকে এক বর্ণাঢ্য র্যালি সকাল ৮.৩০ ঘটিকায় শুরু হয়ে সরকারি মহিলা কলেজে শেষ হয়। অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন ইউসেপে বোর্ড অব গভর্নরস এর সাবেক ভাইস চেয়ারপার্সন ও ইউসেপ এসোসিয়েশন এর সদস্য জিতেন্দ্র লাল ভৌমিক।
প্রায় সহস্রাধিক প্রাক্তন ও বর্তমান শিক্ষার্থী ও কর্মীদের পদচারণায় মুখর হয়ে উঠে ইউসেপ খুলনার ক্যাম্পাস। অথিদের অনেকেই প্রাণের প্রতিষ্ঠানে এসে আবেগে আপ্লুত হয়ে ওঠে এবং দিনব্যাপী অনুষ্ঠান উপভোগ করে।
অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের সাবেক চেয়ারম্যান ও ইউসেপ বোর্ড অব গভর্ণরস এর সদস্য ড. মোহাম্মদ আব্দুল মজিদ। এছাড়াও খুলনা বিভাগের বিভাগীয় কমিশনার মো: হেলাল মাহমুদ শরিফ, জেলা প্রশাসক খন্দকার ইয়াসির আরেফীন, খুলনা সরকারি মহিলা কলেজের প্রিন্সিপাল প্রফেসর কে.এম. তৌহিদুর রহমান, ইউসেপ এর পরিচালক-ফাইন্যান্স ও কমপ্লাইন্স নাজমুন নাহারসহ সরকারি বেসরকারি বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের প্রতিনিধিবৃন্দ, সাংবাদিক ও সুশীল সমাজের প্রতিনিধিবৃন্দ উপস্থিত ছিলেন। অনুষ্ঠানের শুরুতেই স্বাগত বক্তব্য রাখেন ইউসেপ খুলনা অঞ্চলের আঞ্চলিক ব্যবস্থাপক মোহাম্মদ কামরুজ্জামান।
অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে জনাব এস এম কামাল হোসেন, ‘বঙ্গবন্ধুর সোনার বাংলা গড়ার জন্য ইউসেপ বাংলাদেশ একটি গুরুত্বপূর্ণ সহযোগী প্রতিষ্ঠান। তিনি ইউসেপ এর বিভিন্ন কর্মসূচির সাথে থাকার অঙ্গীকার ব্যক্ত করেন।’
সভাপতির বক্তব্যে জনাব জিতেন্দ্র লাল ভৌমিক বলেন, ‘বর্তমান শিক্ষার্থীদের উদ্দেশ্যে বলেন, শুধুমাত্র চাকুরির প্রতি নির্ভরশীল হলে হবে না, শিল্প উদ্যোক্তা হতে হবে। বঙ্গবন্ধুর অসাম্প্রদায়িক বাংলাদেশ গড়ার আহবান জানান। কারিগরি শিক্ষার ক্ষেত্রে তিনি বর্তমান প্রধানমন্ত্রীর ভূয়সী প্রশংসা করেন।
বিশেষ অতিথির বক্তব্যে উপস্থিত ড: মোহাম্মদ আব্দুল মজিদ বলেন, ইউসেপ বাংলাদেশ দক্ষ মানব সম্পদ তৈরীতে গুরুত্বপূণ অবদান রেখে চলেছে। বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা কারিগরী শিক্ষার প্রতি গুরুত্ব দিয়েছেন। ইউসেপ বাংলাদেশের প্রতিষ্ঠাতা লিন্ডসে এ্যালান চেইনি যে স্বপ্ন দেখেছিলেন তা ইউসেপ বাংলাদেশ পূরণ করে যাচ্ছেবঙ্গবন্ধু ১৯৭২ সালে যে বাড়ী ইউসেপ বাংলাদেশকে দান করেছিলেন সে সম্পর্কে আলোকপাত করেন।
জনাব নাজমুল হোসেন খান,অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট,খুলনা বলেন,’স্মার্ট বাংলাদেশ গড়ার ক্ষেত্রে ইউসেপ সরকারের পাশাপাশি কাজ করে যাচ্ছে। শুধুমাত্র চাকুরির উপর নির্ভরশীল না হয়ে তিনি উদ্যেক্তা হওয়ার প্রতি গুরুত্ব আরোপ করেন।
প্রফেসর কে এম তৌহিদুর রহমান, প্রিন্সিপাল, খুলনা সরকারি মহিলা কলেজ বলেন, ‘প্রশিক্ষণ শেষে ইউসেপ বাংলাদেশ চাকুরির সুযোগ করে দিচ্ছে। ইউসেপের শিক্ষার্থীরা বাংলাদেশের বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে চাকুরিতে প্রবেশ করে দেশের অর্থনীতিতে ভূমিকা রাখছে।’
জনাব নাজমুন নাহার, ডিরেক্টর, ফাইন্যান্স ও কমপ্লায়েন্স, ইউসেপ বাংলাদেশ বলেন, ‘ইউসেপ বাংলাদেশের দক্ষ কর্মীর অবদান আলোচনা করেন। উন্নয়ন দৃশ্যমান, বাড়বে এবার কর্মসংস্থান এই স্লোগানকে সামনে রেখে ইউসেপ বাংলাদেশ এগিয়ে যাচ্ছে।
অনুষ্ঠানে প্রাক্তন শিক্ষার্থীদের উদ্যোগে প্রকাশিত স্মরণিকা ‘হৃদয়ে ইউসেপ’ এর মোড়ক উন্মোচন করা হয়।
সর্বশেষে শিক্ষার্থীদের পরিবেশনায় এক বর্ণাঢ্য সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান অনুষ্ঠিত হয়। উল্লেখ্য যে, ইউসেপ বাংলাদেশ নিউজিল্যান্ডের নাগরিক লিন্ডসে এ্যালান চেইনীর উদ্যোগে একটি অলাভজনক বেসরকারি উন্নয়ন সংস্থা হিসেবে ১৯৭২ সালে আত্মপ্রকাশ করে।কার্যক্রম শুরুর দিন থেকে দরিদ্র ও সুবিধাবঞ্চিত শিশু কিশোরদের কারিগরি ও কর্মমুখী শিক্ষার মাধ্যমে দক্ষ মানব সম্পদ তৈরী ও শোভন কর্মসংস্থান নিশ্চিত করে তাদের দারিদ্র বিমোচনে গুরত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছে ইউসেপ বাংলাদেশ।
মাত্র ৬০ জন ছাত্র/ছাত্রী নিয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় সমাজকল্যান ও গবেষণা ইন্সটিটিউট ইউসেপ এর কার্যক্রম শুরু হয়। এখন ইউসেপ বাংলাদেশের উদ্যেগে ৩৬টি টেকনিক্যাল স্কুল,১০টি টিভেট ইনস্টিটিউট, ০২ টি পলিটেকনিক ইনস্টিটিউট ও ৩টি প্রফেসনাল ইনস্টিটিউট মাধ্যমে প্রতি বছর ৩৫ হাজার ছাত্রছাত্রী শিক্ষা গ্রহণ করে চলেছে এবং এর মধ্যে ৮০% শোভন কর্মসংস্থানের সুযোগ প্যাচ্ছে।
একটি দেশ গঠনের জন্য দক্ষ জনশক্তি সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ। ইউসেপ বাংলাদেশ সুদীর্ঘ ৫২ বছর ধরে দক্ষ জনশক্তি তৈরিতে কাজ করে যাচ্ছে। সরকার জনশক্তিকে এমনভাবে গড়ে তুলতে চায়, যাতে তারা প্রতিযোগিতামূলক বিশ্বের যেকোনো জায়গায় প্রতিযোগিতা করতে পারে। আমরা মনে করি ইউসেপ বাংলাদেশ বৃত্তিমূলক ও কারিগরি শিক্ষা শিক্ষার্থীদের কর্মের দক্ষতা বৃদ্ধি করে এবং একইসাথে চাকুরি বা কর্মসংস্থানের সৃষ্টি করে। কারিগরি ও ভোকেশনাল শিক্ষা নিলে তরুণরা প্রশিক্ষিত দক্ষ মানবসম্পদে পরিণত হওয়ার পাশাপাশি দ্রুত স্বাবলম্বী হবে। এতে আমরা জনমিতিক সুফল (Demographic Dividend) অর্জনে স্বক্ষম হবে।
Copyright © 2022 KhulnarKhobor.com মেইল:khulnarkhobor24@gmail.com।জাতীয় অনলাইন গণমাধ্যম নীতিমালা আইনে তথ্য মন্ত্রণালয় কর্তৃক নিবন্ধন আবেদিত।স্মারক নম্বর:- ০৫.৪৪.৪৭০০.০২২.১৮.২৪২.২২-১২১।এই নিউজ পোর্টালের কোন লেখা, ছবি, অডিও, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।