নিউজ ডেক্স || টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের পাঁচ আসরে অংশ নিলেও কেবল দুই ম্যাচে জয়ের স্বাদ পেয়েছিল বাংলাদেশের মেয়েরা। ১০ বছর পর টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে জিতল বাংলাদেশ নারী ক্রিকেট দল।
অন্যদিকে টুর্নামেন্টের হিসেবে ৪টি হলেও ম্যাচের হিসেবে ১৬টি। (০৩ রা অক্টোবর বৃহস্পতিবার) শারজাহ ক্রিকেট স্টেডিয়ামে অনুষ্ঠিত নারী টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের উদ্বোধনী ম্যাচে স্কটল্যান্ডকে ১৬ রানে হারিয়েছে নিগার সুলতানার দল।
এর মধ্যে গত চারটি বিশ্বকাপেই তারা ছিল জয়হীন। সেই খরা কাটানোর লক্ষ্যে বৃহস্পতিবার বিশ্বকাপের উদ্বোধনী ম্যাচে অভিষিক্ত স্কটল্যান্ডের মুখোমুখি হয় বাংলাদেশ। যদিও ব্যাটিংয়ে তাদের পুঁজি ছিল ছোট, ১১৯ রানের। সেই পুঁজিকে যথেষ্ট প্রমাণ করে বোলাররা টাইগ্রেসদের ১০ বছর পর বিশ্বকাপে আরেকটি জয় এনে দিয়েছেন।
টস জিতে ব্যাটিংয়ে নেমে বাংলাদেশ দলের সংগ্রহটা অবশ্য খুব একটা বড় ছিল না। তবে ৭ উইকেটে পাওয়া সেই ১১৯ রানের পুঁজিতেই জয় এনে দেন বোলাররা। রান তাড়ায় নামা স্কটল্যান্ডকে ৭ উইকেটে ১০৩ রানে আটকে দেন রিতু মনিরা।
বাংলাদেশের ব্যাটিংটা অবশ্য মন মতো হয়নি। স্কটিশ ফিল্ডারদের একাধিক ক্যাচ মিস ও মিসফিল্ডের পরও সুযোগ নিতে পারেননি টাইগ্রেসরা। উদ্বোধনী জুটিতে সাথি রানী ও মুরশিদা খাতুন ২৬ রান তোলার পর দ্বিতীয় উইকেটে সাথি ও সোবহানা মোশতারি যোগ করেন ৪২ রান। বাংলাদেশের ইনিংসে এ দু’টিই ছিল বড় জুটি।ব্যাটারদের মধ্যে মোশতারি ৩৮ বল খেলে ২ চারে করেন ৩৬ রান এবং সাথি করেন ৩২ বলে ৩১। এছাড়া শততম টি-টোয়েন্টি খেলতে নামা অধিনায়ক নিগার সুলতানা করেন ১৮ বলে ১৮ রান।
বাংলাদেশ দলের পুঁজিটা যে খুব বেশি বড় হয়নি, সেটি ম্যাচের বিরতিতে সমপ্রচার চ্যানেলে স্বীকার করে নেন মোশতারিই। তবে বোলাররা ওই স্বল্প পুঁজিকেই জয়ের জন্য যথেষ্ট বানিয়ে নেন। যার সুবাদে এসেছে দীর্ঘ খরার পর জয়। ওভার প্রতি ৬ রানের লক্ষ্য নিয়ে ব্যাট করতে নামা স্কটিশদের বড় পরীক্ষায় ফেলেন রিতু মনিই। ডানহাতি এ মিডিয়াম পেসার ৪ ওভারে ১৫ রান দিয়ে নেন ২ উইকেট।
বাংলাদেশের বোলিংয়ে সাফল্যের শুরুটা অবশ্য ফাহিমা খাতুনের হাত ধরে। ইনিংসের তৃতীয় ওভারেই সাসকিয়া হরলিকে ফেরান তিনি। পাওয়ার প্লের শেষ ওভারে ক্যাথরিন ব্রাইসকে ফেরান মারুফা আক্তার। যার ফলে প্রথম ৬ ওভারে ৩১ রানে ২ উইকেট তুলে নিয়ে স্কটল্যান্ডের ইনিংসের নিয়ন্ত্রণ নিতে শুরু করে বাংলাদেশ। যা পরের দিকে আরও বেড়েছে।
শেষ পাঁচ ওভারে ৪৮,আর শেষ দুই ওভারে ৩১ রানের সমীকরণ না মেলাতে পেরে ১৬ রানের ব্যবধানেই হারে প্রথমবার বিশ্বকাপ খেলতে আসা স্কটিশরা। রিতুর ২ উইকেট ছাড়া ১টি করে উইকেট নিয়েছেন নাহিদা, মারুফা, ফাহিমা ও রাবেয়া।এর মধ্যে ক্যাথারিন ফ্রেসারকে আউট করে আন্তর্জাতিক টি-টোয়েন্টিতে ১০০ উইকেটের মাইলফলক স্পর্শ করেন নাহিদা। বাংলাদেশের বোলারদের মধ্যে এটিই প্রথম কীর্তি। সব মিলিয়ে মেয়েদের ক্রিকেটে ১৪তম।
বাংলাদেশের লক্ষ্য তাড়ায় স্কটিশ মেয়েরা নির্ধারিত ওভারে ৭ উইকেটে ১০৩ রান তুলতে সক্ষম হয়েছে। ফলে ১৬ রানের জয় দিয়ে মেয়েদের টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের নবম আসর শুরু করেছে লাল-সবুজের প্রতিনিধিরা। এই আনন্দ দ্বিগুণ হতে পারত জ্যোতি-নাহিদাদের। বিশ্বকাপের আয়োজক হলেও, রাজনৈতিক পালাবদলের পর সৃষ্ট পরিস্থিতিতে টুর্নামেন্টটি বাংলাদেশ থেকে সরিয়ে নেওয়া হয় সংযুক্ত আরব আমিরাতে।
এর আগে ঘরের মাঠে অনুষ্ঠিত ২০১৪ বিশ্বকাপে বাংলাদেশ নারী দল প্রথমবার খেলতে নেমে দুই ম্যাচে জিতেছিল। যা ছিল সংক্ষিপ্ত ফরম্যাটের বিশ্বকাপে টাইগ্রেসদের সর্বশেষ জয়। এরপর আরেকটি জয় পেতে বাংলাদেশকে আরও ১০ বছর অপেক্ষা করতে হয়েছে। নাহিদা আক্তার, মারুফা খাতুন ও রিতু মনিদের দুর্দান্ত বোলিংয়ে স্বার্থক হয়েছে অধিনায়ক নিগার সুলতানা জ্যোতির মাইলফলক ম্যাচটি। বাংলাদেশের প্রথম কোনো নারী ক্রিকেটার হিসেবে এই উইকেটরক্ষক ব্যাটার এদিন শততম টি-টোয়েন্টি ম্যাচ খেলতে নামেন।
শারজাহ ক্রিকেট স্টেডিয়ামে অতিরিক্ত তাপমাত্রায় হাঁসফাঁস করতে দেখা গেছে বাংলাদেশি ক্রিকেটারদের। এর আগে তাদের এই মাঠে কোনো প্রতিযোগিতামূলক ম্যাচ খেলার অভিজ্ঞতাও ছিল না। প্রথমবার খেলতে নেমে সোবহানা মোস্তারির ৩৪ এবং সাথী রানির ২৯ রানের সুবাদে ১১৯ রান সংগ্রহ করে বাংলাদেশের মেয়েরা। পরে দ্বিতীয় ইনিংসের শুরু থেকে স্কটল্যান্ড ব্যাটারদের তেমন চড়াও হওয়ার সুযোগ না দিয়ে নিয়ন্ত্রণে রেখে বোলিং করেছেন নাহিদা-মারুফারা।
লক্ষ্য তাড়ায় দলীয় মাত্র ১২ রানেই প্রথম উইকেট হারায় স্কটল্যান্ড। সাসকিয়া হরলিয়াকে (৮) ফিরিয়ে ফাহিমা খাতুন প্রথম আঘাতটা হানেন। এরপর নিয়মিত বিরতিতে উইকেট হারিয়ে চাপ বাড়তে থাকে স্কটল্যান্ড শিবিরে। একে একে ক্যাথরিন ব্রাইস (১১), এইলসা লিস্টার (৫), প্রিয়ানাজ চ্যাটার্জিদের (৫) ফিরিয়েছেন মারুফা-রিতুরা। ফলে এক প্রান্ত আগলে রাখলেও যোগ্য সঙ্গীর অভাবে দলের বিপদ কাটাতে পারেননি সারাহ ব্রাইস।
তবে শেষ পর্যন্ত অপরাজিত ছিলেন এই স্কটিশ ওপেনার। তার ভরসায় হয়তো জয়ের স্বপ্নও দেখছিল প্রথমবার টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ খেলতে আসা স্কটল্যান্ডের মেয়েরা। শেষ পর্যন্ত সারাহ অপরাজিত ছিলেন ৪৯ রানে। ৫২ বলের ইনিংসে একটি চারের বাউন্ডারি আসে তার ব্যাট থেকে। এ ছাড়া বলার মতো রান পাননি আর কোনো ব্যাটারই।
বাংলাদেশের হয়ে সর্বোচ্চ ২টি উইকেট পেয়েছেন রিতু মনি। এ ছাড়া একটি করে শিকার ধরেছেন মারুফা, রাবেয়া, ফাহিমা ও নাহিদা। স্বর্ণা আক্তার বাদে বাকি সবাই মিতব্যয়ী বোলিং করেছেন।
নারী টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে ২২ ম্যাচ খেলে বাংলাদেশের এটি তৃতীয় জয়। দীর্ঘ এক দশক পর এই প্রতিযোগিতায় কোনো ম্যাচ জিতল তারা। স্কটিশদের হারানোর আগে আগের দু’টি জয়ই ছিল ২০১৪ সালের আসরে। সেবার প্রথমবারের মতো বিশ্বকাপে খেলতে গিয়ে শ্রীলঙ্কা ও আয়ারল্যান্ডকে হারিয়েছিল লাল-সবুজ জার্সিধারীরা। সর্বশেষ জিতেছিল ২০১৪ সালে। সেবার সিলেটে নবম স্থান নির্ধারণী ম্যাচে আয়ারল্যান্ডকে ১৭ রানে হারিয়েছিল বাংলাদেশ। এরপর টানা চার আসরে ১৬ ম্যাচে মাঠ ছাড়তে হয়েছে হার নিয়েই।
Copyright © 2022 KhulnarKhobor.com মেইল:khulnarkhobor24@gmail.com।জাতীয় অনলাইন গণমাধ্যম নীতিমালা আইনে তথ্য মন্ত্রণালয় কর্তৃক নিবন্ধন আবেদিত।স্মারক নম্বর:- ০৫.৪৪.৪৭০০.০২২.১৮.২৪২.২২-১২১।এই নিউজ পোর্টালের কোন লেখা, ছবি, অডিও, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।