ইমরুল ইসলাম ইমন,নিজস্ব প্রতিনিধি || খুলনা কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের (খুকৃবি) উপাচার্য অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ আবুল কাসেম চৌধুরী নিরবে বিশ্ববিদ্যালয় ত্যাগ করেছেন।
গত ৩০ সেপ্টেম্বর তিনি ব্যক্তিগত কারণ দেখিয়ে উপাচার্য পদ থেকে পদত্যাগ করেন। খুকৃবির উপাচার্য হিসেবে ১ বছর ১০ মাস ১৪ দিন দায়িত্ব পালনকালে নানান কারণে তিনি আলোচিত হয়েছিলেন। অফিস ভবনে রাত্রিযাপন,চুক্তিভিত্তিক নিয়োগে স্বজনপ্রীতি,শিক্ষক ও কর্মচারীদের সাথে দুর্ব্যবহার, অকারণে বেতন কর্তন ও পদোন্নতিতে হয়রানিসহ শেখ পরিবারের আস্থাভাজনদের অগ্রাধিকার দেওয়ার অভিযোগ রয়েছে সাবেক উপাচার্যের বিরুদ্ধে।
স্বৈরাচারী সরকার পতনের পর বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ আবুল কাসেম চৌধুরী, রেজিস্ট্রার ড. খন্দকার মাজহারুল আনোয়ার এবং ট্রেজারার অধ্যাপক সরোয়ার আকরাম আজিজের পদত্যাগ জানিয়েছিলেন সাধারণ শিক্ষার্থীরা। আন্দোলনও করেছিলেন সাধারণ শিক্ষার্থীরা। এর ধারাবাহিকতায় গত ২৫ আগস্ট রেজিস্ট্রার এবং ৩০ সেপ্টেম্বর উপাচার্য পদত্যাগ করলেও এখনও দায়িত্ব রয়েছেন খুলনা মহানগরের বঙ্গবন্ধু পরিষদের সহ-সভাপতি ও বিশ্ববিদ্যালয়ের ট্রেজারার অধ্যাপক সরোয়ার আকরাম আজিজ।
জানা যায়,গত ২৪ সেপ্টেম্বর সাবেক উপাচার্য অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ আবুল কাসেম চৌধুরী সর্বশেষ বিশ্ববিদ্যালয়ের খুলনার সোনাডাঙ্গায় অফিস করেন। এরপর তিনি তার সাবেক কর্মস্থল পটুয়াখালী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে যান। সেখান তার স্বপদে পুনরায় যোগদান দেওয়ার বিষয়ে সকল প্রস্তুতি নেন এবং ৩০ সেপ্টেম্বর খুকৃবির ঢাকার গেস্ট হাউজে সর্বশেষ অফিস দেখিয়ে তিনি উপাচার্যের পদ থেকে পদত্যাগ করেন। এই বিষয়ে তিনি খুলনা কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের কর্তৃপক্ষকে কিছুই জানাননি। যার কারণে এখনও অবধি বিশ্ববিদ্যালয়ের ওয়েবসাইটে পদত্যাগকৃত উপাচার্যের ছবি রয়েছে।
সাবেক এই উপাচার্যের বিরুদ্ধে ছিল নানান অভিযোগ। পটুয়াখালী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের কৌলিতত্ত¡ ও উদ্ভিদ প্রজনন বিভাগের অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ আবুল কাসেম চৌধুরী খুকৃবিতে ২০২২ সালের ১৬ নভেম্বর উপাচার্য হিসেবে যোগদান করার পরই শেখ পরিবারের আস্থাভাজন কর্মকর্তাদের সাথে সুসম্পর্ক শুরু করেন। যোগ্যতা না থাকা সত্তে¡ও তার পিএস হিসেবে দায়িত্ব দেন বাগেরহাটের এক কর্মকর্তা এবং সর্বশেষ একটি বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রলীগের নেতা তার পিএস হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন।
চলতি বছরের ৪ ফেব্র“য়ারি চুক্তিভিত্তিক বিভিন্ন পদে ৯টি পদে, একই তারিখে ১৫টি শূন্যপদের বিপরীতে শিক্ষক, কর্মকর্তা পদে ১২টি, এছাড়া ৫ মে ১৮টি পদে শিক্ষক এবং ৮ মে ২টি পদে নিয়োগের তোড়ঝোড় শুরু করেন। তবে ইউজিসির অডিট আপত্তির কারণে তাকে নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি দেওয়ায় বেশ ধকল সামলাতে হয়। যার কারণে তিনি নিয়োগ দিতে গিয়ে বিপাকে পড়েন। তবে পরবর্তীতে তিনি ইউজিসির সাবেক চেয়ারম্যান ড. আলমগীর হোসেনের আস্থাভাজন মোঃ আব্দুর রাজ্জাককে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রধান প্রকৌশলী পদে এবং তার শিক্ষাজীবনের (বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের) বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী ড. মোঃ আবদুর রৌফকে পরিকল্পনা ও উন্নয়নের পরিচালক পদে এবং তার বর্তমান কর্মস্থলের সিনিয়র প্রফেসর ড. ভবেন্দ্র কুমার বিশ্বাসকে খুকৃবির বায়োকেমিস্ট্রি এ্যান্ড মলিকুলার বায়োলজি বিভাগের অধ্যাপক পদে চুক্তিভিত্তিক নিয়োগ দেন।
এদিকে নগরীর সোনাডাঙ্গা এলাকার বিশ্ববিদ্যালয়ের অফিস ভবনের চতুর্থ তলায় রাত্রি যাপন করতেন সাবেক এই উপাচার্য। গত ১৩ ফেব্র“য়ারি খুকৃবির ভাড়া করা অফিস ভবনে বসবাস করার নিয়মের ব্যতয় এবং প্রতিষ্ঠানের আর্থিক ক্ষতি হিসেবে অডিট আপত্তি করেন বাংলাদেশ বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরী কমিশনের বাজেট পর্যালোচনা টিম। পরবর্তীতে সাবেক উপাচার্য ঐ কক্ষগুলোতে বিশ্ববিদ্যালয়ের গেস্ট হাউস হিসেবে অনুমোদন করান।
বিশ্ববিদ্যালয়ের একাধিক শিক্ষক ও কর্মচারিরা অভিযোগ করেন, সাবেক উপাচার্য সকলের সাথে অশোভনীয় আচরণ করতেন। অযৌক্তিক কারণে শিক্ষকদের শোকজ করে হয়রানি করতেন। তার আমলে শিক্ষার্থীকে ইভটিজিং করার অভিযোগে এক শিক্ষককে ক্লাস নেওয়া থেকে বিরত রাখার শাস্তি প্রদান করা হয়। এমনকি শিক্ষক ও কর্মচারীদের বিভিন্ন কমিটি গঠনেও তিনি হস্তক্ষেপ করতেন।
বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক শিক্ষক হামিদুর রহমান হিমেল বলেন, তিনি বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের যোগদান করার আগে সকল নিয়ম মেনে আবেদন করার পরও সাবেক উপাচার্য আমার বেতন আটকে দেন। অপর শিক্ষক রকিবুল হাসান মোঃ রাব্বি বলেন,সাবেক উপাচার্যের বিভিন্ন অনিয়ম নিয়ে প্রতিবাদ করার কারণে তিনি সকল যোগ্যতা থাকার পরও তার পদোন্নতিতে হয়রানি করেছেন। এছাড়া অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনুসের বিচার প্রক্রিয়া স্থগিতের দাবির প্রতিবাদে সারাদেশে ২০১ জন বিশিষ্ট কৃষিবিদের মধ্যে তার স্বাক্ষর ছিল ১৩ নম্বরে। যা নিয়ে স্যোসাল মিডিয়ায় ব্যাপক ভাইরাল হয়েছিল। সর্বশেষ সাবেক উপাচার্য সেপ্টেম্বরের শেষ দিকে সরকারি সফরের সমর্থনে পত্র না দেখিয়ে অফিস থেকে ভ্রমণ বিল উত্তোলন করেছেন।
খুকৃবির ভারপ্রাপ্ত রেজিস্ট্রার মোঃ রেজাউল ইসলাম জানান, পদত্যাগের বিষয় শুনেছি। তবে অফিশিয়ালি কিছুই জানি না। তাছাড়া বিশ্ববিদ্যালয়ের রুটিন ওয়ার্কের দায়িত্ব পালনের জন্য কাউকে এখনও দায়িত্ব দেওয়া হয়নি।
Copyright © 2022 KhulnarKhobor.com মেইল:khulnarkhobor24@gmail.com।জাতীয় অনলাইন গণমাধ্যম নীতিমালা আইনে তথ্য মন্ত্রণালয় কর্তৃক নিবন্ধন আবেদিত।স্মারক নম্বর:- ০৫.৪৪.৪৭০০.০২২.১৮.২৪২.২২-১২১।এই নিউজ পোর্টালের কোন লেখা, ছবি, অডিও, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।