যশোর প্রতিনিধি || যশোরের মনিরামপুরে চলাচলের জন্য খুলে দেওয়ার ৬ মাস পার না হতেই ধসে পড়েছে নবনির্মিত ৪২ মিটার লম্বা একটি সেতুর পাটাতনের পলেস্তারা। উপজেলার চিনাটোলা বাজারে হরিহর নদের উপর তিন কোটি ১২ লাখ ৯৩ হাজার ২১১ টাকায় নির্মিত সেতুটি চলতি বছরের মার্চের দিকে জনসাধারণের চলাচলের জন্য উন্মুক্ত করা হয়েছিল।
এরপর আগস্টের প্রথম দিকে সেতুর পাটাতনের পলেস্তারা ধসে পড়তে শুরু করে। ধীরে ধীরে বড় একটি অংশ ধসে রড বেরিয়ে পড়ায় গেল দুই মাস ধরে সেতু পারাপারে ভোগান্তিতে পড়েছেন পথচারীরা।
স্থানীয়রা বলছেন,বরাদ্দের সিংহভাগ টাকা লোপাট হওয়ায় উদ্বোধনের পরপরই সেতুর পাটাতনের পলেস্তারা ধসে পড়ছে। দায়-সারা ভাবে সেতুর কাজ করার সময় বাধা দেওয়ার চেষ্টা করা হয়েছিল। কিন্তু নানাভাবে তাদের ভয় দেখানো হয়।
সরেজমিন সেতুর দুই পাড়ের বাসিন্দাদের সঙ্গে কথা বলে ও উপজেলা প্রকৌশলীর দফতর সূত্রে জানা গেছে, চিনাটোলা বাজার থেকে মনোহরপুর বাজার সড়কের হরিহর নদের উপর ২০২১ সালের এপ্রিল মাসে ৪২ মিটার দৈর্ঘের সেতু নির্মাণের কাজ শুরু হয়। ২০২২ সালে ৬ অক্টোবর সেতুর কাজ শেষ হওয়ার কথা ছিল। ঠিকাদার নিম্নমানের সামগ্রী ব্যবহার করে নির্ধারিত মেয়াদের এক বছরের বেশি সময় পর দায়-সারাভাবে সেতুর কাজ শেষ করেন। এরপর চলতি বছরের প্রথম দিকে জনসাধারণের চলাচলের জন্য সেতু খুলে দেওয়া হয়।
সেতুর পূর্বপাড়ের বাসিন্দা আমির হোসেন বলেন, সেতু খুলে দেওয়ার ৪-৫ মাসের মাথায় মেঝের প্লাস্টার ফেটে নদীতে পড়ে কয়েকটি গর্ত দেখা দিয়েছে। পরে উপজেলায় খবর দিলে ইঞ্জিনিয়ার এবং অফিসের লোক এসে গর্তগুলো বন্ধ করে দিতে চায়,আমরা বাধা দিয়েছি। বলেছি, সেতু ভেঙে নতুন করে করতে হবে। তখন উপর থেকে আরো লোকজন আসে।আমাদের বাধার মুখে তারা সেতুর মেঝে ভাঙা শুরু করে। এখন কাজ বন্ধ করে রেখেছে ইঞ্জিনিয়ার এবং অফিস এর কর্মকর্তা । এতে করে চলাচলে আমাদের কষ্ট হচ্ছে।
স্থানীয় বাসিন্দা আমির হোসেন বলেন,সেতুর জন্য রড এনে বহুদিন ফেলে রাখা হয়েছিল। এতে রডে মরিচা পড়ে। পরে কিছু রড তুলে নিয়ে যায় ঠিকাদার। বাকি রড দিয়ে কোনো রকমে সেতুর কাজ করেছে। যে মাপের রড ব্যবহার করার কথা সেটা এখানে করা হয়নি।
স্থানীয় জিয়ারুল গাজী বলেন,সেতু তৈরির সময় ঠিকাদারের লোকজন দায়-সারা ভাবে কাজ চালাচ্ছিল। তারা অন্য এলাকা থেকে সিমেন্ট ও বালু মিশিয়ে ট্রাকে করে নিয়ে এসে ঢালাই দিয়েছে। যতটুকু মোটা করে দেওয়ার কথা ছিল সেই নিয়মে ঢালাই দেওয়া হয়নি। এখন সেতুর স্ল্যাব ভাঙার সময় হাতুড়ির আঘাতে ধুলো উড়ছে। এছাড়া সেতুর মাঝের অংশ নিচের দিকে চাপা। একটু বৃষ্টি হলেই সেতুর মাঝখানে পানি জমে থাকে।
জিয়ারুল গাজী আরো বলেন, স্থানীয় আলম চেয়ারম্যানের বাহিনী সেতুর কাজ চলার সময় উপস্থিত থাকত। কাজে অনিয়ম দেখে বাধা দিতে গেলে ভয় ভীতি দেখানো হতো।
সেতুপাড়ের চা দোকানদার আব্দুর রহমান বলেন, সেতুর পূর্বপাড়ে উদ্বোধনের একটি নামফলক স্থাপন করা আছে।সাবেক প্রতিমন্ত্রী স্বপন ভট্টাচার্য্য সেতু উদ্বোধন করার কথা ছিল। কিন্তু তিনি উদ্বোধন করতে আসেননি। বরং নামফলকে উদ্বোধনের যেই তারিখ দেওয়া আছে তারও ২০-২২ দিন পরে এসে নামফলক লাগানো হয়েছে।
স্থানীয় ওয়ার্ড বিএনপির সভাপতি লুৎফর গাজী বলেন, কাজের অনিয়ম দেখে বাধা দিতে গেলে চেয়ারম্যান আলমগীর আমাদেরকে পাত্তা দেননি। ‘বিএনপি-জামায়াতের কথা চলবে না’ এই বলে আমাকে তাড়িয়ে দিয়েছেন। আমরা চাই জোড়া তালি দিয়ে না, নতুন করে সেতুর কাজ করতে হবে।
এই বিষয়ে শ্যামকুড় ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আলমগীর বলেন, স্থানীয়দের অভিযোগ সত্য না। ক্ষোভ থেকে এখন তারা অনেক কথা বলছেন।
স্থানীয়রা বলছেন, হরিহর নদের চিনাটোলা বাজার সংলগ্ন এই সেতুর উপর দিয়ে মনিরামপুরের পূর্বাঞ্চলের ৫টি ইউনিয়নসহ অভয়নগর, কেশবপুর, খুলনা, ডুমুরিয়া উপজেলার মানুষ যাতায়াত করেন। গ্রামীণ সড়ক হলেও দিনরাত এই রাস্তায় খুব চাপ থাকে। প্রতিদিন এই সড়কে অন্তত ৫০ হাজারের বেশি মানুষ যাতায়াত করে। ট্রাক ভরে নওয়াপাড়া থেকে সার, পাথর, রড সিমেন্ট সাতক্ষীরা, কেশবপুর ও মনিরামপুরের বিভিন্ন অঞ্চলে নেয়া হয়। সেতুর মেঝে ভেঙে পড়ায় এখন চলাচল ও পণ্য পরিবহনে মানুষকে ভোগান্তিতে পড়তে হচ্ছে।
সেতু নির্মাণের ঠিকাদার শামীম চাকলাদার বলেন, আমার লাইসেন্সে অন্য ঠিকাদার কাজ করেছেন। মেঝে (স্ল্যাব) ঢালাইয়ের সময় অন্য জায়গায় সিমেন্ট-বালু মিশিয়ে এনে কাজ করা হয়েছে। এতে উপাদানের স্থায়ীত্ব কমে যাওয়ায় এমনটি হতে পারে।
সেতুর কাজ দেখভালের দায়িত্বে থাকা উপজেলা প্রকৌশলী দফতরের সাবেক উপসহকারী প্রকৌশলী গাউসুল আজম বলেন, শুনেছি ৫ আগস্ট সরকার পতনের দিন স্থানীয় লোকজন পিটিয়ে সেতুর মেঝে ভেঙে ফেলেছে। ঠিকাদার ও স্থানীয় আলমগীর চেয়ারম্যান একই দাবি করেছেন।
এই কথার সত্যতা যাচাই করতে গেলে স্থানীয় বাসিন্দারা বলেন সম্পূর্ণ মিথ্যা কথা বলেছেন আলমগীর চেয়ারম্যান এবং ঠিকাদার।
মনিরামপুর উপজেলা প্রকৌশলী বিদ্যুৎ দাস বলেন (খুলনায় খবর) কে বলেন সেতুর স্ল্যাব ধসে পড়ার খবর পেয়ে আমরা মেরামতের উদ্যোগ নিয়েছিলাম। প্রথম দিকে স্থানীয়রা বাধা দিয়ে নতুন ভাবে করার কথা বলে। এখন সবার সঙ্গে কথা হয়েছে। দ্রুত সেতু সংস্কার কাজ শুরু করা হবে।
খুলনার খবর।
Copyright © 2022 KhulnarKhobor.com মেইল:khulnarkhobor24@gmail.com।জাতীয় অনলাইন গণমাধ্যম নীতিমালা আইনে তথ্য মন্ত্রণালয় কর্তৃক নিবন্ধন আবেদিত।স্মারক নম্বর:- ০৫.৪৪.৪৭০০.০২২.১৮.২৪২.২২-১২১।এই নিউজ পোর্টালের কোন লেখা, ছবি, অডিও, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।