নড়াইল প্রতিনিধি || নড়াইলে দিন দিন মসলা জাতীয় চুইঝালের আবাদ বাড়ছে। ভৌগোলিক কারণে উপযুক্ত মাটি, অন্যান্য ফসলের তুলনায় পরিশ্রম কম এবং রোগবালাই কম হওয়ায় চুইঝাল চাষে ঝুঁকছে এ জেলার কৃষকেরা।
জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের তথ্যমতে, দেশে চুইঝাল চাষে খুলনা এবং বাগেরহাটের পরেই নড়াইলের অবস্থান। জেলার তিনটি উপজেলাতে বর্তমানে ৭ হাজার ৪ শত ৩৭ টি পরিবার চুই ঝাল চাষে সম্পৃক্ত রয়েছেন। ২০২২-২৩ অর্থবছরে জেলায় মোট ১২ হেক্টর জমিতে চুইঝালের আবাদ হয়েছে। সেখান থেকে ৩০ টন চুইঝাল উৎপাদন হয়। এর আগের অর্থবছরে উৎপাদন হয়েছিল ২৫ টন। একবছরে আবাদ বেড়েছে ৫ টন। ২০১৭-১৮ অর্থবছরে উৎপাদন ছিল মাত্র ৯ টন। অর্থাৎ ছয় বছরে উৎপাদন বেড়েছে ২১ টন।
সরেজমিন সদর উপজেলার উজিরপুর গ্রামে গিয়ে দেখা যায়, সাড়ে তিন একর জায়গায় চুইঝালের চাষ করছেন রফিকুল ও ইয়াসমিন দম্পতি। তাদের বাগানে থাকা আম, কাঁঠাল, লিচু, নারিকেল, সুপারিসহ প্রতিটা গাছের সাথে রয়েছে এক থেকে একাধিক চুই গাছ। সেখানে কথা হয় ইয়াসমিনের সঙ্গে।
তিনি বলেন,২০২১ সালে চার থেকে পাঁচটা গাছ লাগিয়েছিলাম। সেই গাছ থেকে ডগা কেটে পুনরায় লাগাতে থাকি। এভাবে বাড়তে বাড়তে বাগানে এখন প্রায় তিন হাজারের মত চুইঝাল গাছ রয়েছে৷ ইতোমধ্যে বিক্রি করেছি। খরচের তুলনায় এর দাম অনেক বেশি।
চাষিরা জানান,বেলে-দোআঁশ মাটিতে চুইঝালের চারা রোপণ করলে সবচেয়ে ভালো ফলন পাওয়া যায়। একটি গাছ থেকে কাটিং পদ্ধতিতে নতুন করে চারা উৎপাদন করা যায়। ফলে বারবার চারা কেনার প্রয়োজন হয় না। গাছ রোপণের পর জৈব সার ও পর্যাপ্ত পানি দিলেই হয়। বাড়তি তেমন কোনো যত্নের প্রয়োজন হয় না। দুই বছর পর থেকে গাছ বিক্রি করা যায়। গাছের ওজন হিসেবে এর দাম নির্ধারণ হয়। তখন এর দাম ২ থেকে ৩ হাজার টাকায় বিক্রি হয়। গাছের বয়স যত বাড়ে, দামও বাড়তে থাকে। ১০ বছর রাখলে একেকটি গাছ ২০ হাজার টাকা পর্যন্ত বিক্রি করা যায়।
চম্পা খাতুন নামে এক নারী বলেন, ২০০৫ সালে ১০টা গাছ দিয়ে চুইঝাল চাষ শুরু করি। সেখান থেকে দেড় লাখ টাকার চুইঝাল বিক্রি করেছিলাম। আমাদের এলাকায় তখন অন্য কেউ করত না,এখন আশেপাশের সবাই চাষ করে।
আগে চুইঝালের চারা নড়াইলের নার্সারিতে উৎপাদন হতো না। নার্সারি মালিকেরা খুলনার ফুলতলা ও ডুমুরিয়া থেকে চারা পাইকারি কিনে এনে বিক্রি করতেন। তবে দিন দিন চাহিদা বাড়ায় গত দুই বছর ধরে নড়াইলে চারা উৎপাদন হচ্ছে। শহরের ভাদুলিডাঙ্গা এলাকায় আল্লাহর দান নার্সারি অ্যান্ড পলিনেট হাউজ গিয়ে দেখা যায়, সেখানে অন্যান্য গাছের চারার সঙ্গে ব্যাপক পরিসরে চুইঝালের চারা উৎপাদন করা হচ্ছে।
নার্সারির স্বত্বাধিকারী মো. আনোয়ার হোসেন বলেন, দিন যত যাচ্ছে নড়াইলের চুইঝালের চারার তত চাহিদা বাড়ছে। এক বছর আগে যে পরিমাণ চারা বিক্রি করছি, এখন তার চারগুণ বেশি বিক্রি হচ্ছে।
জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক আশেক পারভেজ বলেন,দক্ষিণাঞ্চলে চুই ঝালের ব্যাপক জনপ্রিয়তা রয়েছে। বাজারে এর চাহিদা অনেক। এ অঞ্চলের যে কয়টি জেলায় চুইঝালের চাষ হয় তার মধ্যে নড়াইল অন্যতম একটি। স্বল্প খরচ ও অল্প পরিশ্রমে অধিক লাভবান হওয়ায় কৃষক এটি চাষে আগ্রহী হচ্ছে।
Copyright © 2022 KhulnarKhobor.com মেইল:khulnarkhobor24@gmail.com।জাতীয় অনলাইন গণমাধ্যম নীতিমালা আইনে তথ্য মন্ত্রণালয় কর্তৃক নিবন্ধন আবেদিত।স্মারক নম্বর:- ০৫.৪৪.৪৭০০.০২২.১৮.২৪২.২২-১২১।এই নিউজ পোর্টালের কোন লেখা, ছবি, অডিও, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।