ইমরুল ইসলাম ইমন || প্রকৃতিতে বইছে শীতের আগমনী বার্তা। ভোরের কুয়াশায় শিশির বিন্দু গ্রামীণ জনপদে জানান দিচ্ছে শীত আসছে। শীত আসার আগেই চুয়াডাঙ্গায় শুরু হয়ে গেছে খেজুর গাছ কাটা। খেজুর গাছ থেকে রস সংগ্রহ করে, তা থেকে তৈরি হয় সুস্বাদু গুড়। যা শীতের অন্যতম অনুষঙ্গ পিঠা ও পায়েস তৈরির অপরিহার্য উপাদান। ইতোমধ্যেই খেজুরের রস সংগ্রহের প্রস্তুতি নিচ্ছেন চুয়াডাঙ্গার গাছিরা।
শীতের আমেজ শুরু না হতেই খেজুর গাছ প্রস্তুতিতে গাছের শাখা-প্রশাখা ও আগাছা কেটে সাফ করে ও গাছের পরিচর্যায় ব্যস্ত সময় পার করছেন চুয়াডাঙ্গার গাছিরা। এরপর শুরু হবে গাছ থেকে রস সংগ্রহ, আর তা থেকে তৈরি হবে গুড় ও পাটালি। চুয়াডাঙ্গার খেজুরের গুড় ও নলেন পাটালির সুখ্যাতি রয়েছে দেশজুড়ে।
খেজুর গাছ থেকে যারা বিশেষভাবে রস সংগ্রহ করে তাদেরকে গাছি বলা হয়। শীতের মৌসুম শুরু হতে না হতেই গাছিরা গাছের পরিচর্যা ও গাছ প্রস্তুত করতে শুরু করেছে। গাছিরা হাতে দা নিয়ে ও কোমরে ডোঙ্গা বেঁধে নিপুণ হাতে গাছ চাছাছোলা করছেন। এতে বেশ ঝুঁকিও নিতে হয় তাদের।
চুয়াডাঙ্গা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর তথ্যে জানায়,জেলায় এ বছর রস সংগ্রহের জন্য ২ লাখ ৭২ হাজার খেজুর গাছ প্রস্তুত করা হচ্ছে। শীত মৌসুমে প্রতিটি গাছ থেকে গড়ে ১০ কেজি গুড় পাওয়া যায়। সে হিসাবে এসব গাছ থেকে গুড় উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে আড়াই হাজার মেট্রিক টন।
এ জেলার মাঠের ক্ষেতের আইলে,রাস্তার পাশে,পুকুর পাড়ে অযত্নে-অবহেলায় বেড়ে ওঠা খেজুরের গাছগুলো জেলার অর্থনীতিতে আশীর্বাদ হয়ে আসে। শীত মৌসুমে রস-গুড় উৎপাদন করে প্রায় ৫ থেকে ৬ মাস স্বাচ্ছন্দ্যে জীবন-জীবিকা নির্বাহ করে জেলার কয়েক হাজার কৃষক পরিবার। এ থেকে স্থানীয় কৃষক অর্থনৈতিকভাবে লাভবান হন। পাশাপাশি দেশের অর্থনৈতিকভাবেও লাভবান হয়।
সেলিম মিয়া একজন গাছি বলেন, আমাদের কাজ খুব ঝুঁকিপূর্ণ। আমরা গাছের অনেক ওপরে ওঠে ধারালো দা দিয়ে গাছ চাছি। খালি পায়ে গাছে উঠতে হয়, কখনো কখনো গাছে সাপও থাকে, তাই সতর্ক থাকতে হয় সবসময়। তবে শীত মৌসুমে রস সংগ্রহ করে আমরা বেশ ভালো আয় করতে পারি।
স্বপন নামে আরেকজন গাছি বলেন, আমরা দিনরাত খেটে গাছ থেকে রস সংগ্রহ করি। এই রস থেকে গুড় তৈরি করে বাজারে বিক্রি করি। শীত আসার আগে গাছগুলো ভালো করে প্রস্তুত করতে হয়, যাতে রস বেশি পাওয়া যায়। কষ্ট বেশি কিন্তু যখন গুড় তৈরি হয়, তখন সেই কষ্টের ফলটা দেখতে ভালো লাগে।
কামরুল নামে একজন তরুণ গাছি বলেন, আমাদের কাজের জন্য দক্ষতা দরকার। খেজুর গাছ কাটা সহজ কাজ নয়। অনেক সময় গাছের ওপর থাকা অবস্থায় ভারসাম্য রক্ষা করাটাই কঠিন হয়ে যায়। তবে শীতের শুরুতে রস সংগ্রহ করে পরিবারের জন্য কিছু সঞ্চয় করতে পারলে সেই কষ্টটা সার্থক হয়।
কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক মাসুদুর রহমান সরকার বলেন, খেজুরের গুড় চুয়াডাঙ্গার ঐতিহ্যবাহী পণ্য। এর নলেন পাটালির সুনাম দেশজুড়ে। শীতের গুড় উৎপাদন ও বিপণনের মাধ্যমে কৃষক পরিবারগুলো লাভবান হয়, যা স্থানীয় ও জাতীয় অর্থনীতিতেও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে। শীত পুরোপুরি না এলেও গাছিরা এখন থেকেই খেজুর গাছ থেকে রস সংগ্রহের প্রস্তুতি নিচ্ছেন।শীতের গুড়ের মিষ্টতা আর খেজুর রসের ঐতিহ্য নিয়ে চুয়াডাঙ্গার গ্রামীণ জীবন আবারও স্বপ্ন বুনছে।
Copyright © 2022 KhulnarKhobor.com মেইল:khulnarkhobor24@gmail.com।জাতীয় অনলাইন গণমাধ্যম নীতিমালা আইনে তথ্য মন্ত্রণালয় কর্তৃক নিবন্ধন আবেদিত।স্মারক নম্বর:- ০৫.৪৪.৪৭০০.০২২.১৮.২৪২.২২-১২১।এই নিউজ পোর্টালের কোন লেখা, ছবি, অডিও, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।