পরেশ দেবনাথ,কেশবপুর,যশোর || মহাকবি মাইকেল মধুসূদন দত্তের ২০১তম জন্মবার্ষিকী উপলক্ষে আয়োজিত সপ্তাহব্যাপী মধুমেলায় মহাকবি মাইকেল মধুসূদন পদক প্রদান ছাড়াই শেষ হলো। প্রতিদিন ছিল লাখো মানুষের ঢল। প্রশাসন ছিল কঠোর অবস্থানে। সাংস্কৃতিক মন্ত্রণালয়ের আর্থিক পৃষ্ঠপোষকতায় যশোর জেলা প্রশাসনের আয়োজনে সাগরদাঁড়ির মধুমঞ্চে গত ২৪ জানুয়ারি থেকে শুরু হয় সপ্তাহব্যাপী মধুমেলা। বৃহস্পতিবার (৩০ জানুয়ারী-২৫) সমাপনী অনুষ্ঠানে মহাকবি মধুসূদন পদক প্রদান ছিলো বিশেষ আকর্ষণ। কিন্তু অনিবার্য কারণবশত এবারের মধুমেলায় মধুসূদন পদক প্রদান করা হয়নি।
অনুষ্ঠানের দ্বিতীয় পর্বে আলোচনা সভার সভাপতিত্ব করেন, খুলনা বিভাগীয় কমিশনার মোঃ ফিরোজ সরকার। প্রধান অতিথি ছিলেন, মন্ত্রী পরিষদের সচিব ড. শেখ আব্দুর রশিদ।
বিশেষ অতিথি ছিলেন, বাংলাদেশ পরিকল্পনা কমিশনের কৃষি, পানি সম্পদ ও পল্লী প্রতিষ্ঠান বিভাগের সদস্য (সিনিয়র সচিব) ড. নেয়ামত উল্ল্যা ভূঁইয়া, জেলা পুলিশ সুপার জিয়াউদ্দিন আহম্মেদ, যশোর সাংস্কৃতিক কেন্দ্রের সভাপতি এ্যাড. গাজী এনামুল হক, নওয়াপাড়া সরকারি কলেজের সাবেক অধ্যাপক কাজী শওকত শাহী, বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নির্বাহী সদস্য, কেন্দ্রীয় সমন্নয়ক নুসরাত তাবাসসুম, যশোরের বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলনের যুগ্ম আহবায়ক বি,এম আকাশ হাসান, যুগ্ম সদস্য সচিব সাঈদ সান, কেশবপুরের ছাত্র প্রতিনিধি সম্রাট হোসেন।
মধুমেলায় উপস্থিত সকলকে ধন্যবাদ জ্ঞাপন করে বক্তব্য রাখেন, মেলা উৎযাপন কমিটির সভাপতি ও যশোরের জেলা প্রশাসক মোঃ আজাহারুল ইসলাম। উপস্থাপন করেন, শার্শা উপজেলা নির্বাহী অফিসার কাজী নাজিব হাসান ও যশোর জেলা প্রশাসক কার্যালয়ের সহকারী কমিশনার সুমাইয়া জাহান ঝুরকা। দর্শনার্থীদের বেশি মন কেড়েছে কৃষিমেলা। বিশেষ আকর্ষণ ছিল, পাইকগাছা, খুলনার প্রতিমা অপেরার যাত্রাপালা-“প্রেমের সমাধি তীরে”।
এ উপলক্ষে মধুমঞ্চে সপ্তাহব্যাপী কেশবপুর ও যশোরের শিল্পীগোষ্ঠীর পাশাপাশি দেশবরেণ্য শিল্পীদের পরিবেশনায় সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের প্রথম পর্বে কেশবপুর উপজেলা শিল্পকলা একাডেমির তত্ত্বাবধানে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানে সঙ্গীত পরিবেশন করে, উপজেলা পাঁজিয়ার দেশ সঙ্গীত একাডেমি, শিখরী নটন সম্পদায়, কেশবপুর বসন্ত একাডেমি, সাগরদাঁড়ি আইডিও সংস্থা, মঙ্গলকোট সোনার বাংলা সঙ্গীত একাডেমি, কেশবপুর মোমিনগঞ্জ বাজারের সান মিউজ্যিক্যাল একাডেমি ও কেশবপুর খেলা ঘরের অংশ গ্রহনে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান। এছাড়া যশোরের বৈষম্য বিরোধী সাংস্কৃতিক সংসদের সঙ্গীত, যশোর তরুণ সমাজের আবৃত্তি এবং যশোর থিয়েটারের নাটক অনুষ্ঠিত হয়। এই সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানে উপস্থাপনা করেন, কেশবপুর সরকারি পাইলট উচ্চ মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের প্রদর্শক মাহবুবুর রহমান ও পাঁজিয়ার কবি রিয়াজ লিটন।
মহাকবির বসতভিটা, কপোতাক্ষ নদের পাড়, বিদায় ঘাট, কবির স্মৃতি বিজড়িত বুড়ো কাঠবাদাম গাছতলা ও মধুমেলা, সাগরদাঁড়ি বায়তুল মামুর কেন্দ্রীয় জামে মসজিদ প্রাঙ্গণ মানুষের মিলন মেলায় পরিণত হয়। মধুমেলায় সপ্তাহ ব্যাপী দর্শনার্থীদের বিনোদনের জন্য মধুমঞ্চে কেশবপুর ও যশোরের শিল্পীগোষ্ঠী সহ দেশবরেণ্য কবি, সাহিত্যিক ও শিল্পীদের আলোচনা, কবিতা, নাটক, যাত্রাপালা, সংগীত পরিবেশনার পাশাপাশি প্যান্ডেলে সার্কাস, যাদু প্রদর্শনী, ভূতের বাড়ি ও মৃত্যুকূপ রয়েছে। শিশুদের বিনোদনের জন্য আছে নাগরদোলা, ট্রেনে ভ্রমন, জাদু প্রদর্শনী, পুতুলনাচ সহ হরেক রকমের আয়োজন।
দানাদার, জিলাপি, বাতাসা, কদমা, প্যাড়া, ছাঁচের মিষ্টি, গজা, ল্যাংচা, সন্দেশ, রসগোল্লা, বালিশ মিষ্টিসহ নানা পদের মিষ্টি। হরেক রকমের পান, মটকা চা, ফুচকা- চটপটি, আচার ও মোয়া-মুড়ির দোকানগুলোতে রয়েছে দর্শনার্থীদের ভিড়। গ্রামীণ জনপদের নিত্যপ্রয়োজনীয় দা, কাঁচি, বঁটি, ধামা, কুলা, ঝুড়ি, মোড়া ইত্যাদি বিক্রি হচ্ছে। পাওয়া যাচ্ছে শিশুদের জন্য কাঠের তৈরি নানান খেলনাসহ মেলার মাঠে কুটির শিল্পসহ অসংখ্য বিভিন্ন পণ্যের পসর বসেছে। ক্ম্বল, জাম্পার, সুয়েটার, কোট, প্যাটসহ বিভিন্ন ধরনের শীতের পোষাকের দোকানে ভীড় ছিল। মধুমেলার মাঠ ঘুরে দেখা যায়, দিনের বেলায় নারী দর্শনার্থী এবং রাতের বেলায় পুরুষ দর্শনার্থীদের ভিড় যেন মেলাকে আকর্ষণীয় করে তুলেছে।
বিনা পারিশ্রমিকে ৩২ বছর মধুসূদন মিউজিয়ামের দায়িত্বরত শামসুর রহমান গাজী (৬৫) বলেন, মধুমেলা উপলক্ষে সাগরদাঁড়িসহ চারপাশের গ্রামগুলোতে আত্মীয়-স্বজনদের আতিথেয়তা চলছে। মেয়ে-জামাই, বন্ধু-বান্ধবসহ অতিথিদের উপস্থিতিতে উৎসবের আমেজ বিরাজ করে। এসময় আসলে ঘরে ঘরে পিঠা, পুলি পায়েসসহ বিভিন্ন পর্যায়ের খাদ্যদ্রব্যের আয়োজন থাকে। অনেকের স্বজনরা মেলা আরম্ভের আগে আসেন ও মেলা শেষ হলে বাড়ী যান।
সাগরদাঁড়ির আলোকচিত্র শিল্পী মুফতি তাহেরুজ্জামান তাছু বলেন, মধু মেলার মধ্যে আরেক মেলা ‘কৃষি মেলা’ দেখে দর্শনার্থীদের আরও মন কেড়েছে। গতবছর কৃষি মেলা না হওয়ায় এবার পর্যাপ্ত ভিড় হয়েছে।
মেলার মাঠের ইজারাদার আকরাম হোসেন খান জানান, মেলার মাঠে আসা সব শ্রেণি-পেশার মানুষের বিনোদনের জন্য সব ধরনের পর্যাপ্ত আয়োজন ছিল। বিগত বছরগুলোর চেয়ে মধুমেলায় মানুষের ভিড় ছিল অনেক বেশি। ক্ষতিকারক কোন ঘটনা ঘটেনি। আইনশৃঙ্খলা রক্ষায় প্রশাসনের কঠোর ভূমিকা ছিল।
মধুকবির জন্মবার্ষিকী ও মধুমেলা উদ্যাপন কমিটির সদস্য সচিব এবং কেশবপুর উপজেলা নির্বাহী অফিসার জাকির হোসেন বলেন, ‘সপ্তাহব্যাপী মধুমেলা দেখতে দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে প্রতিদিন লাখো মধুভক্তসহ দর্শনার্থী এসেছেন। কবির জন্মবার্ষিকী ও মধুমেলা ঘিরে আইনশৃঙ্খলা রক্ষায় পুলিশ, বিজিপি, আর্মিসহ সকল বাহিনী সার্বক্ষণিক নিয়োজিত ছিল। অপরাধীদের বিরুদ্ধে ভ্রাম্যমান আদালত পরিচালনা করা হয়। মেলা জুড়ে ছিল সিসি ক্যামেরার আওতায়। লাখো দর্শনার্থীর আগমনে কোন অপ্রীতিকর ঘটনা ছাড়াই মধুমেলা সম্পন্ন হয়েছে ।
Copyright © 2022 KhulnarKhobor.com মেইল:khulnarkhobor24@gmail.com।জাতীয় অনলাইন গণমাধ্যম নীতিমালা আইনে তথ্য মন্ত্রণালয় কর্তৃক নিবন্ধন আবেদিত।স্মারক নম্বর:- ০৫.৪৪.৪৭০০.০২২.১৮.২৪২.২২-১২১।এই নিউজ পোর্টালের কোন লেখা, ছবি, অডিও, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।