★স্ট্যাম্পে চুক্তি করে সরকারি খাস জমির পজিশন বিক্রি : ★আশ্রায়ণ প্রকল্পের জমি অধিগ্রহণসহ উন্নয়ন প্রকল্প থেকে বিপুল অর্থ আত্মসাত:
★শেখ পরিবারের আস্তাভাজন ও ফ্যাসিবাদের দোসর ইউপি চেয়ারম্যান হায়দার মোড়ল:
★শেখ পরিবারকে ১০% কমিশন দিয়ে ঠিকাদারি কাজ নিতেন:
★টিআর-কাবিখা’র কাজেও ১০% কমিশন দিতেন সালাম মূর্শেদীর পিএস আকতারকে:
★জাতীয় পার্টি থেকে পাল্টি দিয়ে বিএনপি, এখন আওয়ামী লীগ নেতা:
এস.এম.শামীম,দিঘলিয়া|| খুলনার দিঘলিয়া উপজেলার সদর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান ও আওয়ামী লীগ নেতা মোঃ হায়দার আলী মোড়লের বিরুদ্ধে স্ট্যাম্পে চুক্তি করে সরকারি খাস খতিয়ানভূক্ত জমির পজিশন বিক্রি করে মোটা অংকের অর্থ আদায়,আশ্রায়ন প্রকল্পের জমি অধিগ্রহণের টাকা আত্মসাত,টিআর-কাবিটা প্রকল্পের কাজে নয়-ছয় করে অর্থ আত্মসাত,গভীর নলকূপের বিনিময়ে গ্রাহকদের কাছ থেকে অতিরিক্ত অর্থ আদায়,এলজি এসপি প্রকল্প,হাট বাজার,উন্নয়ন তহবিল,উপজেলা পরিষদের বরাদ্দ, ও কর্মসৃজন প্রকল্পসহ সরকারের উন্নয়নমূলক বিভিন্ন প্রকল্পে দুর্নীতি করে কোটি কোটি টাকা হাতিয়ে নেয়ার অভিযোগ উঠেছে। এমনকি তার বিরুদ্ধে টিআর-কাবিটা প্রকল্পে পুরাতন ইট ব্যবহার করে ও ৪০ দিনের কর্মসূচির শ্রমিক দিয়ে কাজ জোড়া-তালি দেওয়ারও অভিযোগ রয়েছে। তিনি শেখ পরিবারের কাছ থেকে ১০% কমিশন দিয়ে বহু ঠিকাদারী কাজ বাগিয়ে নিয়েছেন। ফ্যাসিস্ট হাসিনাসহ তার দোসররা দেশ ছেড়ে পালালেও আওয়ামী লীগের দোসর আলোচিত এই ইউপি চেয়ারম্যান এখনও বহাল তবিয়তে রয়েছেন।
ইউপি চেয়ারম্যান হায়দার আলী মোড়ল খুলনা জেলা আওয়ামীলীগের সদস্য এবং শেখ পরিবার ও সাবেক এমপি সালাম মূর্শেদীর আস্থাভাজন হিসেবে পরিচিত ছিলেন। এ সুবাদে একাধিকবার চেয়ারম্যান নির্বাচিত হওয়ায় নানা অনিয়ম-দুর্নীতির সঙ্গে জড়িয়ে পড়েন। এর মাধ্যমে অল্প দিনেই তিনি কোটি কোটি টাকার মালিক হয়েছেন বলেও অভিযোগ রয়েছে। সূত্র জানায়, বৈষম্যবিরোধী ছাত্র-জনতার আন্দোলনের মুখে গত ৫ আগস্ট শেখ হাসিনা সরকারের পদত্যাগের পর ইউপি চেয়ারম্যান হায়দার আলী মোড়ল বেশ কিছু দিন আত্মগোপনে ছিলেন। যদিও পরবর্তীতে সব পক্ষকে ‘ম্যানেজ’ করে পূণরায় স্বপদে ফিরে আসেন। এভাবে এখনও ফ্যাসিবাদের এই দোসর এখনও বহাল তবিয়তে রয়েছেন। এছাড়া এর আগে এক সময় তিনি জাতীয় পার্টি করতেন। সেখান থেকে বিএনপিতে যোগ দেন। পরবর্তীতে সুবিধা পেতে তিনি আওয়ামী লীগ নেতা বনে যান। এভাবে যখন যে দল ক্ষমতায় যায় তখন তিনি পাল্টি দিয়ে সেই দলে ভিড়ে যান। তার এসব অনিয়ম-দুর্নীতির বিষয়ে স্থানীয়দের মধ্যে চরম ক্ষোভ বিরাজ করলেও প্রভাবশালী চেয়ারম্যান হওয়ায় তার ভয়ে মুখ খুলতে সাহস পায় না কেউ।
অনুসন্ধান ও খুলনা জেলা প্রশাসক বরাবর অব. সেনা সদস্য মোঃ খসরুল ইসলামের অভিযোগের সূত্রে জানা গেছে, দিঘলিয়া গ্রামের মৃত ফজলুল হকের পুত্র মোঃ খসরুল ইসলাম তার নামীয় ব্রহ্মগাতী মৌজার (আর এস ১২০৯, ৯৫৭ খতিয়ান ৯১৭,৯১৯, ৯২০ও ৪৬০নং দাগ) সর্বমোট ০.৭৮৭১ একর জমি জেলা প্রশাসক খুলনার সাথে আশ্রায়ণ প্রকল্পের জন্য শতকপ্রতি ৭৫ হাজার টাকা করে বিক্রিতে চুক্তিবদ্ধ হয়। সে মোতাবেক ২০২২ সালের ২৯ মার্চ জমি রেজিস্ট্রি করার সকল কাজ সম্পন্ন হলে সেই মুহূর্তে চেয়ারম্যান হায়দার আলী মোড়ল বলেন, ‘খসরুলের জমি রেজিস্ট্রি হবে না তার ব্যাংকের ব্লাংক চেক না দেওয়া পযর্ন্ত।’ তাৎক্ষণিক খসরুল বাসা থেকে তার নামীয় সোনালী ব্যাংক দিঘলিয়া শাখার ২টি চেক তাকে দেওযার পর দিঘলিয়া সাব-রেজিস্ট্রি অফিসে জমি রেজিস্ট্রি হয়।
যার দলিল নাম্বার ৪৮৯/২২, ৪৯০/২২, ৪৯২/২২। জমি রেজিস্ট্রি হওয়ার পর তৎকালীন দিঘলিয়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মোঃ মাহাবুবুল আলম তাকে (খসরুলকে) ৫০ লাখ টাকার চেক দেন। তিনি তাৎক্ষণিক দিঘলিয়া সোনালী ব্যাংক শাখায় তার একাউন্টে চেক জমা দেন। অব. সেনা সদস্য মোঃ খসরুল ইসলাম অভিযোগ করেন, তিনি চেক জমা দেওয়ার সাথে সাথে হায়দার আলী মোড়ল তার ইউনিয়ন পরিষদের শিল্পী নামে এক কর্মচারীকে দিয়ে একটি চেকে ১০ লাখ ৫৬ হাজার ৭৫০ টাকা এবং পরবর্তী আরেকটি চেকে ৫ লাখ ২৫ হাজার টাকা উত্তোলন করে নেয়। পরবর্তীতে হায়দার আলী মোড়লের কাছে তার দেওয়া দুটি চেক ফেরত চাইলে বিভিন্ন তালবাহানা শুরু করেন। এক পর্যায়ে তিনি বলেন, ‘জামানত বাবদ টাকা নেওয়া হয়েছে, জমি মিউটেশন হওয়ার পর টাকা ফেরত দেওয়া হবে।
বিষয়টি দিঘলিয়া উপজেলা সাবেক চেয়ারম্যান শেখ মারফুল ইসলাম ও তৎকালীন নির্বাহী কর্মকর্তা মাহবুব আলমকে অবগত করলে এক মাস পর টাকা ফেরত দেবেন মর্মে অঙ্গীকারবদ্ধ হন। এক মাস পর হায়দার আলী মোড়ল আমাকে ৪ লাখ ২০ হাজার টাকা ফেরত দেন। বাকি ১১লাখ ৬১ হাজার ৭৫০ টাকা দুই বছর অতিবাহিত হলেও টাকা ফেরত দিবে না বলে অকথ্য ভাষায় গালিগালাসহ বিভিন্ন প্রকার ভয়ভীতি প্রদর্শন করছে।
অপর অভিযোগের অনুসন্ধানে জানা গেছে, ৫০-৬০ বছরের পুরাতন মাছের বাজার দিঘলিয়া উপজেলার ৩৬নং পানিগাতি মৌজার খাস সরকারি ১নং খতিয়ানভূক্ত (আরএস ৪৮৪৬ নং দাগ) ১৭ একর জমির উপর ছিল মাছের বাজার। সেই মাছের বাজারের জমির ৮টি দোকানের পজিশন তিনশত টাকার স্ট্যাম্পে বিক্রি করে দেন চেয়ারম্যান হায়দার আলী মোড়ল। এছাড়া খুলনা জেলা প্রশাসকের নামে ২০১২ সালের ৪১৪২ নং দলিলে উপজেলার পানিগাতি মৌজার আর এস ৭৮৫ খতিয়ানের ৪১৬২ ও ৪৮৬২ দাগের .২১ একর, আর এস ১২৯০নং খতিয়ানের ৪১৫৯ ও ৪৮৪৫ নং দাগের মধ্যে.০৬ একর মোট .২৭ একর জমি পথের বাজার উন্নয়ন প্রকল্পে ৭জন গ্রহীতা দান পত্র দলিল করে দেন। এরা ৭ জন হলেন- এস এম গোলাম রহমান, মোসাঃ আলেয়া বেগম, মোসাঃ ছালেহা বেগম, মোঃ ছরোয়ার হোসেন বন্দ, মোঃ ওলিয়ার রহমান বন্দ, মোঃ দেলোয়ার বন্দ ও মোঃ জয়নাল বন্দ। কিন্তু হায়দার আলী মোড়ল সরকারি চান্দিতে অবস্থিত ১৬টি মাংসের দোকানের প্রতিটি ৫০ টাকার স্ট্যাম্পে পজিশন বিক্রি করে দিয়েছেন।
এভাবে সরকারি জমি বিক্রি করে কোটি কোটি টাকা হাতিয়ে নিয়েছেন ইউপি চেয়ারম্যান মোঃ হায়দার আলী মোড়ল। তার নামে-বেনামে রয়েছে অঢেল সম্পত্তি। যা তদন্ত করলে বেরিয়ে আসবে বলে স্থানীয়রা জানিয়েছেন। যদিও এভাবে ইউপি চেয়ারম্যান কর্তৃক সরকারি সম্পত্তি আত্মসাত হলেও তা উদ্ধারে দৃশ্যমান কোন অগ্রগতি নেই উপজেলা
Copyright © 2022 KhulnarKhobor.com মেইল:khulnarkhobor24@gmail.com।জাতীয় অনলাইন গণমাধ্যম নীতিমালা আইনে তথ্য মন্ত্রণালয় কর্তৃক নিবন্ধন আবেদিত।স্মারক নম্বর:- ০৫.৪৪.৪৭০০.০২২.১৮.২৪২.২২-১২১।এই নিউজ পোর্টালের কোন লেখা, ছবি, অডিও, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।