সোহেল হোসেন, লক্ষ্মীপুর প্রতিনিধি।|| লক্ষ্মীপুরে জুলাই বিপ্লবে গনহত্যায় জড়িত এবং হত্যা মামলায় সুনিদিষ্ট অভিযুক্ত আসামী আলাউদ্দিন সহ কয়েকজনের ফুলেল শুভেচ্ছায় সিক্ত (বরণ করে নিলেন) হলেন জেলা প্রশাসক রাজিব কুমার সরকার।
একইদিন একইভাবে নিজ কার্যালয়ে জেলা পুলিশ সুপার মোহাম্মদ আখতার হোসেন এবং সদর উপজেলা নির্বাহী অফিসার মোঃ জামশেদ রানা হত্যা মামলার এ আসামী সহ তাদের ফুল দিয়ে বরণ করে নিলেন। এ ঘটনার পর পুরো জেলা জুড়ে তোলপাড় শুরু হয়েছে।
সোমবার ৩ ফেব্রুয়ারী লক্ষ্মীপুর চন্দ্রগঞ্জ প্রেসক্লাবের নবনির্বাচিত পরিষদের নেতৃবৃন্ধ ফুল দিয়ে জেলা প্রশাসক(ডিসি) পুলিশ সুপার(এসপি) এবং উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার (ইউএনও) সঙ্গে আলাদাভাবে সাক্ষাতে গেলে কর্মকর্তারা আলাদাভাবে তাদের বরণ করে নেন।
আলাউদ্দিন জুলাই বিপ্লবের গনহত্যার সময় জড়িত যুবদল নেতা মোসলেহ উদ্দিন হত্যার নোয়াখালীর বেগমগঞ্জ থানার মামলা নং- ২১,তারিখ-১৮-১২-২৪ এবং জিআর মামলা নং-৪৩২/২৪ এর ৩ নম্বর আসামী। এ ছাড়া আলাউদ্দিন বেগমগঞ্জ উপজেলার মোহাম্মদপুর গাইনবাড়ীর চৌধুরী মিয়ার ছেলে এবং নিজেকে লক্ষ্মীপুর চন্দ্রগঞ্জ প্রেসক্লাবের নবনির্বাচিত সাধারন সম্পাদক পরিচয় দেয় বলে জানা যায়। অবশ্য আনুষ্ঠানিক ফুলেল শুভেচ্ছা বিনিময় করার সময় লক্ষ্মীপুরের চন্দ্রগঞ্জ থানাধীন হানিফমিয়াজির বাজার ফাজিল মাদ্রাসার অধ্যক্ষ ও প্রেসক্লাবের নবনির্বাচিত সভাপতি আবদুন নুর সহ অন্যরাও উপস্থিত রয়েছেন। নিহত মোসলেহ উদ্দিনের মা ও মামলার বাদী মোবাশে^রার দাবী, মামলার পর থেকে এমনিতে আলাউদ্দিন নিজেকে প্রভাবশালী দাবী করে মামলা প্রত্যাহারের চাপ সৃষ্টি করে আসছে।
এ ছাড়া তার ও পরিবারের সদস্যদের নানা ভাবে ভয়ভিতি, হুমকি দিচ্ছে মামলা থেকে তাকে বাদ দিতে। প্রশাসনের উচ্চ পর্যায়ের বিভিন্ন লোকজনের তার সম্পর্ক রয়েছে, এ মামলায় কেবলই বাদীর ক্ষতি ছাড়া তাদের ক্ষমতায় কারো কিছুই হবে না। বাদীর দাবী, মামলার পর থেকে আলাউদ্দিন সহ সন্ত্রাসীদের অব্যাহত হুমকিতে তারা বাড়ীঘর ছাড়া, চাপের মুখে স্বাক্ষীরা তটস্থ।
আদালতের নির্দেশে গত দুই মাসে মামলা ও ঘটনায় জড়িত আসামীরা প্রকাশ্যে ঘুরলেও কোন আসামীকে গ্রেফতার করেনি পুলিশ। এখনো লাশ উত্তোলন, ময়না তদন্ত করা হয়নি। এমনিতেই ন্যায় বিচার নিয়ে শংকিত বাদী, সেখানে হত্যা মামলার এজাহারভুক্ত আসামী আলাউদ্দিনের ফুলেল শুভেচ্ছা সিক্ত ডিসি, এসপি ও ইউএনও’র সেলফি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে মামলা ও বাদীর পরিবারের উপর নতুন করে প্রভাব সৃষ্টি করায় ক্ষুব্ধ নিহত মোসলেহ উদ্দিনের পরিবার।
এ ঘটনায় এখন মামলার স্বাক্ষী সহ এলাকাবাসীও চরম আতংকিত। গত বছরের ১ জুলাই বিগত ফ্যাসিবাদ সরকার বিরোধী আন্দোলন চলাকালে নোয়াখালীর বেগমগঞ্জ চন্দ্রগঞ্জ পূর্ব বাজারে এক ঝটিকা মিছিল শেষে যুবদল নেতা কোয়ারিয়া নিজ বসতে ফিরার সময় আঃলীগ ও তার অঙ্গ সংগঠনের সবুজ, আবদুল্ল্যাহ, আলাউদ্দিন, রবিন, লিঠন, মামুন সহ ২০/২৫ সন্ত্রাসী তাকে ধাওয়া করে পিটিয়ে নির্মমভাবে হত্যা করে। অবশ্য এর আগে স্থানীয়রা গুরুতর আহতবস্থায় চন্দ্রগঞ্জ ন্যাশনাল এবং পরে চৌমুহনী প্রাইম হসপিটালে নিলে কর্তব্যরত ডাক্তার মৃত ঘোষনা করে। এ ঘটনায় সন্ত্রাসীরাই স্বঊদ্দ্যেগী হয়ে এবং স্থানীয় আঃলীগ নেতাদের ম্যানেজ করে তড়গিড়ি করে রাতেই মোসলেহ উদ্দিনের গ্রামের বাড়ী লক্ষ্মীপুরে উত্তর জয়পুরে লাশের দাফন করে। এ ব্যাপারে নিহত মোসলেহ উদ্দিনের পরিবার ছেলে হত্যার বিচার চেয়ে ধারে ধারে ঘুরে ও চাপের মুখে থানায় মামলা করতে পারেনি। ছেলে মৃত্যুর কোন কাগজ পত্র দেইনি কেউ। অবশেষে ৫ আগষ্টে পটপরিবর্তনের পর আতœগোপন থেকে বেরিয়ে নিহত মোসলেহ উদ্দিনের মা গত বছরের ২৫ নভেম্বর নোয়াখালী জুডিশিয়িাল ম্যাজিষ্ট্রেট আমলী আদালত-৩ সিআর মামলা-১২৪১/২৪ দায়ের করেন। পরে যাচাই-বাছাই শেষে আদালতের নির্দেশে ১৮ ডিসেম্ভর/২৪ নোয়াখালীর বেগমগঞ্জ থানার মামলা নং- ২১,তারিখ-১৮-১২-২৪ এবং জিআর মামলা নং-৪৩২/২৪ দায়ের করা। অথচ ঘটনার ৬ মাস ফেরুলেও এখন কোন আসামীতো গ্রেফতার হয়নি বরং আসামীরা প্রকাশ্যে ঘুরাফেরার পাশাপাশি ৩নং আসামীর প্রভাব ও ফুলেল শুভেচ্ছায় সিক্ত প্রশাসনের কর্তা ব্যাক্তিরা। সবত্রই চলছে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়া সেলফি নিয়ে হৈচৈ।
Copyright © 2022 KhulnarKhobor.com মেইল:khulnarkhobor24@gmail.com।জাতীয় অনলাইন গণমাধ্যম নীতিমালা আইনে তথ্য মন্ত্রণালয় কর্তৃক নিবন্ধন আবেদিত।স্মারক নম্বর:- ০৫.৪৪.৪৭০০.০২২.১৮.২৪২.২২-১২১।এই নিউজ পোর্টালের কোন লেখা, ছবি, অডিও, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।