# শেখ হাসিনার সম্পত্তি রক্ষার দায়িত্বে ছিলেন তিনি
# ইউনিয়নের সড়ক বাতিতে অবৈধ বিদ্যুৎ সংযোগ
# ষ্টিক লাইটের মূল্য বেশি দেখিয়েও অর্থ আত্মসাত
# প্রবাহের অনুসন্ধানী প্রতিবেদনে তোলপাড়, দৌঁড়ঝাপ শুরু
এস.এম.শামীম দিঘলিয়া খুলনা || খুলনার দিঘলিয়া উপজেলার সদর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান ও জেলা আওয়ামী লীগ নেতা মোঃ হায়দার আলী মোড়লের বিরুদ্ধে একের পর এক নানা অনিয়ম-র্দুর্নীতির তথ্য বেরিয়ে আসছে। তিনি ইউনিয়ন পরিষদে বহিরাগতসহ নিজস্ব লোক দিয়ে পরিবারতন্ত্র কায়েম করে সিন্ডিকেটের মাধ্যমে দুর্নীতির আঁখড়ায় পরিণত করেছেন।
এ সিন্ডিকেটের মাধ্যমে ইউপি সদস্যদের অবমূল্যায়ণ করে নিজেই প্রকল্পের কাজ করাসহ ট্রেড লাইসেন্স, জন্মনিবন্ধন ও প্রত্যয়ন পত্রসহ বিভিন্ন খাতে অতিরিক্ত অর্থ আদায়, পরিষদের আয়-ব্যয়ের সঠিক হিসাব প্রদান না করাসহ বিভিন্ন অভিযোগ উঠেছে। এমনকি ইউনিয়নের ১শ’টি পোলের সড়ক বাতিতে অবৈধভাবে বিদ্যুৎ সংযোগ দিয়েছেন চেয়ারম্যান হায়দার মোড়ল। যদিও ষ্টিক লাইটের মূল্য বেশি দেখিয়ে এ প্রকল্প থেকেও অর্থ আত্মসাতের অভিযোগ উঠেছে।
এ প্রকল্পে তার ভাগ্নের ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান মেসার্স শাহ এন্টার প্রাইজের লাইসেন্সেরও মেয়াদোত্তীর্ণ বলে জানা গেছে। অপরদিকে, ইউপি চেয়ারম্যান হায়দার আলী মোড়ল পতিত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার দিঘলিয়া উপজেলার গোডাউন ও রেস্ট হাউজ রক্ষার অন্যতম দায়িত্বে ছিলেন। হাসিনা পরিবার ২০২৩ সালের ৬ জানুয়ারি ব্যক্তিগত সফরে ওই সম্পত্তি পরিদর্শনে আসলে তার মূখ্য ভূমিকা ছিল চোখে পড়ার মত। সেখানে দলের শীর্ষ নেতা এবং স্থানীয় সংসদ সদস্যরা যেতে না পারলেও হায়দার আলী মোড়ল শেখ হাসিনার সফর সঙ্গী হিসাবে ছিলেন।
হায়দার আলী মোড়লের অনিয়ম- দূনীতির সংবাদ বিভিন্ন গণমাধ্যমে প্রকাশ হলে তিনি ১২ বছর আগে আওয়ামীলীগ থেকে বহিস্কার হয়েছিলেন বলে দাবি করে তিনি শাক দিয়ে মাছ ঢাকার চেষ্টা করেছেন। খুলনা জেলা আওয়ামীলীগের সর্বশেষ ২০২১ সালের ৩ জানুয়ারী ঘোষিত দলের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদেরের স্বাক্ষরিত কমিটির ৩৫নং সদস্য ছিলেন হায়দার আলী মোড়ল। তবে দলীয় শৃংখলা ভঙ্গ করায় দল থেকে সাময়িক বহিস্কার করা হয় তাকে । পরবর্তীতে ২০২৩ সালের ৮ ফেব্রুয়ারী দলের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদেরের স্বাক্ষরিত এক চিঠিতে বহিস্কার আদেশ প্রত্যাহার করা হয়।
একই বছর ২৬ ফেব্রুয়ারী দিঘলিয়া উপজেলা আওয়ামীলীগের সন্মেলনে সভাপতি প্রত্যাশী ছিলেন বলে বিভিন্ন গনমাধ্যমে সংবাদ প্রকাশিত হয় । পরে উপজেলা সন্মেলন স্থাগিত হয়ে যায়।
এদিকে, গত ৩ ফেব্রুয়ারী দৈনিক প্রবাহে ইউপি হায়দার আলী মোড়লের বিরুদ্ধে স্ট্যাম্পে চুক্তি করে সরকারি খাস খতিয়ানভূক্ত জমির পজিশন বিক্রি করে মোটা অংকের অর্থ আদায়সহ বিভিন্ন অনিয়ম-র্দুর্নীতির অনুসন্ধানী প্রতিবেদন প্রকাশের পর উপজেলাজুড়ে তোলপাড় সৃষ্টি হয়।
জনসাধারণের কাছে মুখোশ খুলে যায় হায়দার মোড়লের। যদিও তিনি এ অবস্থা থেকে নিজেকে রক্ষা করতে নিজস্ব কতিপয় সাঙ্গ-পাঙ্গদের দিয়ে পত্রিকা অফিসসহ বিভিন্ন দপ্তরে দৌঁড়ঝাপ করছেন বলে জানা গেছে। কিন্তু ফ্যাসিস্ট হাসিনাসহ তার দোসররা দেশ ছেড়ে পালালেও আওয়ামী লীগের দোসর আলোচিত এই ইউপি চেয়ারম্যান এখনও বহাল তবিয়তে রয়েছেন।
অনুসন্ধানে জানা গেছে, দিঘলিয়া সদর ইউনিয়ন পরিষদকে অনিয়ম-দুর্নীতির আঁখড়ায় পরিণত করেছেন বর্তমান ইউপি চেয়ারম্যান হায়দার মোড়ল। আর তার র্দুর্নীতির সহায়ক হিসেবে পরিষদে নিয়োগ দিয়েছেন দুর্নীতিতে সিদ্ধহস্ত পরিষদের সাবেক সচিব ফারুককে। এছাড়া অনিয়ম-দুর্নীতির সহায়তার জন্য রেখেছেন তার চাচাতো বোন শিল্পীকেও। রয়েছেন ইসরাইল নামে আরও এক সহযোগি। ইসরাইল জন্ম নিবন্ধনে দুর্নীতি করে আঙ্গুল ফুলে কলা গাছ হয়েছে। এভাবে দুর্নীতির সিন্ডিকেট তৈরি করে ট্রেড লাইসেন্স, জন্মনিবন্ধন, প্রত্যয়ন পত্রসহ বিভিন্ন অতিরিক্ত টাকা আদায় করা হয়। যার পরিমান অন্যান্য ইউনিয়নের তুলনায় বেশি।
ফলে নিয়ম থাকলেও ইউনিয়নে ট্রেড লাইসেন্স, জন্মনিবন্ধন ও প্রত্যয়নসহ অন্যান্য বিষয়ের ফি’র চার্ট টানানোর কথা থাকলেও তা টানানো হয়নি। ইউনিয়ন পরিষদের বিভিন্ন ঠিকাদারি কাজের টেন্ডার করা হয় পাতানো। সকল ওর্য়াডে একটি করে থাকা স্থায়ী কমিটির প্রতি মাসে মিটিং হওয়ার কথা থাকলেও এ পর্যন্ত কোন মিটিং করতে দেননি তিনি। যদিও বছর শেষে কাগজে- কলমে ঠিক করে রাখেন তিনি।
অভিযোগ রয়েছে, চেয়ারম্যান হায়দার মোড়ল ইউপি সদস্যদের সাথে কোন পরামর্শ ছাড়াই টিআর-কাবিটাসহ সকল উন্নয়নমূলক কাজ করে থাকেন। ফলে তিনি কখন কি কাজ করেন তাও জানতে পারেননা সদস্যরা। এমনকি ইউপি সদস্যকে নামেমাত্র প্রকল্পের সভাপতি (পিআইসি) বানিয়ে চেয়ারম্যান নিজেই প্রকল্পের কাজ করেন। যার অংশ হিসেবে ২০২৩-২৪ অর্থবছরে ৩০/৩৫ লাখ টাকার কাজ করে মোটা অংকের অর্থ নিজেই পকেটস্থ করলেও সদস্যদের কাছে ১ লাখ ৬ হাজার টাকা অবশিষ্ট ছিল বলে জানান। এতে অপর ইউপি সদস্যরা অসন্তোষ প্রকাশ করেন। এমনকি ইউনিয়ন পরিষদে বছরে আয়- ব্যয়ের হিসাব, পরিষদের নামে কোন কোন ব্যাংকে কতগুলো একাউন্ট আছে এবং তাতে কি পরিমান টাকা আছে তাও সদস্যদের জানতে দেন না তিনি।
অভিযোগ রয়েছে, সকল অপকর্মের কারিগর হচ্ছেন সাবেক সচিব ফারুক।
কোন প্রকল্পের কাজ শেষে থাকা অতিরিক্ত অর্থের ভাগ-বাটোয়ারার অংশ ইউপি সদস্যদের সমান ভাগ জাল-জালিয়াতিতে পোক্ত এই ফারুককে দিতে হয়। এমনকি ফারুক এতটাই প্রভাব বিস্তার করেন যে পরিষদের ২০২৩-২০২৪ অর্থ বছরে উত্তোলনকৃত হোল্ডিং ট্যাক্স থেকে প্রায় ৩০ হাজার টাকা ফারুক গ্রহণ করে বলে অভিযোগ রয়েছে। এভাবে ইউনিয়ন পরিষদের হিসাব নিকাশের অনিয়ম ধামাচাপা দিতেই হায়দার মোড়ল সাবেক সচিব ফারুককে পূণরায় পরিষদে নিয়োগ দিয়েছেন বলে জানা গেছে। যদিও তার নিয়োগ এবং বেতন নিয়ে ইউপি সদস্যদের মধ্যে রয়েছে নানা বিতর্ক। যার তদন্ত করলে থলের বিড়াল বেড়িয়ে আসবে।
ইউনিয়নের সড়ক বাতিতে অবৈধভাবে বিদ্যুৎ সংযোগ প্রদানের বিষয়ে ওজোপাডিকোর বিক্রয় ও বিতরণ বিভাগ-৩’র নির্বাহী প্রকৌশলী এইচ এম ফরহাদ হোসেন বলেন, দিঘলিয়া সদর ইউনিয়নের ১শ’টি পোলে অবৈধভাবে বিদ্যুৎ সংযোগ দেয়া হয়েছে। এ বিষয়ে একাধিকবার ইউপি চেয়ারম্যানকে অবহিত করেও কোন সুফল হয়নি।
Copyright © 2022 KhulnarKhobor.com মেইল:khulnarkhobor24@gmail.com।জাতীয় অনলাইন গণমাধ্যম নীতিমালা আইনে তথ্য মন্ত্রণালয় কর্তৃক নিবন্ধন আবেদিত।স্মারক নম্বর:- ০৫.৪৪.৪৭০০.০২২.১৮.২৪২.২২-১২১।এই নিউজ পোর্টালের কোন লেখা, ছবি, অডিও, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।