মোঃ ওয়ালিউল্লাহ বাহার,কয়রা ||খুলনার কয়রায় টেকসই বেড়িবাঁধ নির্মাণ নিয়ে জটিলতার সৃষ্টি হয়েছে। জমি অধিগ্রহণ না করে ব্যক্তিমালিকানাধীন জমির উপর দিয়ে বাঁধ নির্মাণ, ঘরবাড়ি ভাঙচুর, জমি থেকে মাটি খননসহ নদীর চরের বনায়ন ধ্বংস করে বাঁধ নির্মাণ হচ্ছে। এসব নিয়ে এলাকাবাসি ও ঠিকাদারের লোকজনের মধ্যে দ্বন্দ্বের সৃষ্টি হচ্ছে। সম্প্রতি দ্বন্দ্বের জেরে বাকবিতন্ডের একপর্যায়ে উত্তর বেদকাশির শাকবাড়িয়া এলাকায় মারামারির ঘটনা ঘটে। এঘটনায় থানায় পাল্টাপাল্টি অভিযোগ করা হয়। বর্তমানে সেখানে কাজ বন্ধ রয়েছে। এসব নিয়ে যথাসময়ে কাজ শেষ করা নিয়ে অনিশ্চয়তা দেখা দিয়েছে।
পানি উন্নয়ন বোর্ড, খুলনা-২ সূত্রে, ঘূর্ণিঝড় ও জলোচ্ছ্বাস থেকে দক্ষিণ বেদকাশী ও উত্তর বেদকাশী ইউনিয়নকে রক্ষায় ৪৮টি গুচ্ছে একটি প্রকল্পের অধীনে ১৪/১ নম্বর পোল্ডারে প্রায় ৩২ কিলোমিটার টেকসই বাঁধ নির্মাণ করা হবে। ১ হাজার ১৭২ কোটি ৩১ লাখ টাকার এই প্রকল্পের কাজ চলমান রয়েছে। ১৪/১ নম্বর পোল্ডারটি পড়েছে কপোতাক্ষ ও শাকবাড়ীয়া নদীর পাড়ে।
সরেজমিন শাকবাড়িয়া, জোড়শিং, আংটিহারাসহ কয়েকটি স্থানের বাঁধ নির্মাণ কাজ পরিদর্শন ও এলাকাবাসির সাথে কথা বলে জানা যায়, বাঁধ নির্মাণের জন্য বনায়ন ধ্বংস করে মাটি খননের পাশাপাশি পার্শ্ববর্তী ব্যক্তিমালিকানাধীন কৃষি জমি থেকে মাটি নেয়া হচ্ছে। এছাড়া বেশ কিছু স্থানে ব্যক্তিমালিকানাধীন জমির উপর দিয়ে বাঁধ নির্মাণ করা হচ্ছে। হতদারিদ্র ব্যক্তিদের ঘরবাড়ি সরিয়ে নিতে হচ্ছে। তবে ব্যক্তিমালিকানাধীন জমির মালিকরা কোন ক্ষতিপূরণ পাননি। এছাড়া ঠিকাদারের লোকজন খামখেয়ালীমত মাটি ফেলায় বসতবাড়ির ক্ষতি হচ্ছে। প্রতিবাদ করতে গেলে ঠিকাদারের লোকজন চাঁদাবাজি মামলার ভয় দেখানোর পাশাপাশি মারমুখি ভূমিকা নিচ্ছেন বলে একাধিক অভিযোগ পাওয়া গেছে। এছাড়া নানা কথা বলে স্থানীয় নারীদের বিরক্ত করারও অভিযোগ উঠেছে। ক্ষতিপূরণের দাবিসহ হয়রাণির প্রতিকার চেয়ে এলাকাবাসি কয়েকবার মানববন্ধনও করেছেন। বার বার প্রাকৃতিক দুর্যোগে ক্ষতিগ্রস্ত বাঁধের এসব মানুষ দিশাহারা হয়ে পড়েছেন। ঠিকাদারের লোকজন প্রভাবে অধিকাংশ লোকজন নিরবে হাজারো ক্ষতি মেনে নিলেও ক্ষোভে ফুঁসে রয়েছে। ক্ষোভের বহিঃপ্রকাশে সম্প্রতি ঠিকাদারের লোকজনের সাথে এলাকাবাসির মারামারির ঘটনাও ঘটেছে।
গত ৩ ফেব্রুয়ারি উত্তর বেদকাশির শাকবাড়িয়া এলাকায় মতিয়ার সরদার ও রবিন্দ্রনাথ বাইন এর বসতবাড়ির উপর নিয়মবহির্ভূতভাবে মাটি ফেলার প্রতিবাদ করায় ঠিকাদারের লোকজন ও এলাকাবাসির সাথে বাকবিতন্ডের একপর্যায়ে মারামারির ঘটনা ঘটে। এ ঘটনায় উভয়পক্ষের কয়েকজন আহত হন এবং থানায় পাল্টাপাল্টি অভিযোগ করেন। এ ঘটনায় গ্রামবাসী ও শিক্ষার্থীদের বিরুদ্ধে চাঁদাবাজির অভিযোগ করেন ঠিকাদারের ম্যানেজার। মিথ্যা অভিযোগের প্রতিবাদে ৫ ফেব্রুয়ারি মানববন্ধন করেছে এলাকাবাসি।
শাকবাড়িয়া এলাকার জিতেন্দ্র নাথ সরকার বলেন, আমার এক বিঘা জমি থেকে মাটি নিয়েছে এবং আট শতকের মত জমি রাস্তার তলায় চলে গেছে। কোন ক্ষতিপূরণ পাইনি। শুনেছি ক্ষতিপূরণ দেয়া হবে তবে কবে পাবো বা অদৌ দেবে কিনা জানিনা। কোন কাগজপত্রও কেউ নেননি।
একই এলাকার মতিয়ার সরদারের মেয়ে মিনারা খাতুন বলেন, নদীর চরের গাছগুলো আমাদের প্রাণ। সেই গাছ কেটে উজাড় করা হয়। আমি গাছ কাটার ভিডিও করলে ঠিকাদারের লোকজন হুমকি দেয় ও বাজে কথা বলে। কয়েকদিন পরে তারা ভেকু দিয়ে ইচ্ছাকৃতভাবে আমাদের বসতভিটার উপরে মাটি ফেললে আমার স্বামী প্রতিবাদ করায় তাকে ব্যাপক মারধর করা হয়। এ ঘটনায় আমি থানায় অভিযোগ করি।
স্থানীয় গণেশ, ইদ্রিস, সোমেন, সাবিত্রাসহ কয়েকজন জানান, নদীর চরে হাজার হাজার বিঘা খাসজমি পড়ে আছে। সেখান থেকে বাঁধ নিয়ে গেলে মানুষগুলো এত কষ্ট পেত না। কোন নোটিশ ছাড়া তাদের জমির উপর দিয়ে বাঁধ তৈরি করছে, বসতবাড়ির উপর মাটি ফেলা হচ্ছে। এলাকার অনেকের অন্য কোথাও জায়গাজমি নেই। তারা কোথায় যাবে তার কোন ব্যবস্থা করা হয়নি। তাদের কারো ক্ষতিপূরণ দেয়া হয়নি। কোন কিছু জানতে চাইলেই প্রতিনিয়ত ঠিকাদারের লোকজন খারাপ আচারণ করছেন।
উত্তর বেদকাশির শাকবাড়িয়া এলাকায় কাজ করছেন আমিন এন্ড কোং লিঃ। ঠিকাদার প্রতিষ্ঠানের ম্যানেজার মোঃ রাসেল মোল্লা গণমাধ্যমকে বলেন, আমরা নিয়ম অনুযায়ি কাজ করছি। তবে ওইখানের কতিপয় লোক আমাদের উপর চড়াও হয়ে গালি দেয়। আমাকে ধাক্কা দিয়ে ফেলে দেয়। পরে আমাদের লোকজনের সাথে ঝগড়া বাঁধে। আমাদের কয়েকজন আহত হয়। এ ঘটনায় থানায় অভিযোগ করি।
কয়রা থানার অফিসার ইনচার্জ মোঃ ইমদাদুল হক বলেন, বাঁধের কাজ নিয়ে সংঘর্ষের ঘটনায় দুই পক্ষের অভিযোগ পেয়েছি। বিষয়টির তদন্ত চলছে।
কয়রা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা রুলী বিশ্বাস বলেন, জমি অধিগ্রহণের বিষয়ে একটি চিঠি পেয়েছি। অধিগ্রহণের প্রক্রিয়াটি জটিল, কাজ চলমান রয়েছে।
পাউবো খুলনার নির্বাহী প্রকৌশলী আশরাফুল আলম বলেন, জমি অধিগ্রহণের বিষয়টি অনেক সময়সাপেক্ষ ব্যাপার। বর্ষায় বেড়িবাঁধের ঝুঁকিপূর্ণ স্থানগুলো ভেঙে পুরো এলাকা তলিয়ে যেতে পারে। এ কারণে বাঁধ নির্মাণের কাজ দ্রুত শুরু করতে হচ্ছে। এই কাজে আমাদের খুলনা অংশে ৩৫ একর জমি অধিগ্রহণ করতে হবে। অধিগ্রহণের জন্য প্রস্তাবনা দেয়া রয়েছে। অনুমোদন হলে জেলা প্রশাসকের মাধ্যমে ক্ষতিগ্রস্ত জমি মালিকদের দেওয়া হবে।
Copyright © 2022 KhulnarKhobor.com মেইল:khulnarkhobor24@gmail.com।জাতীয় অনলাইন গণমাধ্যম নীতিমালা আইনে তথ্য মন্ত্রণালয় কর্তৃক নিবন্ধন আবেদিত।স্মারক নম্বর:- ০৫.৪৪.৪৭০০.০২২.১৮.২৪২.২২-১২১।এই নিউজ পোর্টালের কোন লেখা, ছবি, অডিও, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।