শেখ মোঃ নাসির উদ্দীন৷|| লাখো মুসুলির কান্না, আমিন ধ্বনি ও আখেরি মুনাজাতের মাধ্যমে সমাপ্ত হলো ঐতিহাসিক চরমোনাই মাদরাসা ময়দানে আয়োজিত ৩ দিনব্যাপী ফাল্গুনের মাহফিল।
গত ১৯ ফেব্রুয়ারি (বুধবার) বাদ জোহর আমীরুল মুজাহিদীন মুফতী সৈয়দ মুহাম্মাদ রেজাউল করীম উদ্বোধনী বয়ানের মাধ্যমে শুরু হয়ে আজ ২২ ফেব্রুয়ারি (শনিবার) সকাল সাড়ে ৮টায় সমাপনী অধিবেশন ও আখেরি মুনাজাতের মাধ্যমে সমাপ্ত হয় লাখ লাখ মুসল্লীদের আধ্যাত্মিক এ মিলনমেলা।
সমাপনী অধিবেশনের বয়ানে মুফতী সৈয়দ মুহাম্মাদ রেজাউল করীম বলেন, মানুষ আজ আল্লাহকে ভুলে নাফরমানি করছে অহরহ। অথচ একজন মানুষ কবরে গিয়ে মাফ না পাওয়া পর্যন্ত নিজেকে নিকৃষ্ট পশুর মত মনে করতে হবে। সুতরাং তাক্বওয়া বা আল্লাহর ভয় অর্জনের মাধ্যমে মহান রবের সন্তুষ্টি নিয়ে কবরে যাওয়ার প্রস্তুতি নিতে হবে। আল্লাহর ভয় যার অন্তরে নেই ওই মানুষ এমনকি আলেম, মুফতী ও পীরের কোন মূল্য নেই।
তিনি আরও বলেন, নিজেকে নিজে ছোট মনে করতে হবে। আমিত্ব ভাব ও তাকাব্বুরী পরিত্যাগ করতে হবে। হিংসা বিদ্বেষ পরিত্যাগ করতে হবে। ঘোড়ার মুখে যেভাবে লাগাম থাকে সেভাবে রাগের মুখে লাগাম লাগাতে হবে। সকাল-সন্ধ্যা জিকিরের মাধ্যমে ক্বলব পরিশুদ্ধ করতে হবে। গীবতের মতো গুনাহ থেকে বাঁচিয়া থাকতে হবে। পরিবারের সবাইকে দ্বীন শিক্ষা দিয়ে দ্বীনের পাবন্দি করতে হবে। পরিবারে খাছ পর্দা জারি করতে হবে। সকল প্রকার নেশাজাত দ্রব্য হতে বাঁচিয়া থাকতে হবে। আল্লাহওয়ালাদের কিতাব পড়তে হবে। সাপ্তাহিক হালকায়ে জিকির ও তালীমে নিয়মিত অংশ নিতে হবে। ছহীহ শুদ্ধভাবে কুরআন তিলাওয়াত করতে হবে।
সমাপনী অধিবেশনের বয়ানে তিনি মাহফিল বাস্তবায়নে সম্পৃক্ত সবার প্রতি ধন্যবাদ জ্ঞাপন করেন। আখেরি মুনাজাতে অংশ নেয়া প্রশাসনিক, রাজনৈতিক ব্যক্তিবর্গ, সম্মানিত ওলামায়ে কেরাম এবং গণমাধ্যমকর্মীদের মোবারকবাদ জানান তিনি।
আখেরি বয়ানের পর মুফতী সৈয়দ মুহাম্মাদ রেজাউল করীম বিভিন্ন লিখিত প্রশ্নের উত্তর দেন। এসময় তিনি মুরিদানদের সঠিক পথে পরিচালিত হবার বিভিন্ন পরামর্শ প্রদান করেন। অতঃপর তিনি তাওবা করিয়ে গুনাহ থেকে বাঁচিয়া থাকার শপথ করান।
আখেরি মুনাজাতে মুফতী সৈয়দ মুহাম্মাদ রেজাউল করীম ফিলিস্তিন, ভারত, কাশ্মীর, মিয়ানমার, সিরিয়াসহ বিশ্বের নির্যাতিত মুসলমানদের নিরাপত্তা ও সমগ্র মুসলিম উম্মাহর শান্তি কামনা করেন।
এবছর মাহফিলে মূল ৭টি বয়ানের পাশাপাশি গুরুত্বপূর্ণ বয়ান পেশ করেন বাংলাদেশসহ সৌদিআরব, ভারত, ইন্দোনেশিয়া, মালয়েশিয়া, মিশর, পাকিস্তান, আফগানিস্তান ও তুরস্কের বিশিষ্ট ওলামায়ে কিরাম।
উল্লেখ্য, মাহফিলে আসা মুসল্লীদের মধ্যে ১০ জন বার্ধক্যজনিত ও হৃদযন্ত্রের ক্রিয়া বন্ধ হয়ে মৃত্যুবরণ করেন। তারা হলেন মুন্সিগঞ্জ নিবাসী মো.আলাল খালাশি (৭২), পাবনা নিবাসী আব্দুল জলিল খান (৬৫), গাজীপুর নিবাসী মোহাম্মদ জাহাঙ্গীর বেপারী (৫০), চুয়াডাঙ্গা নিবাসী মো. ওসমান (৫০), নীলফামারি নিবাসী মো.মঞ্জুরুল ইসলাম (৬০), চাঁদপুর নিবাসী আলি আহম্মদ (৫৫), বগুড়া নিবাসী মো.আব্দুল হামিদ (৬৫), চাঁদপুর নিবাসী মো.আইউব আলী (৬০), নারায়ণগঞ্জ নিবাসী মো.আলতাফ হোসেন (৬৫), নরসিংদী নিবাসী মো. আবুল কালাম (৪২)। সকলের জানাযা শেষে মাহফিল হাসপাতালের নিজস্ব অ্যাম্বুলেন্সে স্বজনদের কাছে মরদেহ হস্তান্তর করা হয়।
চরমোনাই অস্থায়ী মাহফিল হাসপাতালে এ বছর প্রায় ৩ সহস্রাধিক মুসল্লীর চিকিৎসা দেয়া হয়। এবারের মাহফিলে ৪ জন অমুসলিম মুফতী সৈয়দ মুহাম্মাদ রেজাউল করীমের হাতে ইসলাম ধর্ম গ্রহণ করেন।
Copyright © 2022 KhulnarKhobor.com মেইল:khulnarkhobor24@gmail.com।জাতীয় অনলাইন গণমাধ্যম নীতিমালা আইনে তথ্য মন্ত্রণালয় কর্তৃক নিবন্ধন আবেদিত।স্মারক নম্বর:- ০৫.৪৪.৪৭০০.০২২.১৮.২৪২.২২-১২১।এই নিউজ পোর্টালের কোন লেখা, ছবি, অডিও, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।