এস.এম.শামীম দিঘলিয়া|| বিভিন্ন উন্নয়ন প্রকল্প থেকে অর্থ আত্মসাত, সরকারি জমি বিক্রি, আশ্রয়ণ প্রকল্পের জমি অধিগ্রহণে ব্যাপক দুর্নীতি ও আলোচিত খুলনার দিঘলিয়া ইউনিয়নের চেয়ারম্যান হায়দার মোড়লকে অপসারণ ও গ্রেপ্তারের দাবিতে স্মারকলিপি দিয়েছে ইউনিয়নের সাধারণ জনগণ। রোববার উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার মাধ্যমে খুলনার জেলা প্রশাসক বরাবর এ স্মারকলিপি দেওয়া হয়।
এর আগে বেলা সাড়ে ১১টা থেকে ১২ পর্যন্ত উপজেলা চৌরাস্তা মোড়ে মানববন্ধন হয়। এ সময় বক্তৃতা করেন পথের বাজার মাংস ব্যবসায়ী আব্দুর রহিম, মো: খসরুল মোড়ল, মিঠু, রাজু আহমেদ, রনি প্রমুখ। মানববন্ধন শেষে বিক্ষোভ মিছিল সহকারে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা আরিফুল ইসলামের নিকট স্মারকলিপি প্রদান করা হয়।
স্মারকলিপিতে উল্লেখ করা হয়, দিঘলিয়া সদর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান মোঃ হায়দার আলী মোড়লের বিরুদ্ধে স্ট্যাম্পে চুক্তি করে সরকারি খাস খতিয়ানভূক্ত জমির পজিশন বিক্রি করে মোটা অংকের অর্থ আদায়, আশ্রায়ন প্রকল্পের জমি অধিগ্রহণের টাকা আত্মসাত, টিআর-কাবিটা প্রকল্পের কাজে নয়-ছয় করে অর্থ আত্মসাত, গভীর নলকূপের বিনিময়ে গ্রাহকদের কাছ থেকে অতিরিক্ত অর্থ আদায়, এলজি এসপি প্রকল্প, হাট বাজার, উন্নয়ন তহবিল, উপজেলা পরিষদের বরাদ্দ ও কর্মসৃজন প্রকল্পসহ সরকারের উন্নয়নমূলক বিভিন্ন প্রকল্পে দুর্নীতি করে কোটি কোটি টাকা হাতিয়ে নেয়ার অভিযোগ উঠেছে। তার বিরুদ্ধে টিআর-কাবিটা প্রকল্পে পুরাতন ইট ব্যবহার করে ও ৪০ দিনের কর্মসূচির শ্রমিক দিয়ে কাজ জোড়া-তালি দেওয়ারও অভিযোগ রয়েছে। তিনি শেখ পরিবারের কাছ থেকে ১০% কমিশন দিয়ে বহু ঠিকাদারী কাজ বাগিয়ে নিয়েছেন। ফ্যাসিস্ট হাসিনাসহ তার দোসররা দেশ ছেড়ে পালালেও আওয়ামী লীগের দোসর আলোচিত এই ইউপি চেয়ারম্যান এখনও বহাল তবিয়তে রয়েছেন।
আরও উল্লেখ করা হয়, বেশ কিছুদিন আগে অব. সেনা সদস্য মোঃ খসরুল ইসলাম খুলনা জেলা প্রশাসক বরাবর একটি লিখিত অভিযোগ দেন। ওই অভিযোগে তিনি উল্লেখ করেন- দিঘলিয়া গ্রামের মৃত ফজলুল হকের পুত্র মোঃ খসরুল ইসলাম তার নামীয় বম্রগাতী মৌজার ০.৭৮৭১ একর জমি জেলা প্রশাসক খুলনার সাথে আশ্রায়ণ প্রকল্পের জন্য শতকপ্রতি ৭৫ হাজার টাকা করে বিক্রিতে চুক্তিবদ্ধ হন। সে মোতাবেক ২০২২ সালের ২৯ মার্চ জমি রেজিস্ট্রি করার সকল কাজ সম্পন্ন হলে সেই মুহূর্তে চেয়ারম্যান হায়দার আলী মোড়ল বলেন, ‘খসরুলের জমি রেজিস্ট্রি হবে না তার ব্যাংকের ব্লাংক চেক না দেওয়া পর্যন্ত।’ তাৎক্ষণিক খসরুল বাসা থেকে তার নামীয় সোনালী ব্যাংক দিঘলিয়া শাখার ২টি চেক তাকে দেওযার পর দিঘলিয়া সাব-রেজিস্ট্রি অফিসে জমি রেজিস্ট্রি জমি রেজিস্ট্রি হওয়ার পর তৎকালীন দিঘলিয়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা তাকে (খসরুলকে) ৫০ লাখ টাকার চেক দেন। তিনি তাৎক্ষণিক দিঘলিয়া সোনালী ব্যাংক শাখায় তার একাউন্টে চেক জমা দেন। চেক জমা দেওয়ার সাথে সাথে হায়দার আলী মোড়ল তার ইউনিয়ন পরিষদের শিল্পী নামে এক কর্মচারীকে দিয়ে একটি চেকে ১০ লাখ ৫৬ হাজার ৭৫০ টাকা এবং পরবর্তী আরেকটি চেকে ৫ লাখ ২৫ হাজার টাকা উত্তোলন করে নেয়।
একইভাবে ৫০-৬০ বছরের পুরাতন মাছের বাজার দিঘলিয়া উপজেলার ৩৬নং পানিগাতি মৌজার খাস সরকারি ১নং খতিয়ানভূক্ত ১৭ একর জমির ৮টি দোকানের পজিশন তিনশ টাকার স্ট্যাম্পে বিক্রি করে দেন চেয়ারম্যান হায়দার আলী মোড়ল। এছাড়া খুলনা জেলা প্রশাসকের নামে ২০১২ সালে উপজেলার পানিগাতি মৌজার মোট .২৭ একর জমি পথের বাজার উন্নয়ন প্রকল্পে ৭জন এস এম গোলাম রহমান, মোসাঃ আলেয়া বেগম, মোসাঃ ছালেহা বেগম, মোঃ ছরোয়ার হোসেন বন্দ, মোঃ ওলিয়ার রহমান বন্দ, মোঃ দেলোয়ার বন্দ ও মোঃ জয়নাল বন্দ দান করেন।
কিন্তু হায়দার আলী মোড়ল সরকারি চান্দিতে অবস্থিত ১৬টি মাংসের দোকানের প্রতিটি ৫০ টাকার স্ট্যাম্পে পজিশন বিক্রি করে দিয়েছেন। এভাবে সরকারি জমি বিক্রি করে কোটি কোটি টাকা হাতিয়ে নিয়েছেন। নতুন মাংসের চান্দিনা হয় ২০১২-১৩ সালে। এখানে ১৬টি মাংসের দোকান আছে। প্রতিটি মাংসের দোকান থেকে হায়দার আলী মোড়ল ৫০ হাজার টাকা করে নিয়েছে। এখানে গরু জবাই (কসাইখানা) জায়গাটারও পজিশন বিক্রি করে দেন।
তার নামে-বেনামে রয়েছে অঢেল সম্পত্তি। যা তদন্ত করলে বেরিয়ে আসবে বলে। যদিও চেয়ারম্যান কর্তৃক সরকারি সম্পত্তি আত্মসাত হলেও তা উদ্ধারে দৃশ্যমান কোন অগ্রগতি নেই উপজেলা ভূমি অফিস বা প্রশাসনের।
এমনকি ইউনিয়নের ১শ’টি পোলের সড়ক বাতিতে অবৈধভাবে বিদ্যুৎ সংযোগ দিয়েছেন চেয়ারম্যান হায়দার মোড়ল। যদিও ভাগ্নের ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান মেসার্স শাহ এন্টার প্রাইজের নামে
ষ্টিক লাইটের মূল্য বেশি দেখিয়ে এ প্রকল্প থেকেও অর্থ আত্মসাতের অভিযোগ উঠেছে। এর মাধ্যমে অল্প দিনেই তিনি কোটি কোটি টাকার মালিক হয়েছেন বলেও অভিযোগ রয়েছে। বৈষম্যবিরোধী ছাত্র-জনতার আন্দোলনের মুখে গত ৫ আগস্ট শেখ হাসিনা সরকারের পদত্যাগের পর ইউপি চেয়ারম্যান হায়দার আলী মোড়ল বেশ কিছু দিন আত্মগোপনে ছিলেন। যদিও পরবর্তীতে সব পক্ষকে ‘ম্যানেজ’ করে পূণরায় স্বপদে ফিরে আসেন। এভাবে এখনও ফ্যাসিবাদের এই দোসর এখনও বহাল তবিয়তে রয়েছেন।
এ অবস্থায় চেয়ারম্যান হায়দার মোড়লকে অপসারণ ও তার বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা গ্রহণের দাবি জানানো হয়।
এর আগে চেয়ারম্যান হায়দার আলী মোড়ল বিভিন্ন গণমাধ্যমের কাছে উল্লিখিত অভিযোগগুলো অস্বীকার করেন।
Copyright © 2022 KhulnarKhobor.com মেইল:khulnarkhobor24@gmail.com।জাতীয় অনলাইন গণমাধ্যম নীতিমালা আইনে তথ্য মন্ত্রণালয় কর্তৃক নিবন্ধন আবেদিত।স্মারক নম্বর:- ০৫.৪৪.৪৭০০.০২২.১৮.২৪২.২২-১২১।এই নিউজ পোর্টালের কোন লেখা, ছবি, অডিও, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।