চৌদ্দগ্রাম (কুমিল্লা) প্রতিনিধি|| কুমিল্লার চৌদ্দগ্রামে সম্পত্তির লোভে অধ্যাপক (অবঃ) মো: মমিনুল ইসলাম মজুমদার ও তাঁর স্ত্রী সেলিনা ইসলাম চৌধুরী নাজমা নামে এক বয়স্ক দম্পতিকে সন্ত্রাসী কায়দায় অবরুদ্ধ করে রেখেছে তারই আপন ভাইয়ের স্ত্রী-সন্তানরা।
এ সময় অভিযুক্তরা তাকে শারীরিক হেনস্থা ও মানসিক যন্ত্রণা দেয় এবং জোরপূর্বক ঘরে থাকা নগদ ৩ লাখ টাকা নিয়ে যায়। দীর্ঘ পাঁচ ঘন্টা অবরুদ্ধ থাকার পর স্থানীয়দের সহযোগিতায় অবশেষে তারা বাড়ীর বাহিরে যেতে সক্ষম হয়েছেন।
ঘটনাটি ঘটে সোমবার (২৪ ফেব্রুয়ারি) সকালে উপজেলার মুন্সীরহাট ইউনিয়নের ছাতিয়ানী মজুমদার বাড়ীতে। সকাল থেকে তিনি কয়েকবার জাতীয় জরুরী সেবা ৯৯৯ এ কল করে পুলিশি সহায়তা চাইলেও এ রিপোর্ট লেখা পর্যন্ত তিনি কোনো সহযোগিতা পাননি বলে জানিয়েছেন। পরে আত্মীয়দের সহযোগিতায় হাসপাতালে চিকিৎসা গ্রহণ শেষে ৩ জনের নাম উল্লেখ করে ভুক্তভোগি মমিনুল ইসলাম মজুমদার বাদী হয়ে থানায় একটি লিখিত অভিযোগ দায়ের করেন।
থানায় দায়েরকৃত অভিযোগ সূত্রে জানা গেছে, ভুক্তভোগি মমিনুল ইসলাম মজুমদার দীর্ঘ তিন বছর যাবৎ হৃদরোগ সহ বিভিন্ন জটিল রোগে ভুগছেন। অর্থাভাবে ঠিকমত চিকিৎসাও করাতে পারছেন না। একপর্যায়ে পৈতৃক ও খরিদা সূত্রে মালিকানাধীন নিজ বসতভিটা বিক্রির সিদ্ধান্ত নিলে তারই আপন ছোট ভাই নাছির উদ্দিন মজুমদার সম্পত্তিটুকু ক্রয়ের আশ্বাস দেন। সেসুবাধে বায়না বাবদ বিভিন্ন সময় তারা মমিনুল ইসলামকে ২ লাখ টাকা প্রদান করেন। বাকী টাকা পরিশোধ করে জমি কবলা নেওয়ার কথা থাকলেও নির্দিষ্ট সময় অতিবাহিত হওয়ার পরও তারা আর কোনো টাকা দেয়নি তাকে। এরপর তারা অপরাগতা প্রকাশ করায় গত ২৩/০২/২০২৫ইং তিনি বসতভিটার ওই শেষ সম্বল জায়গাটুকু অন্যত্র বিক্রি করে দেন মমিনুল ইসলাম। এতে ক্ষিপ্ত হয়ে জমির বায়নাকারী নাছির উদ্দিন মজুমদার এর স্ত্রী মোরশেদা বেগম, ছেলে নিজাম উদ্দিন, অপর ভাতিজা মৃত আব্দুল মতিন মজুমদারের ছেলে ইফতেখারুল ইসলাম মেশকাত তাদের অপরাপর সহযোগিদের সঙ্গে নিয়ে মমিনুল ইসলাম মজুমদারের বসতঘরে অনধিকার প্রবেশ করিয়া দেশীয় অস্ত্র-শস্ত্র দিয়ে হামলা করে। হামলাকারীরা অধ্যাপক দম্পতিকে গালমন্দ, শারীরিক হেনস্থা করা সহ ঘরে থাকা জমি বিক্রির নগদ ৩ লাখ টাকা জোরপূর্বক নিয়ে যায়। এরপরও তারা ক্ষান্ত হয়নি, বরং তাদেরকে ঘরের ভেতরে রেখে বাহিরের গেইটে তালাবদ্ধ করে অবরুদ্ধ করে রাখে হামলাকারীরা। জাতীয় জরুরি সেবা ৯৯৯ এ একাধিকবার কল করেও ভুক্তভোগি মমিনুল ইসলাম মজুমদার কোনো সহযোগিতা পাননি বলে জানিয়েছেন। পরে তার এক আত্মীয় স্থানীয় সাংবাদিকদের সাথে নিয়ে ঘটনাস্থলে পৌঁছে তাকে অবরুদ্ধ অবস্থা থেকে উদ্ধার করে চৌদ্দগ্রাম উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে যান। বিষয়টি জানাজানি হলে এলাকায় ব্যাপক চাঞ্চল্যের সৃষ্টি হয়েছে। এ ঘটনার বিচার চেয়ে ভুক্তভোগি মমিনুল ইসলাম মজুমদার চৌদ্দগ্রাম থানায় একটি লিখিত অভিযোগ দায়ের করেছেন। অভিযোগের একটি অনুলিপি তিনি চৌদ্দগ্রাম সেনা ক্যাম্পেও জমা দিয়েছেন বলে জানা গেছে।
ভুক্তভোগি মমিনুল ইসলাম মজুমদার বলেন, আমার ভাই নাছির উদ্দিন জমি কিনবে বলে আমাকে দেড় বছর পূর্বে ২ লাখ দেয়। তারা আর কোনো টাকা দিতে না পারায় এবং জমিটি কিনতে অপরাগতা প্রকাশ করায় আমি ভালো দামে অন্যত্র জায়গাটি বিক্রি করি। এ ঘটনার জেরে তারা দেশীয় অস্ত্র-শস্ত্র নিয়ে আমার উপর হামলা করে এবং পরিবার সহ আমাকে অবরুদ্ধ করে রাখে। গত ১৭ ফেব্রæয়ারি আমি সিসিইউ থেকে চিকিৎসা নিয়ে বাড়ী ফিরি। অথচ সকাল থেকে আমি ঔষধ পর্যন্ত খেতে পারিনি। পরে আত্মীয়দের সহযোগিতায় হাসপাতালে চিকিৎসা নিয়েছি এবং থানায় লিখিত অভিযোগ দিয়েছি। আমি প্রশাসনের কাছে এ ঘটনার সুষ্ঠু তদন্ত সাপেক্ষে দোষীদের বিচার চাই।
এ ব্যাপারে চৌদ্দগ্রাম থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) মোহাম্মদ হিলাল উদ্দীন আহমেদ বলেন, ‘এ বিষয়ে ভুক্তভোগি কর্তৃক একটি লিখিত অভিযোগ পেয়েছি। তদন্ত সাপেক্ষে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।’
Copyright © 2022 KhulnarKhobor.com মেইল:khulnarkhobor24@gmail.com।জাতীয় অনলাইন গণমাধ্যম নীতিমালা আইনে তথ্য মন্ত্রণালয় কর্তৃক নিবন্ধন আবেদিত।স্মারক নম্বর:- ০৫.৪৪.৪৭০০.০২২.১৮.২৪২.২২-১২১।এই নিউজ পোর্টালের কোন লেখা, ছবি, অডিও, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।