ফসিয়ার রহমান, পাইকগাছা প্রতিনিধি || দেশের সাদা সোনা খ্যাত রপ্তানিজাত বাগদা চিংড়ির সিংহভাগ উৎপাদন হয় উপকূলীয় অঞ্চল খুলনার পাইকগাছা-কয়রা উপজেলায়।
৮০ দশকে চিংড়ি চাষ এঅঞ্চলে শুরু হয়। শুরু থেকেই সনাতন পদ্ধতিতে চিংড়ি উৎপাদন শুরু হলেও মাঝে মধ্যে আধা নিবিড় পদ্ধতির চাষের ঝুকি নিয়েছেন অনেকে। কিন্তু বেশিরভাগ চাষী সফল হতে পারেননি। বর্তমানে পাইকগাছা উপজেলা সদরের রয়্যাল ফিস ট্রেডিংয়ের সত্বাধিকারী গোলাম কিবরিয়া রিপন উন্নত সনাতন পদ্ধতিতে চিংড়ি চাষ করে সফল হয়েছেন।
গোলাম কিবরিয়া রিপনের জন্ম ও বেড়ে ওঠা খুলনার রায়ের মহল বয়রা এলাকায়। ১৯৯৬ সালে মার্টার্স পাশ করে চাকরির পিছে না ছুটে পিতা নজিরউদ্দিনের মত একজন আদর্শবান ব্যবসাী হওয়ার পণ করেন। পিতার চাউলের আড়তের ব্যবসায় যোগ নাদিয়ে ভিন্ন ব্যবসা করতে প্রথমে শুরু করেন ঠিকাদারী ব্যবসা।
গোলাম কিবরিয়া রিপন ২০০১ সালে ঠিকাদারী ব্যবসা বাদ দিয়ে শুরু করেন বাগদা চিংড়ির পোনার (রেনু) ব্যবসা। পোনার ব্যবসার সাথে ২০০৭ সালে পাইকগাছায় ১৫০ বিঘা জমি হারি নিয়ে শুরু করেন বাগদা চিংড়ি চাষ। সেখান থেকে আর পিছনে ফিরে তাকাতে হয়নি তাকে। একদিকে পোনা ব্যবসা অন্যদিকে উন্নত সনাতন পদ্ধতির চিংড়ি চাষ। ফলে দ্রুত প্রসার ঘটে ব্যবসার।
শিক্ষা জীবন থেকেই গোলাম কিবরিয়া রিপন হতে চেয়েছিরেন একজন সফল উদ্যোগক্তা। চাকরী করবোনা চাকরি দিব এমানসিকতাই তাকে এপর্যন্ত নিয়ে এসেছে। নিজের লক্ষ্য বাস্তবায়ন করতে তিনি কঠোর পরিশ্রম ও মেধা দিয়ে গড়ে তুলেছেন রয়্যাল ফিস ট্রেডিং এবং রয়্যাল ফিস কালচার নামে দুটি প্রতিষ্ঠান। এছাড়াও বিভিন্ন প্রতিষ্ঠিত হ্যাচারিসহ অনন্য ব্যবসা প্রতিষ্ঠান গড়ে তোলেন তিনি।
এ ব্যাবসায়ে অসমান্য অবদান রাখা এবং স্বাবলম্বীর কারণে সরকারি -বেসরকারি প্রতিষ্ঠান থেকে পেয়েছেন অসংখ্য পুরুস্কার। বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে অর্থ সম্পদ দান করে বর্তমানে ৫০ বছর বয়সে তিনি দানবীর খ্যাতি অর্জন করেছেন। এবং বিশিষ্ট সমাজসেবক হিসেবে ব্যাপক পরিচিতি লাভ করেছেন।খ্যাতি অর্জন করেছেন শিল্পপতি ও দানবীর হিসেবেও।
তিনি ২০১৩ সালে জাতীয় মৎস সপ্তাহ উপলক্ষে প্রথমবার উপজেলার শ্রেষ্ঠ চিংড়ি চাষী নির্বাচিত হন। এরপর ২০১৬, ১৭, ১৮, ১৯ সালে পরপর চার বার উপজেলার শ্রেষ্ঠ পোনা ও চিংড়ি চাষি নির্বাচিত হন। সর্বশেষ ২০২৩ সালে তিনি উপজেলা ও জেলা পর্যায়ে শ্রেষ্ট বাগদা পোনা ও চিংড়ি চাষীর পুরস্কার লাভ করেন।
এ বিষয়ে গোলাম কিবরিয়া রিপনের কাছে জানতে চাইলে তিনি বলেন,এ উপজেলায় আত্ম কর্মসংস্থানের সৃষ্টির লক্ষ্যে পাইকগাছা ও কয়রা উপজেলায় ১৮ ‘শ বিঘার ৬ টি বাগদা চিংড়ী ঘের প্রতিষ্ঠা করেছি। যেখান থেকে প্রতি বছর কোটি কোটি টাকার চিংড়ি বিদেশে রপ্তানি হচ্ছে। ২০২৪ সালে তার চিংড়ি ঘের থেকে ৫ কোটি ২০ লাখ টাকা মুল্যের চিংড়ী উৎপাদন করেন। প্রতিষ্ঠান গুলোতে স্থায়ী ভাবে ৭৬ জন কর্মচারী নিয়োজিত রয়েছে। সিজনে এর পরিধি বেড়ে হয় প্রায় ৪শ জন। পাশাপাশি গোলাম কিবরিয়া রিপনের চিংড়ি চাষে সাফল্য দেখে উপজেলার অধিকাংশ মানুষ আত্মকর্মসংস্থান সৃষ্টি ও বেকারত্ব দূরীকরণের লক্ষ্যে চিংড়ি চাষে ঝুঁকছেন।
এদিকে বিগত সরকারের আমলে বহু প্রতিকূলতার মধ্য দিয়ে কয়রা ও পাইকগাছা উপজেলায় লবণ পানির চিংড়ী চাষ বন্ধের গভীর চক্রান্ত শুরু হলে ঘের এবং চিংড়ি চাষিদের সাথে নিয়ে অর্থ শ্রম মেধা দক্ষতা কাজে লাগিয়ে কোটি কোটি টাকার আয়ের উৎস দেশের সাদা সোনা খ্যাত রপ্তানিজাত বাগদা চিংড়ী চাষ শিল্পকে রক্ষা করতে সক্ষম হয়েছেন। এবং চিংড়ি চাষ রক্ষার্থে এবং আন্দোলনে নেতৃত্বে দেওয়ার জন্য চিংড়ী চাষী সমিতির সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত হয়েছেন ।
এ বিষয়ে উপজেলা সিনিয়র মৎস্য কর্মকর্তা সৈকত মল্লিক জানান, আসলেই গোলাম কিবরিয়া রিপন একজন সফল পোনা ব্যবসায়ী ও চিংড়ি চাষী। উন্নত সনাতন পদ্ধতিতে চিংড়ি চাষ করে তিনি সফলতা ও স্বাবলম্বীর পাশাপাশি ব্যাপক পরিচিতি লাভ করেছেন।
Copyright © 2022 KhulnarKhobor.com মেইল:khulnarkhobor24@gmail.com।জাতীয় অনলাইন গণমাধ্যম নীতিমালা আইনে তথ্য মন্ত্রণালয় কর্তৃক নিবন্ধন আবেদিত।স্মারক নম্বর:- ০৫.৪৪.৪৭০০.০২২.১৮.২৪২.২২-১২১।এই নিউজ পোর্টালের কোন লেখা, ছবি, অডিও, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।