পরেশ দেবনাথ, কেশবপুর, যশোর || কেশবপুর খ্রিষ্ঠান মিশনের ৯ম শ্রেণীর ছাত্রী রাজেরুং ত্রিপুরা (১৫)-এর আত্মহত্যা নিয়ে এলাকায় ধুম্রজালের সৃষ্টি হয়েছে। যৌথ বাহিনীর সহযোগিতায় মিশনের আরো তিন ছাত্রীকে উদ্ধার করা হয়। এলাকা বাসী বলছে, তার সাথে খারাপ কিছু ঘটিয়েছে। পরে তাকে হত্যা করা হয়েছে।
এরপর নাটক করে আত্মহত্যা করেছে বলে প্রচার করে। তার আত্মহত্যার খবর টাও গত ৬ দিনেও তার বাবা-মা কে দেওয়া হয়নি। গণযোগাযোগ মাধ্যমে সংবাদ পেয়ে সন্তানের লাশ ফিরে পেতে পরিবারের সদস্যরা কেশবপুর খ্রিষ্ঠানে অবস্থান নিয়েও গত দুই দিনেও তারা মিশনের ভিতরে প্রবেশ করতে পারেনি। অবশেষে মঙ্গলবার (১৮ মার্চ-২৫) সকালে কেশবপুর এলাকাবাসী, বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলন কারী ও যৌথবাহিনীর সহযোগিতা মিশনের ভিতরে প্রবেশ করে মিশন থেকে আরো তিন ছাত্রীকে উদ্ধার করা হলেও রাজেরুং ত্রিপুরার লাশ তার বাবা-মা হাতে পায়নি। এসময়ে মিশনের পরিচালিকা জেসিকা সরকার সহ তাদের থানা পুলিশের হেফাজতে নেওয়া হয়েছে।
কেশবপুরে পৌর শহরের সাহা পাড়ায় “হোপ হাউজ গালর্স হোম এন্ড খ্রিষ্টান সেন্টার” নামে খ্রিষ্ঠান মিশন থেকে গত ১৪ মার্চ-২৫ রাতে মিশনের ছাত্রীনিবাস থেকে ৯ম শ্রেণীর ছাত্রী রাজেরুং ত্রিপুরা এর মৃতদেহ উদ্ধার করা হয়। তার মৃত্যুটা ছিলো যথেষ্ট সন্দেহজনক।
মিশনের সুপার জেসিকা সরকার ও তার স্বামী প্রদীপ সরকার তার মরাদেহটি নিয়ে অনেক নাটকীয়তার মধ্যে কেশবপুর সরকারি হাসপাতালের জরুরি বিভাগে চিকিৎসার জন্য নেওয়া হয়। পরে তার লাশ ময়না তদন্তের জন্য যশোরে পাঠিয়ে সে গলায় ফাঁস দিয়ে আত্মহত্যা করেছে বলে প্রচার করা হয়েছে। রাজেরুং ত্রিপুরার পিতা রমেশ ত্রিপুরার বাড়ি বান্দরবন জেলার থানচি উপজেলার কালুপাড়া এলাকার। ওই দিন মিশনের সুপার জেসিকা সরকার ও তার স্বামী প্রদীপ সরকার গণমাধ্যমকে জানান রাজেরুং ত্রিপুরার লাশ ময়না তদন্তের পরে তার বাবা-মা এর নিকট হস্তান্তর করা হয়েছে। অথচ আজও পর্যন্ত তার বাবা-মা জানেনা তার মেয়ের লাশ কোথায় আছে।
এদিকে রাজেরুং ত্রিপুরার রহস্যজনক মৃত্যুর সংবাদ পেয়ে গত সোমবার সকালে তার পিতা রমেশ ত্রিপুরাসহ তারা ৪ জন বান্দরবান থেকে কেশবপুর আসলে তাদের খ্রিষ্ঠান মিশনের ভিতরে প্রবেশ করতে দেওয়া হয়নি। তারা স্থানীয় প্রেসক্লাবে সাংবাদিকদের ঘটনাটি জানান।
প্রেসক্লাবের সাধারণ সম্পাদক আব্দুল্লাহ আল ফুয়াদ তাদেরকে রাতে থাকার ব্যবস্থা করে দেন। ইতিমধ্যে রাজেরুং ত্রিপুরার পিতা রমেশ ত্রিপুরাকে কেশবপুর খ্রিষ্টান মিশনে প্রবেশ করতে দেওয়া হয়নি এমন সংবাদ প্রচার হলে মঙ্গলবার সকালে স্থানীয় প্রতিবেশী, বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলন কারীদের একটি দল তাদের সাথে নিয়ে খ্রিষ্ঠান মিশনে প্রবেশের চেষ্টা করে ব্যর্থ হয়েছে। এরপরে যৌথবাহিনীর সহোযোগিতায় বহু কষ্টের পরে তারা ভিতরে প্রবেশ করে আরো এক প্রতিবন্ধকতা শিকার হয়ে পড়েন।
এরপর কেশবপুর থানা পুলিশ ও সেনাবাহিনীর সদস্যরা বারংবার অনুনয় বিনিময় শেষে তারা মিশনের ভিতরে প্রবেশের সুযোগ পায়।
বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলন কারীদের উপজেলা সম্বন্নয়ক মোঃ সম্রাট হোসেন সাংবাদিকদের বলেন, রাজেরুং ত্রিপুরার মৃত্যুটি যথেষ্ট রহস্যজনক। প্রতিবেশীদের ভিতরে প্রবেশে বাধা দিয়েছে শুনে আমরাও এসেছি। এখন শুনছি এখানে অনেক কিছু হয়ে থাকে। এর একটা বিচার হওয়া জরুরি।
এসময়ে যৌথ বাহিনী জানতে পারেন ভিতরে রাজেরুং ত্রিপুরার গ্রামের আরো তিনটি মেয়ে আটকানো রয়েছে এবং তারা নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছে। পরে পুলিশ মিশনের ভিতরে অভিযান চালিয়ে খ্রিষ্টান মিশনে থাকা বান্দরবন জেলার থানচি উপজেলার কালুপাড়া এলাকার রেবিকা ত্রিপুরা, স্বস্তিকা ত্রিপুরা ও জেসিন্তা ত্রিপুরা নামে তিনজনকে উদ্ধার করে মিশনের সুপার জেসিকা সরকারসহ তাদের কে থানা পুলিশের হেফাজতে নেওয়া হয়েছে।
এবিষয় রাজেরুং ত্রিপুরা পিতা রমেশ ত্রিপুরা বলেন, এখানে আমার মেয়ের সাথে তাঁরা খারাপ কিছু ঘটিয়েছে।
তারা আমার মেয়েকে হত্যা করেছে। মেয়ের লাশটি কোথায় রেখেছে তা-ও ঠিক করে চলছে না। মেয়ের লাশ আগে হাতে পায় তারপর যা করতে হয় করবেন।
এ বিষয়ে কেশবপুর থানার ওসি তদন্ত খান শরিফুল ইসলাম বলেন, খ্রিষ্ঠান মিশনের সুপার জেসিকা সরকার যৌথ বাহিনীর সাথে থানায় এসে উদ্ধার হওয়া তিন ছাত্রীকে তাদের অভিভাবকদের হাতে তুলে দেওয়া হয়েছে।
কেশবপুর থানার অফিসার ইনচার্জ মোঃ আনোয়ার হোসেন বলেন সোমবার ও মঙ্গলবার দুই দিনের ঘটনাটি ছিলো একটি বিচ্ছিন্ন ঘটনা। রাজেরুং ত্রিপুরার রহশ্যজনক মৃত্যুর ঘটনায় থানায় একটি মামলা হয়েছে যার নং ১২/২৫ তাং ১৫/০৩/২০২৫। ওই মামলার সঠিক ভাবে তদন্ত পূর্বক আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলে জানান।
Copyright © 2022 KhulnarKhobor.com মেইল:khulnarkhobor24@gmail.com।জাতীয় অনলাইন গণমাধ্যম নীতিমালা আইনে তথ্য মন্ত্রণালয় কর্তৃক নিবন্ধন আবেদিত।স্মারক নম্বর:- ০৫.৪৪.৪৭০০.০২২.১৮.২৪২.২২-১২১।এই নিউজ পোর্টালের কোন লেখা, ছবি, অডিও, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।