মহরম হাসান মাহিম || ২০২৪ সালের জুলাই মাস। বাংলাদেশের রাজনীতিতে এ যেন এক নতুন অধ্যায়, যেখানে জনগণের চেতনার জাগরণ ইতিহাসের মোড় ঘুরিয়ে দিল।
জুলাই গণঅভ্যুত্থান—শব্দ দু’টি এখন শুধুই একটি সময়কাল নয়, বরং প্রতিরোধের প্রতীক। দীর্ঘদিনের দমন-পীড়ন, রাজনৈতিক স্বৈরাতন্ত্র ও রাষ্ট্রযন্ত্রের দুর্বৃত্তায়নের বিরুদ্ধে যখন মানুষের ধৈর্যের বাঁধ ভেঙে গেল, তখনই রচিত হলো নতুন বাংলাদেশের ভিত্তিপ্রস্তর।
এই পরিবর্তনের ঢেউ কেবল রাজনীতিতেই সীমাবদ্ধ থাকেনি, বরং রাষ্ট্রের অভ্যন্তরে লুকিয়ে থাকা বহু মুখোশ উন্মোচন করে দিয়েছে। বিশেষ করে সেনাবাহিনীর একাংশের গোপন রাজনৈতিক ভূমিকাও আলোচনায় উঠে এসেছে। দীর্ঘদিন ধরে রাষ্ট্রের ছায়ায় লুকিয়ে থাকা এই শক্তির অর্ধেক মুখোশ উন্মোচিত হয়েছে, আর বাকিটা হয়তো সময়ই উন্মোচন করবে।
সেনাবাহিনীর অর্ধ মুখোশ ও রাষ্ট্রীয় ষড়যন্ত্র
বাংলাদেশের ইতিহাসে সামরিক বাহিনী সবসময়ই একটি গুরুত্বপূর্ণ শক্তি। কিন্তু ২০২৪-এর জুলাইয়ের পর প্রশ্ন উঠেছে—তারা কি কেবল জাতীয় নিরাপত্তার রক্ষক, নাকি ক্ষমতার গোপন খেলায় অংশ নেওয়া এক প্রভাবশালী গোষ্ঠী?
গত কয়েক বছরে লক্ষ্য করা গেছে, সেনাবাহিনীর কিছু শীর্ষ পর্যায়ের কর্মকর্তা পরোক্ষভাবে রাজনৈতিক চিত্রনাট্য লেখার চেষ্টা করছেন। একদিকে যখন সরকার ক্ষমতা ধরে রাখতে চেয়েছে যেকোনো মূল্যে, তখন অন্যদিকে সেনাবাহিনীর একটি অংশ নেপথ্যে থেকে পরিস্থিতিকে তাদের সুবিধামতো পরিচালিত করার চেষ্টা করেছে।
জুলাই গণঅভ্যুত্থান সেই অদৃশ্য শক্তিকে দৃশ্যমান করে দিয়েছে।
হাসনাত আবদুল্লাহ ও সমন্বয়ের রাজনীতি
রাজনীতিতে যখন বিভাজন চূড়ান্ত, তখনই দরকার হয় এমন এক নেতৃত্বের, যা সকল পক্ষকে সমন্বিত করতে পারে। হাসনাত আবদুল্লাহ সেই ভূমিকায় অবতীর্ণ হয়েছেন—একজন সমন্বয়ক হিসেবে।
তার নেতৃত্বে একদিকে যেমন রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে সমঝোতার আলোচনা শুরু হয়েছে, অন্যদিকে জনগণের প্রকৃত ইচ্ছার প্রতিফলন ঘটানোর জন্য একটি নিরপেক্ষ নীতিমালা তৈরির চেষ্টা চলছে। দেশের চলমান সংকটে সেনাবাহিনী, রাজনৈতিক দল ও জনগণের মধ্যে যে দ্বন্দ্ব, সেটি দূর করতে না পারলে ভবিষ্যতে আরও ভয়াবহ অস্থিরতা সৃষ্টি হতে পারে।
আওয়ামী লীগ নিষিদ্ধের দাবি: গণতন্ত্রের সংকট নাকি নতুন দিগন্ত?
জুলাই গণঅভ্যুত্থানের পর সবচেয়ে বেশি উচ্চারিত দাবিগুলোর একটি হলো আওয়ামী লীগ নিষিদ্ধের। অনেকে মনে করেন, দলটি ক্রমাগত স্বৈরতন্ত্রের পরিচয় বহন করেছে, বিরোধীদের কণ্ঠরোধ করেছে, এবং রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠানগুলোর দলীয়করণ ঘটিয়েছে। কিন্তু গণতান্ত্রিক ব্যবস্থায় একটি জনপ্রিয় রাজনৈতিক দলকে নিষিদ্ধ করা কি সত্যিই সঠিক সমাধান?
একটি দলকে নিষিদ্ধ করলেই কি সমস্যার সমাধান হবে, নাকি রাজনৈতিক শূন্যতা নতুন সংকট তৈরি করবে? ইতিহাস বলে, নিষেধাজ্ঞা কখনোই চূড়ান্ত সমাধান নয়। গণতন্ত্রের প্রকৃত চর্চা তখনই সম্ভব, যখন জনগণ নিজেরাই যোগ্য নেতৃত্ব বেছে নেওয়ার সুযোগ পায়।
নতুন বাংলাদেশের দিগন্ত জুলাই গণঅভ্যুত্থান দেখিয়ে দিয়েছে যে বাংলাদেশ আর আগের জায়গায় নেই। জনগণ এখন আর চোখ বুজে শাসকের নির্দেশ মানতে রাজি নয়। তারা জানে, ক্ষমতা তাদের হাতেই থাকা উচিত, এবং রাষ্ট্রের প্রতিটি প্রতিষ্ঠানকে জনগণের স্বার্থে কাজ করতে হবে।
জুলাই গনঅভ্যুত্থানের মাধ্যমে যে ফ্যাসিজম ফ্যাসিস্ট খুনি হাসিনা কায়েম করেছিল সেটি নিঃসন্দেহে বর্বর। দুই হাজার শহীদ,শত শত শিশুর জীবন,অর্ধলক্ষ্য মানুষের পঙ্গুত্ববরণের মাধ্যমে ৫ই আগস্টের চূড়ান্ত স্বাধীনতা।
নতুন বাংলাদেশ আর কোনো রক্তপাত চায় না। চায় স্থিতিশীলতা, সমন্বয় ও ন্যায়বিচার। সেনাবাহিনী যদি তাদের সাংবিধানিক দায়িত্বে থাকে, রাজনীতি যদি জনগণের অধিকারকে প্রাধান্য দেয়, আর বিচারব্যবস্থা যদি সত্যিকার অর্থে স্বাধীন হয়—তাহলেই এই দেশ সত্যিকারের স্বাধীনতার স্বাদ পাবে।
২০২৪-এর জুলাই আমাদের দেখিয়েছে, পরিবর্তন সম্ভব। কিন্তু এই পরিবর্তন কেবল এক দিনের আন্দোলন নয়, বরং এটি হতে হবে দীর্ঘমেয়াদি রাজনৈতিক সংস্কারের অংশ। আর সেই পথ দেখানোর জন্য প্রয়োজন দূরদর্শী নেতৃত্ব, সঠিক নীতিমালা ও জনগণের সক্রিয় অংশগ্রহণ।
বাংলাদেশ বদলাচ্ছে। এই বদল রক্ত দিয়ে নয়, বরং চেতনার শক্তিতে হতে হবে।
Copyright © 2022 KhulnarKhobor.com মেইল:khulnarkhobor24@gmail.com।জাতীয় অনলাইন গণমাধ্যম নীতিমালা আইনে তথ্য মন্ত্রণালয় কর্তৃক নিবন্ধন আবেদিত।স্মারক নম্বর:- ০৫.৪৪.৪৭০০.০২২.১৮.২৪২.২২-১২১।এই নিউজ পোর্টালের কোন লেখা, ছবি, অডিও, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।