জাহিদুল ইসলাম, কয়রা (খুলনা) প্রতিনিধি || ২২ মার্চ বিশ্ব পানি দিবস। অথচ সুন্দরবন উপকূলীয় খুলনার কয়রা উপজেলায় চারিদিকে পানি থৈই থৈই করছে অথচ সুপেয় পানির তীব্র সংকট দেখা দিয়েছে।
চারদিকে নদীবেষ্টিত কয়রার সাতটি ইউনিয়নের পানি লবণাক্ত হওয়ায় এখানকার মানুষ খাবার, গোসল ও রান্নার জন্য প্রধানত পুকুরের পানির ওপর নির্ভরশীল। কিন্তু চলতি বছর পর্যাপ্ত বৃষ্টি না হওয়ায় অধিকাংশ পুকুরের পানির স্তর নিচে নেমে গেছে, ফলে প্রায় ৯০ শতাংশ পুকুরের পানি ব্যবহারের অনুপযোগী হয়ে পড়েছে।
এ পানিতে গোসল করলে মানুষের চুলকানি এলার্জির মত চর্মরোগ বৃদ্ধি পাচ্ছে। অন্যদিকে হাজারো মানুষ খাবার পানির সংকটে ভুগছে।
কয়রা ঝিলিয়াঘাটা গ্রামের নারীরা প্রতিদিন ৩-৪ কিলোমিটার পথ পাড়ি দিয়ে খাবার পানি সংগ্রহ করতে বাধ্য হচ্ছেন। দীর্ঘ পথ পাড়ি দিয়ে তারা বাড়িতে ফিরছেন কলসি বা বোতলে করে অল্প কিছু পানি নিয়ে, যা প্রয়োজনের তুলনায় একেবারেই কম।এই এলাকার অধিকাংশ মানুষই সুপ্রিয় পানির জন্য পুকুর এবং বৃষ্টির পানির উপর নির্ভর করতে হয়। ফলে তিব্র খরায় তাদের সুপ্রিয় পানির চাহিদা বাড়ছে।
কয়রা সদর ইউনিয়নের ৫ নম্বর ওয়ার্ডের ইউপি সদস্য শেখ সোহরাব হোসেন বলেন, “এলাকায় গভীর নলকূপ কার্যকর নয়, তাই মানুষকে এখনো পুকুরের পানির ওপর নির্ভর করতে হচ্ছে।”
টিউবওয়েলে মিলছে না পানি, মসজিদেও সংকট।
উত্তর বেদকাশি, দক্ষিণ বেদকাশি ও কয়রা সদরের কিছু এলাকায় টিউবওয়েলের পানি পাওয়া গেলেও পানির স্তর অনেক নিচে নেমে যাওয়ায় অনেক টিউবওয়েল এখন আর পানি তুলতে পারছে না। ফলে রমজান মাসে মুসল্লিদেরও কষ্ট বেড়েছে।
দুই নম্বর কয়রা আল আকসা জামে মসজিদের সভাপতি সাবেক ইউপি সদস্য শেখ সালাউদ্দিন লিটন বলেন, “আমাদের মসজিদের টিউবওয়েল শুকিয়ে গেছে। মুসল্লিদের ইফতার ও ওজুর পানি কিনে আনতে হচ্ছে। এতে সবাই বিপাকে পড়েছেন।”
ধানচাষের জন্য বসানো গভীর ও অগভীর নলকূপগুলোর অনেকগুলোরই পানির লিয়ার নেমে গেছে, ফলে কৃষকেরা বিপাকে পড়েছেন। দুই নম্বর কয়রা গ্রামের কৃষক রবিউল ইসলাম বলেন, “আমাদের স্যালোতে পানি উঠছে না, ধান ফোলার মুখে এসে পানির সংকট দেখা দিয়েছে। জানি না কী হবে।”
স্থানীয়রা বলছেন, দ্রুত কার্যকর পদক্ষেপ না নিলে কয়রার পানির সংকট ভয়াবহ রূপ নিতে পারে। সরকারি ও বেসরকারি উদ্যোগে পানি সংরক্ষণ, নলকূপ খনন ও বিশুদ্ধ খাবার পানি সরবরাহের ব্যবস্থা করা জরুরি। নাহলে কয়রার মানুষকে দীর্ঘদিন পানির কষ্টের মধ্যে দিন কাটাতে হবে।
কয়রায় বিশেষ করে নারীদের দৈনন্দিন পানির সংগ্রামের কষ্ট, টিউবওয়েলের পানির স্তর নিচে নেমে যাওয়া, মসজিদ ও কৃষিখাতে পানির অভাব পরিস্থিতিকে আরও জটিল করে তুলছে।
এই সংকট নিরসনে কিছু তাৎক্ষণিক ও দীর্ঘমেয়াদি পদক্ষেপ নেওয়া জরুরি, সরকারি-বেসরকারি উদ্যোগে বড় পরিসরে বৃষ্টির পানি সংরক্ষণের ব্যবস্থা করা যেতে পারে। গভীর নলকূপ বসানোর জন্য বিশেষজ্ঞ পরামর্শ নিয়ে প্রকল্প নেওয়া দরকার।
Copyright © 2022 KhulnarKhobor.com মেইল:khulnarkhobor24@gmail.com।জাতীয় অনলাইন গণমাধ্যম নীতিমালা আইনে তথ্য মন্ত্রণালয় কর্তৃক নিবন্ধন আবেদিত।স্মারক নম্বর:- ০৫.৪৪.৪৭০০.০২২.১৮.২৪২.২২-১২১।এই নিউজ পোর্টালের কোন লেখা, ছবি, অডিও, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।