খুলনার খবর || খুলনা, রবিবার, ১৩ এপ্রিল ২০২৫
বিগত দিনে খুলনা সিটি করপোরেশনের পাইকারি কাঁচাবাজার ঘিরে ব্যাপক অনিয়ম এবং চাঁদাবাজি হয়েছে। শ্রমিক সরদারদের প্রতিদিন ২০০-৩০০ টাকা চাঁদা দিয়ে সাধারণ শ্রমিকদের বাজারে কাজ করতে হয়েছে। প্রতিবাদ করলে জুলুম নির্যাতনের শিকার হয়েছেন সাধারণ শ্রমিকরা। ৫ই আগস্টের পর সর্দাররা পালালেও ভোল পাল্টে ফিরেছেন নতুন রূপে।
বাজার সূত্রে জানা যায়, কেসিসি পাইকারি বাজারে প্রায় তিনশ শ্রমিক কাজ করেন। ইউসুফ, নাসির, শহীদ, মোতালেব, কুদ্দুস, বিল্লাল এবং আকমান সর্দারি করেন। বিগত দিনে বাজার মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক এবং নগরীর ২৪নং ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সভাপতি মঈনুল ইসলাম নাসিরের শেল্টারে বাজারে চাঁদাবাজি হয়েছে। ক্ষমতার জোরে প্রতিনিয়ত সর্দাররা কাজ না করে কাজের ভাগা আর চাঁদা নিয়েছেন। শ্রমিকদের প্রতি দল থেকে সরদারদের দৈনিক ২০০০-২৫০০ টাকা কাজের ভাগা দিতে হয়েছে। সরদারদের কথামতো শ্রমিকদের বিভিন্ন নেতার নামে টাকা কালেকশন করেও দিতে হয়েছে।
আওয়ামী লীগের অনুষ্ঠান হলে ৫ হাজার থেকে ৫০ হাজার টাকা কালেকশনও করে দিতে হয়েছে। প্রতিবাদ করলে সাধারণ শ্রমিকদের সন্ত্রাসী দিয়ে মারধর পর্যন্ত করা হয়েছে। জুলুম সইতে না পেরে অনেক শ্রমিক বাজারের কাজ ছেড়েছেন।
৫ই আগস্টের পর মঈনুল ইসলাম নাসির এবং সর্দাররা আত্মগোপনে ছিলেন। প্রায় তিন মাস পর সর্দাররা ভোল পাল্টে মালিক সমিতির একটি পক্ষের হাত ধরে পুনরায় বাজারে ফিরেছেন।
সাধারণ শ্রমিকরা জানান, ৫ই আগস্টের পর সর্দাররা পালালে আমাদের একটা পয়সাও চাঁদা দিতে হয়নি। আমরা শান্তিতে কাজ করেছি। নিজেরা নিজেদের ভালো মন্দের সিদ্ধান্ত নিয়েছি। কিন্তু ইউসুব, নাসির, শহীদ, মোতালেব, কুদ্দুস, বিল্লাল এবং আকমান ভোল পাল্টে পুনরায় বাজারে ফিরে চাঁদাবাজি শুরু করেছে।
ফ্যাসিবাদের দোসর মালিক সমিতির একটি গ্রুপ অর্থের বিনিময়ে সরদারদের বাজারে নিয়ে এসেছে। যার প্রতিবাদ করায় শ্রমিক কাঞ্চন এবং শাহ আলমকে ব্যাপক মারধর করেছে শহীদ সরদারের লোকজন।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একজন শ্রমিক নেতা বলেন, কেসিসি পাইকারি কাঁচাবাজার মালিক সমিতির হাতেগোনা কয়েকজন বাদে সবাই আওয়ামী লীগের দোসর। তারা সঠিক পন্থায় কেউ আড়ত ঘর পাননি। ২০১৫ সাল থেকে শ্রমিকদের ওপর জুলুম নির্যাতনের প্রতিবাদ করছি। শ্রমিকদের ন্যায্য পারিশ্রমিক পেতে বাজারে মজুরির তালিকা টানানোর অনুরোধ করলেও বিগত দিনে মালিক সমিতি নানান হুমকি দিয়েছেন আমাকে।
খুলনা সিটি করপোরেশন সূত্র বলছে, কাঁচাবাজারে তালিকাভুক্ত ১৩৬টি দোকান বরাদ্দ রয়েছে। তবে ১৩৬টি আড়ত ঘরকে ভেঙে আরও দোকান বানিয়ে নিয়মের বাইরে বিক্রি করেছে মালিক সমিতির একটি গ্রুপ। কিন্তু এ বিষয়ে তৎকালীন মেয়র তালুকদার আব্দুল খালেক কোনো ব্যবস্থা নিতে দেননি বলে মালিক সমিতি এবং শ্রমিকদের ওপর কেসিসির কোনো হস্তক্ষেপ নেই।
সরদার ইউসুব খাঁ বলেন, বাধ্য হয়ে আওয়ামী লীগের মিছিল মিটিং করতে হতো। ৫ই আগস্টের পর ঝামেলা হতে পারে বলে মালিক সমিতি আমাদের বাজারে যেতে নিষেধ করেছিল। পরবর্তীতে পরিস্থিতি স্বাভাবিক হওয়ায় আবার সরদার পদে দায়িত্ব নিয়েছি।
ট্রাক টার্মিনাল কাঁচা বাজারের শ্রমিক শাহজাহান মিজি, জাহাঙ্গীর, ফজলু হাওলাদার, আবুল, আমিনুল, শাহ আলম বলেন, এতদিন আমাদের উপার্জিত অর্থ থেকে চাঁদা দিয়ে বাজারে কাজ করতে হয়েছে। একজন শ্রমিক সর্বোচ্চ দৈনিক এক হাজার টাকা আয় করেন। তা থেকে ২০০-৩০০ টাকাও চাঁদা দিতে হয়েছে। পুনরায় চাঁদাবাজির নীল নকশা তৈরি হয়েছে। আমরা এই বাজারে আর ফ্যাসিবাদ-চাঁদাবাজ চাই না।
কেসিসি পাইকারি কাঁচা বাজারের দোকান মালিক সমিতির সভাপতি নজরুল ইসলাম গণমাধ্যম কে বলেন, সাতজন সরদার ৫ই আগস্টের পর প্রায় তিন মাস বাজারে আসেননি।
পরবর্তীতে হঠাৎ করেই সর্দাররা পুনরায় নিজেদের পদে বসেন। তখন মালিক সমিতির কেউ ছিলেন না।
তিনি আরও বলেন, শ্রমিকদের নিয়ন্ত্রণ শ্রমিক সর্দাররা করেন। কোনো সমস্যা হলে আমরা শ্রমিক সরদারদের সঙ্গে আলোচনা করে সিদ্ধান্ত গ্রহণ করি। এর বাইরে তাদের সঙ্গে আমাদের সংশ্লিষ্টতা নেই।
Copyright © 2022 KhulnarKhobor.com মেইল:khulnarkhobor24@gmail.com।জাতীয় অনলাইন গণমাধ্যম নীতিমালা আইনে তথ্য মন্ত্রণালয় কর্তৃক নিবন্ধন আবেদিত।স্মারক নম্বর:- ০৫.৪৪.৪৭০০.০২২.১৮.২৪২.২২-১২১।এই নিউজ পোর্টালের কোন লেখা, ছবি, অডিও, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।