কয়রা(খুলনা)প্রতিনিধি ||খুলনার কয়রায় জামায়াত কর্মী জাহিদুল ইসলাম হত্যা মামলা ভিন্ন দিকে নিতে একটি মহল যড়যন্ত্রে লিপ্ত রয়েছে। দীর্ঘ একযুগ পরে খুলনার কয়রায় জামায়াত কর্মী জাহিদুল ইসলাম হত্যার ঘটনায় আদালতে মামলা দায়ের হয়েছে।
নিহত জাহিদুলের স্ত্রী ছবিরন নেছা বাদী হয়ে কয়রা উপজেলা সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে এই মামলাটি করেন। যার নং ০৩/২৫ ও তাং ১৭/৪/২০২৫ ইং। আদালত মামলাটি আমলে নিয়ে নথিভুক্ত করার জন্য কয়রা থানাকে নির্দেশ দিয়েছেন।
থানা মামলাটি নথিভুক্ত করেছে। যার নং-১৩, তারিখ ১৮/৪/২০২৫ ইং। মামলায় আওয়ামী লীগের সাবেক সংসদ সদস্য মোঃ সোহরাব আলী সানা ও মোঃ আক্তারুজ্জামান বাবু সহ আ’লীগ,যুবলীগ,ছাত্রলীগ এবং সহযোগি সংগঠনের ১১৩ জনকে আসামি করা হয়েছে।
মামলার এজাহার সূত্রে জানা গেছে , ২০১৩ সালের ১২ ফেব্রুয়ারি জামায়াতে ইসলামীর কেন্দ্রীয় নেতা আব্দুল কাদের মোল্লার ফাঁসির রায়ের বিরুদ্ধে কয়রা সদরে একটি মিছিল ও সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়।
মিছিল ও সমাবেশে পরিকল্পিতভাবে আওয়ামী লীগ, যুবলীগ, ছাত্রলীগ ও অঙ্গসংগঠনের নেতাকর্মীরা গুলিবর্ষণ ,বোমা বিস্ফোরণ ও দেশীয় অস্ত্র সহ লাঠিসোটা নিয়ে চতুর্মুখী হামলা চালায়। হামলায় জাহিদুল,ফারুক শেখ ও মুসানুর গুলিবিদ্ধ হয়। এবং পরবর্তীতে গুলিবিদ্ধ জাহিদুল মারা যান। সে সময় ২৮/২৯ জন আহত হন।
মামলার বাদী ছবিরন নেছা বলেন,আমার স্বামী অত্যান্ত শান্ত স্বভাবের ছিলেন। তিনি একজন দিন মজুর ছিলেন।
জামায়াতে ইসলামীর মিছিলে গিয়ে গুলিবিদ্ধ হয়ে তিনি ঘটনাস্থলেই মারা যান। ১৬ মাসের একটি কন্যাকে নিয়ে বিচারের দাবিতে লোকের দুয়ারে দুয়ারে ঘুরেছি। আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের ভয়ে কেউ সহযোগিতা করার সাহস পায়নি। এতদিন পরিবারের সদস্যরা মামলা হামলার ভয়ে মুখ খুলতে রাজি হননি।
১২ বছর পরে দেশেরপট পরিবর্তন হলে পরিবারের সদস্যদের পরামর্শে কয়রা উপজেলা প্রেস কাবে স্বামী হত্যার বিচারের দাবিতে সংবাদ সম্মেলন করেছি এবং ন্যায় বিচারের আশায় আদালতের দ্বারস্থ হয়েছি। দীর্ঘদিন পরে মামলাটি রুজু হওয়ায় পরিবার ও আত্মীয় স্বজনরা স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলেছেন।
তিনি আক্ষেপ করে বলেন, কিছু সাংবাদিক যারা পূর্বে তথাকথিত ফ্যাসিস্ট সরকারের মুখপাত্র হিসেবে কাজ করছে। গত ৫ আগষ্টের পরে পালিয়ে থেকে বর্তমান পরিস্থিতিকে প্রশ্নবিদ্ধ করার জন্য অপপ্রচার ও মিথ্যা তথ্য প্রচার করে তারা আবার জনমতে সংশয় সৃষ্টি করছে। কয়রা উপজেলার হাজার হাজার মানুষ আমার স্বামীর হত্যার স্বাক্ষী রয়েছে।
তারাও এই হত্যাকান্ডের ন্যায় বিচার চায়।যারা বিচার কার্যক্রমকে বিতর্কিত করার অপচেষ্টা চালাচ্ছে, তাদেরকেও আইনের আওতায় আনার জন্য তিনি প্রশাসনের কাছে দাবি জানান।
নিহত জাহিদুল ইসলামের বোন রোকেয়া খাতুন বলেন, আদালতে মামলা করলে স্থানীয় আওয়াামীলীগ নেতা সোহরাব আলী সানার আত্মীয়-স্বজন ও তাদের অনুসারী কয়েকজন এসে আমাদের হুমকি ধামকি দিয়ে যাচ্ছে। সাংবাদিক পরিচয়ে কয়েকজন এসে মিথ্যা মামলা করেছি।
আমাদেরকে এর প্রতিদান বুঝিয়ে দেবে এই ধরনের কথা বলে শাসিয়ে গেছে।আমরা ন্যায় বিচারের আশায় মামলা করেছি কিন্তু এসব কর্মকান্ডে বিব্রত বোধ করছি। আমরা দীর্ঘদিন পরে ন্যায় বিচারের আশায় বুক বেঁধে আইনের আশ্রয় নিয়েছি। কিন্তু বিগত দিনের ন্যায় স্বৈরাচার সরকারের দোসরদের অপতৎপরতা দেখে হতাশ হয়ে পড়েছি।
ঐ মিছিলে গুলিবৃদ্ধ ফারুক হোসেন বলেন, আমি ২০১৩ সালের ১২ ফেব্রুয়ারি জামায়াতে ইসলামীর ঐ মিছিলে গিয়ে বুকে ও কোমরে গুলিবিদ্ধ হয়ে রাস্তায় পড়ে ছিলাম। এত দিন কেউ আমাদের সহযোগিতার জন্য এগিয়ে আসেনি বা খোজ খবর নেয়নি। ঐ দিনে আহত হয়ে চিকিৎসা করতে গিয়ে আমি সহ জামায়াতের বহু নেতাকর্মী ভিটে-বাড়ি বিক্রয় করে দিয়েছি। তবে এখন সুদিন এসেছে আমাদের এই নির্মমভাবে নির্যাতনের সাথে জড়িতদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণে দলীয় ও সর্বস্তরের মানুষের সহযোগিতা পাবেন বলে তিনি দাবি করেন।
কয়রা উপজেলা জামায়াতের আমির মাওলানা মিজানুর রহমান বলেন, ১৫/১৬ বছর অসংখ্য মামলা নিয়ে পথে পথে ঘুরেছি তখন কেউ খবর নেয়নি। এখন জামায়াতের কর্মী জাহিদুল হত্যার ব্যাপারে তার স্ত্রী বাদী হয়ে মামলা করেছে। এখন অনেকেই খোজ-খবর নিচ্ছেন। তিনি প্রশ্ন রেখে বলেন ন্যায় বিচার পেতে তার স্ত্রীর মামলা করার অধিকার আছে কি না ?
খুলনা জেলা জামায়াতের ইসলামীর আমির মাওলানা ইমরান হুসাইন বলেন,বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী বিগত দিনের সকল হত্যাকান্ড ও জুলুম নির্যাতনের বিচার চায়।তবে কোন নিরপরাধ মানুষের হয়রানি বা কষ্টের শিকার না হয় সে ব্যাপারে নিশ্চিত করতে হবে।
Copyright © 2022 KhulnarKhobor.com মেইল:khulnarkhobor24@gmail.com।জাতীয় অনলাইন গণমাধ্যম নীতিমালা আইনে তথ্য মন্ত্রণালয় কর্তৃক নিবন্ধন আবেদিত।স্মারক নম্বর:- ০৫.৪৪.৪৭০০.০২২.১৮.২৪২.২২-১২১।এই নিউজ পোর্টালের কোন লেখা, ছবি, অডিও, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।