পরেশ দেবনাথ, কেশবপুর, যশোর।।যশোরের কেশবপুরে বাংলা সাহিত্যের অমিত্রাক্ষর ছন্দের প্রবর্তক মহাকবি মাইকেল মধুসূদন দত্ত-এঁর স্মৃতিবিজড়িত জন্মস্থান সাগরদাঁড়ি মধু পল্লী আজম বিপন্ন হতে চলেছে। প্রত্নতত্ত্ব অধিদপ্তরের উদাসীনতা আর বরাদ্দের অভাবে ঐতিহ্যবাহী এই স্থানটি তার গুরুত্ব হারাতে বসেছে। কেবল মধু পল্লী নয়, দেশের হাজার হাজার প্রত্নসম্পদ একই সংকটে ধুঁকছে। কারণ প্রত্নতত্ত্ব অধিদপ্তরের প্রাতিষ্ঠানিক দুর্বলতা, বাজেট সংকট ও জনবলের অভাব।
মধু পল্লীতে প্রবেশ করলেই চোখে পড়ে দত্তপুকুর, যার চারপাশের বাঁধ ভেঙে জীর্ণ হয়ে আছে যেখানে রয়েছে বিভিন্ন প্রজাতির মাছ। দর্শনার্থীরা মাছের দৃশ্য দেখে মুগ্ধ হলেও পাড় সংস্কারের অভাবে ঠিকমতো দাঁড়াতে পারেন না। মহাকবির জন্মভিটার বিভিন্ন স্থাপনা, এমনকি কাকার বাড়ির অবস্থাও শোচনীয়। দরজা-জানালায় ফাটল এবং বিল্ডিংয়ে বড় ধরনের ভাঙন, যেকোনো সময় দুর্ঘটনার কারণ হতে পারে। প্রত্নতত্ত্ব অধিদপ্তর ২০২৫-২৬ অর্থবছরে সংস্কার বাবদ প্রায় আড়াই কোটি টাকা বরাদ্দ পেলেও মধু পল্লীর মতো গুরুত্বপূর্ণ স্থানে কোনো বরাদ্দ দেওয়া হয়নি, যা হতাশাজনক।
পর্যটকরাও এই অব্যবস্থাপনার প্রতিবাদ করছেন এবং দ্রুত পদক্ষেপ নেওয়ার দাবি জানিয়েছেন। তাদের মতে, জরুরি বরাদ্দ, স্থানীয় প্রশাসন ও সংস্কৃতিপ্রেমী মানুষের সমন্বিত উদ্যোগ এবং জনসচেতনতা বৃদ্ধি-এই তিনের সমন্বয়েই মধু পল্লীর ঐতিহ্য রক্ষা সম্ভব।
প্রত্নতত্ত্ব অধিদপ্তরের প্রাতিষ্ঠানিক দুর্বলতাও রয়েছে। একসময় আর্কিওলজিক্যাল সার্ভে অব ইন্ডিয়া নামে পরিচিত প্রত্নতত্ত্ব অধিদপ্তর স্বাধীনতার ৫৪ বছর এবং অধিদপ্তর হিসেবে প্রতিষ্ঠার ৫৭ বছর পার করেও দুর্বল একটি প্রতিষ্ঠান হিসেবে রয়ে গেছে। দ্রুত আটটি বিভাগীয় কার্যালয় চালু করা এবং বৃহত্তর জেলাগুলোতে আঞ্চলিক কার্যালয় স্থাপন করা প্রয়োজন। প্রতিটি জেলায় প্রত্নতাত্ত্বিক বা সহকারী পরিচালকের কার্যালয় স্থাপন করে স্থানীয় পর্যায়ে প্রত্নসম্পদ সংরক্ষণের ব্যবস্থা করা উচিত।
বর্তমানে অধিদপ্তরের মাত্র চারটি আঞ্চলিক কার্যালয় রয়েছে, যা আটটি বিভাগকে নিয়ন্ত্রণ করে।
একটি কার্যালয়কে একাধিক বিভাগের দায়িত্ব নিতে হচ্ছে, যার ফলে দেশের প্রায় ২০০০-এর বেশি প্রত্নস্থাপনা সংরক্ষণের অভাবে ধুঁকছে। অধিদপ্তরের বাজেটে রয়েছে চরম অপ্রতুলতা এবং জনবলের তীব্র সংকট। কোনো নিয়োগবিধি না থাকায় নতুন কর্মী নিয়োগও সম্ভব হচ্ছে না। ফলে প্রত্নস্থানগুলোর নিয়মিত রক্ষণাবেক্ষণ ও খনন কার্যক্রম ব্যহত হচ্ছে। দেশের ৬৪টি জেলায় কোনো প্রত্নতাত্ত্বিক কার্যালয় নেই, যার কারণে স্থানীয় পর্যায়ে প্রত্নসম্পদগুলো তদারকি ও নিরাপত্তা থেকে বঞ্চিত হচ্ছে। বাজেট ও জনবলের অভাবে অনেক প্রত্নস্থান নিয়মিত সংস্কার থেকে বঞ্চিত হচ্ছে। বিগত বছরগুলোতে ৩০টিরও বেশি গেজেটভুক্ত প্রত্নস্থান রক্ষণাবেক্ষণের অভাবে তালিকা থেকে বাদ পড়েছে।
এটি দুঃখজনক যে প্রত্নতত্ত্ব অধিদপ্তরের অনেক পরে প্রতিষ্ঠিত হওয়া শিল্পকলা একাডেমি, পরিবেশ অধিদপ্তর, দুদক-এর মতো অনেক প্রতিষ্ঠান ইতোমধ্যেই গুরুত্ব বুঝে দেশের বিভিন্ন স্থানে তাদের কার্যালয় স্থাপন করেছে। এটি প্রত্নতত্ত্ব অধিদপ্তরের প্রাতিষ্ঠানিক দুর্বলতা এবং সরকারি অবহেলার একটি সুস্পষ্ট প্রমাণ।
এ বিষয়ে মধু পল্লী কাস্টোডিয়ান হাসানুজ্জামান বলেন, “মধু পল্লী সংস্কারের বিষয়টি ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের জানিয়েছি। তবে সংস্কার বাবদ বাজেট করা হয়েছে কিনা এখনো আমি জানি না।”
এ বিষয়ে খুলনা আঞ্চলিক কার্যালয়ের পরিচালক লাভলী ইয়াসমিন বলেন, “মধু পল্লীর সংস্কারের বরাদ্দ ধরা হয়নি। দীর্ঘদিন ধরে সংস্কার হয়নি মধুপল্লী। এবারও আপনাদের বরাদ্দ নেই, তাহলে কি মধু পল্লী ধ্বংস হয়ে যাবে?” এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি কিছুটা নিজেদের দুর্বলতা ঢাকতে বলেন, “এবার মধুপল্লীতে ২০ লক্ষ টাকার মতো সংস্কার কাজ করার পরিকল্পনা আছে।
Copyright © 2022 KhulnarKhobor.com মেইল:khulnarkhobor24@gmail.com।জাতীয় অনলাইন গণমাধ্যম নীতিমালা আইনে তথ্য মন্ত্রণালয় কর্তৃক নিবন্ধন আবেদিত।স্মারক নম্বর:- ০৫.৪৪.৪৭০০.০২২.১৮.২৪২.২২-১২১।এই নিউজ পোর্টালের কোন লেখা, ছবি, অডিও, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।