আরিফুল ইসলাম রিয়াজ,মোল্লাহাট প্রতিনিধি ||
বাগেরহাটের মোল্লাহাট উপজেলা স্বাস্থ্য কম্প্লেক্সে অনিয়ম ও দুর্নিতীর অভিযোগ ভোগান্তির স্বিকার হচ্ছে সাধারণ জনগণ।
এ স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে দালালদের অবাধ দৌরাত্ম্য ও কমিশন বাণিজ্যের অভিযোগ রয়েছে। রোগীদের বেসরকারি ক্লিনিকে পাঠিয়ে টেস্টের নামে অর্থ হাতিয়ে নেওয়া হচ্ছে।
অভিযোগ রয়েছে,ল্যাব টেকনিশিয়ান সরকার নির্ধারিত মূল্যের থেকেও অধিক আদায় করছেন এবং কাউকেই তিনি রসিদ প্রদান করেন না। কমিশনের লোভে রোগীদের নির্দিষ্ট ডায়াগনস্টিক থেকে টেস্ট করাচ্ছেন। অফিস চলাকালীন সময়ে তার সরকারি ল্যাবের সামনে দুজন বহিরাগত দাঁড়িয়ে থেকে টেস্ট বাণিজ্য চালিয়ে যাচ্ছে।
ওটির সকল যন্ত্রাংশ থাকলেও ডাক্তার না থাকার ফলে সিজার সহ অনেক ধরনের অপারেশন বন্ধ রয়েছে। মহিলা গাইনি ডাক্তার না থাকায় প্রসূতি রোগীরাও মারাত্মক বিপাকে পড়ছেন। দরিদ্র রোগীরা বাধ্য হয়ে বেসরকারি ক্লিনিকে গিয়ে ২০ থেকে ৪০ হাজার টাকা খরচ করছেন। অথচ সরকারী হাসপাতালে মাত্র ১০ টাকায় সিজারিয়ান সুবিধা পাওয়া জনগণের নাগরিক অধিকার।
সরকারী হাসপাতালে এই সুবিধা না থাকায় এই সুযোগে দালাল চক্র সক্রিয় হয়ে উঠেছে। এছাড়া দীর্ঘদিন ধরে ল্যাব টেকনিশিয়ান না থাকায় বিদ্যুৎ বিভ্রাট, ল্যাবের যন্ত্রপাতি ও বিভিন্ন প্রযুক্তিগত সমস্যার সমাধান করা যাচ্ছে না। এক্সরে মেশিন, ইসিজি মেশিন নষ্ট পড়ে আছে। আল্ট্রাসনোগ্রাম মেশিন থাকলেও নেই অপারেটর/ডাক্তার।
হাসপাতালের এক্স-রে মেশিন দীর্ঘদিন নষ্ট, আধুনিক ল্যাব মেশিন নেই। ফলে রোগীরা বিভ্রান্ত ও হয়রানির শিকার হচ্ছেন। এই পরিস্থিতিতে স্বাস্থ্যসেবা অধিদপ্তরের সন্তোষজনক তালিকায় থাকা হাসপাতালটির এই অবনতি জনমনে গভীর হতাশা তৈরি করেছে।
জনবল সংকট, চরম অব্যবস্থাপনা ও অনিয়মের কারণে বাগেরহাটের মোল্লাহাট উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের স্বাস্থ্যসেবা ভেঙে পড়ার উপক্রম হয়েছে। অল্প কিছুদিন আগেও স্বাস্থ্যসেবা অধিদপ্তরের শীর্ষ ৫০টি হাসপাতালের তালিকায় থাকা প্রতিষ্ঠানটির অবস্থান এখন ১৮২ নম্বরে। দ্রুত পদক্ষেপ না নিলে সরকারি এই হাসপাতালটির সুনাম পুরোপুরি নষ্ট হয়ে যাবে বলে মনে করছেন স্থানীয়রা।
সচেতন মহল বলছেন,মোল্লাহাট উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সকে কেন্দ্র করে একটি দালাল চক্র সক্রিয়। এখানে জরুরি ভিত্তিতে জনবল নিয়োগ ও অব্যবস্থাপনা রোধ না করলে এ হাসপাতালের মান সম্পূর্ণ ধ্বংস হয়ে যাবে। প্রশাসনের কঠোর নজরদারি ও দুর্নীতি দমন কমিশনের হস্তক্ষেপ ছাড়া পরিস্থিতি স্বাভাবিক হবে না।
হাসপাতালের মোট মঞ্জুরীকৃত পদের প্রায় ৬৮.০৯% পদ শূন্য। ২৮ জন প্রথম শ্রেণির চিকিৎসকের মধ্যে কর্মরত আছেন একজন ডেন্টাল ডাক্তার সহ মোট ৮ জন। ১৯ টি চতুর্থ শ্রেণির মধ্যে ৭ জন এবং তৃতীয় শ্রেণির ৭১জন। দ্বিতীয় শ্রেণির ৩৫ জন। স্বাস্থ্য সহকারী ৩৮ জনের মধ্যে কর্মরত আছেন ১৩ জন। সার্বিকভাবে জনবল সংকটে স্বাভাবিক কার্যক্রম মারাত্মকভাবে ব্যাহত হচ্ছে।হাসপাতালে জুনিয়র সার্জারি কনসালটেন্ট থাকার কথা ১১ জন। কাগজে কলমে একজন থাকলেও বাস্তবে কেউ নেই।
জুনিয়র সার্জারি কনসালটেন্ট ডাঃ রওশানারা কাগজে-কলমে থাকলেও তিনি দীর্ঘদিন ধরে ঢাকায় কর্মরত। ডাঃ নাহিদুল ইসলাম এবং ডাঃ আলবার্ট মানিক সরকার দীর্ঘদিন যাবত অনুপস্থিত।মোল্লাহাট উপজেলা স্বাস্থ্য ও পঃপঃ কর্মকর্তা ডাঃ তেন মং বলেন, জনবল সংকটে হাসপাতালের সেবা কার্যক্রম পরিচালনা করতে অসুবিধা হচ্ছে।
বিশেষকরে চতুর্থ শ্রেণির কর্মচারী নিয়োগ বা আউটসোর্সিং কর্মী নিয়োগ অত্যন্ত জরুরি। সীমিত জনবল দিয়ে সেবা দেওয়ার চেষ্টা করছি। এছাড়া কোন কর্মকর্তা ও কর্মচারীর বিরুদ্ধে অভিযোগ পেলে তদন্ত সাপেক্ষে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।সেবাপ্রার্থীরা বলছেন, পর্যাপ্ত চিকিৎসক, নার্স ও সহায়ক কর্মী নিয়োগ দিতে হবে। হাসপাতাল পরিচ্ছন্ন রাখতে দ্রুত সুইপার নিয়োগ করতে হবে। অপারেশন থিয়েটার চালু ও গাইনি-জুনিয়র সার্জারি কনসালটেন্ট ডাক্তার নিশ্চিত করতে হবে। দালাল ও কমিশন বাণিজ্য বন্ধে প্রশাসনের কঠোর ব্যবস্থা প্রয়োজন। নষ্ট এক্স-রে ও ইসিজি মেশিন দ্রুত মেরামত করার ব্যবস্থা ও আধুনিক যন্ত্রপাতি সরবরাহের দাবি জানান তারা।
Copyright © 2022 KhulnarKhobor.com মেইল:khulnarkhobor24@gmail.com।জাতীয় অনলাইন গণমাধ্যম নীতিমালা আইনে তথ্য মন্ত্রণালয় কর্তৃক নিবন্ধন আবেদিত।স্মারক নম্বর:- ০৫.৪৪.৪৭০০.০২২.১৮.২৪২.২২-১২১।এই নিউজ পোর্টালের কোন লেখা, ছবি, অডিও, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।