খুলনার খবর // মোংলা বন্দরের অদূরে খুলনা-মোংলা সড়কের পাশে রামপালের ফয়লায় খানজাহান আলী বিমানবন্দরের নির্মাণ কাজে গতি আসেনি গেল ২৬ বছরেও। কবে এটি বাস্তবায়ন হবে; সেই নিশ্চয়তাও মিলছে না কারও কাছ থেকে।
এ নিয়ে বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটন মন্ত্রণালয় এবং বেসামরিক বিমান পরিবহন কর্তৃপক্ষের (বেবিচক) বিভিন্ন সূত্র থেকে জানা গেছে নানা তথ্য। বিমানবন্দরটি দ্রুত চালু করার দাবি স্থানীয় ব্যবসায়ী ও সাধারণ মানুষেরও। তারা বলছেন, বিমানবন্দর না থাকায় খুলনা-বাগেরহাটে আসতে চান না বিদেশি ব্যবসায়ীরা। পর্যটকও বাড়ছে না সুন্দরবনে।
খুলনা থেকে প্রায় আড়াই-তিন ঘণ্টা সড়ক পথ পাড়ি দিয়ে যশোর বিমানবন্দর দিয়ে যাত্রা করতে গিয়ে বিপাকে পড়ে যান ব্যবসায়ীরা। বাগেরহাটের এ বিমানবন্দরটি চালু হলে আয় বাড়বে মোংলা বন্দরেরও।
খানজাহান আলী বিমানবন্দর নির্মাণের উদ্যোগ নেয়া হয় ১৯৯৬ সালে। তখন আওয়ামী লীগ সরকার ক্ষমতায়। বিমানবন্দরটিকে ‘শর্ট টেক অফ অ্যান্ড ল্যান্ডিং বন্দর’ হিসেবে গড়ে তুলতে ৪১.৩০ হেক্টর জমি অধিগ্রহণ ও মাটি ভরাট করা হয়েছে।
এরপর ২০০১ সালে বিএনপি-জামায়াত জোট ক্ষমতায় আসার পর বিমানবন্দরটির উন্নয়ন কাজ বন্ধ করে দেয়া হয়।এরপর ২০১১ সালের ৫ মার্চ খানজাহান আলী বিমানবন্দরকে পূর্ণাঙ্গ করার ঘোষণা দেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। পরে আরও ৬২৬.৬৩ একর জমি অধিগ্রহণ করা হয়।প্রধানমন্ত্রীর প্রতিশ্রুতির চার বছর পর ২০১৫ সালে জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটিতে (একনেক) প্রকল্পটির অনুমোদন মেলে। একই বছরের জুলাইয়ে ফের শুরু হয় প্রকল্পটির কাজ। এরপর কেটে গেল আরও ছটি বছর।
জমি অধিগ্রহণ, মাটি ভরাট ও সীমানা প্রাচীর নির্মাণ ছাড়া কোনো কাজই হয়নি। প্রকল্প এলাকায় একটি সাইনবোর্ড থাকায় কেবল এটির অস্তিত্ব টের পাওয়া যায়। কবে এ প্রকল্পের কাজ শেষ হবে, এটি দিয়ে বিমান উঠানামা করবে কবে—সেই খবর কেউ দিতে পারছেন না।
রামপাল উপজেলার উজলপুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মুন্সি বোরহান উদ্দিন জেড বলেন, আমাদের এলাকায় বিমানবন্দর হলে এ অঞ্চলে ব্যবসা-বাণিজ্যের আমূল পরিবর্তন ঘটবে। মোংলাবন্দর এলাকায় বিনিয়োগ বাড়বে। এছাড়া খুলনা ও বাগেরহাটসহ কয়েকটি জেলার সঙ্গে দেশি-বিদেশি বিনিয়োগকারীদের যোগাযোগ বাড়বে। আকৃষ্ট হবেন সুন্দরবন ও ষাটগম্বুজ কেন্দ্রিক পর্যটকরা।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটন মন্ত্রণালয়ের এক কর্মকর্তা বলেন,পদ্মাসেতু হয়ে যাওয়ার কারণে মানুষের যাতায়াত সহজ হয়ে গেছে। যে কারণে খানজাহান আলী বিমানবন্দরে বেসরকারি বিনিয়োগকারীরা এগিয়ে আসছেন না। কারণ এখানে বিনিয়োগ করা তাদের জন্য কতটা লাভজনক হবে; তা নিয়ে তারা সন্দিহান।
বেসামরিক বিমান পরিবহন কর্তৃপক্ষের (বেবিচক) এক প্রকৌশলী বলেন, ‘বিমানবন্দরটি পিপিপিতে হওয়ার কথা। এ জন্য প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে কর্তৃপক্ষ আছেন। পিপিপিতে পার্টি নিয়োগ দিতে ওরা কয়েকবার দরপত্র আহ্বান করেছে। কিন্তু পার্টি পাওয়া যায় না। তারা এটিকে লাভজনক বিবেচনা করছেন না।“সম্ভাব্যতা যাচাই করেও দেখা গেছে, আসলে পিপিপিতে এটি নির্মাণ করা সম্ভব হবে না। পিপিপিতে ভায়াবিলিটি গ্যাপ ফাইন্যান্সিং (ভিজিএফ) নামের একটি তহবিল রয়েছে। সেখান থেকে তহবিল প্রয়োজন হবে। অর্থাৎ এটি বাস্তবায়নে সরকারেরও সহায়তা লাগবে,” যোগ করেন তিনি।
তবে এটি বাস্তবায়ন হবে উল্লেখ করে ওই প্রকৌশলী বলেন, বিমানবন্দরটি ভবিষ্যতে বাস্তবায়ন হবে; তবে এ মুহূর্তে এটিকে সম্ভাব্য কার্যকর একটি বিমানবন্দর হিসেবে দেখা হচ্ছে না।
২০১৯ সালের ১৩ ফেব্রুয়ারি নির্মাণাধীন বিমানবন্দরটি পরিদর্শনকালে পরিকল্পনামন্ত্রী এম এ মান্নান বলেন, এ বিমানবন্দরটি বাণিজ্যিকভাবে অত্যন্ত লাভজনক হবে। কারণ রামপাল তাপ বিদ্যুৎকেন্দ্র হচ্ছে; পাশে মোংলা বন্দর ও খুলনা রয়েছে। এখানে বিমানবন্দর হওয়াটা যৌক্তিক বলেই এটির অনুমোদন হয়েছে।
বিশ্বজুড়ে যে অর্থনৈতিক সংকট রয়েছে,এ প্রকল্প বাস্তবায়নে তার প্রভাব রয়েছে কিনা, জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘তা বলা যাবে না। সরকারের নীতিগত যে সিদ্ধান্ত, আপাতত বড় বড় প্রকল্পগুলো এ মুহূর্তে বাস্তবায়ন না করার বিষয়ে ভাবতে হচ্ছে।
Copyright © 2022 KhulnarKhobor.com মেইল:khulnarkhobor24@gmail.com।জাতীয় অনলাইন গণমাধ্যম নীতিমালা আইনে তথ্য মন্ত্রণালয় কর্তৃক নিবন্ধন আবেদিত।স্মারক নম্বর:- ০৫.৪৪.৪৭০০.০২২.১৮.২৪২.২২-১২১।এই নিউজ পোর্টালের কোন লেখা, ছবি, অডিও, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।