শরিফুল ইসলাম // সারা দেশে প্রাথমিক ও মাধ্যমিক পর্যায়ের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোতে বিনা মূল্যের সব বই না পৌঁছায় কয়েকটি শ্রেণিতে নতুন শিক্ষাক্রমে পাঠদানে সমস্যা হচ্ছে। প্রাথমিকের প্রথম ও দ্বিতীয় এবং মাধ্যমিকের সপ্তম শ্রেণির বইয়ের সংকট তীব্র। সংকটের দ্বিতীয় ধাপে রয়েছে ষষ্ঠ শ্রেণির পাঠ্য বই। বাকি শ্রেণিগুলোর প্রায় সব বিষয়ের পাঠ্য বই বিতরণ করা হয়েছে। তবে চাহিদার তুলনায় কম বই পেয়েছে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলো।খুলনার বেশ কয়েকটি বিদ্যালয়ে সরেজমিনে গিয়ে এমন চিত্র দেখা যায়।
সংকটের সত্যতা জানিয়ে জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ডের (এনসিটিবি) কর্মকর্তারা বলেন, কয়েকটি প্রিন্টিং প্রেসের কারণে এসব স্তরে পাঠ্য বই বিতরণে দেরি হচ্ছে।এরই মধ্যে সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানগুলোকে নির্ধারিত সময়ে বই দিতে তাগাদা দেওয়া হয়েছে।
সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, স্কুলভেদে প্রাথমিকের প্রথম ও দ্বিতীয় এবং মাধ্যমিকের সপ্তম শ্রেণির বই পেয়েছে ৩০ থেকে ৩৩ শতাংশ। ষষ্ঠ শ্রেণিতে বই সরবরাহের হার ৫০ থেকে ৭০ শতাংশ। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলো অন্যান্য শ্রেণির সব বিষয়ের বই পেলেও চাহিদার তুলনায় তা ২০ থেকে ৩০ শতাংশ কম।
সংশ্লিষ্ট শিক্ষকরা জানান, দু-তিন ধাপে এসব বই সরবরাহ করা হয়েছে। বাকি বই চলতি মাসের মধ্যেই দেওয়ার বিষয়ে জানানো হয়েছে।
প্রথম শ্রেণিতে পাঠদানের বিষয়ে জানতে চাইলে মেহমানে আলিয়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক বি,এম শফিউর রহমান খুলনার খবরকে বলেন, ‘শিশুদের বর্ণ ও শব্দ শেখাই। তাদের পরিবারের সবার নাম সম্পর্কে ধারণা দিচ্ছি।পুরোনো পাঠ্যপুস্তক দিয়েই চলছে পাঠদান।তার উপর স্কুলে জনবল সংকটে নিজেকেই ঝাড়ু দিতে হয় পতাকা তুলতে হয়।বই সংকটের পাশাপাশি লোকবল সংকটে ভুগছে স্কুলটি।
ন্যাশনাল উচ্চ বিদ্যালয়ের ষষ্ঠ শ্রেণির শিক্ষার্থী শান্তনু বিশ্বাস বলে, ‘যে বিষয়গুলোর বই পাওয়া গেছে সে বিষয়গুলো রিডিং পড়ানো হচ্ছে। বই না পাওয়া বিষয়গুলো পুরনো বইয়ের আলোকে ধারণা দিচ্ছেন শিক্ষকরা। শিক্ষকরা বই রিডিং পড়ে আমাদের শোনাচ্ছেন।
জানা যায়, প্রাথমিকের প্রথম ও দ্বিতীয় শ্রেণির পাঠ্য বই সরবরাহের সময়সীমা রয়েছে ১৭ জানুয়ারি পর্যন্ত। এ স্তরে মোট দুই কোটি ৩৬ লাখ ৩৩ হাজার ৫২৬টি বই সরবরাহ করতে ২৪টি মুদ্রণ প্রতিষ্ঠানকে ৯৮ লটে কাজ দেয় এনসিটিবি। ষষ্ঠ ও সপ্তম শ্রেণির পাঠ্য বই সরবরাহের সময়সীমা শেষ হয়েছে গত ২২ ডিসেম্বর।
বই সংকটে প্রাথমিকের শিক্ষার্থীরা পুর্নাঙ্গ বই পায়নি।কিছু শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের পঞ্চম শ্রেনীতে মাত্র একটি করে বই পেয়েছে শিক্ষার্থীরা। দ্বিতীয় শ্রেণির তিনটি বিষয়ের মধ্যে শুধু গণিতের বই পেয়েছে। সপ্তম শ্রেণির বই এসেছে প্রায় ৩০ শতাংশ। মোট ১১টি বিষয়ের মধ্যে ইতিহাস ও সামাজিক বিজ্ঞান, গণিত এবং ইসলাম শিক্ষার বই পেয়েছে তারা। ষষ্ঠ শ্রেণিতে প্রায় ৫০ শতাংশ বই এসেছে। এই শ্রেণির ১০টি বিষয়ের মধ্যে ইংরেজি, বিজ্ঞান, ইতিহাস ও সামাজিক বিজ্ঞান, স্বাস্থ্য সুরক্ষা এবং জীবন ও জীবিকা—এই পাঁচটি বিষয়ের বই পেয়েছে। অষ্টম শ্রেণিতে বাংলা ব্যাকরণ এবং নবম শ্রেণির আইসিটি এবং বাংলাদেশ ও বিশ্বপরিচয় বই ছাড়া সব বিষয়ের বই পেয়েছে প্রতিষ্ঠানটি।
প্রথম শ্রেণির বইয়ের চাহিদা ৬০ সেট হলেও পেয়েছে মাত্র এক সেট বই। দ্বিতীয় শ্রেণির তিনটি বিষয়ের বিপরীতে শুধু গণিত বই পেয়েছে তারা। সপ্তম শ্রেণির ৭৫ সেটের মধ্যে পেয়েছে ৫০ সেট বই। তবে বই এসেছে ৩০ শতাংশ, এ স্তরে ১০টি বিষয়ের মধ্যে বাংলা, ইংরেজি ও গণিতের শতভাগ বই পাওয়া গেছে। ষষ্ঠ শ্রেণিতে ৮০ সেট বইয়ের চাহিদা থাকলেও পেয়েছে ৫০ সেট পাঠ্য বই। এ স্তরে ১০টি বিষয়ভিত্তিক বইয়ের মধ্যে ডিজিটাল প্রযুক্তি এবং ইসলাম ও নৈতিক শিক্ষার বই পায়নি তারা। অষ্টম শ্রেণির সব বিষয়ের বই পেলেও ৮০ সেটের মধ্যে পেয়েছে ৬০ সেট বই। নবম শ্রেণির ১০০ সেটের মধ্যে ৮০ সেট বই এসেছে। বাংলা, ইংরেজি ও গণিতের সব বই পেলেও বিভাগভিত্তিক পাঠ্য বইয়ের শতভাগ এখনো পায়নি তারা। আর শারীরিক শিক্ষা, চারু ও কারুকলা এবং কম্পিউটার শিক্ষার কোনো বই এখনো সরবরাহ করা হয়নি।
তবে পুরনো পদ্ধতিতে পাঠদান চলছে শিক্ষা প্রতিষ্ঠান গুলোতে। প্রথম, ষষ্ঠ ও সপ্তম শ্রেণিতে চলতি বছরের ২ জানুয়ারি থেকে নতুন শিক্ষাক্রমে পাঠদান শুরু হয়েছে। তবে বেশির ভাগ বিষয়ের বই পায়নি শিক্ষার্থীরা। আবার প্রাথমিকের শিক্ষকরা অনলাইন প্রশিক্ষণ পাননি। নেই শিক্ষক সহায়িকা গাইড। মাধ্যমিকেও সরাসরি প্রশিক্ষণ পাননি শিক্ষকরা। এতে হ-য-ব-র-লভাবে চলছে এসব স্তরের পাঠদান।
বই সংকটের বিষয়ে এনসিটিবি চেয়ারম্যান অধ্যাপক ফরহাদুল ইসলাম বলেন, মৌসুমি, ব্রাইটসহ কয়েকটি প্রেসের কারণে প্রথম, দ্বিতীয় ও সপ্তম শ্রেণির পাঠ্য বই সরবরাহে দেরি হচ্ছে। কিছু প্রেস বই সরবরাহে অর্থ বাঁচানোর চেষ্টা করার কারণেও দেরি হয়েছে। এসব প্রতিষ্ঠানকে সতর্কবার্তা জানানো হয়েছে। নির্ধারিত সময়ে বই না দিলে তাদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
Copyright © 2022 KhulnarKhobor.com মেইল:khulnarkhobor24@gmail.com।জাতীয় অনলাইন গণমাধ্যম নীতিমালা আইনে তথ্য মন্ত্রণালয় কর্তৃক নিবন্ধন আবেদিত।স্মারক নম্বর:- ০৫.৪৪.৪৭০০.০২২.১৮.২৪২.২২-১২১।এই নিউজ পোর্টালের কোন লেখা, ছবি, অডিও, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।