খুলনার খবর || শহীদ শেখ আবু নাসের বিশেষায়িত হাসপাতালের প্লাস্টিক সার্জারি বিভাগের বিভাগীয় প্রধান ডা. শেখ নিশাত আব্দুল্লাহ এর উপর হামলায় জড়িতদের গ্রেপ্তারের দাবিতে দ্বিতীয় দিনেও কর্মবিরতি অব্যাহত রেখেছেন চিকিৎকরা।আজ বৃহস্পতিবার সকালেও হাসপাতালে যাননি কোনো চিকিৎসক।টানা দুদিন হাসপাতাল ও ক্লিনিকে চিকিৎসক না থাকায় অবর্ণনীয় দুর্ভোগ পোহাচ্ছেন রোগীরা।
এদিকে চিকিৎসকের ওপর হামলার ঘটনায় পুলিশের এএসআই নাঈমুজ্জামান শেখকে প্রত্যাহার করেছে সাতক্ষীরা জেলা পুলিশ। আজ বৃহস্পতিবার তাকে জেলা পুলিশ লাইন্সে প্রত্যাহার করা হয়।
এর আগে বুধবার রাতে বাংলাদেশ মেডিকেল এসোসিয়েশনের (বিএমএ) খুলনা জেলার জরুরি সভা শেষে হামলায় জড়িত ব্যক্তিরা গ্রেপ্তার না হওয়া পর্যন্ত কর্মবিরতি চালিয়ে যাওয়ার ঘোষণা দেন চিকিৎসকরা।
বিএমএ খুলনা জেলা সভাপতি ডা. শেখ বাহারুল আলম বলেন, আসামি গ্রেপ্তার হওয়া না পর্যন্ত চিকিৎসকদের কর্মবিরতি চলবে। বৃহস্পতিবার বেলা ১১টায় শেখ আবু নাসের হাসপাতালের সামনে বিক্ষোভ সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়।
অন্যদিকে বুধবার বিকেলে বিএমএ মিলনায়তনে চিকিৎসকদের এক জরুরি সভায় বসে। সভা শেষে বিএমএ খুলনা শাখার সভাপতি ডা. শেখ বাহারুল আলম সাংবাদিকদের বলেন, আসামি এএসআই নাঈম গ্রেপ্তার না হওয়া পর্যন্ত চলমান আন্দোলন অব্যাহত থাকবে।
অপরদিকে শ্লীলতাহানি ও শিশুর অঙ্গহানির অভিযোগে দুই চিকিৎসকের বিরুদ্ধে গতকাল বুধবার দুপুরে নগরীর সোনাডাঙ্গা মডেল থানায় মামলা দায়ের করেন পুলিশ পত্নী ভুক্তভোগী নুসরাত আরা ময়না। এতে ডা. নিশাত আব্দুল্লাহ ও হক নার্সিং হোমের মালিক ডা. নুরুল হক ফকিরকে আসামি করা হয়।
এর আগে হামলার অভিযোগে গত মঙ্গলবার শহীদ শেখ আবু নাসের হাসপাতালের বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক নিশাত আব্দুল্লাহ বাদী হয়ে নুসরাত আরা ময়নার স্বামী পুলিশের এএসআই নাইম শেখের বিরুদ্ধে একই থানায় মামলা করেন।
এদিকে বুধবার দুপুরে খুলনা প্রেস ক্লাবে সাংবাদিক সম্মেলন করে পুরো ঘটনা সবার সামনে তুলে ধরেন শিশুটির মা নুসরাত আরা ময়না।এবং মামলার এজাহারে ময়না উল্লেখ করেন, তার স্বামী চাকুরির সুবাদে সাতক্ষীরাতে অবস্থান করেন। তার মেয়ের চিকিৎসার জন্য শহীদ শেখ আবু নাসের বিশেষায়িত হাসপাতালে ডা. নিশাত আব্দুল্লাহকে দেখালে তিনি মেয়ের হাতের আঙুলের অপারেশন করানোর কথা বলেন। তিনি আবু নাসের হাসপাতালে অপারেশন না করিয়ে তার পরিচিত ময়লাপোতা হক নার্সিং হোম থেকে অপারেশন করালে ভালো হবে বলে জানান।
কারণ তিনি হক নার্সিং হোমে রোগী দেখেন ও অপারেশন করেন। তার কথা অনুযায়ী গত ১৭ই জানুয়ারি দুপুর দেড়টার দিকে আমার মেয়েকে অপারেশন করানোর জন্য নগরীর শেখপাড়ার হক নার্সিং হোমে ভর্তি করান। ১৮ই জানুয়ারি সন্ধ্যা সাড়ে ৬টার দিকে ডা. নিশাত তার মেয়ের হাতের আঙুল অপারেশন করেন। অপারেশন করার পর থেকে দিন দিন আমার মেয়ের হাতের আঙুল কালো হতে থাকে।
এ বিষয়ে ডাক্তারের সঙ্গে কথা বললে তিনি তার মেয়ের আঙুলের ছবি হোয়াটসঅ্যাপে দিতে বলেন। আমি তার কথা অনুযায়ী সরল বিশ্বাসে তার ব্যক্তিগত মোবাইল থেকে তার হোয়াটসঅ্যাপ নম্বরে মেয়ের আঙুলের ছবি পাঠাই। পরবর্তীতে সে তার মেয়ের চিকিৎসার সুযোগ নিয়ে আমার সাথে ঘনিষ্ঠ হওয়ার জন্য তার ব্যবহৃত মোবাইলে নম্বরে বিভিন্ন সময় তার ব্যক্তিগত মোবাইল থেকে কল করে।
তার মোবাইল নম্বরে তার ব্যক্তিগত মোবাইল থেকে গত ১১ ফেব্রুয়ারি রাত ১২টা ৩২ মিনিটে ‘ঘুম?’ রাত ১২টা ৩৪ মিনিটে ‘রাগ?’ রাত ১২টা ৩৮ মিনিটে ‘কথা বলা যাবে?’সহ বিভিন্ন সময় আপত্তিকর বার্তা প্রেরণ করেন।
এছাড়া বিভিন্ন সময় ফোন করে তাকে একা দেখা করতে বলেন। তার মেয়ের সুচিকিৎসার কথা চিন্তা করে চিকিৎসকের মোবাইলের কল ও ম্যাসেজের বিষয়ে কাউকে কিছু জানাইনি।
তিনি আরও উল্লেখ করেন, গত ৬ই ফেব্রুয়ারি তার মেয়েকে নিয়ে শেখপাড়া হক নার্সিং হোমের চেম্বারে ড্রেসিং করানোর জন্য যেতে বলেন। সন্ধ্যায় সেখানে গেলেও তাকে প্রায় দেড় ঘণ্টা বসিয়ে রাখেন।
রাত সাড়ে ৮টায় তার মেয়েকে নিয়ে অপারেশন থিয়েটারের ভেতরে গেলে নিশাত আবদুল্লাহ আমাকে বিভিন্ন প্রকার আপত্তিকর কথাবার্তা বলার একপর্যায়ে আমার হাত ধরে টেনে তার কাছে নেয়ার চেষ্টা করেন।
তার কু-মতলব বুঝতে পেরে মেয়েকে নিয়ে তিনি অপারেশন থিয়েটার থেকে বের হয়ে আসি। বিষয়টি ক্লিনিক মালিককে জানালে তিনি ডা. নিশাতের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা না নিয়ে উল্টো তাকে কাউকে কিছু না বলার জন্য শাসান।
এজাহারে বলা হয়, গত ২৩শে ফেব্রুয়ারি আবু নাসের হাসপাতালে ওই ডাক্তারের কাছে গেলে তার নির্দেশে হাসপাতালে থাকা ফিজিও থেরাপিস্ট লিপি নামে একজন আমার মেয়ের হাতের আঙুল ড্রেসিং করে দেন। পরে গত ২৫ ফেব্রুয়ারি রাত সাড়ে ৮টার দিকে আমার মেয়ের হাতের আঙুল ব্যান্ডেজসহ খুলে পড়ে গেলে ডাক্তার নিশাতকে ফোনে জানাই ও হক নাসিং হোমে যাই।
সেখানে আমার মেয়ের চিকিৎসা করতে অনীহা প্রকাশ করেন ও চিকিৎসা সংক্রান্ত বিভিন্ন রকম কথাবার্তা বলেন। তখন আমি ৯৯৯ এর মাধ্যমে পুলিশকে জানালে পুলিশ সেখানে উপস্থিত হলে আমার মেয়ে আঙুল ব্যান্ডেজ করে দেন।
আমার ওপর অসৎ উদ্দেশ্যে চরিতার্থ করতে না পেরে অন্য আসামিদের পরস্পর যোগসাজশে আমার মেয়ে অথৈয়ের (৬) বাম হাতের আঙুলে গুরুতর আঘাত দিয়ে আঙুল স্থায়ীভাবে বিকলাঙ্গ করে অপূরণীয় ক্ষতি করেছেন।
এদিকে ডা. শেখ নিশাত আব্দুল্লাহ মামলার এজাহারে উল্লেখ করেন গত ২৫শে ফেব্রুয়ারি রাতে নগরীর শেখপাড়ার হক নার্সিং হোমে একজন রোগীর সার্জারি কাজে ব্যস্ত ছিলাম। জটিল অপারেশন বিধায় দীর্ঘ সময় অপারেশন চলছিল।
রাত ১০টায় সাতক্ষীরা পুলিশ বিভাগে কর্মরত এএসআই নাঈম ও তার স্ত্রী ৪/৫ জন লোক নিয়ে আমার অপারেশন থিয়েটারের দরজায় লাথি মারা শুরু করেন এবং অকথ্য ভাষায় গালাগালি করতে থাকেন।
কারণ জিজ্ঞাসা করলে বলেন-আমার মেয়ে অথৈকে এক মাস আগে আঙুল অপারেশন করেছিলি, আমার মেয়ের আঙুল ভালো হয়নি। এর জন্য তুই দায়ী। এখনই ১০ লাখ টাকা আমার মেয়ের ক্ষতিপূরণ দিবি।
এরপর এএসআই নাঈম আমার ওপর ঝাঁপিয়ে পড়ে কিলঘুষি লাথি মারতে থাকেন। এ সময় তার স্ত্রী ও সঙ্গীরা আমাকে ঘিরে রাখেন। একপর্যায়ে এএসআই নাঈম গলা টিপে ধরে তার শ্বাসরোধ করার চেষ্টা করতে থাকেন। এ সময় তার স্ত্রী তার দু’হাত চেপে ধরেন এবং অন্য অজ্ঞাতনামারা ডাক্তারকে মারপিট করতে থাকেন, তারা ক্লিনিকের ওটিতে ভাঙচুরও চালান।
একপর্যায়ে তার সঙ্গে থাকা নার্সসহ অন্য সহযোগীরা এবং ক্লিনিকের মালিক ডা. নুরুল হক ফকির দৌড়ে এসে তাকে অজ্ঞান অবস্থায় উদ্ধার করেন। আমি শারীরিকভাবে অসুস্থতার কারণে বর্তমানে খুলনা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি আছেন বলে দাবি করেন তিনি।
এ ব্যাপারে সোনাডাঙ্গা মডেল থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) মো. মমতাজুল হক বলেন, উভয়পক্ষ থানায় মামলা করেছে। বুধবার ভুক্তভোগী ওই নারী বাদী হয়ে শ্লীলতাহানী ও শিশুর অঙ্গহানীর অভিযোগ তুলে ডা. নিশাত আব্দুল্লাহ ও হক নার্সিং হোমের মালিক ডা. নুরুল হক ফকিরের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করেছেন। এর আগে মঙ্গলবার ডা. নিশাত আব্দুল্লাহ বাদী হয়ে একটি মামলা দায়ের করেছিলেন। দু’টি মামলার আসামিকেই গ্রেফতারে পুলিশের অভিযান চলছে, পাশাপাশি ঘটনার তদন্ত সুক্ষ্মভাবে করা হচ্ছে।
Copyright © 2022 KhulnarKhobor.com মেইল:khulnarkhobor24@gmail.com।জাতীয় অনলাইন গণমাধ্যম নীতিমালা আইনে তথ্য মন্ত্রণালয় কর্তৃক নিবন্ধন আবেদিত।স্মারক নম্বর:- ০৫.৪৪.৪৭০০.০২২.১৮.২৪২.২২-১২১।এই নিউজ পোর্টালের কোন লেখা, ছবি, অডিও, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।