পরেশ দেবনাথ, কেশবপুর, যশোর || ঋতু যাই হোক,মহাপুরুষরা বিপদকালে অশুভ শক্তির বিনাশের উদ্দেশ্যে আদ্যাশক্তির আরাধনা করেছেন।রামায়ণ’-এ শ্রী রামচন্দ্র শরৎ কালে অশুভ শক্তি নাশ করতে দেবীর আরাধনা করেন। পুরাণ অনুযায়ী চিত্রবংশীয় রাজা সুরথ বসন্ত কালে দেবীর আরাধনা করেন। কালের পার্থক্য হলেও আরাধনা দেবী দুর্গারই। কালের প্রভেদের কারণে পূজা রীতির সামান্য পার্থক্য হলেও উভয় পূজার রীতি প্রায় একই। শরৎকালে শারদীয়া দুর্গাপূজা, বসন্ত কালে শ্রী শ্রী বাসন্তী পূজা।
কেশবপুর উপজেলার সোমবার থেকে শুরু হয়ে শুক্রবার সকালে দর্পন বিসর্জ্জনের মধ্য দিয়ে শেষ হলো শ্রী শ্রী বাসন্তী পূজা।এ বছর এই উপজেলার ৭টি পুজা মণ্ডপে যাকজমকপূর্নভাবে বাসন্তী পুজা হয়েছে। এরমধ্যে মঙ্গলকোট ইউনিয়নে ১টি,ত্রিমোহিনী ইউনিয়নে ২টি,পাঁজিয়া ইউনিয়নে ২টি,গৌরিঘোনা ইউনিয়নে ১টি ও সাতবাড়িয়া ইউনিয়নের ১টি মণ্ডপে।
কেশবপুর পূজা উদযাপন পরিষদের যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক গৌতম রায় বলেন,এবার উপজেলায় মোট ৬টি সার্বজনীন ও ১টি পারিবারিক মন্দিরে পূজা হচ্ছে।১নং ত্রিমোহিনী ইউনিয়নের শ্রীরামপুর কুণ্ডুপাড়া বাসন্তি মন্দির ও শ্রীরামপুর হরিতলা পূজা মন্দির,৫নং মঙ্গলকোট ইউনিয়নের বসুন্তিয়া তারকেশ্বর পূজা মন্দির,৭নং পাঁজিয়া ইউনিয়নের মাদারডাঙ্গা গ্রামের সুকুমার পালের বাড়িতে সার্বজনীন বাসন্তি মন্দির ও অসিত পালের বাড়িতে পারিবারিক বাসন্তি মন্দির,৯নং গৌরীঘোনা ইউনিয়নের ভেরচি বাসন্তি মন্দির,১০নং সাতবাড়িয়া ইউনিয়নের ভালুকঘর ঠাকুরবাড়ি।
মঙ্গলকোট ইউনিয়নের বসুন্তিয়া গ্রামে ঐতিহ্যবাহী সার্বজনীন তারকেশ্বর পূজা মন্দিরে শ্রী শ্রী বাসন্তী পূজা সোমবার থেকে শুরু হয়ে শুক্রবার সকালে দর্পন বিসর্জ্জনের মধ্য দিয়ে শেষ হলো। বিকাল থেকে অনেক রাত পর্যন্ত চলেছে খেলাধূলা, গান-বাজনা, নাচ, কমিক, কৌতুক এবং পুরস্কার বিতরণ।
পূজা মন্দির কমিটির সহ-সভাপতি অশোক পাল জানান, এখানে এই শ্রী শ্রী বাসন্তী পূজা ৭৪ তম বছর অতিক্রান্ত করলো। বহু দূর থেকে হাজার হাজার ভক্তবৃন্দ এখানে পূজা দেখতে আসেন।
পূজা মন্দির কমিটির সাধারণ সম্পাদক মাস্টার প্রদীপ কুমার দেবনাথ জানান, পঞ্জিকায় লেখক, গণক, চণ্ডী পাঠক ও গবেষক প্রয়াত তারকনাথ ভট্টাচার্যের নামানুসারে বাংলা ১৩৫৫ সালে এই মন্দিরটি স্থাপন করা হয়। সে অবধি এখানে চলে আসছে শ্রী শ্রী বাসন্তী পূজাসহ আরও অনেক পূজা। লেখক, গণক, চণ্ডী পাঠক ও গবেষক হিসাবে তারকেশ্বর ভট্টাচার্যের নাম পঞ্জিকায় লিপিবদ্ধ ছিল।
তারকেশ্বর পূজা মন্দির কমিটির যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক মিন্টু রায় জানান, প্রতি বছরের ন্যায় এবারও সোমবার থেকে শুক্রবার পর্যন্ত পাঁচ দিন ব্যাপী শ্রী শ্রী বাসন্তী পূজা অনুষ্ঠিত হয়েছে। ভক্তদের আপ্যায়ন করার যথাসাধ্য চেষ্টা করেছি। জাকজমকপূর্ণ পরিবেশে শুক্রবার সকালে দর্পন বিসর্জ্জনের মধ্য দিয়ে পূজার কার্য সমাপ্ত হয়েছে। কোনপ্রকার সমস্যা হয়নি।
কোষাধ্যক্ষ মিন্টু রায় জানান,অষ্টমী পূজার রাতে ছিল ভাগবত পাঠ ও নবমী পূজা শেষে রাতে ছিল ধর্মীয় যাত্রাপালা ‘মহিরাবণ বধ’। শুক্রবার সকালে যাত্রামঙ্গল শেষে দর্পণ বিসর্জ্জনের মধ্য দিয়ে পূজার কাজ শেষ হয়।বিকাল থেকে রাত পর্যন্ত চলে মায়ের কপালে সিঁদুর,আরতি ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান শেষে পুরষ্কার বিতরণ।
পাঁজিয়া ইউনিয়নের মাদারডাঙ্গা গ্রামের সুকুমার পালের বাড়িতে সার্বজনীন হিসাব বাসন্তী পূজা হয়েছে। মাস্টার সুশান্ত পাল বলেন, এই মন্দিরে শতাধিক বছর ধরে পূজা হচ্ছে। এখান পূজার কার্যে নিয়োজিত আছেন,পাঁজিয়া গ্রামের পুরোহিত গোবিন্দ ব্যানার্জি ও মুকুন্দ ব্যানার্জি।একই গ্রামে অসিত পালের বাড়িতে ৪ ভাই মিলে পূজা করছেন।
তিনি বলেন,আমরা এই পারিবারিক মন্দিরে ৪০ বছর ধরে পূজা করে আসছি। পুরোহিতের দ্বায়িত্বে আছেন,পাঁজিয়া গ্রামের সমীর ব্যানার্জি। বসুন্তিয়া সার্বজনীন তারকেশ্বর পূজা মন্দিরে পূজা কার্যে নিয়োজিত আছেন,পাঁচারই গ্রামের মিহির চক্রবর্তী,অশোক চক্রবর্তী,তাপস চক্রবর্তী ও বিনোদ চক্রবর্তী।
Copyright © 2022 KhulnarKhobor.com মেইল:khulnarkhobor24@gmail.com।জাতীয় অনলাইন গণমাধ্যম নীতিমালা আইনে তথ্য মন্ত্রণালয় কর্তৃক নিবন্ধন আবেদিত।স্মারক নম্বর:- ০৫.৪৪.৪৭০০.০২২.১৮.২৪২.২২-১২১।এই নিউজ পোর্টালের কোন লেখা, ছবি, অডিও, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।