এস.এম.শামীম দিঘলিয়া || খুলনার দিঘলিয়া উপজেলার ঐতিহ্যবাহী সেনহাটি সরকারি মাধ্যমিক বিদ্যালয় এর ১৩৬তম প্রতিষ্ঠা বার্ষিকী ও মা সমাবেশ গতকাল শনিবার ৮ জুলাই বিকালে অনুষ্ঠিত হয়েছে।
বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক শেখ মোঃ ফরহাদ হোসেনের সভাপতিত্বে উক্ত অনুষ্ঠান অনুষ্ঠিত হয়। সভায় প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন উপজেলা নির্বাহী অফিসার ও সেনহাটি সরকারি মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের সভাপতি খান মাসুম বিল্লাহ। বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসার মোঃ মাহফুজুর রহমান,আলহাজ্ব সরোয়ার খান কলেজের অধ্যক্ষ মোঃ আলতাফ হোসেন,বীর মুক্তিযোদ্ধা ইদ্রিস আলী হাওলাদার এবং বীর মুক্তিযোদ্ধা কে এম সাখাওয়াত হোসেন।
সন্তানের প্রতি মায়ের দায়িত্ব ও করণীয় এবং সন্তানের কর্তব্যের গুরুত্ব বোঝাতেই এ ‘মা’সমাবেশ।বিদ্যালয়ের প্রতিষ্ঠা বার্ষিকী ও মা সমাবেশে উপস্থিত থেকে বক্তব্য রাখেন- বিদ্যালয়ের শিক্ষক শিক্ষিকা বৃন্দ,যথাক্রমে-মোঃ শফিকুল ইসলাম,লিলি আক্তার,মোঃ আমিনুর রহমান,রিতা রানী দাশ, শিউলি আক্তার এবং ওমর আলী বিশ্বাস। এছাড়াও অনুষ্ঠানের প্রধান অতিথি,বিশেষ অতিথি এবং সভাপতি তাদের বুদ্ধিদীপ্ত এবং জ্ঞানগর্ব বক্তব্য রাখেন।
বক্তারা বলেন,প্রত্যেক মা এক একটি সুরভিত ফুল আর প্রতিটি ঘর একেকটি স্কুল। শিক্ষা ক্ষেত্রে মা-সমাবেশের গুরুত্ব অপরিসীম। নেপোলিয়ন বলেছিলেন,আমাকে একজন শিক্ষিত মা দাও,আমি একটি শিক্ষিত জাতি দিব’।সুতরাং একথা অনস্বীকার্য যে, সন্তানের ভবিষ্যৎ গঠনে মায়ের ভূমিকাই প্রধান।সন্তানের নৈতিক চরিত্র গঠন ও শিক্ষাক্ষেত্রে অভিভাবক হিসেবে মায়ের গুরুত্ব সবচেয়ে বেশি,মাকে গুরুত্ব দিয়ে শিক্ষার ভিত তৈরি করা গেলে তা আরো বাস্তবমুখী ও গুণগত মানের হয়ে উঠবে সন্দেহ নেই।
জন্মের পর অসহায় শিশুকে শত প্রতিকূলতা পেরিয়ে মা-ই কথা বলতে,পথ চলতে শেখান। সন্তানের সুন্দর ভবিষ্যৎ গঠনে মায়ের ভূমিকার কোন তুলনা হয়না। মায়ের হাত ধরে গুটিগুটি পায়ে যখন একটি শিশু প্রথমবারের মতো বিদ্যালয়ের আঙ্গিনায় পা রাখে,তখন শুরু হয় তার নতুন জগতে পথচলা। আর এই নতুন পথচলাকে আরো মসৃণ করতে একজন মায়ের সচেতনতাই সর্বাধিক গুরুত্বপূর্ণ।একটি ছাত্র দিনের অধিকাংশ সময় বিদ্যালয়ে অবস্থান করে,সেক্ষেত্রে সহপাঠী ও শিক্ষকদের সাথে তৈরি হয় মিথস্ক্রিয়ার অবারিত সুযোগ।একজন ছাত্রের আচার-আচরণ, প্রকাশভঙ্গি, সভ্যতা, শিষ্টাচার ইত্যাদি বিষয়গুলো খুব সুন্দরভাবে পর্যবেক্ষণের সুযোগ হয় একজন শিক্ষকের। মা ও শিক্ষকের মতো একজন নিবিড় পর্যবেক্ষক।
তাই একজন শিক্ষক এবং মা যদি সঠিকভাবে একজন ছাত্রকে নিবিড় ভাবে পর্যবেক্ষণ করেন এবং সে অনুযায়ী সন্তানকে গড়ে তোলার পদ্ধতি অনুসরণ করেন তাহলে একজন ছাত্র ভবিষ্যতে সুনাগরিক হিসেবে গড়ে উঠবে এতে কোন সন্দেহ নেই। সেক্ষেত্রে মা সমাবেশের গুরুত্ব অনস্বীকার্য। শিক্ষা পদ্ধতিতে নিয়মিত মা-সমাবেশ আয়োজন সন্তানের সঠিক ও সুন্দর ভবিষ্যৎ বিনির্মাণে অনন্য ভূমিকা পালন করে থাকে। এজন্য মাঝে মাঝে বিদ্যালয়গুলোতে মা-সমাবেশ আয়োজনের উপর জোর দেওয়া প্রয়োজন। তাহলে শিক্ষার মান বৃদ্ধির সঙ্গে সঙ্গে সামাজিক সচেতনতা ও বৃদ্ধি পাবে বলে বক্তারা মনে করেন।
শিক্ষকদের সঙ্গে মা,দের সম্পর্ক যত নিবিড় হবে ততই ছাত্রদের জন্য সেটা কল্যাণকর হবে। শিক্ষকরা অতি সহজে একজন ছাত্রের ভালো-মন্দ নির্ণয় করতে পারেন। সে কারণে মা যত বেশি শিক্ষকের সঙ্গে যোগাযোগ রক্ষা করবেন ততই মা তার সন্তান ছাত্র সম্পর্কে অবহিত হতে পারবেন। এর ফলে মা ও শিক্ষকের যৌথ উদ্যোগে ছাত্রকে সঠিক দিক দিকনির্দেশনার মাধ্যমে আদর্শ মানুষ হিসেবে গড়ে তোলা সম্ভব হয়।এক্ষেত্রে মা সমাবেশের কোন বিকল্প নেই। মা সমাবেশের মাধ্যমে ছাত্রের শিক্ষক ও মায়ের মধ্যে তথ্য বিনিময় হয়।এর ফলে মা তার সন্তানের আচার আচরণ,সভ্যতা, ভদ্রতা,শিষ্টাচার,পড়াশোনা ইত্যাদি সম্পর্কে অবহিত হতে পারেন।যা একজন সন্তানকে আদর্শ মানুষ হিসেবে গড়ে তুলতে সহায়ক ভূমিকা পালন করে থাকে।
শিক্ষা জীবনে শিক্ষার্থী কেমন ফলাফল করছে এসকল বিষয় মাকে অবহিত করা হয়, যাতে আশানুরূপ ফলাফল অর্জনে মা তার সন্তানের প্রতি আরো যত্নবান হতে পারেন। মা সমাবেশের মাধ্যমে পরিবারের সদস্যদেরকে ছাত্র সম্পর্কে সচেতন করে তোলা,ছাত্রের ঘাটতিগুলো শনাক্ত করে নিরাময়মূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করা,শিক্ষার প্রতি ছাত্রকে আরো আগ্রহী করে তোলা হয়।মা সমাবেশের মাধ্যমে নিজের সন্তানকে ভবিষ্যতে কোথায় দেখতে চান এসব বিষয় নিয়ে মায়েদের সাথে সরাসরি কথা বলার সুযোগ তৈরি হয়। মা সমাবেশের মাধ্যমে মায়েরা যেমন তাদের সন্তানকে নিয়ে তাদের চাওয়াগুলো তুলে ধরতে পারেন,তেমন শিক্ষকরা তাদেরকে গড়ে তোলার ক্ষেত্রে আরো সচেতন ও যত্নবান হতে মায়েদেরকে সঠিক দিকনির্দেশনা দিতে পারেন।
মা সমাবেশের মাধ্যমে একজন মা আরও একাধিক মায়ের সাথে ভাব বিনিময়ের সুযোগ পেয়ে থাকেন,যার ফলে সন্তানের জন্য সঠিক ও উপযুক্ত শিক্ষা নির্ধারণ সহজ হয়। ছাত্রকে একটি সুন্দর ভবিষ্যতের দিকে এগিয়ে নেওয়ার জন্য এবং উন্নত জীবনের স্বপ্ন দর্শনে উদ্বুদ্ধ করার জন্য মা অপরিহার্য বলে মতামত পেশ করেন বক্তারা।
তারা আরো বলেন,মা একটি ছোট শব্দ হলেও মায়ের কাছে একজন সন্তান পৃথিবীর শ্রেষ্ঠ সম্পদ, তেমনি একজন সন্তানের কাছে মা পৃথিবীর শ্রেষ্ঠ শিক্ষক, মা গুরুত্বপূর্ণ অধ্যায়,মা একটি জীবন,মা একটি পৃথিবী,মা তার সন্তানের জন্য ইহকাল,পরকাল। একজন সুশিক্ষিত মা পারেন একটি শিক্ষিত জাতির জন্ম দিতে। সব মা বাবাই প্রত্যাশা করে তার সন্তান যেন মানুষের মত মানুষ হয়। কিন্তু বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই দেখা যায় প্রত্যাশা আর প্রাপ্তির মধ্যে একটি দূরত্ব। সন্তানদের ঘিরেই মা-বাবার একমাত্র চাওয়া পাওয়া। তাই বক্তারা প্রত্যেক ছাত্র-ছাত্রীকেই মা-বাবার এই চাওয়া পাওয়া পূরণ করার ব্যাপারে সচেষ্ট হতে পরামর্শ প্রদান করেন।পরিশেষে কেক কাটার মাধ্যমে বিদ্যালয়ের ১৩৬ তম প্রতিষ্ঠা বার্ষিকী উদযাপন করা হয়।
Copyright © 2022 KhulnarKhobor.com মেইল:khulnarkhobor24@gmail.com।জাতীয় অনলাইন গণমাধ্যম নীতিমালা আইনে তথ্য মন্ত্রণালয় কর্তৃক নিবন্ধন আবেদিত।স্মারক নম্বর:- ০৫.৪৪.৪৭০০.০২২.১৮.২৪২.২২-১২১।এই নিউজ পোর্টালের কোন লেখা, ছবি, অডিও, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।