রায়হান শরীফ সাব্বির, ঢাকা || রাজধানীর ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউশন প্রাঙ্গণে দশম জাতীয় সম্মেলনের আয়োজন করে রওশনের নেতৃত্বাধীন জাতীয় পার্টি।দলের ‘জাতীয় সম্মেলন’ করে নতুন কেন্দ্রীয় কমিটি (আংশিক) গঠন করেছে রওশন এরশাদের নেতৃত্বাধীন জাতীয় পার্টি। এতে রওশন এরশাদকে চেয়ারম্যান এবং কাজী মামুনুর রশীদকে মহাসচিব হিসেবে নির্বাচিত করার ঘোষণা দেওয়া হয়।
সম্মেলনে এরশাদের ছেলে রাহগির আল মাহি এরশাদ ওরফে সাদ এরশাদকে দলের অন্যতম কো-চেয়ারম্যান করা হয়। রওশনের অবর্তমানে সাদ দলের চেয়ারম্যানের দায়িত্ব পালন করবে বলেও সম্মেলনে ঘোষণা দেওয়া হয়।
আজ শনিবার রাজধানীর ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউশন প্রাঙ্গণে দশম জাতীয় সম্মেলনের আয়োজন করে রওশনের নেতৃত্বাধীন জাতীয় পার্টি।
দলের অন্যান্য পদের মধ্যে কাজী ফিরোজ রশিদ নির্বাহী চেয়ারম্যান, আবু হোসেন বাবলা সিনিয়র কো–চেয়ারম্যান, সাইদুর রহমান, শফিকুল ইসলাম, সাদ এরশাদ, গোলাম সরোয়ার ও সুনীল শুভরায়কে কো-চেয়ারম্যান হিসেবে নির্বাচিত করা হয়।
গত ২৮ জানুয়ারি জি এম কাদেরকে অব্যাহতি দিয়ে নিজেকে জাপার চেয়ারম্যান ঘোষণা করেন রওশন। আজ সকাল সাড়ে ১০টায় শুরু হয় সম্মেলন। সারাদেশ থেকে কাউন্সিলর, ডেলিগেটগণ আসেন। সম্মেলনের দ্বিতীয় পর্বে নতুন নেতৃত্ব নির্বাচিত হয়। রওশন সেখানে আনুষ্ঠানিকভাবে চেয়ারম্যান নির্বাচিত হন। এর মাধ্যমে জাতীয় পার্টি নামে আরেকটি দল আব আবির্ভুত হোল।
হুসেইন মুহম্মদ এরশাদের জীবদ্দশা থেকেই জাপা দ্বন্দ্ব চলছে রওশন এরশাদ ও জি এম কাদেরের। ২০১৯ সালে এরশাদের মৃত্যুর পর জ্যেষ্ঠ নেতাদের মধ্যস্থতায় সমঝোতা হয়। বিরোধী দলের নেতার পদ পেয়ে জি এম কাদেরকে জাপার চেয়ারম্যান হিসেবে মেনে নেন রওশন। তিন বছর পর সমঝোতা ভেঙে যায়। জি এম কাদেরকে নেতৃত্ব থেকে সরাতে ২০২২ সালের আগস্টে কাউন্সিলের ডাক দেন তিনি। পাল্টা হিসেবে রওশনকে বিরোধী দলের নেতার পদ থেকে সরাতে চেষ্টা করেন জি এম কাদের। তবে সরকারের সমর্থনে টিকে যান রওশন। তাঁর পক্ষ নিয়ে জি এম কাদেরকে কু-কথা বলায় জাপা থেকে বহিষ্কার হন রাঙ্গা।
২০২৩ সালের জানুয়ারিতে সরকারি মধ্যস্থতায় সমঝোতা হয় জাপা চেয়ারম্যান জি এম কাদের ও প্রধান পৃষ্ঠপোষক রওশনের। তবে কয়েক মাস পরে তা ভেঙে যায়। জাপা ফের বিরোধী দল হবে, জি এম কাদের হবেন বিরোধী দলের নেতা– এই দুই শর্ত পূরণের আশ্বাসে ৭ জানুয়ারির নির্বাচনে অংশ নেয় জাপা। এতে নির্বাচন থেকে ছিটকে পড়েন রওশন। তাঁর অনুসারীদের কাউকে মনোনয়ন দেননি জি এম কাদের। ভোটের পরও সরকারের সমর্থন পাচ্ছেন না তিনি।
দ্বাদশ নির্বাচনে মাত্র ১১টি আসন পেয়েছে জাপা। ভোটের পর দলটিতে ফের অস্থিরতা শুরু হয়। লাঙ্গলের পরাজিত প্রার্থীরা সভা করে অভিযোগ তোলেন, জি এম কাদের ভোটে গিয়ে টাকা পেলেও অন্যদের দেননি। আওয়ামী লীগের কাছ থেকে আসন ছাড় না পাওয়া, ছাড় পেয়েও হেরে যাওয়া নেতারা জি এম কাদেরের সমালোচনায় মুখর হন।
কো-চেয়ারম্যান কাজী ফিরোজ রশিদ,সৈয়দ আবু হোসেন বাবলা, প্রেসিডিয়াম সদস্য সুনীল শুভরায়, ভাইস চেয়ারম্যান ইয়াহহিয়া চৌধুরীকে অব্যাহতি দেন জি এম কাদের। তারা সবাই রওশনের পক্ষে যোগ দিয়েছেন। দল থেকে বাদ পড়াদের নিজের পক্ষে টেনেছেন রওশন।
পরাজিত প্রার্থীদের সভায় যোগ দেওয়া প্রেসিডিয়াম সদস্য লিয়াকত হোসেন খোকা,সালাহউদ্দিন মুক্তিসহ অনেকেই জি এম কাদেরের পক্ষে ভিড়েছেন। জাপা চেয়ারম্যান কাউকে পদোন্নতি, অব্যাহতি দেওয়া কয়েক নেতাকে স্বপদে দলে নিয়ে অবস্থান শক্ত করেছেন। প্রেসিডিয়াম সদস্য ফখরুল ইমাম, জহিরুল আলম, সাইফুদ্দিন আহমেদ মিলন, জহিরুল ইসলাম রুবেল, ইমরান হোসেন মিয়া ফিরেছেন জি এম কাদেরের পক্ষে। তারা গত বুধবার জাপার যৌথসভায় ছিলেন।
জাপা মহাসচিব মুজিবুল হক চুন্নু সমকালকে বলেছেন,১০টা সম্মেলন করুক অসুবিধা কী। জাতীয় পার্টি নামে চারটি দল আছে। আরেকটি হতে যাচ্ছে। তাতে কিছু যায় আসে না। লাঙ্গল যার,আসল জাতীয় পার্টি তার। লাঙ্গল জি এম কাদেরের।
রওশন ঘোষিত মহাসচিব কাজী মামুনুর রশিদ বলেছেন, সম্মেলনে নির্বাচিত নেতৃত্ব লাঙ্গল পেতে চেষ্টা করবে। রওশনের নেতৃত্বের জাপাই আসল।
Copyright © 2022 KhulnarKhobor.com মেইল:khulnarkhobor24@gmail.com।জাতীয় অনলাইন গণমাধ্যম নীতিমালা আইনে তথ্য মন্ত্রণালয় কর্তৃক নিবন্ধন আবেদিত।স্মারক নম্বর:- ০৫.৪৪.৪৭০০.০২২.১৮.২৪২.২২-১২১।এই নিউজ পোর্টালের কোন লেখা, ছবি, অডিও, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।