ঘূর্ণিঝড় রিমালের তাণ্ডবে বেড়িবাঁধ ভেঙে ২০ গ্রাম প্লাবিত
মোঃফয়সাল হোসেন,কয়রা || ঘূর্ণিঝড় রিমালের প্রভাবে খুলনার কয়রার উপজেলায় বেড়িবাঁধ ভেঙে লোকালয়ে পানি প্রবেশ করে অন্তত ২০ গ্রাম প্লাবিত হয়েছে। এতে ভেসে গেছে ৫শতাধিক চিংড়ির ঘের, ভেঙে গেছে কয়েকশ কাঁচা ঘরবাড়ি ও দোকানপাট। এ ছাড়া রাতভর ভারি বৃষ্টি ও ঝড়ের তাণ্ডবে উপজেলার ৭টি ইউনিয়নে ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতির খবর পাওয়া গেছে। এতে ২ হাজার ঘরবাড়ি সম্পুর্ণ বিধস্থ হওয়ার পাশাপাশি কয়েক হাজার ঘড়বাড়ি আংশিক ক্ষতি হয়েছে।
স্থানীয়রা জানায়, জোয়ারের তীব্র চাপে মহেশ্বরীপুর ইউনিয়নের সিংহেরকোণা, মহারাজপুর ইউনিয়নের দশহালিয়া ও দক্ষিণ বেদকাশি ইউনিয়নের ৩নং ওয়ার্ডের বেলাল গাজীর বাড়ির সামনের বাঁধ ভেঙে গেছে। বাঁধের দুর্বল অংশের ওই ৩টি স্থানে প্রায় ১৫০ মিটার ভেঙে নদীর নোনা পানিতে প্লাবিত হয়েছে এলাকা।
জানা গেছে, কয়রা সদরের ৪ নম্বর কয়রা, ৫ নাম্বার কযরা ক্লোজার, গড়িয়াবাড়ি, ঘাটাখালী, হামখুড়ার গোড়া, মদিনাবাদ লঞ্চঘাট; মহারাজপুর ইউনিয়নের মঠবাড়িয়া, সুতিয়া বাজার, পবনা; মহেশ্বরীপুর ইউনিয়নের কালীবাড়ি, শিঙেরচর, নয়ানী; উত্তর বেদকাশী ইউনিয়নের পাথরখালী; দক্ষিণ বেদকাশী ইউনিয়নের আংটিহারা, গোলখালী, জোড়শিং ও চরামুখা এলাকায় পানি উন্নয়ন বোর্ডের বেড়িবাঁধ উপচে পানি প্রবেশ করলেও এলাকাবাসীর চেষ্টায় বাঁধ রক্ষা সম্ভব হয়। তবে রাতভর চেষ্টা করেও মহারাজপুর ইউনিয়নের দশালিয়া ও মহেশ্বরীপুর ইউনিয়নের শিঙেরচর বাঁধের পানি আটকাতে পারেননি এলাকাবাসী।
কয়রা সদর ইউনিয়নের প্যানেল চেয়ারম্যান এস এম লুৎফর রহমান বলেন, ৪ নম্বর কয়রা স্লুইসগেটের পাশে ও ৫নম্বর কয়রা ক্লোজারে বেড়িবাঁধ উপচে লোকালয়ে পানি প্রবেশ করলেও তাৎক্ষণিক এলাকাবাসী কাজ করে পানি প্রবেশ থেকে বিরত রাখেন। বর্তমানে ওই স্থান গুলো খুবই ঝুঁকিপূর্ণ।মহারাজপুরের ইউপি চেয়ারম্যান আব্দুল্লাহ আল মাহমুদ বলেন, রোববার রাতের জোয়ারের চাপে ইউনিয়নের দশহালিয়া এলাকায় প্রায় ৫০ মিটার বাঁধ ভেঙে কপোতাক্ষ নদের পানি ঢুকে পড়েছে। এতে অন্তত দুটি গ্রাম ও কয়েক’শ চিংড়ির ঘের তলিয়ে গেছে।মহেশ্বরীপুরের ইউপি চেয়ারম্যান শাহনেওয়াজ শিকারি বলেন, আমার ইউনিয়নের সিংহেরকোণা এলাকায় বাঁধ ভেঙে গেছে। এছাড়া নয়ানি এলাকার বাঁধের নিচু জায়গা ছাপিয়ে সারা রাত পানি লোকালয় ঢুকেছে। এতে অন্তত সাতটি গ্রাম প্লাবিত হয়েছে।
দক্ষিণ বেদকাশি ইউনিয়নের চেয়ারম্যান আছের আলী জানান, তার ইউনিয়নের মাটিয়াভাঙ্গা এলাকায় রাতের জোয়ারে বাঁধের কিছু অংশ ভেঙে গেছে। এতে ২-৩ টি গ্রামে নদীর পানি ঢুকেছে। তবে সেখানকার বাঁধ আটকানো সম্ভব হয়েছে। এ ছাড়া ইউনিয়নের বিভিন্ন জায়গায় নিচু বাঁধ ছাপিয়ে পানি প্রবেশ করেছে এলাকায়।
খুলনা পানিউন্নয়ন বোর্ডের উপসহকারী প্রকৌশলী মশিউল আবেদীন বলেন, রোববার বিকেলে জোয়ারের পানি খুব বেশি না বাড়ায় মনে করা হচ্ছিল, এ যাত্রায় হয়তো রক্ষা পাওয়া যাবে। কিন্তু মধ্যরাত থেকে ঝোড়ো হাওয়া আর নদীতে জোয়ারের উচ্চতা বেড়ে যাওয়ার পাশাপাশি ঢেউও খুব বেড়েছিল। রাতে জোয়ারের উচ্চতা বেড়েছে প্রায় দুই ফুট বেশি। বাঁধ মেরামতের জন্য গতকাল রাতভর এলাকার মানুষ যে কষ্ট করেছেন, তা বৃথা হয়ে গেছে। ভেঙে যাওয়া বাঁধ মেরামতের চেষ্টা চলছে।
কয়রা ইউএনও এবিএম তারিক উজ জামান বলেন, কয়েকটি স্থানে বাঁধ ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছে বলে খবর পেয়েছি। এ ছাড়া ভারি বৃষ্টি ও ঝোড়ো হাওয়ার তাণ্ডবে অনেক ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে বলে প্রাথমিকভাবে জেনেছি।
Copyright © 2022 KhulnarKhobor.com মেইল:khulnarkhobor24@gmail.com।জাতীয় অনলাইন গণমাধ্যম নীতিমালা আইনে তথ্য মন্ত্রণালয় কর্তৃক নিবন্ধন আবেদিত।স্মারক নম্বর:- ০৫.৪৪.৪৭০০.০২২.১৮.২৪২.২২-১২১।এই নিউজ পোর্টালের কোন লেখা, ছবি, অডিও, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।