পরেশ দেবনাথ,কেশবপুর || যশোরের কেশবপুরে আবারও আদালতের আদেশ অমান্য করে গভীর রাতে জমি দখলের চেষ্টা। এসময় এলাকাবাসী ও থানা পুলিশের তাড়া খেয়ে এসকোভেটর ম্যাশিন ফেলে পালিয়েছে ভুমিদস্যুরা। এই ঘটনাটি ঘটেছে বৃহস্পতিবার (৩০ মে-২৪) রাতে কেশবপুর পৌর সদরের মধ্যকুল এলাকায়। এঘটনায় জমির মালিক শুক্রবার (৩১ মে) সকালে ভুমিদস্যদের নাম উল্লেখ করে কেশবপুর থানায় একটি অভিযোগ দাখিল করেছেন। থানা পুলিশ ঘটনাস্থল পরিদর্শন করে আদালতের আদেশ অমান্যকারীদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা গ্রহন করা হবে বলে জানান।
থানায় দাখিলকৃত অভিযোগে উল্লেখ করা হয়েছে যে, কেশবপুর পৌর সদরের মধ্যকুল এলাকার মৃত আব্দুল করিম খানের পৈত্রিক ও ক্রয় সূত্রে পাওয়া প্রায় ৫০ বিঘা সম্পত্তির মধ্যে বন্টন সূত্রে তার ছোট ছেলে ওয়াজেদ খান ডবলু গত ৩০ বছর যাবৎ ৭৫ নং মধ্যকুল মৌজায় যার এসএ দাগ ৮৩৪, ৮৩৫ ও ৮৩৬ এবং আরএস দাগ ৩৪৩১, ৩৪৩২ ও ৩৪৩০ দাগের মোট ১১৭ শতক জমি ভোগ-দখল করে আসছেন। আব্দুল করিম খানের ৩ ছেলে ও ৮ কন্যা রয়েছে। তার ওয়ারেশগণ ভিন্ন ভিন্ন দাগে একই ভাবে ভোগ-দখল করছেন। করিম খানের মৃত্যুর পর তার মেঝ ছেলে আব্দুল আজিজ খান পিতার সমস্ত সম্পত্তি দেখভাল করতেন। এরই মধ্যে গত আরএস রেকর্ডের সময় আব্দুল আজিজ খান তার সকল ভাই ও বোনের সম্পত্তি সকলের নামে রেকর্ডের কথা বলে তাদের ফাঁকি দিয়ে সমস্ত সম্পত্তি নিজের নামে জরিপ রেকর্ড করে নেন। বিষয়টি জানতে পেরে করিম খানের ওয়ারেশগণ আব্দুল আজিজ খানের বিরুদ্ধে যশোর কেশবপুর বিজ্ঞ সহকারী জজ আদালতে একটি মোকদ্দমা দায়ের করেন। যার নম্বর-১৪/৯৭। মামলাটি বর্তমানে আদালতে বিচারাধীন রয়েছে। মামলা চলমান অবস্থায় আব্দুল আজিজ খান তার ভাই-বোনদের জমি যাতে বিক্রি করতে না পারে তার জন্য তার ছোট ভাই ওয়াজেদ খান ডবলু বিজ্ঞ আদালতে ওই সকল জমির উপর নিষেধাজ্ঞার আবেদন করেন। বিজ্ঞ আদালত দোতরফা সূত্রে বিরোধীয় জমিসহ আজিজ খানের বিরুদ্ধে নিষেধাজ্ঞার আদেশ দেন। যার আদেশ নম্বর- ৭৭ তাং-০৩/০৩/২০২২। আদালতে মামলা ও নিষেধাজ্ঞা প্রতি কোন তোয়াক্কা না করে আব্দুল আজিজ খান গত ১২/০৯/২০২২ তারিখে বিরোধীয় জমির মধ্যে ৫০ শতক জমি জনৈক সুনীল ঘোষ ও সুবোধ ঘোষের নিকট কবলা দলিল মুলে বিক্রয় করেন। যার দলিল নম্বর- ৪৯৭৩। এরপর আদালতের আদেশ অমান্য করে সুবোধ ঘোষ ও সুনীল ঘোষ ওই জমি জবর-দখলের চেষ্টা করে ব্যর্থ হয়ে ১৪/৯৭ মোকদ্দমায় ১৫৭ ও ১৫৮ নম্বর বিবাদী পক্ষ ভুক্ত হন। পরবর্তিতে সুনিল ও সুবোধ ঘোষ কর্তৃক জোর পূর্বক বিরোধীয় ওই জমি জোর পূর্বক দখলের বিষয়টি জমির মালিক ওয়াজেদ খান ডবলু তার আইনজীবির মাধ্যমে বিজ্ঞ আদালতকে অবহিত করে নিষেধাজ্ঞার প্রাথর্না করেন। বিজ্ঞ আদালত দোতরফা শুনানী অন্তে বিরোধীয় জমির ওপর (সুনিল ও সুবোধ ঘোষের বিরুদ্ধেও একই ভাবে) গত ১ নভেম্বর ২০২৩ তারিখে নিষেধাজ্ঞার আদেশ দেন। বতমানে ওই জমিতে বিজ্ঞ আদালতের নিষেধাজ্ঞার আদেশ বলবৎ রয়েছে।
জমির মালিক ওয়াজেদ খান ডবলু জানান, গত ৩০ মে রাত ১১ টার দিকে আদালতের নির্দেশ অমান্য করে সুনিল ঘোষ, সুবোধ ঘোষ ও অনিক ঘোষসহ ১০/১১জন সন্ত্রাসী দেশীয় অস্ত্রে সজ্জিত হয়ে এসকোভেটর ম্যাশিন দিয়ে ওই বিরোধীয় জমির শ্রেনী বদল করে ভেঁড়িবাঁধ নির্মানের চেষ্টা করে। এখবর পেয়ে তিনি বিষয়টি থানার অফিসার ইনচার্জ মোঃ জহিরুল আলমকে জানান।
এসময় এলাকাবাসী ও থানার এসআই গোরা চাঁদের নের্তৃত্বে একদল পুলিশ ঘটনাস্থলে পৌছানো মাত্রই ভুমিদস্যুরা এসকোভেটর ম্যাশিন ফেলে পালিয়ে যায়। এরিপোর্ট লেখা পর্যন্ত এসকোভেটর ম্যাশিনটি ওই স্থানে পড়ে রয়েছে বলে জানা যায়।
এব্যাপারে জমির মালিক ওয়াজেদ খান ডবলু শুক্রবার সকালে সুনীল ঘোষ, সুবোধ ঘোষ ও অনিক ঘোষসহ অজ্ঞাত নামা আরও ৮/১০জনকে আসামী করে থানায় একটি অভিযোগ দাখিল করেছেন।
মধ্যকুল গ্রামের জমির মালিক ওয়াজেদ খান ডবলু জানান, তার পৈত্রিক সূত্রে পাওয়া জমি বৃহস্পতিবার রাতে অবৈধ ভাবে জোর পুর্বক জবর-দখলের চেষ্টা করে পৌরসভার আলতাপোল গ্রামের সুনীল ঘোষ গংরা। বিষয়টি থানা পুলিশকে অবহিত করলে থানা পুলিশ তাৎক্ষনিক ব্যবস্থা গ্রহন করায় তারা পালিয়ে যায়।
থানার অফিসার ইনচার্জ মোঃ জহিরুল আলম বলেন, পৌর সদরের মধ্যকুল এলাকায় রাতে জমি দখলের অভিযোগ পেয়ে তাৎক্ষনিক ভাবে ব্যবস্থা গ্রহন করা হয়েছে। এছাড়া আইনশৃংখলা অবনতির চেষ্টাকারী এবং বিজ্ঞ আদালতের আদেশ অমান্যকারীদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা গ্রহন করা হবে।
Copyright © 2022 KhulnarKhobor.com মেইল:khulnarkhobor24@gmail.com।জাতীয় অনলাইন গণমাধ্যম নীতিমালা আইনে তথ্য মন্ত্রণালয় কর্তৃক নিবন্ধন আবেদিত।স্মারক নম্বর:- ০৫.৪৪.৪৭০০.০২২.১৮.২৪২.২২-১২১।এই নিউজ পোর্টালের কোন লেখা, ছবি, অডিও, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।