মোঃ মাসুম,কুমিল্লা || টানা বৃষ্টি ও উজান থেকে নেমে আসা ঢলে বিপর্যস্ত কুমিল্লা। অতিবৃষ্টি ও বন্যার প্রভাবে কুমিল্লায় অন্তত চারজনের মৃত্যুর খবর পাওয়া গেছে। গত বুধবার ও বৃহস্পতিবার কুমিল্লা নগর, লাকসাম, চৌদ্দগ্রাম ও নাঙ্গলকোট উপজেলায় এ ঘটনা ঘটে।
দুজন বন্যার পানিতে তলিয়ে, একজন বৃষ্টির মধ্যে বিদ্যুৎস্পৃষ্ট হয়ে এবং একজনের মাথায় গাছ পড়ে মারা যান। মৃত ব্যক্তিরা হলেন নাঙ্গলকোট পৌরসভার দাউদপুর এলাকার বাসিন্দা কেরামত আলী (৪৫), কুমিল্লা নগরের ছোট এলাকার কিশোর রাফি (১৫) ও চৌদ্দগ্রাম উপজেলার সোনাকাটিয়া গ্রামের কানু মিয়ার ছেলে শাহাদাত হোসেন (৩৪)। লাকসামে পানিতে তলিয়ে মারা যায় এক শিশু।বন্যার প্রভাবে চারজনের মৃত্যুর বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন কুমিল্লার সিভিল সার্জন নাছিমা আক্তার।
টানা পাঁচ দিনের টানা ভারি বর্ষণে এবং উজানের পানি নেমে আসায় লাকসাম উপজেলা এবং পৌরসভার নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হয়েছে। ভারি বর্ষণের ফলে বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে জনজীবন। বহু পরিবার পানিবন্দি হয়ে পড়েছে। তলিয়ে গেছে অনেক কাঁচা-পাকা রাস্তাঘাট, শত শত পুকুর ও মাছের ঘের।ফলে দিশাহারা হয়ে পড়েছেন ক্ষতিগ্রস্ত এলাকাবাসি।
উপজেলার গোবিন্দপুর, উত্তরদা, কান্দিরপাড় এবং মুদাফরগঞ্জ উত্তর মুদাফরগঞ্জ দক্ষিণ, বাকই দক্ষিণ, কান্দিরপাড়, লাকসাম পুর্ব ও আজগরা ইউনিয়নের অধিকাংশ গ্রামের মানুষ পানিবন্দি হয়ে পড়েছে।
এদিকে চান্দিনা পৌরসভার পাঁচ হাজারেরও বেশি মানুষ চরম দুর্ভোগ পোহাচ্ছেন। পৌর সদরের ধানসিঁড়ি, বাগানবাড়ি, মায়াকানন, সবুজবাগ পল্লী বিদ্যুৎ আবাসিক এলাকা, মহারং, এলাকার বেশিরভাগ সড়ক পানিতে তলিয়ে গেছে। ঘর-বাড়ি, বিভিন্ন বাসার নিচ তলায় পানি উঠে স্বাভাবিক জীবন যাত্রা ব্যাহত হচ্ছে। এ অবস্থার জন্য পৌর কর্তৃপক্ষের অপরিকল্পিত ড্রেনেজ ও বিল্ডিং কোড না মেনে আবাসন ব্যবস্থা গড়ে তোলাকে দায়ী করছেন সচেতন ব্যক্তিরা।
কুমিল্লার নাঙ্গলকোট উপজেলায় বন্যা পরিস্থিতির অবনতি হয়েছে। বুধবার (২১ আগস্ট) সকাল থেকে উপজেলার অনেক এলাকা বন্যার পানিতে প্লাবিত হয়েছে। উপজেলার ১৬টি ইউনিয়ন ও ১টি পৌরসভার অধিকাংশ এলাকায় লাখ-লাখ মানুষ পানিবন্দি হয়ে পড়েছেন। গ্রামীণ অধিকাংশ সড়ক ও ফসলি মাঠ পানিতে তলিয়ে গেছে।
বিশেষ করে উপজেলার সাতবাড়িয়া, বক্সগঞ্জ, ঢালুয়া, মৌকারা, রায়কোট উত্তর, রায়কোট দক্ষিণ, জোড্ডা পূর্ব, জোড্ডা পশ্চিম, আদ্রা উত্তর, আদ্রা দক্ষিণ, বাঙ্গড্ডা ও পেরিয়া ইউনিয়নের বেশির ভাগ এলাকা তলিয়ে গিয়েছে।
কুমিল্লার চৌদ্দগ্রাম উপজেলার নিম্নাঞ্চলের কাশিনগর, মুন্সিরহাট, শ্রীপুর, শুভপুর, উজিরপুর ইউনিয়নের প্রায় সবগুলো গ্রাম তলিয়ে আছে৷ এসব ইউনিয়নের কয়েক লাখ মানুষ ভিটেমাটি ছেড়ে প্রয়োজনীয় জিনিসপত্র ও গবাদিপশু নিয়ে নিরাপদ আশ্রয়ে যাওয়ার চেষ্টা করছেন।
এদিকে গতকাল বৃহস্পতিবার সকাল থেকেই বন্যার পানিতে ডুবে ছিলো ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের চৌদ্দগ্রাম অংশের পাঁচ কিলোমিটার এলাকা। ফলে বন্ধ রয়েছে সকল প্রকার যান চলাচল।
এসব এলাকায় বিদ্যুৎ না থাকায় মোবাইল ফোন বন্ধ হয়ে গিয়েছে,চলছে ধীরগতির মোবাইল নেটওয়ার্ক ফলে যোগাযোগ বন্ধ রয়েছে আত্মীয় স্বজনদের সাথে।পাশাপাশি পানিবন্দি হয়ে পড়ায় মানুষের রান্না করার অসুবিধার কারণে দেখা দিয়েছে খাদ্য সংকট।এসব এলাকায় এখনো তেমন কোন সাহায্যে না পৌছানোর কারনে দিশেহারা ভুক্তভোগী জনসাধারণ।
কুমিল্লা পানি উন্নয়ন বোর্ডের তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী মো. আবদুল লতিফ বলেন, চৌদ্দগ্রাম দিয়ে বয়ে যাওয়া কাঁকড়ি নদীর একটি অংশে বাঁধ ভেঙে গেছে। এছাড়া অতিবৃষ্টির কারণে নদীর বাঁধ ডুবে গ্রামে পানি ঢুকেছে। অন্যদিকে গোমতী নদীর পানি বিপৎসীমার ১১৩ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। বাসিন্দাদের নিরাপদ আশ্রয়ে চলে যাওয়ার নির্দেশনা দেয়া হয়েছে।
Copyright © 2022 KhulnarKhobor.com মেইল:khulnarkhobor24@gmail.com।জাতীয় অনলাইন গণমাধ্যম নীতিমালা আইনে তথ্য মন্ত্রণালয় কর্তৃক নিবন্ধন আবেদিত।স্মারক নম্বর:- ০৫.৪৪.৪৭০০.০২২.১৮.২৪২.২২-১২১।এই নিউজ পোর্টালের কোন লেখা, ছবি, অডিও, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।