নিউজডেস্ক || শাপলা ফুলের নাম মনে হতেই একরাশ ভালোবাসা ছুঁয়ে যায় অন্তরজুড়ে। শাপলা বাংলাদেশের জাতীয় ফুল। প্রাচীন কাল থেকেই মানুষ নীল শাপলা, শাদা শাপলা ফুলের অনুরাগী। মানুষ এই ফুল রান্না করে এবং কাঁচা সালাদেও খেত এক সময়। এটি এক প্রকার জলজ উদ্ভিদ।
শাপলার প্রায় ৭০ থেকে ৮০টি প্রজাতি আছে পৃথিবীতে। এদের বিভিন্ন দেশে ভিন্ন নামে ডাকা হয়। বাংলা ভাষায় এদের শাপলা, শালুক বলা হয়। ইংরেজিতে Water Lily।
শাপলা ফুল আমাদের দেশের পুকুর, হাওড়-বাওড়, নদী-নালা ও হ্রদে জন্মে। এই ফুল সাধারণত ভারত উপমহাদেশেই বেশি দেখা যায়।
বহুযুগ ধরে আমাদের দেশে শাপলা সবজি হিসেবে খাওয়া হয়, বিশেষ করে গ্রাম অঞ্চলে। সবজি হিসেবে শাপলার ফুল ও ডাঁটা খাওয়া হয় রান্না করে এবং কাঁচা অবস্থায় । উদ্ভিদটির গোড়ায় থাকে আলুর মতো এক ধরনের কন্দ যার নাম শালুক, অনেকে একে সবজি হিসেবে খায়। বিশেষ করে ইলিশ ও চিংড়ি মাছের সাথে রান্না করলে অতুলনীয় স্বাদ লাগে খেতে।
বহু রকমের ঔষধি গুণ বিদ্যমান শাপলাতে। ভারতে আম্বাল নামের আয়ুর্বেদিক ওষুধ বানাতে শাপলা ব্যবহার করা হয়। এই ওষুধ অপরিপাকজনিত রোগের পথ্য হিসেবে কাজ করে। সাম্প্রতিক গবেষণায় জানা গেছে এই উদ্ভিদে ডায়াবেটিক রোগের জন্য প্রয়োজনী ঔষুধি গুণ রয়েছে। সাধারণত ফুল ও বীজ দিয়ে তৈরি ওষুধ বিভিন্ন রোগে ব্যবহার করা হয়ে থাকে। এর মধ্যে হৃদযন্ত্রের শক্তি যোগানো, অতিরিক্ত পিপাসা নিবারক, প্রসাবের জ্বালা, আমাশয় ইত্যাদি উল্লেখযোগ্য।
বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাদানকল্প প্রতিষ্ঠান গভর্নমেন্ট কলেজ অব অ্যাপ্লাইড হিউম্যান সায়েন্স কলেজের খাদ্য ও পুষ্টিবিজ্ঞান বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক রেহানা বেগম বলেন, ‘শাপলা ডাঁটা অত্যন্ত পুষ্টিগুণে ভরপুর একটি সবজি। এটি নিয়মিত খাদ্য তালিকায় রাখলে পুষ্টির চাহিদা পূরণ হবে এবং পাশাপাশি বিভিন্ন স্বাস্থ্যঝুঁকি কমবে। এতে রয়েছে পানি, প্রচুর খাদ্যআঁশ বা ফাইবার, কার্বোহাইড্রেট, প্রোটিন, ভিটামিন ও মিনারেলস এবং প্রচুর অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট। ভিটামিন ও মিনারেলসের মধ্যে রয়েছে ভিটামিন বি, ভিটামিন সি, ফসফরাস, ক্যালসিয়াম আয়রন ইত্যাদি উপাদান।
শাপলা ডাঁটা থেকে শরীরের পর্যাপ্ত শক্তি পাওয়া যায়। এতে থাকা ফাইবার হজম শক্তি বাড়ায় এবং অন্ত্রের জন্য প্রয়োজনীয় উপাদান এবং ফাইবার কোষ্ঠকাঠিন্য দূর করতে সাহায্য করে।
শরীরের কোষ গঠন, ক্ষয়পূরণের জন্য প্রোটিনের প্রয়োজন। শাপলা ডাঁটা থেকে প্রোটিন পাওয়া যায় যা শরীরের প্রয়োজনীয় কাজ সম্পাদন করে।
শাপলা ডাঁটাতে রয়েছে ভিটামিন সি। ভিটামিন সি শরীরের রোগের বিরুদ্ধে লড়াই করতে সাহায্য করে।
শাপলা ডাঁটাতে থাকা ভিটামিন বি১ শরীরের কার্বোহাইড্রেটকে শক্তি হিসেবে ব্যবহার করতে সাহায্য করে। এটি গ্লুকোজ বিপাকের জন্য প্রয়োজনীয়। শাপলা ডাঁটার পুষ্টি উপাদানগুলো ইনসুলিনের স্তর স্থিতিশীল রেখে রক্তে শর্করার পরিমাণ নিয়ন্ত্রণে রাখে।
ভিটামিন বি৭ বা বায়োটিন একটি পানিতে দ্রবণীয় ভিটামিন। এটি শরীরের বিপাক এবং কার্যক্ষমতার উন্নতি ঘটায়। শাপলা ডাঁটা থেকে শরীরের জন্য প্রয়োজনীয় এই বায়োটিন পাওয়া যায়।
শাপলা ডাঁটাতে রয়েছে একটি বিশেষ উপাদান ফ্লেভনল গ্লাইকোসাইট। এটি মাথার রক্ত সঞ্চালন স্বাভাবিক রাখে এবং মাথা ঠান্ডা রাখতে সহায়তা করে।
শাপলা ডাটার উপাদান সমূহ স্নায়ু, পেশী, হার্টের কার্যক্রমে ও হৃদরোগের ঝুঁকি কমাতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে।
যকৃতের সুরক্ষায় ভূমিকা রাখে শাপলা ডাঁটা। এটি যকৃতের ক্ষতি প্রতিরোধ করে যকৃতকে সুস্থ রাখে।
শাপলা ডাঁটা খেলে ত্বক মসৃণ ও উজ্জ্বল হয়। এটি ত্বকের কোষ গুলোকে হাইড্রিয়েটিং এবং স্বাস্থ্যকর করে তোলে।
চুলের সৌন্দর্য বজায় রাখতেও ভূমিকা রাখে শাপলা ডাঁটা। নিয়মিত এ সবজি খেলে চুল হবে প্রাণবন্ত এবং মসৃণ।
শাপলাতে আছে গ্যালিক এসিড নামক এনজাইম, যা ক্যানসার প্রতিরোধে সহায়তা করে।
শাপলা ডাঁটাতে পর্যাপ্ত পরিমাণ ক্যালসিয়াম পাওয়া যায়। ক্যালসিয়াম হাড়, দাঁত মজবুতসহ নানাবিধ কাজ করে থাকে।
অ্যাসিডিটি, রক্ত আমাশয়, চুলকানি ইত্যাদি প্রকৃতির রোগ প্রতিরোধ হয় শাপলা ডাঁটা খেলে।
Copyright © 2022 KhulnarKhobor.com মেইল:khulnarkhobor24@gmail.com।জাতীয় অনলাইন গণমাধ্যম নীতিমালা আইনে তথ্য মন্ত্রণালয় কর্তৃক নিবন্ধন আবেদিত।স্মারক নম্বর:- ০৫.৪৪.৪৭০০.০২২.১৮.২৪২.২২-১২১।এই নিউজ পোর্টালের কোন লেখা, ছবি, অডিও, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।